অস্তিত্ব,পর্ব:৩

0
1019

# অস্তিত্ব
#পর্বঃ০৩
#বনলতা

মাত্রই আসরের আজান শেষ হয়েছে। মিষ্টি দৌড়ে এসে মায়াকে ডাকতে থাকে।পরনে তার স্লিভলেস ফ্রক।দুপাশে দুটো বেণি করা।সামনের ছোট ছোট চুলগুলো ফ্যানের বাতাসে উড়ছে।অনেক তাড়া তার।মনে হয় এখন খেলতে যাবে বাহিরে।মিষ্টি বড়ই অধৈর্য্য। ছটফট করতেই থাকে।অন্যের কথা শোনার সময় নেই তার।অথচ,ও যখন বকবক করে তখন থামতেই চায়না।

মায়া আর মিষ্টি দুইবোন হলেও দেখতে,চলতে,আচার-আচরণ এ দুজন দু মেরুর মানুষ।মায়া দেখতে ফর্সা।মিষ্টি দেখতে শ্যামলা।মায়ার নাকটা একটু বোচা।আর মিষ্টির নাক একেবারে বাশির মতো। মায়া ধীর,স্থীর মেয়ে।আর মিষ্টি অনেক চঞ্চল।

অযু করে আসরের নামায পড়ে নেয় মায়া।নামাজ শেষে বাহিরে এসে দাঁড়ায়।রোজাকে বড্ড মিস করছে সে।রোজা থাকলে এখন দুজনে মিলে বেড়াতো,আড্ডা দিতো।এখন রোজা নেই। মায়া একা কোথাও যায়না।রোজার দেখা শুধু কলেজে গেলেই মেলে।

————————-
চারদিকে গাছপালায় ঘেরা।তার ভেতরে বড় দোতালা বাড়ি।সন্ধা নেমেছে অনেক আগেই। এক হাতে মাছের ব্যাগটা ধরে অন্য হাতে কলিং বেল চাপল মুহিন।একবার,দুইবার,তিনবার, চাপল।তবুও কেউ খুলল না।হঠাৎ কেউ এসে দরজা খুলে দিলো।ভিতরে দাড়ানো লম্বা সুদর্শন পুরুষকে দেখে মুহিন আশ্চর্য হয়ে গেলো।মাত্রই গোসল করেছে তমাল।গায়ে লেগে থাকা বিদ্যমান পানির ফোটা তা জানান দিচ্ছে। ফর্সা বুকে কালো পুরুষালী লোম।

“কেমন আছিস মুহিন,” হাসি মুখে জিজ্ঞেস করে সে।

“ভালো।আপনি কেমন আছেন”।

আলহামদুলিল্লাহ!

এই ঘরটা আর দশটা ঘরের চেয়ে একটু বেশিই বড়।দামী দামী আসবাবপত্র আর বিদেশি জিনিস এ ঠাসা।মুহিন আসতে চায়নি।তমালের দাদি বাতাসি বিনিই জোরপূর্বক এনেছে তাকে।আাসা থেকে ওর মুখ থেকে শুধু ওদের নাতির গুণকীর্তন শুনাচ্ছে।পড়ার অজুহাতে বেড়িয়ে আসে মুহিন।ইচ্ছে করছিলো বুড়িটাকে কিছু কড়া কথা শুনাতে।যেচে পড়ে কে শুনতে চেয়েছে এত প্রশংসা। ওদের নাতি যখন এতই গুনবান,বিদ্যের জাহাজ তাহলে জলে ভাসিয়ে দিলেই তো পাড়ে।

বাহিরের খোলা হাওয়ায় দাড়ালো সে।প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিতে গিয়েও পারলোনা।হঠাৎ তমালের ফিরে আসা।আর প্রশংসার আড়ালে ওর দাদির করা সুক্ষ্ম অপমানে জানান দিচ্ছে বড় কোনো ঝড়ের আভাস।ওর কানে কানে বাজতে থাকে।গোধুলী লগ্নে কোনো এক নারী এলোমেলো শাড়ি জড়িয়ে হাটছে।দুরে কোথাও সুর বাজছে বড়ো বিরহের সেই সুর।কোনো বিসর্জনের সুর।এলোমেলো ভাবে ফিরে যাওয়া নারীর মুখ দেখে আঁতকে ওঠে সে।না এ হতে পারে না।

না আর ভাবতে পারে না সে।তাকে ভাবাটাও পাপ।বাস্তবে বা কল্পনায়।এটা অপরাধ। মাঝে মাঝে মনে হয় এই অপরাধে অপরাধী হতে। কিন্তু সে পারে না।কোথায় যেন শেকল বাধা আছে।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here