#আবেগময়_সম্পর্ক
#১৬তম_পর্ব
#লেখিনীতে_মৃদু_সুপ্রিয়া
আকাশ অফিসে নিজের কেবিনে বসে ছিল। সে ভাবছিল কিভাবে সে জেল থেকে মুক্তি পেয়েছিল। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করার পর যখন থানায় নিয়ে যায় তখনই অনলাইনে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। যেখানে দেখা যায় অন্তর চৌধুরী তার পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তা বন্ধুকে ঘুষ দিয়ে আকাশকে গ্রেফতার করার কথা বলা হয়েছে। ভিডিওটি মুহুর্তেই ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। পুলিশ কর্মকর্তারা জনগণের রোষের মুখে পড়ে যায়। যার পরিপেক্ষিতে এর সাথে জড়িত থাকা পুলিশ অফিসারের চাকরি চলে যায় এবং আকাশও জেল থেকে ছাড়া পায়। তারপর বাড়িতে ফিরে আসার পর মেহুলকে সাথে নিয়ে এবং পুলিশের সাহায্যে রায়ানকে উদ্ধার করে আকাশ। ইতিমধ্যে তার কাছে পিহুর খবরও এসেছে। যা শুনে সে সত্যিই মর্মাহত।
আকাশ হাসপাতালে ছুটে যায় পিহুকে দেখার জন্য। প্রথমে সে আশিকের মুখো মুখি হয়। কারণ সে মেহুলের কাছ থেকে সব কিছু শুনে নিয়েছে। আকাশ আশিককে ঠা*স করে থা*প্পর দিয়ে বলে, “তুই কেন এমনি করলি বলতো? একটা সাধারণ মেয়েকে এত বড় কাজে লাগিয়ে দিলি। এখন শুধুমাত্র তোর জন্য মেয়েটার এত বড় বিপদ হলো। এখন তুই কি জবাব দিবি বল। মেয়েটার কোন ক্ষতি হয়ে গেলে তখন কি হবে? এর কোন উত্তর আছে কি তোর কাছে?”
আশিক মাথা নিচু করে বলে, “আমি এসব নিয়ে কিছু ভেবে দেখিনি ভাইয়া। বিশ্বাস করো আমাকে তুমি।”
আকাশ আর কথা বাড়ালো না। মেহুল এসে জানাল, “পিহুর অপারেশন সাকসেসফুলি হয়ে গেছে। ডাক্তার বলেছে ও এখন সম্পূর্ণ ঝুঁকি মুক্ত হয়ে গেছে। কাউকে আর কোন চিন্তা করতে হবে না।”
মেহুলের মুখে এমন খুশির খবর শুনে সবচেয়ে বেশি আনন্দিত হয় আশিক। আশিক বলে, “আমি জানতাম পিহুর কিছু হবে না। ও ঠিকই সুস্থ হয়ে উঠবে। দেখ আমার ভাবনাই সত্য হলো। আমি এখনই যাচ্ছি ওর সাথে দেখা করতে।”
মেহুল আশিকের পথ আটকে বলে, “তুমি প্লিজ আমার বোনের সাথে আর কোন যোগাযোগ রেখো না। এমনিতেই তোমার জন্য ওর জীবন টা পুরো বদলে গেছে। তুমি নিজের স্বার্থের জন্য ব্যবহার করেছ আমার সরল বোনটাকে। তোমার জন্য আমার বোনটার এত বড় ক্ষতি হয়ে যেতে যাচ্ছিল। তাই এখন আমি বা আমার পরিবারের কেউই চাইনা তুমি আর পিহুর সাথে কোন যোগাযোগ রাখো।”
আশিক খুবই কষ্ট পায় মেহুলের কথা শুনে। কিন্তু সে এটাও বুঝতে পারে যে মেহুলের ভাবনায় ভুল কিছু নেই। সত্যিই তো আশিকের জন্য পিহুর অনেক বড় ক্ষতি হতে যাচ্ছিল। আশিকও তাই সিদ্ধান্ত নেয় পিহুর থেকে দূরে থাকার। তবে শেষবারের মতো সে অনুরোধ করে বলে, “আমি আর কিছু চাইনা। শুধু পিহুকে দূর থেকে একবার দেখেই চলে যাব। আমার এই ইচ্ছেটা তো অন্তত পূরণ করতে পারব? নাকি এই সুযোগও পাবোনা।”
মেহুল আপত্তি জানায় না। আশিক পেয়ে যায় পিহুর সাথে দেখা করার সু্যোগ। আশিক দূর থেকে পিহুকে একবার দেখে। তখনো পিহুর জ্ঞান ফেরেনি। আশিক পিহুর জন্য বলে, “আজ থেকে তোমার থেকে দূরে চলে যাব। ভালো থেকে তুমি পিহু। আশা করি আমি তোমার থেকে দূরে চলে গেলেই তুমি ভালো থাকবে।”
❤️
অতিবাহিত হয়ে গেছে এক মাস। সব কিছু এখন আপাত দৃষ্টিতে ভালোই আছে। অন্তরের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়ে গেছে। যাতে আপাতত সবাই স্বস্তি পেয়েছে। তবে তার মৃত্যুদন্ড হলে সবাই বিশেষ করতে পিহু শান্তি পেতো। কারণ পিহুকে এখনো তাড়া করে বেড়ায় সেই ভয়াল রাতের ঘটনা। যেদিন সে ম*রতে ম*রতে বেঁচে গেছে। তবে অন্তর একজন ভালো উকিলের সাথে যোগাযোগ করে সব কিছু ঠিক করে নেয়। যার কারণে তার মৃত্যুদন্ড হয় না।
এদিকে পিহুর মনে অন্য চিন্তা ঘোর পাক খাচ্ছিল।কারণ সে সুস্থ হওয়ার পর আশিক একবারও তার সাথে দেখা করতে আসে নি। পিহু যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও আশিক করেনি। সব মিলিয়ে পিহুর কাছে মনে হয়েছে তার সাথে ঘটা ঘটনা গুলোর জন্যই বোধহয় আশিক তার থেকে দূরে সরে গেছে। মুখে যতই ভালোবাসার কথা বলুক না কেন। কে-ই বা একটা ধ*র্ষিতা মেয়েকে নিজের জীবনে জড়াতে চায়। পিহু হতাশার শ্বাস ফেলে বাড়িতে বসে থাকে।
অন্যদিকে মেহুল, আকাশ, রায়ান সবাই এখন সুখে শান্তিতে আছে। রায়ানের সাথে মেহুলের সম্পর্ক অনেক দৃঢ় হয়েছে। আকাশ মেহুলের সম্পর্কও এখন গভীর প্রেমে পরিণত হয়েছে। আমিনা আক্তার, আশিককে সাথে নিয়ে হজ্ব করতে গেছেন সৌদি আরবে। আজ তাদের ফেরার কথা। এই নিয়ে মেহুল খুব ব্যস্ত। শাশুড়ির অনুপস্থিতিতে তাকেই বাড়ির সব কিছু একা হাতে সামলাতে হয়ে ছিল। এই ক’দিনেই একেবারে পাকা গিন্নি হয়ে গেছে মেহুল। ভাবতেই অবাক লাগে যেই মেয়েটা আগে কোন কাজই করতে পারত না, সে এখন বাড়ির সব কাজ করতে পারে। মেহুলও খুব খুশি নিজের এই পরিবর্তন নিয়ে। এখন সে চায় এভাবেই সুখে সংসার করতে। মেহুল আশায় আছে তার সংসারে আর কোন কালো ছায়া আসবে না। তবে আদৌও কি তেমনটা হবে? নাকি আবার কোন নতুন বিপদের আগমন ঘটবে তার সুখের সংসারে। সেটা তো সময়েই ভালো করে বলে দিতে পারবে।
আমিনা আক্তার ও আশিক ইতিমধ্যে ফিরে এসেছে। মেহুল তাদের জন্য খাবার বেড়ে দিচ্ছে। কাজে বেশ তাড়াহুড়ো করছিল সে। তার এমন তাড়াহুড়ো দেখে আমিনা আক্তার বলেন, “তুমি কি আজ কোথাও যাবে? এত তাড়াহুড়ো করছ কেন মেহুল?”।
মেহুল মৃদু হেসে বলে, “হ্যাঁ, আসলে আজ আমার ছোট বোন পিহুকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। সেই কারণেই একটু তাড়াহুড়োয় আছি। আপনাদের খাবার দিয়ে আমাকে ঐ বাড়িতে যেতে হবে।”
আমিনা আক্তার বলেন, “মেয়েটার উপর দিয়ে যা ঝড় বয়ে গেল। এখন যদি সবকিছু ঠিক হয়ে যায় তাহলেই ভালো হবে।”
আশিকের গলা দিয়ে আর খাবার নামছিল না৷ পিহুর বিয়ের কথাটা শুনেই তার খাবার রুচি চলে গেছে। সে যে পিহুকে অনেক ভালোবাসে। সেখানে অন্য কারো সাথে পিহুর বিয়ে হবে এটা ভাবতেই তার কেমন যেন লাগছে। এসব ভাবনা থেকে আর খাওয়া শেষ করতে পারল না আশিক। অর্ধেক খাবার খেয়েই টেবিল থেকে উঠল পড়ল। আমিনা আক্তার জিজ্ঞাসা করলেন, “কি রে এভাবে উঠে পড়লি কেন? খাবিনা তুই?”
“আমার পেট ভড়ে গেছে আম্মু।”-এটুকু বলেই নিজের রুমে চলে গেল সে।
❤️
পিহুকে পাত্রপক্ষ দেখে পছন্দ করে ফেলে৷ আগামী সপ্তাহেই বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। মেহুল বাড়িতে ফিরে এসেই এই খুশির খবরটা দেয় আকাশকে। বলে, “জানো পিহুকে যারা দেখতে এসেছিল তারা অনেক ভালো পরিবার। ছেলের নিজস্ব শাড়ির দোকান আছে। পিহুকে তাদের অনেক পছন্দ হয়েছে। এখন ভালোয় ভালোয় বিয়েটা হলেই হয়।”
আকাশও আনন্দ প্রকাশ করে বলে, “তা বেশ৷ এখন তাহলে বিয়ের দাওয়াত খাওয়ার অপেক্ষা করি।”
আশিক দূরে দাঁড়িয়ে তাদের কথোপকথন শুনে নেয়। তার বুকে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হয়। নিজের অপরাধবোধ থেকেই এতদিন পিহুর থেকে দূরে সরে ছিল সে। কিন্তু পিহুর যে এভাবে অন্য কোথাও বিয়ে হয়ে যাবে সেটা মানতে কষ্ট হচ্ছে আশিকের। আশিক নিজের রুমে এসে নিজের ফোনে পিহুর সাথে নিজের একটি ফটো দেখে বলে, “তুমি তো আমায় কথা দিয়েছিলে তুমি শুধু আমারই হবে। তাহলে কি তুমি সেই কথা রাখবে না?”
অন্যদিকে পিহুও নিজের বিয়ের সিদ্ধান্তে মন থেকে খু্শি নয়। কারণ সেও যে শুধু আশিককে ভালোবাসে৷ কিন্তু পিহুর মনে হয় আশিক তাকে আর চায়না। তাই পিহু এই বিয়েটাতে নিজের মত দিয়েছে।
#চলবে