এ শহরে তুমি নেমে এসো পর্ব ৩৪

0
716

#এ_শহরে_তুমি_নেমে_এসো 💚
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ৩৪

অপূর্ব ভাই এগিয়ে এলেন। আমি হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে কোমরে হাত দিয়ে বসে আছি। হাঁটু গেড়ে বসে কোলে তুলে নিলেন আমায়। চমকে গেলাম আমি। তার এমন কাজটি আমার প্রত্যাশার বাইরে অবস্থান করছিল। দ্রুত হাতে অপূর্ব ভাইয়ের কাঁধ জড়িয়ে ধরলাম। ধীরে ধীরে উপরে উঠতে লাগলেন সিড়ি পেরিয়ে। পর্যাক্রমে উপরে উঠার কারণে তার চিবুকের সাথে আ/ঘাত লাগল। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি গেঁথে গেল ললাটে। একহাত দিয়ে গাল ধরতেই আইসক্রিমের প্যাকেট মাটিতে পড়ল। অপূর্ব ভাই হাঁটু গেড়ে আলতো ঝুঁকে তুলে আইসক্রিমের প্যাকেট। ভ্রু কুঁচকে বললেন, “কোমরে ব্যথা বলে হাঁটতে পারবি না, হাতে তো পাস নি‌। তাহলে কেন আইসক্রিম হাত থেকে খসে পড়ল। হম?”

নত হলাম আমি। আমতা আমতা করে বললাম, “পায়ে ব্যথা নির্দিষ্ট, বেদনা তো সারা শরীরের। তাই না?”

উপরে উঠছেন ক্রমশ। তার চিবুকের সাথে আমার ললাটের সংঘর্ষ হচ্ছে। আমি ততবারই কেঁপে উঠছি। এক সময়ে অনুভব করলাম তিনি হাঁপাচ্ছেন। দরজায় ১৪০৩ ফ্লাট নং দেখে চমকে উঠলাম আমি। যেখানে একা এতটা পথ হেঁটে আসা কষ্টকর। দরজা খোলা ছিল। সোজা সোফায় বসিয়ে দিলেন। আমাকে একা রেখে গেলেন ড্রাইনিং রুমে। ফ্রিজ থেকে আইস নিয়ে হাজির হলেন। সাথে ওষুধের বক্স নিয়ে এলেন। হাঁটুর কাছে বসতেই উঠে গেলাম আমি। তার নিয়ে আসা ঠান্ডা পানির বোতলটা তার হাতে দিয়ে বললাম, “আপনি পান করুন, গরমে ঘেমে গেছেন।”

“তারমানে এতক্ষণ অভিনয় করছিলি? সোজাসুজি বললেই তো হতো, আমার কোলে উঠতে চাস। আগে বোন ছিলি, কোলে উঠতে পারতিস না, এখন বউ। বউ হিসেবে তোকে কোলে নিয়ে চেম্বারে যাবো, আবার ফিরেও আসব।” বলেই রাগ দেখিয়ে চলে গেলেন ঘরে। পানির গ্লাসটা এখনো আমার হাতে। গ্লাসটা টেবিলে রেখে সেদিকে গেলাম। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়লাম। পা উল্টে গেল। মচকে গেল। ব্যথায় টনক নড়ে উঠল। দু’হাতে পা জড়িয়ে ধরে মৃদু আর্তনাদ করলাম, ‘আহ’।

অপূর্ব ভাই ঘাড় কাত করে এক পলক তাকিয়ে বলেন, “ঢং করিস না, তোর নাটকে আমি আর ভুলছি না। চুপচাপ উঠে পড়।”

বলেই হাঁটতে শুরু করলেন। তৎক্ষণাৎ খেয়াল করলাম তিস্তা আপুকে। আমাকে দেখে এগিয়ে এসে বললেন, “আরু মাটিতে গড়াগড়ি করছিস কেন? কী হয়েছে পায়ে?”

“ব্যথা। পড়ে ব্যথা পেয়েছি। মনে হয় মচকে গেছে।” কাঁদতে কাঁদতে বললাম আমি। তিস্তা আপু আমাকে ধরে ধরে ঘরে নিয়ে গেলেন। বিছানায় বসিয়ে রেখে ওষুধের বক্স সহ যাবতীয় জিনিস পত্র নিয়ে গেলেন। আইস পায়ে চে/পে ধরে রাখলেন কিছুক্ষণ। বালিশটা ঠিক করে দিয়ে পাখা দিয়ে হাওয়া করতে করতে বললেন, “বিদ্যুৎ আসবে বলে মনে হয় না। তুই শুয়ে পড়। (কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলেন) তা কিছু খেয়েছিস?”

“হম। একটু খেয়েছি।”

“ভাইয়া খেয়েছে?”

“না, এসেই তিনি ওয়াশরুমে চলে গেছেন।”

“ঠিক আছে, আমি তার জন্য খাবার দিয়ে যাচ্ছি। আর ভাইয়াকে বলবো আজকে যাতে সে নিচে ঘুমিয়ে পড়।
একটা কথা বলি তোকে আরু, তুই একটা অবিবাহিত মেয়ে, ভাইয়া একটা অবিবাহিত পুরুষ। দু’জনে এক ঘরে থাকা ঠিক নয়। জানাজানি হলে লোকে চর্চা করবে, ছিঃ ছিঃ করবে। আমরা যতোই তোদের বিশ্বাস করি। সমাজ তোদের বিশ্বাস করবে না। ভাইয়াকে বলে বোঝানোর সাহস আমার নেই, তুই একটু বলে দিস।” বিশ্লেষণ করে চলে গেল তিস্তা আপু। তিস্তা আপুর গমন পথের দিকে তাকিয়ে ভাবছি। তিনি সঠিক। কিন্তু আমরা বিবাহিত। অপূর্ব ভাই কেন সবার থেকে লুকিয়ে রাখলেন ব্যাপারটা? একান্ত তিনি জানেন।
__

“তোর না-কি পা মচকে গেছে। দেখেছিস মিথ্যা বাদীকে কেউ বিশ্বাস করে না।” ফোলা পা দেখতে দেখতে বললেন অপূর্ব ভাই। হাউসী তুলে নিভু নিভু চোখে দেখলাম। কোনো ভাবাবেগ প্রকাশ করলাম না। মাথা ব্যথায় শরীর তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। বিদ্যুৎ এখনো আসেনি। আলো নেই ঘরে। মোম জ্বলে হলদেটে আলো ছড়াচ্ছে। মশা রক্ত চুষে খাচ্ছে। মশারী টাঙাতে ব্যস্ত হয়ে গেলেন। চাদরের নিচে মশারি গুঁজে দিয়ে ভেতরে ঢুকলেন তিনি। আমার রেসপন্স না পেয়ে কপালে এপিঠ ওপিঠ দেখে পুনরায় বলেন, “শরীর তো গরম দেখছি। জ্বর আসবে রাতে।”

“হম।”

“ঘুমা, খেয়েছিস কিছু?”

“পায়ে ব্যথা করছে।”
অপূর্ব ভাই উঠে যাওয়ার চেষ্টা করতেই হাত ধরে ফেললাম। দৃষ্টি সরিয়ে সাহস সঞ্চয় করে বললাম, “তিস্তা আপুকে আপনি কেন বলেন নি, আমরা স্বামী স্ত্রী? যদি পরিচয় দিতেই নাইবা পারেন। তবে কেন বিয়ে করেছিলেন?”

“হঠাৎ এই প্রশ্ন করলি যে?”

“তাহলে কী করব? বাইরে জানাজানি হলে লোকে আমাকে ছিঃ ছিঃ করবে।” অপূর্ব ভাই জবাব না দিয়ে আলগোছে বেরিয়ে গেলেন। প্রশ্নটা আমার কাছে রয়ে গেল।

পরদিন সকালেও বৃষ্টি থামল না। সূর্য মামা মেঘের আড়ালে লুকিয়ে আছে। ঘূর্ণিঝড় চলছে। ‘৭’ নং সিগন্যাল চলছে সারাদেশে। বৃষ্টি থামার নাম নেই। গরম গরম পপকর্নের সাথে লুডু বেশ মজেছে। সুজন ভাইয়ের ছয় তিন পড়তেই চ্যাঁচিয়ে উঠলেন। তিস্তা আপুর সবুজ গুটি খেয়ে ফেললেন। তিস্তা আপু মন ভার করে রাগী দৃষ্টিতে সুজন ভাইকে দেখছেন। দম দিয়ে মিনিট পাঁচ বসে থেকে উঠে গেলেন। পপকর্নের বাটিটা হাতে নিয়ে বলে, “তোমরা থাকো। আমি পপকর্ন বানিয়ে নিয়ে আসছি।”

“খেলবে কে?” সুজন ভাই।

“তুমি খেলে চাল দিয়ে দাও। চারটা গুটি কম করে‌ হলেও চল্লিশ বার খেয়েছো।” অভিমানী গলায় বলে তিস্তা আপু রান্নাঘরে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সুজন ভাই গেলেন তিস্তা আপুর পিছনে পিছনে। আমি আর অপূর্ব ভাই বসে আছি। চারটা গুটি আমার হাতে রয়েছে। তিনজনে আমার কোটের সামনে পাহারা দিচ্ছে। উঠলে ঘরে পাঠিয়ে দিচ্ছে। কিছু একটা করতে হবে। এমন সময়ে অপূর্ব ভাইয়ের ফোন এলো। বড়ো মামী ফোন করেছে। অপূর্ব ভাই রিসিভ করে বলেন, “আসসালামু আলাইকুম আম্মা। বৃষ্টিতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে?”

“হ্যাঁ-রে অপু। বাড়ির সামনের কড়াই গাছটা বৃষ্টিতে নুইয়ে পড়েছে।”

অপূর্ব ভাই কথা বলতে ব্যস্ত। আলগোছে তিনটা গুটি পাকার কোটে ফেলে দিলাম, আরেকটা তিন লাগবে পাকতে। এবার আমিই জিতবো! হি! হি! হি! 🧛🏿‍♀️

চলবে.. ইন শা আল্লাহ

রেসপন্স করার অনুরোধ রইল

আমার বড়ো আপুর বিয়ে, বিয়েতে কত ঝামেলা থাকে আপনারা নিশ্চয়ই জানেন। এখনো অনুষ্ঠান বাকি রয়েছে। অনেক কষ্টে এত এইটুকু লিখেছি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here