#সম্পর্কের_প্রণয়
#পর্ব_০৬
#নুর_নবী_হাসান_অধির
কৃষ্ণ চূড়ার ফুলে দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ তনুর৷ মনের গহীন কোণে আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে৷ শ্বশুর শ্বাশুড়ির চোখের মণি হয়ে গেছে৷ শ্বাশুড়ি গুলবাহার তনুকে কোন কাজই করতে দেননা৷ তনুর ইচ্ছা হলে একটু রান্না করতে পারবে৷ তবে কাজের মেয়ে পায়েলের সাহায্যে৷ ঋষি আগের থেকে এখন বেশি যত্নশীল স্বামীতে পরিণত হয়েছে৷ দেখতে দেখতে কেটে গেছে তিনটি মাস৷ চোখের পলকে সনয় চলে যায়৷ ফোনের রিংটোনে তনুর ধ্যান ভাঙে৷ ফোনের ওয়ালপেপারে বাবা লেখা দেখে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল। তনু ভালোবাসার সহিত সামাল দিল৷ উপর প্রান্তে থেকে তনুর বাবা রিয়াদ হোসেন গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
❝ইচ্ছা করছে তোমাকে খু*ন করতে৷ আমাকে না জানিয়ে তুমি মা হবার সিদ্ধান্ত নিলে কেন?❞
বাবার এমন কথায় চোখের কোণে জল এসে পড়ল৷ তনু মা হবার কথা তনুর মা বাবাকে বলেনি৷ জানতে পারল কিভাবে? তনু ভয়ে ভয়ে বলল,
❝ঋষির বাচ্চা খুব পছন্দ করে৷ আমার মা হবার খবর পেয়ে সে বেশি খুশী হয়েছে৷❞
তনুর বাবা দাঁতে দাঁত লাগিয়ে রাগী কন্ঠে বললেন,
❝আমি ঋষিকে নিজ হাতে শাস্তি দিব৷ আর তার শাস্তি হচ্ছে মৃত্যু।❞
বাবার এমন কথায় চোখের কোণে জল এসে হানা দিল৷ হাত থেকে ধপাস করে ফোন পড়ে যায়৷ কিছু বলার শক্তি পাচ্ছে না ৷ কোন বাবা কি পারে নিজের মেয়ের স্বামীকে হ/ত্যা করতে? নিজেকে মেয়েকে বিধবা বানাতে৷ ফোনের অপর প্রান্তে থেকে “হ্যালো… ” বলে যাচ্ছে৷ না চাওয়া সত্ত্বেও তনু কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন তুলে কানে ধরল৷ অপর প্রান্তে থেকে রিয়াদ হোসেন রাগী গলায় বলল,
❝তুমি গর্ভপাতের মাধ্যমে সন্তানকে নষ্ট করে ফেলো৷ আমি তোমার ডিভোর্সের সকল ব্যবস্থা করে ফেলছি৷ তোমার জন্য আমি আমার সম্মান নষ্ট করতে পারব না৷ আমি অন্য জায়গায় কথা দিয়েছি৷ সেখানে তোমার বিয়ে হবে৷❞
আর নিতে পারছে না৷ রাগে ফোনের লাইন কাটল৷ ঋষির কথা নাড়া দিচ্ছে। সেদিন ঋষি এজন্যই বলেছিল কনসিভের কথা না জানাতে৷ তনু এখন দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে পারছে৷ আজ সব কিছুই জানতে হবে ঋষির কাছ থেকে৷
___________________________
সন্ধ্যায় বৃষ্টি হওয়ায় ছাঁদে শীতল হাওয়া বয়ছে৷ গায়ে প্রশান্তির ছোঁয়া এনে দিচ্ছে৷ কিন্তু মনের মধ্যে অশান্তি বাস করছে৷ ঋষি কি লুকাতে চাচ্ছে? সেদিন কেন ঋষি আমার কাছ থেকে কথা লুকাল৷ ঋষি তনুকে রুমে দেখতে না পেয়ে ছাঁদে পা বাড়াল৷ ছাঁদে প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে আাকাশের দিকে তাকিয়ে আছে৷ ঋষি পিছন থেকে এসে তনুর চোখ ধরল৷ ভেজা চোখ দেখে ঋষি ভয় চকিত হয়৷ উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
❝তনু তুমি কান্না করছো কেন? কি হয়েছে তোমার৷ তোমার কি কষ্ট হচ্ছে? কেউ তোমাকে কিছু বলেছে?❞
ঋষিকে কাছে পেয়ে তনু কান্না করে দিল৷ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
❝আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি৷ আমি তোমাকে কিছুতেই হারাতে পারব না৷ তুমি হীনা আমি শূন্য। তুমিময় আমি আছি৷❞
তনুকে আলতো করে জড়িয়ে করে বলল,
❝পা/গল মেয়ে। কেউ আমার ক্ষতি করতে পারবে না৷ আল্লাহ যতদিন আমাকে বাঁচিয়ে রাখবেন ততদিনে কেউ আমার গায়ে ফুলের টোকাও দিতে পারবে না৷❞
❝আজ আমাকে সব সত্য কথা খুলে বলতে হবে? আমি সবকিছু জানতে চাই৷❞
❝কিসের সত্যি? কি জানতে চাও?❞
❝আমি আপনার সন্তানের মা হতে চলছি মা বাবাকে জানাতে মানা করছেন কেন? আজ যদি আমাকে সত্য কথা না বলেন আমি আর আমার সন্তান দু’জনই আত্মহত্যা করব৷❞
❝তুমি সবকিছু সহ্য করতে পারবে?❞
❝আল্লাহ আমাকে সবকিছু সহ্য করার ক্ষমতা দিয়েছেন৷ ইনশাল্লাহ আমি পারব৷❞
❝তোমার বাবা একজন অসৎ, লোভী, ক্ষমতার অপপ্রয়োগ, নারী প্রাচারকারী একজন মানুষ৷ কিন্তু তুমি আমার কথা বিশ্বাস করবে না৷ আর হ্যাঁ আমার সাথে তোমার দ্বিতীয় বিয়ে এটা আমার মা বাবা জেনেই বিয়ে করিয়েছেন৷ কিন্তু বাধ্য হয়ে৷ তোমার বাবা নারী ব্যবসাই শুধু করে না৷ মানুষের অর্গান বিক্রি করে কালো টাকার মালিক হয়েছে৷ তেমনই ভাবে আমার ছোটভাইয়ের জীবন বাঁচাতেই তোমাকে বিয়ে করি৷ তবে আমি এতকিছু জানতাম না৷ সেদিন মা বাবার দরজায় কান পেতে সব শুনেছি৷❞
তনুর পায়ে নিচ কথা মাটি সরে যায়৷ ভাবতেই পারছে না তার বাবা এতো খারাপ মানুষ৷ এতো এতো টাকা সবগুলো কালো টাকা৷ কথা গলায় এসে আটকে পড়ছে৷ অতি কষ্টে বলল,
❝তুমি আমাকে মিথ্যা বলছো না তো৷ আমার মাথায় এটা ঢুকছে না৷ তোমার ঘাড়ে কেন জোর করে আমাকে চাপিয়ে দিবেন৷ বিয়েতে বাবার কি স্বার্থ থাকতে পারে?❞
❝তুমি আসল কথায় এসেছো৷ সে সময় তোমার বাবার অনেকটা সমস্যা ছিল৷ যার জন্য তোমাকে বিয়ে দিতে বাধ্য হয়৷ মূলত আরও ১০ টার মতো মেয়ে লাগত। বড় একটা ডিল ছিল৷ সেখানে বিয়ে হলো সব থেকে বড় মাধ্যম মেয়ে তুলে নেওয়ার৷ বিয়ের নামে তোমার বাবা বিয়ে বাড়ি থেকে তুলে নিয়েছে অনেক মেয়েকে।❞
তনু চকিত হয়ে বলল,
❝কি! বাবা এত নিচে কিভাবে নামতে পারে৷ আমার কল্পনা থেকেও নিচ৷❞
❝তোমার বাবা মানুষের মনে ভালো পাত্র হয়ে থাকার জন্য গরিবদুঃখীদের বিনা চিকিৎসায় হসপিটাল গড়ে তুলেছেন৷ ফুটপাত থেকে তুলে আনেন অসংখ্য মানুষকে৷ যেখান থেকে ৯৫% মানুষের দেহ থেকে সকল অর্গান বের করে নেন৷ বাকী ৫% লোককে নিজের কাজে রাখেন৷ বানিয়ে তুলছে হৃদয়হীনা অমানুষ। এখন যা বলতে চাচ্ছি সেটা তুমি মেনে নিতে পারবে কিনা জানি না।❞
তনুর চোখ থেকে অঝোর ধারা বয়ে যাচ্ছে অশ্রু। জীবনে এমন কিছু শুনতে হবে ভাবতে পারেনি৷ যে বাবাকে পৃথিবীর বেস্ট বাবা মানত আজ সেই বাবাকে ঘৃণার চোখে দেখতে হচ্ছে৷ নিজের কাছে নিজেকেই অপরাধী মনে হচ্ছে৷ তনু ভেজা গলায় জবাব দিল,
❝হুম আমি জানতে চাই কি এমন ঘটনা বাকী আছে যার জন্য আমি একদম ভেঙে পড়ব৷ মেনে নিতে পারব না৷❞
ঋষি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,
❝তাহলে শুনো৷ তুমি যাকে মা হিসেবে এতদিন জেনে এসেছো তিনি সত্যিকার অর্থে তোমার মা নয়৷ উনি তোমার পালিত মা৷ তোমার জন্মদাত্রী জননীকে তোমার বাবা নিজ হাতে খুন করেছেন৷❞
তনুর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল৷ চিৎকার করে ফ্লোরে বসে পড়ল৷ নেত্রদ্বয় থেকে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। তনুর কান্নার শব্দে আসিফ চৌধুরী, গুলবাহার দ্রুত গতিতে ছাঁদে আসেন৷ তনুর পাশে বসে আছেন ঋষি৷ অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই তনু জ্ঞান হারিয়ে ফেলল৷ তনুর মস্তিষ্ক এতকিছু মেনে নিতে পারেনি৷
________________________
চোখ মেলে পাশে ঋষিকে দেখতে পেল৷ ঋষির হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলল,
❝তোমাকে ওরা মে*রে ফেলবে৷ তোমাকে হারাতে পারব না।❞
তনুর হাতের উপর হাত রেখে বলল,
❝কেউ আমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না৷ যতদিন তুমি পাশে থাকবে কেউ আমাকে মারতে পারবে না৷❞
❝বাবা আজ হুমকি দিয়েছেন তোমাকে নিজ হাতে হ*ত্যা করবে৷ তুমি বাংলাদেশ থেকে চলে যাও৷ আমি চাই তুমি পৃথিবীর বুকে থাকো৷ সবুজ গাছপালা থেকে অক্সিজেন নাও।❞
❝আমি চলে গেলে কি তোমাদের ছেড়ে দিবে৷ কখনও নয়৷ আমাকে ধরার জন্য তোমাকেও শেষ করতে এক মুহুর্ত ভাববে না৷ যতদিন বেঁচে থাকব এক সাথে বাঁচব। আর তোমার বাবাকে আমরা শাস্তি দিব৷ তোমার বাবার বিরুদ্ধে প্রমাণ আমরা সংগ্রহ করব৷ যতই তিনি পুলিশকে নিজের পকেটে রাখেন৷ উনি ঠিক শাস্তি পাবেন।❞
ঋষির সাথে ঋষির মা বাবা বলে উঠলেন। আসিফ চৌধুরী সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
❝সবার আগে আমাদের আত্মরক্ষা করতে হবে৷ আমাদের এমন জায়গায় গা ঢাকা দিতে হবে যেন রিয়াদ হোসেন খুঁজ না পায়৷ সুস্থ মতো তনুর সন্তানকে পৃথিবীতে নিয়ে আসতে হবে৷❞
তাদের কথার মধ্যে মধ্যে তনুর ফোনটা বেজে উঠল৷
চলবে…….
ভুল ত্রুটিগুলো মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন। সামনে পরীক্ষা আর দুই পর্বে এই গল্পটা শেষ করে দিব৷