#এ_শহরে_তুমি_নেমে_এসো 💚
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ৩২
অপূর্ব ভাই জবাব দিলেন না। নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার ডান হাতের দিকে। সৌজন্য হেসে হাতটা লুকিয়ে উঠে যেতে নিলেই অপূর্ব ভাই টি শার্ট টেনে নিলেন। ইশারায় বললাম, “কী হলো?”
“হাতটা দেখি।” গম্ভীর গলায় উঁকি দিতে দিতে বলেন তিনি। হাতটা আরেকটু লুকিয়ে নিতেই অপূর্ব ভাই খপ করে হাত ধরলেন। প্রকাশ্যে এনে দেখলেন। কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে বলেন, “হাতে ছ্যাকা লেগেছে কীভাবে আরু? ইশ্! ফোসকা পড়ে গেছে।”
“ভাত রান্না করতে গিয়েছিলাম। তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে ছ্যাকা লেগেছে।
কী এক টুকরো পরোটা আর ভাজি বানিয়েছেন। খেতে পারি আমি?” বলেই মুখ কালো করে নিলাম।
“বুঝলাম, কিন্তু চামড়া উঠেছে কীভাবে?”
“আপনার জামা কাপড় ধুয়ে দিয়েছিলাম। সকালে যাওয়ার সময় বলেছিলেন না, ধুয়ে দিতে? তাই কেচে কেচে ধুয়ে দিয়েছি। বেশি ভালো হয়নি।”
“ঘরের ভেতরে ওয়াশিং মেশিন আছে কি করতে শুনি?” বিরক্ত হয়ে বললেন অপূর্ব ভাই। ড্রেসিং টেবিলের ছোটো ড্রয়ার থেকে একটা মলম বের করে স্বযত্নে হাতে লাগিয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে গেলেন। মলমের ঠান্ডা স্পর্শ পেতেই কেঁপে উঠলাম আমি। তড়িগড়ি করে হাতটা সরানোর চেষ্টা করলাম। চোখ রাঙিয়ে নিষেধ করলেন তিনি। থেমে গেলাম। স্বযত্নে মলম লাগিয়ে বললেন, “তোর জন্য কাচ্চি বিরিয়ানি নিয়ে এসেছি। অনেক দিন পর চেম্বারে বসেছি। ভিড় আর ভিড়। তাছাড়া অনেক প্রেসেন্ট ফোন করে তাদের বাড়িতে যেতে বলেছে। সেখানে গিয়েছিলাম। তাই দেরি হয়েছে। বস! আমি বিরিয়ানি নিয়ে আসছি।”
বলেই অপূর্ব ভাই চলে গেলেন খাবার আনতে। দাঁতের সাহায্যে নখ কা/ট/তে ব্যস্ত হলাম। অপূর্ব ভাইয়ের ফোন রেখে গেছেন। ফোন বেজে উঠল। উল্টে রাখা। নাম্বারটা দেখা যাচ্ছে না। নাম্বার দেখার উদ্দেশ্যে ফোনটা ঠিক করে রাখলাম আমি। দৃষ্টি গেল ফোনের স্ক্রিনে। ‘তিস্তা’ নামটা চোখে পড়তেই কপাল কুঁচকে গেল আমার। তিস্তা আপুর হাসোজ্জ্বল একটা ছবি ফুটে আছে। অজান্তেই অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। পুরোনো স্মৃতি গুলো চোখের পাতায় ভেসে উঠল। আমার জীবনটা হালবিহীন নৌকা করে দেওয়ার জন্য দায়ী একমাত্র সে। চোখজোড়া অবাধ্য, যে আ/ঘা/ত করে তার জন্য কাঁদে। পরপর কয়েকবার বাজল ফোনটা। সাত বারের সময় বাজতেই ফোনটা ছুড়ে ফেললাম। পড়ল গিয়ে অপূর্ব ভাইয়ের পায়ের উপর। একহাতে কাচ্চি, অন্যহাতে পানির গ্লাস। খাবারের থালা ও গ্লাসটা টেবিলে রেখে বলেন, “আজব তো! ফোনটা ফেললি কেন? ফোনের দাম জানিস।”
রাগে গজগজ করতে করতে বললাম, “বাহ্! বোনের সাথে দিব্যি যোগাযোগ আছে। কথা বার্তা চলছে, সবাই তাকে আপন করে নিয়েছে। অথচ আমাকে দেখো। আমে দুধে মিশে গেল, আঁটি ছিটে বাগে গেল।”
“বুঝলাম না।” সন্দিহান গলার স্বর।
“তিস্তা আপু ফোন দিয়েছে আপনার ফোনে। এবার বলুন আপনি জানতেন না। আমার মনে হয় বিয়ের কথাটা আপনিও জানতেন।” সন্দিহান দৃষ্টিতে ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে অপূর্ব ভাই। পরক্ষণে ফোনটা তুলে নিলেন। তেমন কোনো ক্ষ/তি হয়নি ফোনের। শুধু একপাশে স্ক্রিন ফে/টে গেছে। ধৈর্য ধরে কল লিস্ট চেক করলেন। তিস্তা আপুর নাম্বার ব্ল/ক করে দিলেন। চামচটা আমার হাতে দিয়ে বললেন, “বাম হাতের সাহায্যে চামচ দিয়ে খাবার খেয়ে নে।”
অপূর্ব ভাই ফোন করলেন অজানা কাউকে। ওপাশে রিসিভ হতেই সালাম বিনিময় করে অপূর্ব ভাই বললেন, “তোমার দেবর জি বারবার আমাকে ফোন দিচ্ছে কেন মা?”
“তোর বাবা চাচারা সুজনদের বাড়িতে গেছে। সুজনকে পেলে তুলে নিয়ে আসবে। তিস্তা ফোন করে খালি কাঁদছে। বাধ্য হয়ে আমি বলেছি, তোর কাছে ঢাকাতে যেতে। ও ঢাকাতে পৌঁছে গেছে। তোকে ফোন দিচ্ছে। তুই একটু বাস স্টপ থেকে ওদের নিয়ে আয়।” স্পিকারে ছিল বিধায় ওপাশে বড়ো মামির কথা শুনতে পেলাম আমি। তার পাশেই আমার ময়না পাখি বসে আছে নিঃসন্দেহে। কারণ তার কণ্ঠস্বর আমি স্পষ্ট শুনতে পারছি। পূর্বের মতো সে অনবরত বলে চলেছে, “আরুপাখি, আরুপাখি আরুপাখি।”
মামির কণ্ঠ আর আমার কানে যাচ্ছে না। কনে শুধু বাজছে মামির কথা। খাবারের থালাটা সরিয়ে নেমে গেলাম বিছানা ছেড়ে। দ্রুত পায়ে হেঁটে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই অপূর্ব ভাই ধরলেন আমার হাত।
“কোথায় যাচ্ছিস?”
“আপনার বোন যেখানে থাকবে, আমি সেখানে থাকব না। আপনি আমার স্বামী, কিন্তু আপনার পরিবার আমার কেউ না, তিস্তা আপুর মতো স্বা/র্থপ/র মেয়ের যেখানে থাকবে, আমি সেখানে থাকব না। হাত ছাড়ুন।” মোচড়ামুচড়ি করতে করতে বললাম। অপূর্ব ভাই একহাতে পেরে উঠছেন না। মানুষ রেগে গেলে তার শরীরে শক্তি বেশি হয়, এটা স্বাভাবিক। ফোনের ওপাশ থেকে মামি বলছেন, “আরু আবার কোথায় যাচ্ছে?
দু’হাতে শক্ত করে ধরে বলেন, “তোমার প্রাণের দেবর জি আসবে বলে সে এখানে থাকবে না।”
“আরু, মা আমার। এমন পাগলামী করে না। তিস্তা বেশিদিন ওখানে থাকবে না। এদিকটা শান্ত হলেই চলে আসবে।”
কঠোর গলায় বললাম, “তিস্তা আপু এখানে আসবে। অবশ্যই আসবে। এটা তার ভাইয়ের বাড়ি। কিন্তু আমি তার সাথে থাকতে পারব না। যার জন্য আমি আমার মায়ের থেকে দূরে সরেছি, নামহীন সম্পর্কে জড়িয়েছি। তার সাথে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”
বলেই হাঁটা দিলাম। অপূর্ব ভাই কল বিচ্ছিন্ন করেছেন। আমার পিছুপিছু ড্রয়িং রুম অবধি পৌঁছে গেছে। দরজা খুলে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিলাম। দরজা খুলতেই হতভম্ব হলাম। তিস্তা আপু ও সুজন ভাই দাঁড়িয়ে আছেন দরজার ওপাশে। নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি দৃষ্টি নামিয়ে নিলাম। প্রকাশ পেয়েছে বিরক্তি। তিস্তা আপু হুট করে জড়িয়ে ধরলেন আমায়। দু’হাতে আগলে নিয়ে বললেন, “আরুপাখি কেমন আছে?”
দুই মিনিটে নিজেকে সামলে নিলাম। তিস্তা আপুকে ছাড়াতে ছাড়াতে বললাম, “আমি আরশি মৃধা। কারো আরুপাখি নই।”
অপূর্ব ভাই দাঁড়িয়ে আছে পাশে। আমাকে ছেড়ে অপূর্ব ভাইকে জড়িয়ে ধরে বলে, “ভাইজান কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তা তোরা তো বিয়ে করার জন্য পালিয়ে গিয়েছিলি। আবার আমার কাছে চলে এলি যে।” অপূর্ব ভাইয়ের এরূপ কথাতে নতজানু হয়ে রইল তিস্তা আপু। সুজন ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে কাঁচুমাচু করছে। অপূর্ব ভাই পুনরায় বললেন, “টিউটর হিসেবে তোমাকে অনেক সম্মান করতাম, তুমি আমার সম্মানের দাম দিলে না।”
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]