#তুমি_আমার_প্রেমবতী
#পর্বঃ৮
#সানজিদা_খানম_স্বর্ণা
১৬.
সূর্যকে অন্ধকারের চাদর দিয়ে ঢেকে রাত নেমেছে শহর জুরে।আকাশে উঠেছে মস্ত চাঁদ।আশেপাশে সহস্র তারা।অভি রাত্রি বেলা অফিস থেকে বাড়ি ফিরে ড্রয়িংরুমে বসা স্নিগ্ধার বাবা মাকে দেখতে পায়।মোজাম্মেল সাহেব আর শাহানাজ বেগমও আছেন।তারা সবাই স্নিগ্ধা আর সাক্ষরের বিয়ে নিয়ে আলোচনা করছে।মোজাম্মেল সাহেব গলা খাঁকারি দিয়ে বলেন,
‘আপনাদের যদি কোনো আপত্তি না থাকে তাহলে সামনের মাসেই স্নিগ্ধা মামুনির সাথে সাক্ষরের বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করতে চাই।’
‘আমাদের আর কি আপত্তি আমাদের মেয়ে স্নিগ্ধা এই বিয়েতে রাজি আছে বিদায় আমরাও রাজি আছি।আপনাদের মতের ভিত্তিতে আমরা সামনের মাসেই স্নিগ্ধার সাথে সাক্ষরের বিয়ে দিয়ে চার হাত এক করে দেব।কিন্তু ভাইজান আপনার ছেলে সাক্ষরকে দেখছি না?সাক্ষর কোথায়?’
‘সাক্ষর পড়াশোনা করে। আর এই জন্য সে চট্টগ্রাম থাকে। আপনারা চিন্তা করবেন না। আমি সাক্ষরকে আসতে বলব।আপনারা চাইলে আমি আজকেই তাকে আসতে বলতে পারি।’
‘না, না এতো রাতে সাক্ষর বাবা কেন আসতে যাবে!সাক্ষর বাবার সাথে একটু কথা ছিল।সে এই বিয়েতে রাজি আছে কি না?সেই বিষয়ে তাকে একটু জিজ্ঞেস করে নেওয়া উচিত ছিল।’
মোজাম্মেল সাহেবের মাথা নিচু হয়।অভি যদি স্নিগ্ধাকে বিয়ে করতে গিয়ে এই অঘটন না ঘটাতো তাহলে উনাকে এই বিষয়ে কেউ এই ভাবে বলতে পারতো না।উনি দায় এড়াতে বলেন,’কি যে বলেন।আপনার কি মনে হয়?আমি সাক্ষরের সাথে কথা না বলে বিয়ে ঠিক করেছি?আমি আমার ছেলের সাথে কথা বলেই বিয়ে ঠিক করেছি।’
‘ওহহ,তাহলে তো ঠিক আছে।তবুও সামনে থেকে একবার আমরাও সাক্ষর বাবার সাথে দেখা করতে চাই।’
মোজাম্মেল সাহেব মাথা নাড়িয়ে বলেন,’ঠিক আছে।আপনার যা ইচ্ছে।আমি সাক্ষরকে কালকেই আসতে বলছি।’
‘ঠিক আছে। তাহলে আজকে আমরা যাই।’
বলেই উঠতে নেন স্নিগ্ধার বাবা মা।এতোক্ষন চুপ থেকে মুখ খুলেন শাহানাজ বেগম।
‘সেকি!রাতে ডিনার না করেই চলে যাবেন?এটা হয় না।’
কিন্তু স্নিগ্ধার বাবা মা কোনো মতে শাহানাজ বেগমের কথা এড়িয়ে না খেয়ে শত অজুহাত দিয়ে চলে যান।উনাদের সব কথাই অভি শুনেছে।উনারা বেরিয়ে যেতেই অভি মোজাম্মেল সাহেবের সামনে এসে দাঁড়ায়।
‘কি করলেন আপনি?সাক্ষরের সাথে কথা না বলেই তার বিয়ে ঠিক করে ফেললেন?’
‘তাতে তোমার কি?এটা সাক্ষরের জীবন।তোমার জীবনের সিদ্ধান্ত নিজে নিয়েছো।কিন্তু সাক্ষরের জীবনের দায়িত্ব আমাদের।তার ভালোর জন্যই আমরা স্নিগ্ধার সাথে ওর বিয়ে দিচ্ছি।’
‘কি ভালো আছে সাক্ষরের এই বিয়েতে?তার অনুমতি ছাড়া তার বিয়ে যার তার সাথে ঠিক করে ফেললেই হলো?এই বিয়েটাতে তার জন্য ভালো কি দেখতে পেলেন আপনি?’
‘কি ভালো নেই সেটা বলো?স্নিগ্ধার বাবা মায়ের একমাত্র শিক্ষিত,ভদ্র, সুন্দরী মেয়ে।তার বাবা মায়ের যতো সম্পত্তি আছে সব স্নিগ্ধা পাবে।আর সেক্ষেত্রে স্নিগ্ধার সাথে বিয়ে হলে সাক্ষর হবে সব কিছুর মালিক।’
মোজাম্মেল সাহেবের এই চিন্তা ভাবনা দেখে বাবার ওপর ভীষণ ঘৃণা হয় অভির।
‘ছি!আব্বু ছি!শুধু মাত্র সম্পত্তির জন্য সাক্ষরের জীবনটা শেষ করে দিবেন।’
‘স্নিগ্ধার সাথে বিয়ে হলে সাক্ষরের জীবন কেন শেষ হবে?ও নিজের সুন্দর ভবিষৎ হবে।টাকা পয়সার কোনো কমতি থাকবে না।’
‘আব্বু টাকা পয়সা কি জীবনের সব?’তাহলে টাকা পয়সা কেন পারে না মানসিক শান্তি দিতে?কেন টাকা পয়সা দিয়ে সুখ কেনা যায় না?’
‘মুর্খের মতো কথা বলো না,টাকা পয়সা দিয়েই সুখ কেনা যায়।এই যে বিলাস বহুত বাড়িতে আছো সেটাও এই টাকা পয়সার জন্য।রাস্তার ধারে বেড়ে ওঠা ছেলে মেয়েদের জীবন সামনে থেকে দেখলে তোমার এই ধারণা বদলাতো!’
অভির আদিলের সাথে দেখা হবার কাহিনী টা মনে হয়।কি সুন্দর করে কষ্টে থেকেও হাসতে পারে!
‘রাস্তার ধারের ঐ মানুষ গুলোর কাছে এতো ধন সম্পদ নেই ঠিক আছে, কিন্তু তদের একটা মন আছে।তাদের মুখে প্রশান্তির হাসি আছে।আফসোস আপনার সেটা দেখার মতো চোখ নেই।আপনি শুধু টাকা চিনলেন।সাক্ষরের ভবিষ্যতের কথা ভাবলেন না।’
‘সাক্ষরের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই আমি সিধান্ত নিয়েছি। আর কি ভাবতে বলছো তুমি আমাকে?`
‘সাক্ষর যদি স্নিগ্ধাকে বিয়ে করে সুখী না হয় আপনি পারবেন নিজেকে ক্ষমা করতে? পারবেন সাক্ষরের জীবনে সুখ ফিরিয়ে দিতে?’
‘তোমাকে কে বলছে সাক্ষর স্নিগ্ধাকে বিয়ে করে সুখী হবে না?অবশ্যই সুখী হবে।’
‘বাহ!আপনি কেমন মানুষ টাকার লোভে ভুলেই গেছে নিজের সন্তানের ভবিষ্যৎ! আপনি আসলে একটা স্বার্থপর! আপনি টাকা ছাড়া কিচ্ছু বুঝেন না।আপনি একজন লোভী পিতা।’
‘অভি….’
গর্জে ওঠে মোজাম্মেল সাহেব।শাহানাজ বেগম এতোক্ষন ধরে বাবা ছেলের বাকবিতণ্ডা দেখছিলেন।পরিস্থিতি অস্বাভাবিক দেখে তিনি এগিয়ে গিয়ে বলেন,’অভি কি করছিস কি?উনি তোর বাবা হয়।বাবা মায়ের সাথে কেউ এই ভাবে কথা বলে?’
‘ঠিক বলেছেন উনি বাবা! কিন্তু স্বার্থপর একজন বাবা।’
শাহানাজ বেগম গলা উঁচিয়ে বলে, ‘এতো কথা কবে শিখলি তুই?যাহ ঘরে যা!বাবার সাথে তর্ক করার শিক্ষা দিয়েছি তোকে?’
অভি মায়ের মুখের দিকে তাকায় আর কিছু বলে না।ঐ বিলাস বহুল ঘরে এখন তার ঘুম আসবে না।বাড়ি থেকে বেরুতে গেলে দরজায় এসেই থমকে যায় অভি।গেইটে দাঁড়ানো সাক্ষরকে দেখে থমকে যায় তার পা!মাতালের মতো নেশায় বুদ হয়ে টলতে টলতে বাড়িতে এসেছে সাক্ষর।কাউকে কিছু না জানিয়ে হুট করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা চলে আসার ব্যাপারটা বুঝে না অভি।আর সাক্ষর নেশা করেছে?মানতে কষ্ট হয় অভির।তার ভাইটার এতোটা অধঃপতন হয়েছে ভাবতে কষ্ট হয় অভির।’
১৭.
ও মা!আদিলের জ্বর কি কমেছে একটু?’
প্রেমা বাড়ি ফিরেই আগে সেলিনা পারভীনকে আদিলের কথা জিজ্ঞেস করে।
‘না রে মা,,একটুও কমেনি।সারাদিনে ছেলেটা ঘর থেকে বের হয়নি।এক ভাবে শুয়ে আছে।কি যে করি?’
‘তাহলে তো মা একটু ডাক্তার দেখানো দরকার।’
‘হুম,ডাক্তার দেখানো দরকার।কিন্তু এই মুহূর্তে ঘরে যে টাকা নাই।’
অভি দুর্বল শরীর নিয়ে ওঠে বসে।বালিশের নিচে থেকে একটা এক হাজার টাকার নোট বের করে দিয়ে বলে,’আপু এই টাকাটা রেখে দে।’প্রেমা চক্ষু কপালে তুলে বলে,
‘কি রে আদিল?এই টাকা কোথায় পেলি তুই?’
‘একজন লোক আমাকে দিয়েছে।লোকটা খুব ভালো।আমার কাছ থেকে এক বোতল পানি কিনেই ১০০০ হাজার টাকা দিয়েছেন।’
‘কি আশ্চর্য! লোকটা হয়তো ভুল করে বেশি টাকা দিয়ে ফেলেছে।তুই ফেরত দিবি না?’
‘উনি ইচ্ছে করেই দিয়েছেন।খুব ভালো মানুষ। আমার সাথে অনেক ক্ষন গল্পও করলেন।’
প্রেমা মনে মনে ভাবে আজকের দিনেও এমন মানুষ হয়?ধনীদের সর্বদা টাকার অহংকার। ভাবতে গেলেই অভির কথা মনে হয় প্রেমার।মন মনে বলে,’কিছু মানুষ আছে না। ঐ রাগী ছেলেটার মতোন।টাকার অহংকার বেশি।গরীবদের যেন মানুষই মনে করে না।টাকাই যেন তাদের সব।’
প্রেমা যেই লোকটা আদিলকে টাকা দিয়েছে তার একটা সুন্দর প্রতিচ্ছবি আকেঁ মনে।বিপরীতে দুপুরে যেই ছেলেটার সাথে দেখা হয়েছিল তাকে নিয়ে একটা বাজে ছবি মন দেয়ালে অঙ্কিত হয়।অথচ মানুষটাযে একজন সে সম্পর্কে অজ্ঞাত প্রেমা।
‘আচ্ছা তাহলে আদিলকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু এই কিন্তু এই সময়ে কিভাবে যাব!কিভাবে যাবো?’
‘কালকে একটু ছেলেটাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যা।এতো জ্বর নিয়ে হেলা করা ঠিক হবে না।’
‘ঠিক আছে মা। কালকেই নিয়ে যাবো ডাক্তার দেখাতে।’
চলবে, ইনশাআল্লাহ ✨
( রিডিং।)