#তুমি_আমার_প্রেমবতী
#পর্বঃ১৫
#সানজিদা_খানম_স্বর্ণা
৩৩.
ফজরের আযান হয়েছে কিছুক্ষন আগে।প্রেমা’র ঘুম ভেঙে যায়। হুট করেই মনে পড়ে আদিল ঘরে ফেরেনি। তাছাড়া ঘরে একজন পুরুষ আছে, যার সাথে তার তেমন কোনো সম্পর্ক নেই।লোকে তাদের এক ঘরে দেখলে নানা কথা বলবে।এই ভেবেই দ্রুত অভিকে ডাকে প্রেমা।আদিলের চৌকিতে শুয়েছিল অভিপ্রেমার ডাকে ঘুম ভাঙে না তার।প্রেমা এগিয়ে মাথার কাছে গিয়ে ডাকতে নিলে পায়ের সাথে ধাক্কা লেগে চৌকির নিচে থাকা একটা গ্লাস থেকে পানি পরে যায় মাটিতে।প্রেমা গ্লাসটা সোজা করে মাথার কাছে গিয়ে জোরে জোরে ডাকে অভিকে অভি মিটমিট করে চোখ খুলে তাকায়।ঘুমের রেশ কাটাতে চুপ করে বসে থাকে কিছুক্ষণ।
অত:পর নামতে গেলে পা পিছলে যায়, প্রেমাকে ধরে ভারসাম্য রাখতে গেলে প্রেমা সহ নিচে পরে যায়। অভির বুকের ওপর পরেছে প্রেমা। প্রেমাবেগের তীব্রতায় অভি মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকে প্রেমার দিকে।শ্যাম কন্যার মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে ভালোবাসার স্বাধ অনুভব করে অভি। মনে মনে সে যে প্রেমাকে ভালোবেসে ফেলেছে।মনের গোপন কুঠুরিতে প্রেমা প্রেমের পরশ দিয়ে ছুঁয়েছে। শুষ্ক হৃদয়ে প্রেমের শীতল বর্ষণ ঘটিয়েছে।শ্যাম কন্যারও একটা আলাদা সৌন্দর্য আছে।প্রেমিকাকে কেন সবসময়ই সুন্দরী হতে হবে।শ্যাম কন্যার প্রেমে পড়েও তো জীবন সার্থক করা যায়।অভি প্রেমাকে জড়িয়ে এই সব ভেবেই চলেছে।প্রেমা অভির থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। অভির সেদিকে খেয়াল নেই।
‘এই ছাড়ুন আমাকে। এই ভাবে ধরে রেখেছেন কেন?নিজে তো পরলেন আমাকেও ছাড়লেন না?ছাড়ুন আমাকে।’
‘আচ্ছা এখানে পানি আসলো কিভাবে?’
‘আমার পা লেগে একটু পরে গেছিলো।কিন্তু আপনি তাতে কেন পিছলে পরতে গেলেন দেখে শুনে নামবেন না।আজব লাগে?’
‘ওহহ,সরি। আমার নিজের ভুল হয়েছে।কিন্তু তুমি পানি না ফেলে দিলে আমি তো আর পরে যেতাম না।’
‘সব কথা পরে বলুন।দয়া করে এখন আমাকে ছাড়ুন।’
অভি ছেড়ে দেয় প্রেমাকে।দ্রুত অভির বুকের ওপর থেকে সরে যায় প্রেমা।অভি নিজেও ওঠে দাঁড়ায়।
‘দেখুন সকাল হয়ে গেছে।আদিল এখনো ফেরেনি।আপনি চলে যান এখন।কেউ আপনাকে আর আমাকে এক ঘরে দেখে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে।লোকে তো আর জানবে না আমরা কোনো অন্যায় করি নি।লোকে ভুল বুঝবে। এমনিতেই বস্তির অনেকে এটাই বলে, মা মর’তেই নাকি বড়লোকের ছেলেকে হাত করে নোংরামি করছি।আরও নানান কটু কথা শুনতে হয়।এখন মুখ বুজে মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোনো পথ নেই।কিন্ত কেউ যদি এখন দেখতে পারে এক ঘরে আমাদের দুজনকে তাহলে বস্তি বাসী ছাড়বে না আমাদের।তারা উল্টো পাল্টা ভেবে নিয়ে যে-কোনো সিদ্ধান্ত নিতেও পিছ’পা হবে না।’
‘তুমি কিসের ভয় পাচ্ছো বলতো?কে কি বললো,তাতে আমাদের কি যায় আসে?আমাদের নিজেদের মতো বাঁচার অধিকার আছে।কেউ কেন তোমাকে কিছু বলবে?’
‘কেন বলবে না বলুন তো?লোকে যখন আমাকে জিজ্ঞেস করে আপনার সাথে আমার কি সম্পর্ক? তখন আমি কোনো উত্তর খুঁযে পাই না।সত্যিই তো আপনার সাথে আমার কি সম্পর্ক? কোন অধিকারে আপনি আমাদের এতো সাহায্য করেন?কেনই’বা এতো খোঁজ খবর নেন?সেদিন একজন বললো,আমি নাকি আপনার রক্ষিতা। রক্ষিতা শব্দের মানে বুঝেন?আমি তো আপনাকে কবেই না করেছিলাম আমাদের বাড়িতে এসে আমাদের খোঁজ নিতে হবে না।কিন্তু আপনি তো কথা শুনলেন না। তাই লোকে আমাকে যাই বলুক সহ্য আমাকেই করতে হবে।সে সব কথা থাকুক আপনি এখন চলে যান কেউ আপনাকে দেখে ফেললে সমস্যা হবে।’
‘কি সমস্যা হবে?কিসের ভয় পাচ্ছো তুমি?লোকে তোমাকে আর আমাকে দেখে ফেললে সর্বোচ্চ কি করবে?দুজনের বিয়ে দিয়ে দেবে তাইতো?সমস্যা কি বিয়ে করবো তোমাকে। তবুও তোমাকে রক্ষিতা শব্দটার থেকে মুক্তি তো দিতে পারব।বিয়ে করে হলেও তোমাদের পাশে থাকার অধিকার পাবো।হ্যাঁ আমি সেটাতেই রাজি।’
প্রেমা নিশ্চুপ। অভির কথায় অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেছে সে। অভ এইসব কি বলছে? মাথা ঠিক আছে তার!যদিও অভির প্রতি ভালোবাসা না হোক একটা ভালো লাগা তো মনের কোণে জন্ম হয়েছেই।কিন্তু অভি যে সহজ ভাবে বলে দিল বিয়ে দিলে সে বিয়ে করবে।
‘কি হলো প্রেমা?চুপ করে কেন আছো?আমি সত্যি বলতেছি,এখন কেউ আমাদের বিয়ে দিয়ে দিলে আমি তোমাকে বিয়ে করতে প্রস্তুত।দেখো প্রেমা আমি তোমাকে ভালোবাসি কিনা জানিনা।কিন্তু তোমার মায়াবী মুখ, মুখের স্নিগ্ধ হাসি,কাজল রেখার মতো যুক্ত ভ্রূযুগল,আয়তকৃষ্ণ দুটি আঁখি,সুদীর্ঘ কেশ রাশি,মুখের ভাষার মাধুর্যতা,শ্যাম বর্ণ মুখের মাঝে গোলাপের পাপড়ির মতো ঠোঁট, আমি তোমাতে মুগ্ধ প্রেমা।তুমি আমার প্রেমবতী। আমি সবসময় সুন্দরী নারীকে ঘৃণা করি তার অবশ্য একটা কারণ আছে। আর সুন্দরীদের সেই ঘৃণা থেকেই আমার শ্যাম কন্যার প্রতি ভালোবাসার জন্ম। প্রেমা #তুমি_আমার_প্রমবতী হবে?অনেক ভালোবাসবো তোমাকে।’
৩৪.
প্রেমার চোখে মুখে বিস্ময়। কি বলছে কি অভি?তাকে ভালোবাসে?অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে প্রেমা।কথা বেরুচ্ছে না তার মুখ দিয়ে।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,
‘কি বলছেন কি?আপনি আমাকে ভালোবাসেন?জানেন না ধণী গরিবে ভালোবাসা হয় না?এই ভালোবাসা আপনাকে কাঁদাবে?আপনি কাঁদেন সেটা আমি চাই না।তাই আপনার ভালোর জন্যই বলছি আমাকে ভুলে যান।আমাকে নিয়ে এই সব চিন্তা মাথায় আনবেন না।আপনি কোথায় আর আমি কোথায়?আর কালো একটা মেয়েকে ভালোবেসে কি পাবেন?’
‘কালো মেয়েকেই আমি ভালোবাসি।আর ভালোবাসলে কাঁদতে হয়।সত্যিকারের ভালোবাসা চোখের পানি ঝড়াতে জানে।আমি যদি তোমাকে ভালোবেসে কাঁদি তাহলে সেটা ভালোবাসার কান্না হবে।’
‘সুন্দরীদের কেন ঘৃণা করেন?’
‘সে এক লম্বা কাহিনি। শুনে কি হবে?’
‘এতো কথা বলতে পারলেন আর এটা বলতে পারবেন না?লম্বা কাহিনি না হয় একটু সংক্ষেপে বলুন।তবুও বলুন।’
‘আমার ছোটবেলার একটা বন্ধু ছিল।নাম ছিল অন্তু।অবশ্য আমার নামের সাথে মিলিয়ে তাকে অন্তু নামটা আমিই দিয়েছিলাম।তার বাবা মা ছিল না সে ছিল অনাথ।তার সাথে আমার বন্ধুত্ব ছিল খুব ছোট বেলা থেকেই।আমি যখন স্কুলে যেতাম সে তখন স্কুলের বাইরে বাদাম বিক্রি করতো।আমাদের বন্ধুত্বের শুরুটা কীভাবে হয়েছিল জানিনা।তবে আমি তাকে খুব ভালোবাসতাম।নিজের সবটা দিয়ে তাকে সাহায্য করতাম।বাবা মাকে লুকিয়ে তাকে টাক খাবার আরও অনেক কিছুই দিতাম।বাবা মাকে না জানিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার সাথে কথা বলে আমি অন্তুকে স্কুলে ভর্তি করতে চাইলাম।আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার কোনো ছেলে মেয়ে ছিল না।তাই তিনি অন্তুকে নিজের ছেলের মতো বড় করলেন। অন্তুর জীবনটা গুছিয়ে দিলেন।অন্তু অনেক ভালো স্টুডেন্ট ছিল।মাধ্যমিক শেষ করার পরে আমরা দুজন এক কলেজে ভর্তি হই।কলেজ লাইফ শেষ করার আগেই অন্তুর জীবনে একটা মেয়ে আসে।অনেক সুন্দরী ছিল মেয়েটা।মেয়েটা অন্তুকে ভালোবাসার স্বপ্ন দেখায়।কিন্তু যেদিন জানতে পারে অন্তু অনাথ সেদিন সে অন্তুকে ছেড়ে যায়।আর সুন্দরী হবার সুবাধে অন্তুর সাথে পর
ব্রেকাপের পর আবার অন্য ছেলেদের সাথে রিলেশনে জড়ানো তার কাছে তেমন কোনো ব্যাপার ছিল না।কিন্তু অন্তু এসব মানতে পারে নি।সে নিজের জীবন নিজের হাতে শেষ করে দেয়।আমার বেস্ট ফেন্ড আমাকে ছেড়ে চলে যায়।এর পর থেকে সুন্দরী মেয়েদের আমি চরম ঘৃনা করি।সুন্দরী মেয়্বদের দেখলে আমার ঘৃণা হয়।বুকের ভেতর পাহার সমান কষ্ট নিয়ে আমার প্রিয় বন্ধু দুনিয়া থেকে চলে গেছে। আমি তার জন্য কিচ্ছু করতে পারিনি।আমি আমার জীবনে একজন বন্ধু পেয়েছিলাম তাকে হারিয়েছি এক সুন্দরী নারীর জন্য।এরপর থেকে আমার জীবনে আর কোনো বন্ধু আসে নি।একা একা ভার্সিটি লাইফ শেষ করেছি।কাউকে নিজের জজবনে জড়াইনি।কিছু দিন আগে স্নিগ্ধা নামক এক সুন্দরী মেয়ের সাথে আমার বিয়ের কথা হয়েছিল আমি তাকে রিজেক্ট করে দিয়েছি।তালে যা নয় তাই বলে অপমান করেছি।কিন্তু প্রেমা তোমাকে আমি না চাইতেও জড়িয়ে ফেলেছি।আমার বন্ধু সুন্দরী মেয়েকে ভালোবেসে ঠকেছিল আমি নিশ্চয়ই ঠকবো না তাই না?আমাকে নিশ্চয়ই তুমি ভালোবাসবে?আমাকে নিশ্চয়ই ঠকাবে না,বলো না প্রেমা! প্লিজ বলো?’
অভির চোখে পানির বন্যা বয়ে যাচ্ছে।একটা ছেলে মানুষ এই ভাবে কাঁদতে পারে প্রেমা ১ম দেখলো। সামনে থেকে স্ট্রং পারসোনালিটি সম্পূর্ণ লোকটার ভেতরে ভেতরে এতো যন্ত্রণা, এতো কষ্ট!সুন্দরী মেয়েদের প্রতি তার এতো ঘৃণা।আসলে সাইকোলজিক্যাল একটা ব্যাপার আছে।মানুষ তখন একটা বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত রেগে যায় যখম মানুষ যখন খুব করে ঠকে যায়, খুব করে কোনো বিষয় নিয়ে ডিপ্রেশনে থাকে, অথবা যখন তার ছোট বেলাটা অনেক কষ্টেফ হয় তখন সে মেন্টালি এক ধরনের সাইকো হয়ে যায়।এটা মানসিক একটা চাপ।সুন্দরীদের প্রতি ঘৃনা থেকেই হয়তো অভি এমন। তার জন্যই হয়তো অভি স্নিগ্ধা নামক সুন্দরী মেয়েটির সাথে বাজে ব্যাবহার করেছে।এই সব ভাবতে থাকে প্রেমা!এখন সে কি করবে অভিকে ফিরিয়ে দেবে নাকি জটিয়ে নেবে?
চলবে,ইনশাআল্লাহ ✨
(আসসালামু আলাইকুম।ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা করবেন।দেরি হবার জন্য আমাকে ক্ষমা করবেন।গল্পটা শেষ পর্যায়ে হয়তো আর দুই এক পর্ব হবে।তাই আর অপেক্ষা করতে হবে না। হ্যাপি রিডিং।)