#সম্পর্কের_প্রণয়
#পর্ব_০৫
#নুর_নবী_হাসান_অধির
❝আমি তোমাকে কতবার বলছি যাই হয়ে যাক তনুকে আমি এই বাড়ির বউ হিসেবে মেনে নিতে পারব না৷ তনুর বাবা রিয়াদ হোসেন যদি জানতে পারে তনু মা হতে চলছে তখন একটা ঝড় আসবে আমাদের সংসারে৷❞
গুলবাহার রাগ মিশ্রিত কন্ঠে নিজের স্বামী আসিফ চৌধুরীকে বলছেন৷ কিন্তু সেদিকে আসিফের কোন হেলদোল নেই৷ নিজের ইচ্ছামতো সিগারেট ধোঁয়া উড়াচ্ছে৷ যা গুলবাহারকে আরও রাগিয়ে দিচ্ছে৷ হাত থেকে সিগারেট কেঁড়ে নিয়ে বললেন,
❝আমার কথা তোমার কানে যাচ্ছে না৷ আমি তোমার সাথে কথা বলছি৷❞
মুখ থেকে নিকোটিনের ধোঁয়া বাতাসে ত্যাগ করে আসিফ জবাব দিলেন,
❝জানি তুমি আমার সাথে কথা বলছো৷ তবে আমার কি করার আছে? আমরা তো সবকিছু জেনেই তনুকে এই বাড়িতে নিয়ে এসেছি৷ আমরা তো জানতাম এটা তনুর দ্বিতীয় বিয়ে৷ তবুও সেদিন নিজেদের মুখ খুলতে পারিনি৷❞
❝এ লুকোচুরি আমার ভালো লাগছে না৷ আমাদের যাই হোক আমরা আর রিয়াদকে ভয় পাব না৷ তার কাছে ক্ষমতা শক্তি থাকলেও আমাদের কাছেও আছে৷ আমরাও তার বিরুদ্ধে লড়াই করব৷❞
❝রিয়াদকে কতটুকু চিনো? নিজের স্বার্থের জন্য তনুর মাকে হত্যা করতে দুইবার ভাবেনি৷ সেখানে আমাদের ছেড়ে দিবে৷❞
স্বামীর কথায় আরও এক ধাপ ধাক্কা খেলো গুলবাহার। মাথায় নাড়া দিচ্ছে তনুর মাকে হত্যা করলে এখন যিনি আছেন তিনি তনুর কি হোন? আমতা আমতা করে বলল,
❝তনুর মাকে কেন হত্যা করতে যাবে৷ একজন মানুষকে চাইলেই হত্যা করা যায়৷ বর্তমানে যিনি আছেন তিনি কে?❞
❝উনি তনুর সৎমা৷ কিন্তু তনুর উপর কখনও বাজে প্রভাব ফেলতে পারেননি৷ সবারই মৃত্যু ভয় আছে৷ মৃত্যুর ভয় না থাকলে আমি জেনে শুনে এমন বাবার মেয়েকে বাড়ির বউ কখনও করতাম না৷ তবে রিয়াদের বিরুদ্ধে একটা প্রমাণ জোগাড় করতে পারলে কেউ আমার হাত থেকে তাকে বাঁচাতে পারবে না৷❞
❝আমার ভীষণ ভয় হচ্ছে৷ রাগের মাথায় তনুর সন্তানের কোন ক্ষতি না করে৷ প্রথম বিয়ে তো ভেঙেছে তনু কনসিভ হওয়ার জন্য৷ এখন যদি পুনরায় এ কথা তনুর বাবার কানে যায়৷❞
❝ভয়ের কিছু নেই৷ তনু মা হতে চলছে এই খবর কিছুতেই রিয়াদের কানে যাবে না৷ তিনি চান মেয়েকে জোর করে আবার অন্য কোন বাড়ির বউ বানাতে৷ তার বিনিময়ে সবকিছু নিজের করে নিবেন৷ রিয়াদ একটা মানুষ! নিজের মেয়েকে ছাড় দেয়নি৷❞
ঋষি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না৷ নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। তার মানে ঋষির মা বাবা৷ তনুর প্রথম বিয়ের বিষয়ে সবকিছু জানত৷ তবুও কখনও এ নিয়ে কথা বলেনি৷
________________________
কোলে মাথা রেখে তনুর কোমর জড়িয়ে ধরে বসে আছে ঋষি৷ মুখে বিষণ্নতা বিরাজ করছে৷ ভয়ে চুপসে আছে৷ তনু ঋষির মাথায় হাত রেখে বলল,
❝আপনার কি হয়েছে? এভাবে ভয় পেয়ে আছেন কেন? ডাক্তারের কাছ থেকে তো আসলেন তখনও তো ভালো ছিলেন৷❞
ঋষি তনুর কোমর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
❝আমি কিছুতেই তোমাদের ক্ষতি হতে দিব না৷ আমি থাকতে কেউ তোমাকে আর আমাদের ভালোবাসার প্রতীকের গায়ে ফুলের টুকাও দিতে পারবে না৷❞
ঋষির কথাগুলো তনুকে ভাবিয়ে তুলছে৷ ঋষির মা বাবার সাথে কি এমন কথা হয়েছে? যার জন্য ঋষি ভীষণ ভয় পেয়ে আছে৷ তনু ঋষিকে অভয় ভরসা দিয়ে বলল,
❝আল্লাহ যতদিন আমাদের সহায় আছেন ততদিন কেউ আমার ক্ষতি করতে পারবে না৷ আমি আল্লাহর কাছে দুই হাত তুলে দোয়া করি যেন আল্লাহ তায়ালা আমাদের ভালো রাখেন৷❞
ঋষি তনুর হাত নিজের মুষ্টিতে আবদ্ধ করে বলল,
❝আমার একটা কথা রাখবে? আমি তোমার কাছে এর থেকে বেশি কিছু চাইনা৷❞
❝আমি আপনার প্রতিটি কথা মেনে চলার চেষ্টা করব৷ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আপনাকে আগলে রেখে এগিয়ে যাব৷❞
❝তুমি কনসিভ এই কথা কি তোমার বাবা জানেন? দয়া করে তোমার বাবাকে এসব কথা বলবে না৷ এসব কোন কথা বলবে না তোমার মাকেও৷❞
তনু চকিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ঋষির উপর। তনু কিছুই বুঝতে পারছে না৷ সবকিছু তাল গোল মিলিয়ে ফেলছে৷ অবাক কন্ঠে বলল,
❝আপনি মা বাবার সাথে সম্পর্ক রাখতে মানা করছেন কেন? আমি বাবাকে ফোন দিছিলাম৷ কিন্তু বাবা ফোন তুলেনি৷ ফোন তুললে বলে দিব৷ কিন্তু আপনি মানা করছেন কেন?❞.
ঋষির চোখে যেন উজ্জ্বলতা ফিরে পেল৷ মনের গহীন কোণে আনন্দের জোয়ার বয়ে গেল৷ কিন্তু নিমিষেই মনটা খারাপ হয়ে গেল৷ এভাবে কতদিন লুকিয়ে রাখবে৷ রিয়াদ হোসেনের হাত অনেক লম্বা৷ তিনি ঠিক জেনে যাবেন৷ তাছাড়া তিনি আমাদের উপর সব সময় নজর রাখেন৷ যা বাবা মায়ের কথার ধরণ দেখে বুঝতে পারলাম৷ ঋষি গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
❝আমি তোমাকে জানাতে বারণ করছি৷ তুমি এ খবর কিছুতেই জানাবে না৷ আর হ্যাঁ তুমি তোমাদের বাড়িতে যেতে পারবে না৷ দরকার পড়লে আমি তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাব৷❞
তনু ঋষিরর গুগলির মায়াজালে ফেঁসে যাচ্ছে৷ কিছুই বুঝতে পারছে না৷ ঋষি কেন এমন করছে? আমার কাছ থেকে কি লুকাতে চাচ্ছে৷ আমার আড়ালে নতুন মায়াজাল ভিছিয়ে রাখেনি তো৷ তনু কিছুটা উঁচু স্বরে বলল,
❝আমি পারব না এমন কাজ করছে৷ আমার কাছে সবকিছুর ঊর্ধ্বে মা বাবা৷ যে মা দশ মাস দশদিন গর্ভে ধারণ করেছে তাকে ভুলে যাব। যে বাবা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে আমাকে মানুষের মতো মানুষ করেছে তাকে ভুলে যাব। কিভাবে ভাবলেন আমি অকৃতজ্ঞ সন্তানের মতো সবকিছু ভুলে যাব?❞
❝কাউকে ভুলতে বলিনি৷ কিছুদিন তাদের থেকে দূরে থাকতে বলছি৷ ধীরে ধীরে সবকিছু জানতে পারবে৷ তুমি এখনও অন্ধকারে ঢুবে আছো৷ আমার মতো তোমারও একদিন চোখ খুলে যাবে৷ তখন নিজেকে সামলিয়ে নিও৷ দুইদিন অফিস করিনি৷ অনেক কাজ জমা পড়েছে৷ তুমি আরাম কর৷ আমি ল্যাবটপে একটু অফিসের কাজ করি৷❞
ঋষি নিজে থেকে সরে আসল৷ এ মুহুর্তে তনুকে এসব কথা বললে বিশ্বাস করবে না৷ তাছাড়া এসব শুনে উত্তেজিত হলে বিপরীত কিছু হতে পারে৷ তনু ধীর পায়ে বারান্দায় চলে গেল৷ ঋষি ল্যাবটপে কাজ করছে৷ দূরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে তনু৷ ব্যাপ্সা গরমে পরিবেশটা উষ্ণ হয়ে আছে৷ চাতক পাখি বৃষ্টির পানি পান করার জন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে৷ একটু বৃষ্টি মেটাবে তৃষ্ণা। মন বার বার বলছে ঋষি কি এমন বলতে চাচ্ছে? কেনই বা সবার সাথে সম্পর্কে ভাঙতে বলছে৷ ঋষি কাজে মনোযোগ দিতে পারছে না৷ বারবার তার মাথায় কথা নাড়া দিচ্ছে৷ তনুর বাবাকে কেন সবাই ভয় পাচ্ছে৷
______________________
ঋষির অফিস ছুটি হতেই ছুটে আসে শ্বশুর বাড়িতে৷ কেন সবাই তনুর বাবা রিয়াদ হোসেনকে ভয় পায়। ডাইনিং রুমে পা রাখতেই শ্বশুর মশাইয়ের মুখোমুখি হলো৷ অসময়ে ঋষি আসতে পারে কল্পনাও করতে পারেন নি৷ ঋষি ভদ্রতার সাথে সালাম দিল৷ রিয়াদ হোসেন সালামের জবাব দিয়ে বললেন,
❝অসময়ে আসার কারণ কি? সবকিছু ঠিক আছে? তনুর কিছু হয়নি তো৷❞
ঋষি মুচকি হেসে বলল,
❝তনুর কিছু হয়নি৷ সে একদম ঠিক আছে৷ তবে আমাদের মাঝে দিন দিন দূরত্ব কমে যাচ্ছে৷ আমি তনুর থেকে মুক্তি চাই৷ কিন্তু কোর্টের আদেশ অনুযায়ী আমাদের একসাথে থাকতে হবে ছয় মাস৷ আমরা তেমন কোন অভিযোগ করতে পারিনি৷❞
রিয়াদ হোসেনের মুখে উজ্জ্বলতার হাসি ফুটে উঠল৷ হাসিমুখে জবাব দিলেন
❝এ নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না৷ আমি হাজারটা কারণ উল্লেখ করে দিব৷ দেখবে এক সপ্তাহের মধ্যেই তোমাদের ডিভোর্স হয়ে যাবে৷❞
তাদের কথার মধ্যে কাজের মেয়ে ইভা চা নিয়ে হাজির হয়৷ ঋষি বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলল,
❝বাবা আমি আজ কিছুই খেতে পারব না৷ তনু কিছু জানতে পারলে আমাদের বিয়ে আটকাতে আরও কিছু করতে পারে৷ তাই তাকে কিছু বলবেন না৷❞
রিয়াদ হোসেন মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল৷ কাজের মেয়ে কিছু বলতে নিলেই রিয়াদ হোসেন চোখ রাঙিয়ে মানা করেন৷ ঋষি মনে মনে বলল,
❝পৃথিবীতে আপনিই একজন বাবা যে মেয়ের ভালোবাসা বুঝতে পারল না৷ আপনার পাপের পাহাড় এখন ভেঙে যাবে৷ সে পাহাড় ভাঙবে আপনার মেয়ে৷❞
চলবে……..
ভুল ত্রুটিগুলো মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।