কেন আমি ডাকি তারে -৭
আসছি- পেছন ফিরে নিতু বলল।
মোবাইল স্ক্রিনে তুহিন বলল, আসছি মানে, তোমাকে ডাকছে নাকি?
হ্যা।
কেন?
আমার জ্বর এসেছিল, তাই রাত জাগতে বারণ করছে৷
বাহ, ভালো কেয়ার করে তোমার! আবার প্রেমে ট্রেমে না পড়ে যায়!
নাহ কি যে বলো! ওনার সিরিয়াস এফেয়ার আছে।
বলেই নিতুর মনে পড়ল গতরাতে যে কোনো ভাবেই হোক, রেহান তার কাছাকাছি এসেছে, তাকে আদর করেছে খুব যত্ন করে, যার সিরিয়াস এফেয়ার আছে, সে কিভাবে আরেকটা মেয়ের সাথে এত ইন্টিমেট হতে পারে! অবশ্য সেও তো বাঁধা দেয় নি! কেন দেয় নি সেটা একটা বড় প্রশ্ন! বিষয়টা কি এমন হতে পারে, এটা শারীরিক প্রয়োজন বা টান! রেহানের কাছে আসাটাকে নিতু খারাপ চোখে দেখতে পারছে না একেবারেই। এটা তার প্রথমবার কোনো পুরুষের সাথে ইন্টিমেট হওয়া ছিল, আলাদা কোনো প্ল্যান না থাকলেও সব সময় তুহিনকেই কল্পনা করেছে নিজের একান্ত সময়ে। সেখানে রেহানকে এত সহজে একসেপ্ট করার কথা ছিল না! তাও ভালো, বিষয়গুলো এখন ট্যাবু থেকে বের হচ্ছে।
তোমাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে জ্বরের জন্য, আমাকে তো বলো নি!
বললে তুমি কথা বলতে না।
হুম, শোনো নিতু, বাইরের দেশে না আমাদের মত ফাঁকিবাজির জায়গা নেই, এখানে ওয়ার্কিং আওয়ার মানে পুরোপুরি কাজের সময়৷ তুমি আমাকে কন্টিনিউয়াস কল করবে না। আমি রাতে তোমার সাথে কথা বলব। ওকে?
নিতুর ভালো লাগল না কথাটা। তাই রাখছি, বলে কল কেটে এসে শুয়ে পড়ল।
রেহান বসে আছে। মেজাজ খিচুড়ি হয়ে গেছে, বিরক্ত লাগছে।
নিতু পাশ ফিরে বলল, শুয়ে পড়ুন।
আবার উঠে যেও না৷
না, যাব না৷
রেহান শুয়ে ভাবল, কেউ মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিলে ঘুম চলে আসত! অদ্ভুত তো, নিতু কেন তাকে সেবা করবে!
মনের মধ্যে আজিব সব বিষয় ঘটছে! কাল অবশ্যই সায়রার সাথে দেখা করে সময় কাটিয়ে আসবে৷ কিছুক্ষণ স্পেশাল মোমেন্ট পাস করলে হয়তো মাথা থেকে নিতু নামের ভুতু বের হবে। অবশ্য মেয়েটা ভালোই মিষ্টি দেখতে, ভুতু বলা যায় না৷
রেহান আবার উঠে বসল।
নিতু পাশ ফিরে বলল, কোনো সমস্যা?
মাথা ব্যাথা করছে।
ওষুধ লাগবে!
না।
বালিশে হেলান দিয়ে নিজে ম্যাসাজ দেওয়ার চেষ্টা করল রেহান৷ নিতু উঠছে না। বদ মেয়ে, দেখছিস না মাথা ব্যাথা, বলে দিতে হবে, মাথায় হাত বুলিয়ে দাও! এটা তো একটা মানবিক বিষয় নাকি! কোনো ভদ্রতা সভ্যতা নেই!
নিতু বলল, আপনি বসেই থাকবেন?
রেহান বলল, তোমার জন্যই তো ঘুমটা ভাঙল।
নিতু বলল, আপনি শুয়ে পড়ুন, আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
রেহান কোনো প্রতিবাদ না করে শুয়ে পড়ল।
নিতু বসে মাথায় হাত দিতে গেল।
বসে দিতে হবে না, শুয়ে পারলে দাও।
শুয়ে মাথায় হাত দিতে গেলে অনেকটা কাছে চলে যেতে হবে৷ নিতু বলল, আপনি ঘুমান, আমি দিচ্ছি।
রেহান উঠে বসে বলল, শুয়ে পড়ো আমি শিখিয়ে দিচ্ছি।
এরকম খুনসুটিতে দুজন বেশ কাছাকাছিই চলে এলো এই রাতেই! তবে সচেতন ভাবে কেউ এগুলো না। সত্যি বলতে নিতুর ইচ্ছে হচ্ছিল রেহান কাছে আসুক আর রেহানের মনে হচ্ছিল নিতু কাছে থাকুক।
সকাল হয়ে গেল দ্রুত।
রেহান অফিসে গেল আর ঠিক করে গেল, আজ সায়রার সাথে ডেট করেই ফিরবে।
চলবে
শানজানা আলম