#কাঞ্জি
#পর্ব-২৪
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
কখনো কখনো মানুষ সৃষ্ট বিপদ ক্ষতি কেন স্পর্শও করতে পারে না।আবৃতির জন্য এই সময়টা ঠিক তেমন। শাহরিয়ারের ফ্ল্যাটের সামনে থেকে লিফটে উঠে কেবলি নিজেদের ফ্ল্যাটের সামনে এসেছে ওমনি তার হুট করে মনে হলো এক গ্লাস ঠান্ডা পানি খাওয়াটা ভীষণ ভীষণ প্রয়োজন। নিচে ঠান্ডা পানি পাওয়া গেলেও খাওয়া হবে না ভেবেই নিজেদের ফ্ল্যাটে নেমে পড়েছিল সে। বাসায় ঢুকার কয়েক মুহুর্ত পর বিদ্যুৎ চলে গেল।অন্ধকারে তেমন ভয় পায় না সে কিন্তু এই উঁচু হিল পরে সিড়ি দিয়ে নামার সাহস হলো না।তাই অপেক্ষা করছিল কখন বিদ্যুৎ আসবে।প্রায় আধঘন্ট পার হলেও বিদ্যুৎ এলো না। হাতড়ে হাতড়ে রান্না ঘরে গেল।মোম বাতি নেই তাদের বাসায়। থাকার কোনো প্রয়োজন হয় না। ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়ে কোনো ভাবে অদিতির রুম অবধি গেল সে। অর্গানিক অয়েল ব্যবহার করে সুগন্ধি মোম তৈরী করে অদিতি।মাত্রই এসবের নতুন ব্যবসা শুরু করেছে সে। সেখান থেকে একটা মোম জ্বালিয়ে ফিরে এলো ড্রয়িং রুমে।মোমটা ধীরে ধীরে জ্বলছে।যতোই জ্বলছে চারিদিকে এর গন্ধটা ততোই ছড়িয়ে যাচ্ছে। আবৃতি ঠান্ডা পানি খাওয়ার কথা প্রায় ভুলেই বসেছিল।ফ্রিজ থেকে এক বোতল পানি বের করে সে পুরোটা খেয়ে ফেলল এবং বসে বসে অপেক্ষা করতে লাগলো কখন বিদ্যুৎ আসবে। কিন্তু বিদ্যুৎ আসার পূর্বেই তার দুই চোখে ঘুম নেমে এলো মাথার নিচে দুটো কুশন দিয়ে, মোম বাতির মৃদু আলো এবং সুগন্ধিতে ঘুমিয়ে থাকা মেয়েটা যদি জানতো যে তাকে কষ্ট দেওয়ার কত জঘন্য পরিকল্পনাই না করা হয়েছিল।
প্রিয় মানুষটাকে অন্য কারোর সাথে দেখলে সহ্য করাটা কষ্টকর নয় ভীষণ যন্ত্রণার।দম বন্ধ হয়ে আসে। খুব ভালো, গোছানো স্বভাবের মেয়েটাও প্রিয় মানুষের বিচ্ছেদে কেমন পাগল পাগল হয়ে যায়।একবার চিন্তা করে সে নিজে মরে যাবে আবার চিন্তা করে সে কেন মরবে? যে মানুষটা তাদের মাঝে চলে এসেছে তাকেই মেরে ফেলবে। এই যে নানান ধরনের চিন্তা আসে মাথায়। অথচ নিজেকে শেষ করে দিতে ভয় পায় না সে ভয় পায় ইহ জগত শেষ হলেই কি সব শেষ?
ওয়াজিফার মনে ছোট্ট সময় থেকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে বড় হলে শাহরিয়ারের সাথে তার বিয়ে হবে। ছোটো বেলায় পুতুল খেলার বয়সেই সে এসব শুনেছে।কিশোরী বয়সে রঙিন স্বপ্ন কিংবা বসন্তের প্রথম স্পর্শ সব কিছুই তো ছিল শাহরিয়ারকে ঘিরেই।বার বার প্রত্যাখিত হয়ে সে ছুটে গেছে মায়ের কাছে,কাঁদতে কাঁদতে জানিয়েছে প্রত্যাখিত হওয়ার গল্পটা।প্রতিবার তার মা এবং ফুপু তাকে স্বান্তনা দিয়েছে, বিশ্বাস করিয়েছে তারা আছেন তো।শাহরিয়ার তামাশা করে ওসব বলে। কিন্তু ওয়াজিফা জানতো সেসব নিছক তামাশা ছিল না। সে নিজেও বার বার বেরিয়ে আসতে চেয়েছে এই চোরাবালি থেকে কিন্তু তার পরিবার দিয়েছে কই? জোর করে চাপিয়ে দেওয়া সম্পর্ক কিংবা প্রত্যাখান, সব মিলিয়েই তো নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। সেই মানুষটা তার, কেবল তার কিন্তু চোখের সামনে অন্য কেউ তার আদর গায়ে মেখে ঘুরে বেড়াচ্ছে সেটা সহনীয় ক্ষমতা যে নেই ওয়াজিফার। আবৃতি তার শত্রু নয়, সে আবৃতির ক্ষতি করতে চায়নি। কিন্তু তার কাজের কারণে মেয়েটা যে মারা অবধি যেতে পারে এটা যখন সে বুঝতে পারলো তখন ছুটে গেল ওদিকে। মেইন সুইচ অন করে দিলো।অপেক্ষা করতে লাগলো লিফট কখন আসবে। কয়েক মুহুর্ত পর লিফট চলে এলো এবং দরজা খোলার পর দেখা গেল সেখানে কেউ নেই।ওয়াজিফা আরো বেশি ভয় পাচ্ছিলো।মনে মনে বার বার বলছিল মেয়েটার যেন কোনো ক্ষতি না হয়।ক্ষতি হলে নিজেকে মাফ করতে পারবে না।
বিদ্যুৎ চলে এলেও আবৃতির ঘুম ভাঙলো না। সে গভীর ঘুমে মগ্ন।এদিকে শাহানারার বিদায় হলো।রত্না বেগম আজ শাশুড়ীর কাছে থাকবেন। আবৃতিকে না দেখে সে খোঁজ করেছিল। যখন দেখতে পেয়েছে মেয়েটা ঘুমিয়েছে তখন বাইরে থেকে দরজা লক করে রেখে গিয়েছে। তাই ওয়াজিফা আবৃতির খোঁজ করেও পায়নি। উপায়ন্তর না পেয়ে মেয়েটা শাহরিয়ারকে জিজ্ঞেস করলো,
“আবৃতি কে দেখেছো?”
“কেনো বলো তো?”
“একটু প্রয়োজন ছিল।”
“ও ঘুমোচ্ছে।”
“ঠিক আছে ও?অসুস্থ হয়ে পড়েছে? ”
“এমনি ঘুমাচ্ছে। কেনো বলো তো?”
“নাহ এমনি।”
ওয়াজিফারা উপর তলাতে আসতেই গতকালের কথা পুনরায় উঠালো ওয়াজিফার বাবা।তিনি নিজের বোনকে ডেকে বলল,
“এবার সব কথা পাকা করে ফেলা যাক।”
“কোন কথা ভাই?”
“শাহরিয়ার এবং ওয়াজিফার বিয়ের কথা। সত্যি বলতে তোর দেবরের মেয়ের সাথে শাহরিয়ারের মেলামেশা খুব একটা ভালো চলছে না।দ্রুত সব করে ফেলা ভালো।পুরুষ মানুষের মন কিন্তু হাওয়ার আগে রঙ বদলায়।”
“আমিও জানি।কিন্তু ওই নোংরা মনমানসিকতার লোকেদের সাথে আমার কথা বলতে ইচ্ছে করে না।দেখলে তো কেমন গায়ে পড়া স্বভাব।”
“এজন্যই বলছি। তুই শাহরিয়ারকে ডাক।আজকেই সব কথা হোক।”
“কিন্তু আজকেই? কেবল মেয়েটা বিদায় দিলাম।”
” তোর ছেলের জন্য তো আমি মেয়ে আর বসিয়ে রাখতে পারবো না।আমার মেয়ের বয়স হচ্ছে।”
এই সময় ফয়সাল সাহেব এবং শাহরিয়ারের বাবা এলেন।তাদের সামনে কথা বলা হচ্ছিলো।ওয়াজিফার বাবা বললেন,
“দেখুন আমার মনে হয় শাহরিয়ার আবৃতিকে পছন্দ করে। এই অল্প বয়সে এমন একটু হতেই পারে। ছেলের পছন্দ মেনে নিতে হবে এমন কিন্তু কথা নেই।ছেলে বিয়ে করাতে হয় এমন ঘর দেখে যেখানে ছেলের বিপদ আপদে টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করতে পারে। যেটা আমি পারব।বিপদ আপদ তো বলে কয়ে আসে না।”
ওয়াজিফার বাবার কথায় রেগে গেলেন ফয়সাল সাহেব।নিজের রাগ কে দমন করে হাসতে হাসতে বললেন,
“আমার পরিবারের কি সামর্থ্য নেই? আবৃতি আমার ঘরের মেয়ে।তার স্বামীকে সাহায্য করার মতো যথেষ্ট রয়েছে আমাদের।তাছাড়া আমি নিজেই চাই আবৃতি এবং শাহরিয়ারের বিয়েটা হোক।এমনকি শাহরিয়ারের বাবাও চায়।এজন্যই আমরা দুজন এসেছি তোমাদের সাথে কথা বলতে।
চলবে( এডিট ছাড়া। যারা গল্প পড়েন রেসপন্স করবেন। আর হ্যাঁ বইটই তে প্রতিটা গল্পে ২০% ছাড় পেতে ব্যবহার করুন প্রোমোকোড HAPPYEID20)
#ছবিয়াল: সাদিয়া মৃণালিনী