#তুমি_আমার_প্রেমবতী
#পর্বঃ৯
#সানজিদা_খানম_স্বর্ণা
১৮.
রাত গভীর হচ্ছে।কেউ নাক ডেকে ঘুমুচ্ছে, কেউ ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।গভীর রাত নির্জনতার সাক্ষী রেখেছে চারদিকে অন্ধিকার বিছিয়ে দিয়ে।রাতের নিজস্ব একটা রূপ আছে।কোন মিথ্যাবাদী প্রচার করল,রাতের সৌন্দর্য নেই?রাতের এই সৌন্দর্য দেখতে মনে চোখ লাগে।
রেল লাইনের ধারের জানালাটা খুঁলে জানালার ধারে বসে আছে প্রেমা।চোখে নিষ্পলক দৃষ্টি। খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে একমনে ভাবনায় ব্যাস্ত সে।নিমীলিত চোখে আকাশের তারা গুলোর সাথে গল্প করছে প্রেমা।
সেলিনা পারভীন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আদিল নিজেও ঘুমের দেশে বিচরণ করছে।প্রেমার চোখে ঘুম নেই।সে জানে না আদিল আর তার নিজের ভবিষ্যৎ কি?মায়ের চিকিৎসার খরচ কিভাবে চালাবে?দিন দিন সে চিন্তা বেশি গভীর হচ্ছে।
হঠাৎই বাহিরে একটা শব্দ হয়। প্রেমা কান খাড়া করে শোনে বুঝার চেষ্টা করে কিসের শব্দ!কেউ একজন এসেছে হয়তো। প্রেমা দরজা খুলে বাহিরে বেরিয়ে আসে।বাহিরে এসে দেখতে পায় কুদ্দুসকে।প্রেমা চোখ মুখ খিঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘এতো রাতে অভদ্রের মতো এখানে কি করছেন আপনি?সেদিন থাপ্পড় খেয়ে মন ভরেনি আপনার? এখানে কেন এসেছেন আবার?’
‘এমন ভাবে কথা বলছিস যেন আমি তোর ঘরে ডুকেছি।আমার যখন ইচ্ছা যেখানে খুশি থাকবো। তুই বলার কে?’
‘আমাদের উঠোনে দাঁড়িয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করছেন আমি বলার কে?একটু ভদ্রতাও তো দেখাতে পারেন। এতো রাতে কোনো ভালো মানুষ অন্যের বাড়িতে আসে না।’
‘তোকে কে বললো আমি ভদ্র?আমি তো অভদ্র!অনেক অভদ্র আমি।দেখবি আমার অভদ্রতার নমুনা?’
‘কুদ্দুস ভাই?আপনি আমাদের বস্তিতে এসে ঝামেলা করছেন।আমি যদি এখন চিৎকার করি আপনার কি অবস্থা হবে ভাবতে পারছেন না।ভালোই ভালোই বলছি চলে যান এখান থেকে।’
‘তোর ঐ শুকনো থ্রেট আমাকে দিয়ে লাভ নাই।কুদ্দুস এই সবে ভয় পায় না।’
‘তাহলে আপনি যাবেন না তাইতো?আপনি বস্তিবাসীর থেকে গণদোলায় না খেয়ে এক পা’ ও নড়বেন না। আমি বুঝতে পেরেছি।’
কুদ্দুস প্রেমার বাহু চেপে ধরে বলে,’এ প্রেমা এই।তোমাকে তো আমি দেখে নেব।এই কুদ্দুসের দিন আসবে।’
এই বলেই দ্রুত পদে প্রস্থান করে কুদ্দুস।প্রেমা কুদ্দুসের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।কেমন বেহায়া একটা লোক!
১৯.
এতো রাতে মাতাল হয়ে সাক্ষরকে ফিরতে দেখে অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে মোজাম্মেল সাহেব আর শাহানাজ বেগম।সাক্ষরকে এই অবস্থায় যদি স্নিগ্ধার বাবা মা দেখে ফেলতো তাহলে কি সর্বনাশটাই না হতো এটা ভেবেই বার বার শিহরিত হচ্ছেন মোজাম্মেল সাহেব।
অভি হতভম্বের মতো সাক্ষরের দিকে তাকিয়ে আছে।তার ভাই তো এমন নয়!তাহলে কি হয়েছে আজ?অভি দ্রুত সাক্ষরকে ধরে নিয়ে এসে বসিয়ে দেয় সোফায়।সেই চট্টগ্রাম থেকে এই ভাবে মাতাল হয়ে ঢাকায় ফেরার পেছনে কোনো না কোনো কারণ তো নিশ্চয়ই আছে।
বাড়িতে হইচইপূর্ণ পরিবেশ আন্দাজ করে নিজের রুম থেকে বেরিয়ে আসে স্মৃতি আর সাথী।স্মৃতি সাক্ষরকে দেখে হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে। সে বুঝতে পারছে না সাক্ষর এই ভাবে কেন আছে।
‘ছোট ভাইয়া কি হয়েছে তোমার? তুমি এমন করছো কেন?’
স্মৃতিকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দেন মোজাম্মেল সাহেব। সাক্ষরের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলেন,’এসব কি সাক্ষর তোমার একি অঃধপত হয়েছে?তোমাকে পড়াশোনার জন্য পাঠানক হয়েছিল। অথচ তুমি নেশা করে বাড়িতে এসেছো?’
অভি মোজাম্মেল সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘কি শুরু করেছেন আব্বু?আম্মু তুমি আব্বুকে বোঝাও।সাক্ষর কোনো কারণ ছাড়া তো এই ভাবে আসেনি।কিন্তু তোমাদের বোঝা উচিত এতো দূর থেকে সে এসেছে, আর তার অবস্থা দেখে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো এখন ও কথা বলার অবস্থায় নেই।’
মোজাম্মেল সাহেব কটমট করে অভির দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘কোনো ছেলে মেয়েকে মানুষ করতে পারলাম না।’
অভি সাক্ষরকে ধরে রুমে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দেয়।সে আর বাহিরে না গিয়ে বাকী রাত টুকু ভাইয়ের সাথে ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেয়।
২০.
‘হ্যালো, তাওহিদ।’
‘হ্যাঁ পড়শী বল।’
‘সাক্ষর কি হোস্টেলে ফিরেছে?’
‘এখনো তো ফিরেনি।ওর ফোনটাও বন্ধ দেখাচ্ছে।কি করব কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।কোথায় আছে সে?’
”আমিও সেই কখন থেকে ফোনে ট্রাই করতেছি অথচ ফোন বন্ধ।কোথায় খুঁজবো এখন তাকে?’
‘দেখ পড়শী,পুরো ব্যাপারটা তোর জন্যই ঘটেছে।যা হয়েছিল সব মানলাম।তুই কেন সাক্ষরকে থাপ্পড় মা*র*তে গেলি?’
‘আমি কোনো ভাবেই ওকে আটকাতে পারছিলাম না।এর পর বাধ্য হয়ে এটা করেছি।কি করবো আমি?সবাই মজা নিচ্ছিলো সাক্ষর যদি শিহাবের সাথে উল্টো পালটা কিছু করে বসতো তাহলে?
‘আজ অবধি ওকে এতটা রেগে যেতে আমি কক্ষনো দেখিনি।তুই খুব বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি।সাক্ষর তোর এই ব্যাবহারে খুব কষ্ট পেয়েছে।তুই ঠিক করিসনি। ‘
‘থাক সে সব কথা।তুই তো সাক্ষরের পেছনে গেছিলি।কোথায় গেলো সে তুই দেখিস নি?’
‘আমি ওর পেছনে গেলেই কি আমাকে জোর করে সরিয়ে দিয়ে কোথায় একটা চলে গেছে।’
‘কি!!!তোর এতটুকু বুদ্ধি মাথায় রাখা উচিত ছিল।রাগের মাথায় এখন যদি সাক্ষর কিছু একটা করে বসে। কি করবি তুই?’
‘প্রশ্নটা আমাকে না করে নিজেকে কর।আজকে তোর জন্যই সাক্ষরের এই অবস্থা হয়েছে।তুই কেন তাকে থাপ্পড় দিতে গেলি।তাও এতো গুলো ছেলে মেয়ের সামনে।’
‘আর তুই বা কেমন বন্ধু ওকা একা সাক্ষরকে ছেড়ে দিলি?’
‘সাক্ষর শুধু একা আমার বন্ধু নয়। সে তোর ও বন্ধু।শুধু বন্ধু কেন বলছি? বন্ধুর থেকে বেশি কিছু।কিন্তু আশ্চর্য তুই নিজেই তাকে আঘাত করলি।থাপ্পড়রের আঘাতের থেকেও ওর মনের আঘাতের দাগটা অনেক হয়েছে।তুই সেটা বুঝবি না।’
‘এখন আমাকে দোষ না দিয়ে একটু খোঁজ করে দেখবি প্লিজ সাক্ষর কোথায় আছে?’
‘আচ্ছা তুই ফোন রাখ।আমি দেখছি।’
‘ ওকে, কিছু জানতে আমাকে একটু জানাবি প্লিজ। আমি টেনশনে আছি।’
‘ওকে ঠিক আছে।এখন বাই’
এই বলে ফোন কেটে দেয় তাওহিদ।কপালে তার চিন্তার ভাঁজ।মাথায় তার অজস্র প্রশ্ন?কোথায় গেলো সাক্ষর?হুট করেই মাথায় আসে। কোনো ভাবে বাড়িতে চলে গেল না তো?
২১.
স্নিগ্ধার বাবা মা বাড়িতে ফিরে স্নিগ্ধাকে ডেকে এনেছে।বিয়ে সম্পর্কে আরেকবার জিজ্ঞেস করা উচিত মেয়েকে।
‘কিরে মা, তাহলে তুই বিয়েতে রাজি আছিস তো?’
‘হুম, আব্বু আম্মু আমি বিয়ে করতে রাজি।তোমরা খুশি মানে আমিও খুশি।এই বিয়েতে আমার কোনো আপত্তি নেই।কিন্তু আব্বু আম্মু তোমরা কি যার সাথে আমার বিয়ে তাকে দেখেছো?মানে সাক্ষর নামক ছেলেটাকে দেখে তোমাদের কি মনে হলো?’
‘আসলে মা আমরা ছেলেটাকে এখনো দেখি নি।সাক্ষর নাকি চট্টগ্রাম থাকে।তবে ছেলেটা কাল আসবে মোজাম্মেল সাহেব তাকে আসতে বলবেন।আমরা ওর সাথে কথা বলে ওর মতামত নিয়েই বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করব।’
‘তোমাদের যা ইচ্ছে।কিন্তু অভি আমাকে যেই অপমান করেছে এর পর যেভাবেই হোক আমি ঐ বাড়িতে বউ হয়ে যাবোই।’
‘কিছু কি বললি স্নিগ্ধা?কি বিরবির করছিস?’
‘না আব্বু কিছু না।তোমরা কথা বলো আমি যাই।’
স্নিগ্ধার বাবা মা মেয়ের যাওয়ার পাণে তাকিয়ে থাকেন।ছোট্ট মেয়েটা কত বড় হয়ে গেল।তাকে বিয়ে দেবার বয়স হয়ে গেছে এটা ভাবতেই স্নিগ্ধার মায়ের দু ফোঁটা অশ্রুকণা ঝড়ে পরে চোখের কোণ বেয়ে।
চলবে,ইনশাআল্লাহ ✨