#শেষ_থেকে_শুরু
#পর্ব_১৬
#নন্দিনী_চৌধুরী
৩২.
এক বছর পার হয়ে গেছে,
আজকে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে আরিশ।আশার আগে একবার দেখা করতে চায় সায়মার সাথে।জেলোরের থেকে অনেক কষ্টে অনুমতি নিয়ে সায়মার সাথে দেখা করতে জেলের অন্য সেলে আসছে সে।সায়মা দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে।চোখের নিচে কালো দাগ পরে গেছে। যেই মেয়েটা আগে সপ্তাহে সপ্তাহে ফেসিয়াল করতো পার্লার যেতো আজ এক বছর ঠিক মতো নিজের যত্ম নিচ্ছেনা।
“নিজের জীবনে এমন সুখ কখনো এনোনা যে সুখ তোমার নয়।যা তুমি অন্যের থেকে কেড়ে এনেছো।মনে রেখো প্রকৃতি কিন্তু তা আবার সেটা কেড়ে নেবে।কারন অই সুখের আসল মালীক তুমি নও”।
হ্যা,আরিশ নামক সুখটা সায়মার ছিলোনা। আরিশ নামক সুখটা ছিলো মুগ্ধের।সে ছিনিয়ে এনেছে সেই সুখ।আজ সেই সুখ কি আছে তার কাছে।না নেই সেই সুখ সে হারিয়ে ফেলেছে।অইযে প্রকৃতি তার থেকে নিয়ে নিলো।মুগ্ধকে দেওয়ার কষ্টের শতগুন কষ্ট সে পাচ্ছে।
আরিশ জেলের সেলের সামনে এসে সায়মার নাম ধরে ডাক দিলো।
আরিশঃসায়মা!
সায়মার কারো ডাক শুনে সামনে তাকিয়ে দেখে আরিশ।আরিশকে দেখে বুকটা ধক করে উঠে তার।আসতে করে উঠে এগিয়ে যায় আরিশের দিকে।আরিশ সায়মাকে দেখে চোখ মুখ শক্ত করে বলে,
আরিশঃতোমার মতো রাস্তার মেয়ের কথা শুনে আমি আমার স্ত্রীকে অবিশ্বাস করেছি।জেনার মতো অপরাধে লিপ্ত হয়েছি যার কোনো ক্ষমা নেই আল্লাহর কাছে।তোমার কথা বিশ্বাস করে নিজের সব হারিয়েছি।একটা মেয়ে কতটা নির্লজ্জ হলে নিজের মাতৃত্ব নিয়ে মিথ্যা কথা বলে তা তোমাকে না দেখলে জানতাম না।তুমি আর একটা পতিতার মাঝে কোনো পার্থক্য নেই।পতিতা যেমন টাকার জন্য শরীর বিলিয়ে দেয়।তুমিও টাকার জন্য নিজেকে আমার কাছে বিলিয়ে দিয়েছিলে।আর আমি বোকার মতো তাতে সায় দিয়েছি।তোমার নিজের তো জন্মের ঠিক নেই জারজ তুমি।আর যার মা এমন হবে এটাই আশা করা যায়।তোমার সাথে আমার সব সম্পর্ক শেষ।তোমার আমার মধ্য কিছু আর নেই।একটা মিথ্যাবাদীকে আমি আমার স্ত্রী বলে মানিনা।আশা করি এই জেল থেকে তোমাকে যেনো না ছাড়ে।আর হ্যা কোনোদিন নিজের এই মুখটা আমাকে দেখাবেনা।
কথা গুলো বলে আরিশ চলে আসলো।সায়মা আরিশেরন কথায় পালটা কোনো জবাব দেয়নি।কি জবাব দেবে সে আরিশ তো মিথ্যা কিছু বলেনি।আসলেইতো একটা প্রস্টিটিউডের মতো কাজ করেছে সে।নিজের মায়ের কথায় সব শেষ করে দিলো সে।যেই বোন তাকে ছোট থেকে আগলে রেখেছিলো তাকে কষ্ট দিলো।আরিশকে ধোকা দিলো।অথচ সে নিজেই কতো জঘন্য।তার মায়ের পাপের ফসল সে।সেই ফসলকে নিজের মেয়ের মতো আগলে রেখেছিলো মেহেরাব।আর তার মেয়েকেই কষ্ট দিলো সে।তার তো মৃত্যু হওয়া উচিত।বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই তার।
দোয়া করো আরিশ এই জারজটার যেনো এই কারাগারেই মরণ হয়।লাশ হয়ে যেনো এখান থেকে বেরহয় সে।নাহলে যেদিন এখান থেকে বের হবো সেদিন কারো কাছে মুখ দেখাতে পারবোনা।
মেহেরদের বাসায়,
মাহিরকে খাওয়াচ্ছে রুহি।ছেলেটা কিছু খেতে চায়না।সারাদিন শুধু দুষ্টুমি।আদো আদো গলায় মা,বাবা আর মামনি ডাক দেয়।মামনি ডাকে মুগ্ধকে।মুগ্ধ মাহিরকে অনেক আদর করে।সারাদিন ফুপু ভাতিজা মিলে শয়তানি করে।আর রুহি মেহের তা দেখে হাসে।
মুগ্ধ নিজের রুমে বসে রেডি হচ্ছে।আজকে তার নিজের এনজিওর উদ্ভাবনের দিন।হ্যা মুগ্ধ নিজের একটা এনজিও করেছে সেখানে সে অসহায় মেয়েদের নিয়ে কাজ করে।তাদের নতুন করে বাঁচার অনুপ্রেরণা দেয়।মুগ্ধকে সাদাফ এই এনজিও অপেনে অনেক হেল্প করেছে।মুগ্ধ এখন সাদাফকে চোখে হারায়।মুখে যদিও বলেনা। কিন্তু তার মনে সাদাফ তার জায়গা করে নিয়েছে।সাদাফের ভালোবাসার হার মেনেছে মুগ্ধ।অবশেষে সে ভালোবেসে ফেলেছে সাদাফকে।মুগ্ধ ঠিক করেছে আজ সে সাদাফকে জানাবে তার মনের কথা।মুগ্ধ একটা সবুজ কালার জামদানী পরলো।চুল গুলো খুলা রাখলো।হালকা একটু সাজলো।তারপর বেরিয়ে পরলো।এনজিওর উদ্দেশ্য।মেহের আর রুহিও যাচ্ছে ওর সাথে।
সাদাফ,সাদিয়া রায়হাম অলরেডি এসে পরেছে অপেক্ষা করছে মুগ্ধদের জন্য।কিছুক্ষনের মাঝে মুগ্ধরা চলে আসলো।সাদাফ প্রতিবারের মতো মুগ্ধকে শাড়িতে দেখে নতুম দফায় তার প্রেমে পড়েযায়।সাদাফ মুগ্ধকে দেখে বিড়বিড় করে বলে,
এই মেয়েটা এমন কেন।জানে আমি ওকে শাড়িতে দেখলে ঠিক থাকতে পারিনা তাও শাড়িই পরে আসে।ওকে যে শাড়িতে ভয়ংকর সুন্দুরী লাগে ও কি সেটা জানেনা।ফাজিল মাইয়া আমার মাথা খারাপ না করলে হয়না।
মুগ্ধ সাদাফকে দেখে একটা মুচকি হাসি দিলো।তারপর চলে আসলো এনজিওর ভিততে।কেচি দিয়ে রিবন কেটে প্রবেশ করলো তারা এনজিওতে।এখানে অসহায় নারি,ডিভোর্সি নারি,অনাথ শিশু সবাইকে সেবা প্রধান করা হবে।সাদাফ মুগ্ধকে সব বুজিয়ে দিলো।মুগ্ধ বাকিটা ওর এনজিওর মেনেজার জান্নাতকে সব বুজিয়ে দিলো।আজকে প্রথম দিন ওরা সব অসহায় গরিবদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছে।সবাইক্ব খাবার দিয়ে টাকা দিলো।এতো সময় মুগ্ধ সাদাফকে দেখেনি।মুগ্ধ বেরিয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখে সাদাফের ম্যাসেজ।
“আমি পাশের পার্কে আছি চলে আসো এখানে।”
মুগ্ধ মুচকি হেসে এক তোরা গোলাপ নিলো।সাদাফের বলা মতো চলে আসলো পার্কে।গোলাপের তোরাটা হাতে নিয়ে এগিয়ে গেলো সাদাফের কাছে।সাদাফ তখন দুর আকাশের পানে তাকানো।মুগ্ধ সাদাফের কাছে গিয়ে বলে,
মুগ্ধঃএইযে মিস্টার বোবা ভূত।
সাদাফ পিছনে ঘুরতেই মুগ্ধ গোলাপের তোরাটা সাদাফের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
“আমি জানিনা কখন কিভাবে আপনি আমার এতো কাছে চলে আসলেন।আমার দুঃসময় আমার পাশে ছিলেন।আমাকে সকল ভাবে সাহায্য করেছেন।আমার বিপদে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন।আমার জীবন নতুন ভাবে শুরু করতে সাহায্য করেছেন।আজকের মুগ্ধ হবার পিছনে ভাইয়ার মতো আপনার অবদান অনেক।আপনি বলেছিলেন আমাকে কোনোদিন ভালোবাসার জন্য জোর করবেন না আপনি করেন নি।বরং আমার পাশে ছিলেন।আমি আমার জীবনে নতুন শুরু করতে চাই #শেষ_থেকে_শুরু করতে চাই আপনার হাত ধরে।আমাকে কি আপনি গ্রহন করবেন।”
মুগ্ধের কথা গুলো শুনে সাদাফের চোখ থেকে পানি পরছে।হয়তো এই প্রথম কোনো মেয়ে তার মনের কথা বলছে আর কোনো ছেলে তা শুনে কাঁদছে।সাদাফ মুগ্ধের হাত থেকে গোলাপের তোরা টা নিলো তারপর হাটুগেড়ে পকেট থেকে একটা রিং বের করে মুগ্ধের সামনে ধরলো আর বললো,
মেহুরানী আমি তোমাকে আমার মনের রানী আমার ঘরের রানী করতে চাই।আমার সবটুকু ভালোবাসা তোমাকে দিতে চাই।তোমার মাঝে নিজেকে হারাতে চাই।দেবেকি সেই সুযোগ আমাকে”।
মুগ্ধ মুচকি হেসে হাত বারিয়ে দিলো।সাদাফ রিংটা মুগ্ধের হাতে পরিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে জরিয়ে ধরলো মুগ্ধকে।দুইজনের চোখেই পানি।আজকে দুইজনে দুজনের ভালোবাসা পেলো।আজকের সূর্য,আকাশ,বাতাশ গাছ পাখি তাদের ভালোবাসার সাক্ষ্যি থাকলো।
আরিশ রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।সব কিছু হারিয়ে ফেলেছে সে।তার বাড়ি ঘর তারপর ভালোবাসা সব হারিয়ে আজ সে পথের ফকির।আরিশ রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।পেটে ক্ষুদা আর পিপাসা নিয়ে হেটে যাচ্ছে সে।রাস্তার পাশ্ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় রাস্তার ওপারে তাকিয়ে দেখে বুকটা মোচর দিয়ে উঠলো।কারন সাদাফ আর মুগ্ধ এক সাথে হেঁটে যাচ্ছে।মুগ্ধ সাদাফের কাধে মাথা দিয়ে হেটে যাচ্ছে।আরিশের বুকে খুব কষ্ট হচ্ছে।আরিশ মনে মনে বললো,
ভালো আছো তাহলে মুগ্ধ তুমি।সব নতুন করে শুরু করেছো তাইনা।হ্যা করবেইতো আমার মতো একটা অমানুষকে ভালোবেসে শুধু কষ্ট পেয়েছো।আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি।নতুন মানুষটাকে নিয়ে ভালো থাকো।আল্লাহ তোমাকে ভালো রাখুক।কোনোদিন তোমার সামনে যাবোনা।
দেখতে দেখতে আরো এক মাস চলে গেলো,,,
দুই পরিবারের মতে করে বিয়ে ঠিক হলো সাদাফ মুগ্ধের।এক সপ্তাহ পর বিয়ে তাদের।সাদাফ মুগ্ধ এই এক মাস চুটিয়ে প্রেম করেছে।এইতো সেদিন রাতে মুগ্ধ সাদাফ ফোনে কথা বলছিলো।
সাদাফঃআচ্ছা মেহুরানী আমাদের বিয়ে হলে আমাদের তো কিউট কিউট বেবি হবে তাইনা।
মুগ্ধঃহুম কেন?
সাদাফঃউম তাহলে আমার চারটা মেহুরানী লাগবে।
মুগ্ধঃকিহ চারটা।মাথা গেছে নাকি আপনার হু।বিয়ের খবর নাই আসছে চারটা বাবু নিতে।শুনেন দুইটার বেশি একটাও না।
সাদাফঃবিয়েতো হয়েই যাবে কিছুদিন পর।তাই এখোনি ফ্যামিলি প্ল্যানিং করে নিচ্ছি আর আমার চারটা মেহুরানীই চাই মানে চাই।
মুগ্ধঃআচ্ছা তাহলে দুটো আমি পেটে ধরবো আর দুটো আপনি পেটে ধইরেন হু।
সাদাফঃকিহ ইস ছিহ এগুলা কি বলো।আমি কেম্নে ছিহ।
মুগ্ধঃওমা এইনা বললেন চারটা লাগবে তাহলে দুটো আমি জন্ম দেবো আর দুটো আপনি।
সাদাফঃনা না আচ্ছা ঠিক আছে দুইটাই নিবো☹️।
মুগ্ধঃগুড বয়।
সাদাফঃভালোবাসি মেহুরানী।
মুগ্ধঃভালোবাসি আমার বোবাভূতটাকে।
#চলবে
আগামীকাল শেষ করবো গল্প।ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন❤️।যারা জন্মদিনের শুভেচ্ছা দিয়েছেন তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ❤️💙।