#সম্পর্কের_প্রণয়
#পর্ব_০৪
#নুর_নবী_হাসান_অধির
❝বর্তমানে আমি মানসিকভাবে প্রস্তুত নয়৷ সবকিছু মানুয়ে নিতে আমার কিছুদিন সময় লাগবে৷ তার আগে আমি কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারব না৷❞
তনুর দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল,
❝ততদিনে আমার মেরুদণ্ড সোজা হয়ে যাবে৷ বর্তমানে আমি মেরুদণ্ডহীন হয়ে গেছি। আর মা, বাবা তোমাদের সাথে আমার কিছু কথা আছে৷ আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর চাই৷❞
আসিফ চৌধুরী বা গুলবাহার ছেলের কথা বুঝতে পারলেন না৷ একে অপরের দিকে চকিত দৃষ্টিতে তাকালেন। ঋষি তনুকে একবার প্রদক্ষিণ করে নিজের রুমে চলে যায়। তনুর বুঝতে বাকী রইল না ঋষি কি বুঝাতে চাচ্ছে?
তনু নিজের শ্বশুর শ্বাশুড়ির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে জবাব দিল,
❝ভালোবাসা মানুষের অল্প খাঁচ সহ্য করতে পারে না। আর সেখানে আমি অনেক বড় অন্যায় করেছি৷ আমাকে মেনে নিতে একটু কষ্ট হবে। আপনারা সাহায্য করলে আমি ভালোবাসার এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারি৷❞
গুলবাহার তনুর কথাগুলো মেনে নিতে পারছেন না ঠকভাবে? সবকিছুতেই যেন রহস্যের গন্ধ পাচ্ছেন৷ রহস্য ঘিরে রেখেছে চারটি জীবনের মধ্যে। আসিফ চৌধুরী তনুর মাথায় হাত বুলিয়ে মুচকি হেঁসে বললেন,
❝যেকোন কাজে আমাকে পাশে পাবে৷ মানুষ মাত্রই ভুল৷ তোমার জীবনে একটা কালো অধ্যায় আছে। সে কালো অধ্যায়ের কথা ভুলে যাও৷ অন্ধকার কখনও দিনের আলোকে আড়াল করতে পারে না৷ ঠিক তেমনই তোমার জীবনের কালো অধ্যায় তোমার সুন্দর জীবনের বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না৷❞
আসিফ চৌধুরীর স্নেহময় বৃক্ষছায়ার মতো কথাগুলো হৃদয় ছুঁয়ে গেল৷ আবেগের চোখের কোণে জল চলে আসে৷ তনুর মুখের উজ্জ্বলতা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে৷ তনু মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে রুমে চলে আসল৷ ঋষি বিছানায় শুয়ে আছে৷ তনু ঋষিকে এক পলক দেখে বারান্দায় চলে গেল৷ তনুর প্রশ্নগুলো বার বার মাথায় নাড়া দিচ্ছে৷ তনুর কাছ থেকে কথাগুলো জেনে নিবে নাকি অন্য কারোর কাছ থেকে৷ তনু বারান্দার রেলিং ধরে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে৷ ঋষি পিছন থেকে এসে তনুকে হালকা করে জড়িয়ে ধরল৷ ঋষির গরম নিঃশ্বাস তনুর ঘাড়ে পড়ছে৷ তনু খিঁচে চোখ বন্ধ করে নিল৷ মলিন মিহি কন্ঠে আমতা আমতা করে বলল,
❝এসব কি করছেন? একটু আগেই তো…. ❞
কোন কিছু বলার শক্তি পেল না৷ তনুর ঘাড়ে ওষ্ঠদ্বয় ছুঁয়ে দিল৷ তনুর কথা বন্ধ হয়ে যায়৷ তনুর কানে ফিসফিস করে বলল,
❝তোমাকে নিয়ে আজ ঘুরতে যাব! অনেকদিন হলো আমরা একা কোথাও ঘুরতে যাইনা৷ একসাথে সময় কাটালে আমাদের মাঝে অনেক দূরত্ব কমে যাবে৷❞
তনু পিছন ফিরে ঋষির চোখে চেখ রাখে৷ হয়ে কিছু কথা নয়নে নয়নে৷ ( নয়নে নয়নে রাখিব তোমায়) চকিত কন্ঠে জবাব দিল,
❝আজ তো আপনার অফিস আছে৷ অফিস মিস করে আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবেন৷ একটু বেশিই হয়ে যাচ্ছে না৷❞
❝তোমার সাথে ঘুরতে যেতে ছুটির দিন লাগবে? ছুটির দিন ছাড়া আমরা ঘুরতে যেতে পারিনা৷ হাত বাড়িয়ে দেওয়া ভুল হয়েছে।❞
❝ছুটির দিন ছাড়া আগে কখনও ঘুরতে নিয়ে যাননি৷ তাছাড়া এত মান মালিন্যের পর আজ হুট করেই ঘুরতে যাওয়া আমার কাছে রহস্য লাগছে৷❞
❝তোমার কথার জবাব দিতে পারব না৷ আমার সাথে ঘুরতে যাবে মানে ঘুরতে যাবে৷❞
তনু আর কথা বাড়াল না৷ সম্পর্কটাকে পূর্ণতা দিলে গেলে নিজেকে এক পা এগিয়ে যেতে হবে৷ জায়গা করে নিতে হবে মনের গহীনে৷ অস্তিত্ব খুঁজতে হবে বা পাশের হাড়ে। তনু মুচকি হেসে রুমের দিকে পা বাড়াতেই ঋষি বলল,
❝কালো রঙের শাড়ীটা পড়বে৷ কালো শাড়ীতে তোমাকে অপরূপা লাগে৷ ইচ্ছা করে তোমার পাশে সারাজীবন বসে থাকি৷ মুগ্ধ নয়নে আজীবন দেখলেও এই নয়নের তৃষ্ণা মিটবে না৷❞
__________________________
রিক্সায় দূরত্ব বজায় রেখে বসে আছে তনু৷ যা ঋষি মেনে নিতে পারছে না৷ ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে সামান্য দূরত্ব মনের গহীনে বিষন্নতার দাগ কাটে৷ ঋষি তনুকে এক টানে নিজের কাছে নিয়ে আসে৷ আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলল,
❝মিসেস তনু আমার কাছ থেকে তোমার মুক্তি নেই৷ তোমার হাত একবার ধরেছি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তোমাকে ছাড়তে পারব না৷❞
❝একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না৷ যে ছেলে কিছুদিন আগেও ডিভোর্সের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল আজ সেই ছেলে ভালোবাসার কথা বলছে৷ আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে দিনের বেলায় আকাশে চাঁদ উঠেছে৷❞
ঋষির তনুর প্রতি উত্তরে কিছু বলল না৷ মনে মনে বলল,
❝তনু তুমি যদি ডালে ডালে ঘুরতে পার, আমি ঘুরি পাতায় পাতায়৷ হঠাৎ পরিবর্তন আমার মনে নাড়া দিয়েছে৷ এমনও হতে পারে টা তোমাদের বাবা, মেয়ের নতুন কোন চক্রান্ত। এবার আমাকে আর বোকা বানাতে পারবে না৷ সেজন্য আমি আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে নেমে পড়েছি৷ তবে তোমার প্রশ্নগুলোর উত্তর তোমার বাবার কাছ থেকে নিব৷❞
তনুর ঋষির হাতের উপর হাত রেখে বলল,
❝কি ভাবছেন? আমাকে মেরে ফেলার নতুন কোন পরিকল্পনা।❞
ঋষি রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
❝মেরে ফেলার হলে অনেক আগেই মেরে ফেললাতাম। যাকে ভালোবাসি তার গায়ে হাত তোলার প্রশ্নই উঠে না৷ এতকিছুর পরও তোমার সাথে ততটা খারাপ ব্যবহার করিনি৷ যতটা খারাপ মনে কর ততটা খারাপ নয়৷ আমার মনে কারোর জন্য ভালোবাসা আছে৷ আর সেটা তুমি৷❞
তনু এ প্রসঙ্গ নিয়ে আর কোন কথা বাড়ায়নি৷ সারাদিন পাখির মতো ডানা মেলে ঘুরে বেড়িয়েছে এক জোড়া প্রাণ৷ হাজারও অভিমানের মধ্যে বেঁচে আছে এক চিলতে ভালোবাসা। এক চিলতে ভালোবাসা পূর্ণতা পেতে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হয়েছে৷
______________________________
সন্ধ্যার পর থেকে তনুর উদরে চিনচিন ব্যথা অনুভব করছে৷ ব্যথাটা ধীরে ধীরে তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে৷ অবস্থা নাজেহাল দেখে ঋষি প্রশ্ন করল,
❝কি হয়েছে? এমন করছো কেন? কোথায় কষ্ট হচ্ছে?❞
কান্না জনিত ভেজা গলায় বলল,
❝উদরে অসহনীয় ব্যথা হচ্ছে৷ এমনটা আগে কখনও হয়নি৷ আজ হুট করেই এমন হচ্ছে৷ গ্যাসের সমস্যা হলে ভালো হয়ে যেত৷ কারণ আমি গ্যাসের ট্যাবলেট অনেক আগেই খেয়েছি৷ ইতিমধ্যে ভালো হয়ে যাওয়ার কথা৷ ডান সাইডে ব্যথা হলে এপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা৷ কিন্তু তেমমটা নয়৷❞
ঋষির অবস্থা পাগল প্রায়৷ ঋষি তার পরিচিত একজন ডাক্তারের কাছ থেকে জানতে পারল কনসিভ অবস্থায় সারাদিন জার্নি করার জন্য এমন হয়েছে৷ রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে৷ কাল ডাক্তার দেখাতে বলেছে৷
ঋষি সারাদিন তনুর পাশে বসে উদরের ব্যথা প্রশমনের জন্যে গরম কাপড়ের উষ্ণতা প্রয়োগ করেছে৷ গর্ভকালীন একজন মাকে কত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়৷ যিনি গর্ভে সন্তান ধারণ করেন তিনিই বুঝতে পারেন সন্তান হওয়ার কতটা কষ্টের৷ কিন্তু সে কষ্ট মায়ের কাছে তুচ্ছ৷ মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আলো বাতাস ছাড়া মায়ের রক্ত পান করে বেড়ে উঠে৷ আল্লাহর মেয়ে জাতিকে অসীম ধৈর্য ধারণ করেন৷ প্রতিটি সন্তানের জন্য দিয়েছেন মাতৃদুগ্ধ। যা সন্তানের জন্য কতটা উপযোগী। না শীতল, না গরম, না ঘন, না পাতলা। সন্তানের জন্য যেমনটা প্রয়োজন তেমনই দিয়েছেন৷
তনুর উদরের ব্যথা কমলে চোখে তন্দ্রা লেগে আসে৷ কখন ঘুমিয়ে পড়ে জানা নেই৷ সকালে ঘুম ভাঙতে নিজেকে ঋষির বুকে আবিষ্কার করে৷ ঋষি তনুকে দুই বাহুর সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে৷ বাহুদ্বয় থেকে ছাড়া পেলেই দূরে কোথাও হারিয়ে যাবে৷ প্রতিটি মানুষ৷ এভাবেই যেন ভালোবাসার মানুষকে আগলে রাগে৷ তনু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল ফজরের আজান অনেক আগেই পড়েছে৷ নামাজ পড়ার সময় শেষ৷ এখন সূর্য উদয়ের সময়৷ মহানবী (স) তিন সময় নামাজ পড়তে মানা করেছেন৷।
১. সূর্য উদয়ের সময়।
২. দ্বিপ্রহরের সময়৷
৩. সূর্যাস্তের সময়৷
এমন সময় নামাজ পড়া যাবে না৷ সেজন্য তনু ঋষির বুকেই ছোট বাচ্চার মতো শুয়ে থাকে৷
চলবে……
ভুল ত্রুটিগুলো মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন৷