#তুমি_আমার_প্রেমবতী
#পর্বঃ১০
#সানজিদা_খানম_স্বর্ণা
২২.
কর্মব্যস্ততায় সবাই নিজের নিজের মতো সকাল সকাল বেরিয়ে গেছে নিজেদের কর্মক্ষেত্রে। ব্যাস্ততম এই শহরে সূর্য উঁকি দিতেই সবার ব্যাস্ততা শুরু হয়।চৈত্র মাসের সূর্য! সকালে সে সূর্যের দিকে তাকালে মনে হয় দুপুর ঘনিয়ে এসেছে। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে অভি অফিসের উদ্দেশ্য বেরিয়েছে।
সাক্ষর তখনো ঘুমে।অভি নিজের মতো ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে গেছে।কিন্তু রাস্তায় জ্যমাএ বসে সে এখন বিরক্তিতে কপাল কুঁচকাচ্ছে।স্নিগ্ধাদের বাড়ি থেকে ফেরার সময় এমন জ্যামে পরেছিল।ভাবতেই আদিলের কথা মনে পরে অভির।মনে মনে চায় আজকে আদিলের সাথে দেখা হোক।তার আদুভাই হবার গল্পটা শোনা বাকী আছে।
ভাবতেই গাড়ি থেকে নেমে একটু সাইডে হাটাহাটি করে অভি।শপিংমলের সামনে দাঁড়ানো স্নিগ্ধাকে দেখে চমকে যায় অভি।মার্জিত পোকাশ,হাতে একটা ভ্যানিটি ব্যাগ, চোখে কালো চশমা বেশ লাগছে স্নিগ্ধাকে।কিন্তু চোখ কপালে ওঠে স্নিগ্ধার পাশে দাঁড়ানো ছেলেটাকে দেখে।
কে এই ছেলেটা?আর স্নিগ্ধার সাথে এতো কিসের মাখামাখি!অভি মনে মনে ভাবে সাক্ষরের সাথে এই মেয়েটার বিয়ে ও কিছুতেই হতে দেবে না।এমন একটা মেয়ের সাথে তার ভাইয়ের কিছুতেই বিয়ে হতে পারে না।ও ধারণা সুন্দরী মেয়েদের অনেক গুলো বয় ফেন্ড থাকে।আর এই সব মেয়েরা বিয়ের আগেই ফষ্টিনষ্টি করে বেরায়।
অভি স্নিগ্ধাকে দেখে ঘৃণায় মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে নেয়।পরমুহূর্তে মনে হয় এই মেয়েটার আসল রূপ বাবার সামনে আনতে পারলেই এর সাথে সাক্ষরের বিয়েটা হবে না।এই ভেবেই স্নিগ্ধার কাছে এগিয়ে যায় অভি।চোখ মুখে রাগের অস্তিত্ব ফুটিয়ে তুলে বলে,
‘সেদিন তো আমি মিথ্যে বলি নি!বলেছিলাম না এই সব মেয়েদের একসাথে ডজন খানেক বয়ফ্রেন্ড না থাকলে চলে না।যদি আপনার অন্য ছেলেদের সাথে এতো মেলামেশা করার ইচ্ছে তাহলে আমার ভাইকে কেন বিয়ে করতে চাচ্ছেন?’
স্নিগ্ধা অভির কথায় অবাক হয়।
‘এই! কে আপনি? আর কোন সাহসে আমাদের অপমান করছেন যা নয় তাই বলছেন?’
পাশে থাকা ছেলেটা কিছু একটা বলতে গেলে থামিয়ে দেয় স্নিগ্ধা।
‘শুভ ভাইয়া তুমি চুপ করো। উনাকে যা বলার আমি বলছি।’
‘আর কি বলবেন আপনি?দেখতেই তো পাচ্ছি।আমার ভাইকে বিয়ে করার কথা বলছেন আবার এখানে অন্য ছেলেকে নিয়ে মাতামাতি করছেন।বাহ আপনারা পারেন ও বটে!’
‘মুখ সামলে কথা বলুন।আপনি কখন থেকে যা নয় তাই বলে যাচ্ছেন।এটা আমার ভাই।আমার কাজিন শুভ।আর আপনি?ছি!আপনার মানসিকতা এতো নিচু।ভাবতেই আমার ঘৃণা হচ্ছে।আপনার ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে বলে এই নয় আমি আপনি ভুল বললে মেনে নেব।’
‘স্নিগ্ধা এই রকম একটা বাড়িতে তুই বউ হয়ে যাচ্ছিস?যেই বাড়ির ছেলেরা মেয়েদের সম্মান দিতে জানে না?আর উনার ভাইয়ের সাথে তোর বিয়ে হচ্ছে উনি কেন এতো নাক গলাতে আসেন?’
‘এই লিসেন! ভাইটা আমার।নাক গলানোর হলে আমিই গলাবো আপনি নয়।আর শুনুন মিস স্নিগ্ধা,আমাদের বাড়ির মানুষ যেহেতু এতোই খারাপ তাহলে আমাদের বাড়িতে বউ হয়ে কেন আসতে চাচ্ছেন?বিয়েতে না করেন দিন।তাহলেই তো হয়।’
স্নিগ্ধা মনে মনে হাসে।এই ছেলেটার অহংকার ভাঙার জন্যই তো সে সাক্ষরকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে।অভি যেই ভাবে তাকে অপমান করেছে সেই অপমানের জবাব দিতে হবে।অপমানের তালিকাটা আজকে নিয়ে আরেকটু ভারী হলো।
‘কি হলো স্নিগ্ধা কি এতো ভাবছিস?আজকে বাড়িতে গিয়ে চাচ্চুকে বলব এই বিয়ে ভেঙে দিতে।এই রকম একটা পরিবারে তোর বিয়ে দেবার কোনো মানেই হয় না।’
‘না শুভ ভাইয়া।এই পরিবারেই আমি বউ হয়ে যাবো।উনার ছোট ভাইয়ের বউ হিসাবে আমি উনাদের বাড়িতে যাবোই।এখন এখান থেকে চলো।উনার সাথে কথা বাড়িয়ে কোনো লাভ নেই।’
অভি কিছু বলার আগেই দ্রুত পদে সরে যায় স্নিগ্ধা আর শুভ।অভি তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।এমন একটা মেয়েকে কিছুতেই তাদের বাড়ির বউ হতে দেওয়া যায় না।
২৩.
সকাল সকাল প্রেমা আদিলকে নিয়ে বেরিয়েছে।উদ্দেশ্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে।আদিল দুর্বল শরীর নিয়ে আস্তে আস্তে প্রেমার হাত ধরে এসে ডাক্তারের চেম্বারের কাছে এসে দাঁড়ায়। দূরে দাঁড়ানো অভিকে দেখে খুব খুশি হয় আদিল।চিনতে কষ্ট হয় না।চোখে মুখে ফুটে ওঠে প্রশান্তি।প্রেমার দিকে তাকিয়ে বলে,’আপু একটু তুমি দাঁড়াও।আকি আসছি।’
বলেই অসুস্থ শরীর নিয়ে ছূট লাগায় আদিল।দ্রুত অভির কাছে গিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করে ‘স্যার কেমন আছেন?’
অভির মনযোগ তখনো স্নিগ্ধার কথাগুলোর দিকে। আচমকা ডাকে পিছিনে তাকায় অভি।হুট করেই তার মনে ভালো হয়ে যায়।আদিলকে দেখে অভি নিজেও হাসে।মুচকি হেসে বলে’আমি ভালো আছি?তুমি কেমন আছো আদুভাই?’
‘আপনি আমার নাম মনে রেখেছেন?’
‘তোমার আদুভাই হবার গল্পটা যে এখনো এখনো শোনা বাকী!তোমাকে ভুলে গেলে কে বলবে শুনি?’
‘আমি আপনাকে বলব।কিন্তু এখানে ইই করছেন আপনি?’
‘এই তো তেমন কিছু না।তুমি কি করছো?’
‘আমার শরীরে জ্বর কিনা?আপুর সাথে একটু ডাক্তার দেখেতে এসেছি।’
‘ওহহ,তা তোমার আপু কোথায়?’
দূরে দাঁড়িয়ে পুরো ঘটনা দেখে চলেছে প্রেমা।তবে কথোপকথন শুনা যাচ্ছে না।প্রেমা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে আদিলের দিকে।অভিকে চিনতে তার ও কষ্ট হয় না।তার ফুক গুলো ফেলে দিয়ে সরি শব্দটাও উচ্চারণ করেনি।সেই লোকটাকে কিভাবে ভুলে যাবে সে?
আর এই অভদ্র লোকটার সাথেই কিনা তার ভাইয়ের এতো ভাব এতো হেসে হেসে কথা বলছে! প্রেমা রাগান্বিত হয়ে এসে বলে,’ঐ আদিল এখানে কি করছিস? চল ডাক্তারের কাছে চল।এই লোকটার সাথে তোর এতো কিসের কথা?’
অভি প্রেমার দিকে চোখ তুলে তাকায়। আরে এতো সেই ফুলওয়ালী মেয়েটা।কিন্তু সে এখানে কি করছে?
কেউ কিছু বোঝার আগেই আদিল বলে,’এই হচ্ছে আমার আপু প্রেমা।আর আপু এটা হচ্ছে ঐ স্যারটা যে আমাকে এক হাজার টাকা দিয়েছিল।’
দুজনেই দুজনের পরিচয় জেনে অবাক হয়।অভি বলে, ‘তুমি খুব মিষ্টি আদিল।কিন্তু তোমার বোন এতো রুক্ষভাষী কেন?’
‘মোটেই না আমি কোনো রুক্ষভাষী নই।আপনি আমার ফুল ফেলে দিয়েছিলেন।কিন্তু আমার ভাই আপনার সম্পর্কে যা বলেছে মনে হয় না আপনি এতোটাও খারাপ।কিন্তু খুব যে ভালো এমটাও নয়।’
অভি প্রেমার কথায় হাসে দুই ভাই বোনের মধ্যে একটা মিল আছে।সেটা হচ্ছে প্রেমা আর আদিলের হাসি এক রকম।প্রেমা অভির দিকে তাকিয়ে মনে মনে কি একটা ভাবে। লজ্জায় নয়তো বিনম্রতায় নিচু হয় প্রেমার মাথা। অভি তাদের দিকে তাকিয়ে বলে,’এখন কি দুই ভাই বোন আমাকে তাদের বন্ধু বানাবে?
আদিল মাথা নাড়ে।অভি বলে তাহলে আমিও চলো তোমাদের সাথে ডাক্তারের কাছে যাই।প্রেমা চোখ মুখ কুঁচকে জবাব দেয়,’আপনি কেন যাবেন?’
অভি দুষ্টুমির ছলে বলে,’বা রে ফেমড বানালে এখন ফেন্ডকে নিয়ে যাবে না?চলো আমিও তোমাদের সাথেই যাচ্ছি।’
এই বলে তিন জন ডাক্তারের চেম্বারের দিকে অগ্রসর হয়।প্রেমা আর অভি একে অপরের দিকে তাকায়।চোখে চোখ মিলে।দৃষ্টিতে গভীরতা।প্রেমা চমকে ওঠে।এই দৃষ্টিতে সে কখনো কোনো পুরুষের চোখে তাকায় নি।মনে মনে কি একটা ভেবে চোখ নামিয়ে নেয়।নিজের অস্তিত্ব ভুলে গেছিলো কিছুক্ষণের জন্য।কিছুক্ষণের জন্য সে অভিকে নিয়ে ভাবনায় ডুবে গেছিলো।প্রেমা মনে মনে বলে, ‘না প্রেমা তুই এমন চিন্তা মাথায় আনবি না।এটা যে সম্ভব নয়।’
চলবে,ইনশাআল্লাহ ✨
(আসসালামু আলাইকুম।কাল দিতে না পারার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা করবেন।হ্যাপি রিডিং)