বিরহ শ্রাবণ পর্ব ৪

0
1401

#বিরহ_শ্রাবণ
#পর্ব_৪
#লেখিকা:সারা মেহেক

নিগূঢ় রজনী নিস্তব্ধতাকে হাতছানি দিয়ে আহ্বান করছে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ক্রমশ বাড়ছে এর প্রগাঢ়তা। থেকে থেকে সশব্দে নড়ে উঠছে বৃক্ষের পত্রপল্লব। চারপাশের নিস্তরজ পরিবেশ তখন হয়ে উঠছে উত্তাল। প্রকৃতির এ খেলা আপনমনে উপভোগ করে চলছে পূর্ণিমা রাতের চাঁদটি। বিশাল ধূসর কালো চাদরের মধ্যখানে এক টুকরো রূপোর থালা নামে অভিহিত চাঁদটি প্রায়শই ব্যক্তির বিভিন্ন লগ্নের সঙ্গী হয়। কখনো হয় সে বিরহে আবিষ্ট ব্যক্তিটির একাকিত্বের সঙ্গী৷ কখনো হয় সে প্রেমে আচ্ছাদিত কপোত-কপোতীর প্রেমময় মুহূর্তের সঙ্গী। কখনো হয় সে দুঃখীনির রোজনামচার সঙ্গী। তো কখনো হয় সে যাযাবরের পথ চলার সঙ্গী।

ছাদের রেলিঙ ঘেঁষে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি। আমার দুপাশে একই ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছেন প্রোজ্জ্বল ভাই ও অভ্র ভাই। বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর স্বস্তির নীরবতাকে এক ঝটকায় ভেঙে দিলেন অভ্র ভাই। আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
” বাই এনি চান্স, মেডিকেলে চান্স না পেলে কোথায় ভর্তি হবে তুমি?”

রাতের এ নিস্তব্ধতাকে আপনমনে উপভোগ করছিলাম আমি। অকস্মাৎ অভ্র ভাইয়ের কথায় নিস্তব্ধতার সেই তার কেটে গেলো। খানিক বিরক্ত হলাম বটে। কিন্তু বিরক্তিকে পাশ কাটিয়ে স্বাভাবিক গলায় বললাম,
” ভার্সিটিতে ভর্তি হতে হবে। এছাড়া উপায় কি?”

প্রোজ্জ্বল ভাই আমাদের কথার মাঝে প্রবেশ করে খানিক রাগত স্বরে চট করে বললেন,
” মেডিকেলে চান্স পাবে না কেনো! অবশ্যই পাবে। এতো কষ্ট করে ওকে পড়াচ্ছি কি ভার্সিটিতে পড়ানোর জন্য?”

অভ্র ভাই এ পর্যায়ে ঘুরে প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের দিকে চাইলেন। বললেন,
” তুই জানিস, এসব ক্ষেত্রে ভাগ্য অনেক বড় প্রভাব ফেলে। যদি চন্দ্রিমার ভাগ্য……”

অভ্র ভাইকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে প্রোজ্জ্বল ভাইও ঘুরে তাকালেন। বললেন,
” জানি, ভাগ্যের ভূমিকা অনেক। কিন্তু আশা তো রাখতে পারি। ”

” হ্যাঁ, আশা রাখতে পারিস। তবে অলটারনেটিভ অপশনও তো রাখতে হবে। ”

” অলটারনেটিভ অপশন বলতে আমি এবার ডেন্টাল বলবো। ”

” আর যদি সেটাতেও না হয়?”

অভ্র ভাই ও প্রোজ্জ্বল ভাই এর ছোটখাটো এ বাকবিতন্ডায় আমি একবার ডানে তাকাচ্ছি, তো একবার বামে তাকাচ্ছি। দু পাশে দুজনের এ কথা কাটাকাটি দেখতে বেশ মজাই লাগছে। তবে দুজনে যা শুরু করেছে তাতে ক্ষণিকের মাঝে ঝগড়া লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। আগাম এ ঝগড়া ঠেকাতেই আমি বলে উঠলাম,
” আচ্ছা, আপনারা দুজন একটু চুপ করুন। আমার ভাগ্যে যা আছে তাই হবে। তবে এজন্য চেষ্টা যে করবো না তা তো নয়। চেষ্টা করে যাই। বাকিটা আল্লাহর হাতে।”

আমার কথার প্রত্যুত্তর স্বরূপ অভ্র ভাই কিছু বলতে চাইলেন। কিন্তু উনি মুখ খোলার পূর্বেই আমি বললাম,
” আর কথা না অভ্র ভাই। আপনারা দুজন তো ঝগড়ার পর্যায়ে চলে যাচ্ছিলেন। শুধু শুধু ছোট এ বিষয় নিয়ে ঝগড়া করার মানে হয় না।
আচ্ছা, বলুন আপনারা কিছু খাবেন?”

প্রোজ্জ্বল ভাই বললো,
” হ্যাঁ তা তো বটেই। পেটে কখন থেকে ধীরেধীরে ইঁদুর দৌড়াচ্ছিলো। তুই খাবারের কথা বলার সাথে সাথেই ইঁদুর হাইপার হয়ে গেলো। এখন রীতিমতো ম্যারাথনে দৌড়াচ্ছে সে।”

প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের কথায় আমি ও অভ্র ভাই হেসে উঠলাম। প্রোজ্জ্বল ভাইও আমাদের সাথে যোগ দিলেন। অতঃপর প্রোজ্জ্বল ভাই আমায় বললেন,
” চন্দ্রিমা, তুই নিচে যা। আমরা আসছি। অভ্রর সাথে কিছু জরুরি কথা আছে। তুই রান্নাঘরে গিয়ে নুডলস রান্নার সবকিছু গোছগাছ কর। ”

” আচ্ছা প্রোজ্জ্বল ভাই। ”
এই বলে আমি নিচে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলাম। কিন্তু সিঁড়ির কাছে আসতেই খানিক অন্যমনস্কতার কারণে আচমকা পরনের প্লাজোতে পা আটকে ধাপ করে ছাদের মেঝেতে পড়ে গেলাম আমি৷ অমনিই মনে হলো কোমড় ও পায়ের হাড় পুরোপুরি মচকে গিয়েছে। ক্ষণেই চোখ বুজে ব্যাথায় ককিয়ে উঠলাম আমি।
আমি পড়ে যাওয়ার নিমিষের মাঝেই প্রোজ্জ্বল ভাই ও অভ্র ভাই আমার নিকটে এসে উপস্থিত হলেন। প্রোজ্জ্বল ভাই দ্রুত এসে আমার সম্মুখে বসে পায়ের দিকে নজর দিলেন। অতঃপর ভীষণ শঙ্কিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
” পড়লি কি করে! ব্যাথা পাসনি তো কোথায়? ”
এই বলেই উনি আমার ব্যাথায় আচ্ছন্ন অনুচ্চ কণ্ঠস্বর শুনে আমার পানে চাইলেন। উদ্বিগ্ন গলায় নিম্ন কণ্ঠস্বরে জিজ্ঞেস করলেন,
” না কি ব্যাথা পেয়েছিস চন্দ্রিমা?”

আমি ধীরগতিতে মাথা হ্যাঁ সূচক দুলিয়ে তৎক্ষনাৎ বললাম,
” ব্যাথা পেয়েছি। তবে অনেক অল্প। ”
প্রোজ্জ্বল ভাইকে এ কথা বললেও আমি জানি, পড়ে যাওয়ায় ঠিক কেমন ব্যাথা পেয়েছি। গোড়ালি ও হাঁটুতে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করছি এ মুহূর্তে।
অভ্র ভাই আমার পাশেই বসে ছিলেন। আমার পায়ের দিকে এক নজর চেয়ে কিঞ্চিৎ উৎকণ্ঠিত গলায় জিজ্ঞেস করলেন,
” সত্যিই তো? বেশি ব্যাথা পাওনি তো আবার? বেশি ব্যাথা পেলে বলতে পারো….”

অভ্র ভাইয়ের আশ্বাসমূলক কণ্ঠ শোনামাত্র মনে হলো, উনাকে বলি, ‘হ্যাঁ, একটু বেশি ব্যাথা পেয়েছি।’ কিন্তু তৎক্ষনাৎ প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের কথা মনে পড়ায় নিজেকে সংযত করলাম আমি। কোনো সন্দেহ নেই, বেশি ব্যাথা পাওয়ার কথা বললে প্রোজ্জ্বল ভাই আমাকে ধমকে ধমকে আমার পেটের ভাত হজম করিয়ে ছাড়বেন। উপরন্তু ব্যান্ডেজ, ওষুধের ব্যাপারও তো আছে। অবশ্য আমি যে পড়ে গিয়েছি, এ পর্যন্ত উনি কথা শোনাননি এটাই আমার ভালো থাকার জন্য যথেষ্ট।
ক্ষণিকের মাঝেই প্রোজ্জ্বল ভাই কি করে যেনো আমার মনের কথা পড়ে ফেললেন। অকস্মাৎ নিজের শঙ্কিত গলার কণ্ঠস্বরকে রুষ্ট কণ্ঠস্বরে পরিণত করে বললেন,
” ফকফকে চাঁদের আলোতে কিভাবে পড়ে যাস তুই! আর সবচেয়ে বড় কথা, ছাদের একদম শুকনো মেঝেতে মানুষ কি করে পড়ে! এমন শুকনো জায়গায় চোখ বন্ধ করে হাঁটলেও তো কেউ পড়ে না। আর তুই পড়লি কি করে?”

প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের কর্কশ গলার কথায় আমি গোমড়া মুখে নত মস্তকে বসে রইলাম। নিজ পক্ষের যুক্তি পেশ করে বললাম,
” এমনি এমনি পড়ে যায়নি আমি। প্লাজোতে পা আটকে পড়ে গিয়েছিলাম। ”
প্রোজ্জ্বল ভাই তৎক্ষণাৎ ধমক দিয়ে বললেন,
” তো প্লাজো পরার দরকার কি?”
উনার হেন কথায় আমি খানিক লজ্জায় পড়ে গেলাম। ক্ষণেই নিজের ভুল বুঝতে পেরে আমতাআমতা গলায় বললেন,
” আই মিন, নরমাল সালোয়ার পরবি। প্লাজো পরে যেহেতু হাঁটতে সমস্যা হয় তাহলে প্লাজো পরিস কেনো?”
আমি জবাব দিলাম না। নত মস্তকেই বসে রইলাম। অভ্র ভাই হয়তো অসামঞ্জস্যপূর্ণ পরিবেশকে ঠিক করতে বললেন,
” আচ্ছা, চন্দ্রিমা, তুমি একটু উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করো। দেখো পারো কি না।”

অভ্র ভাইয়ের কথায় আমি উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করলাম৷ আমাকে মেঝে হতে দাঁড়াতে অভ্র ও প্রোজ্জ্বল ভাই সাহায্য করলেন। পুরোপুরি দাঁড় করানোর পর অভ্র ভাই জিজ্ঞেস করলেন,
” ব্যাথা লাগছে পায়ে?”

আমি কিছু বললাম না। কয়েক সেকেন্ড পায়ের দিকে চেয়ে রইলাম। আমার ব্যাথা নিয়ে প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের হুলস্থুল কান্ড ঘটানোর পূর্বেই চট করে মিথ্যে বললাম,
” না অভ্র ভাই। তেমন ব্যাথা হচ্ছে না এখন৷ একটু হাঁটাহাঁটি করলেই ঠিক হয়ে যাবে। ”

প্রোজ্জ্বল ভাই সন্দেহজনক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
” সত্যি বলছিস তো? ব্যান্ডেজ আর ওষুধ নেওয়ার ভয়ে মিথ্যে বলছিস না তো আবার?”

প্রোজ্জ্বল ভাই বোধহয় আমায় খুব ভালো করেই চিনেন। এ কারণেই এমন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে আমায় দ্বিধাদ্বন্দে ফেলছেন। তবুও আমি নিজেকে অটল রেখে বললাম,
” উঁহু, মোটেও না। আচ্ছা, আপনারা গিয়ে কথা বলুন। আমি নিচে যাই। ”

অভ্র ভাই বললেন,
” না, তোমাকে একা যেতে দেওয়া যাবে না এখন। বলা যায় না, আমরা গেলাম আর তুমি আবারো সিঁড়ি উপর পড়ে গেলে! ”

প্রোজ্জ্বল ভাই অভ্র ভাইয়ের সুরে সুর মিলালেন,
” ঠিক বলেছিস। তখন সব দোষ আবার আমাদের ঘাড়ে না উঠে বসে।
আচ্ছা চন্দ্রিমা, আমাকে একটা প্রশ্নের জবাব দে তো। তুই বাংলাদেশী প্রোডাক্ট না কি চাইনিজ প্রোডাক্ট? ”

প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের হেন প্রশ্নে আমি থতমত খেয়ে গেলাম। বিস্মিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলাম,
” আপনার কথার মানে কি প্রোজ্জ্বল ভাই! আপনি আমাকে অপমান করছেন! সরাসরি আন্ডারেস্টিমেট করছেন আমাকে!”

প্রোজ্জ্বল ভাই জবাব দিলেন না। উপরন্তু উনি ও অভ্র ভাই ঠোঁট টিপে হাসতে লাগলেন। উনাদের এ কান্ডে আমার ভীষণ রাগ হলো। ফলে উনাদের পাশ কাটিয়ে আমি ধীরেসুস্থে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে লাগলাম। আমার পিছু পিছু নামতে লাগলেন প্রোজ্জ্বল ভাই ও অভ্র ভাই।

.

আমি, প্রোজ্জ্বল ভাই আর অভ্র ভাই রান্নাঘরে কাজ করছি। আমাদের আচার আচরণ এখন সাক্ষাৎ চোরের ন্যায়। মধ্যরাতে রান্নাঘরে ঢুকার অপরাধে মামির হুংকার হতে বাঁচতেই আমরা তিনজনে চোরের বেশ ধারণ করেছি। অবশ্য এমনটা প্রথম নয়৷ এর পূর্বেও বহুবার এমন হয়েছে। রোজ মামা মামি তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়েন। এরই ফায়দা লুটে কখনো কখনো আমি, প্রোজ্জ্বল ভাই ও প্রত্যাশা আপু, কখনো কখনো আমি প্রোজ্জ্বল ভাই, অভ্র ভাই এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে মধ্যরাতের নাস্তা বানিয়ে ফেলি। খাবার বানানো শেষে আমরা সবাই মিলে রাতে মুভি দেখি। যদিও এমনটা যে রোজ রোজ করা হয়, তা নয়।

আজ প্রোজ্জ্বল ভাই আমাদের জন্য নুডলস রান্না করছেন। আর আমি কফি বানাচ্ছি। অভ্র ভাই ঘুরে ঘুরে আমাদের দুজনকেই সাহায্য করছেন। উনি যে কিছু রান্না করতে পারেন না, তা নয়। উনি এখন রান্না করছেন না কারণ মধ্য রাতে অল্প সময়ে রান্নার উপযোগী কোনো সরঞ্জাম আপাতত আমাদের হাতের কাছে নেই।
নুডলস ও কফি বানানোর পর আমরা তা নিয়ে চুপিসারে দ্বিতীয় তলায় চলে আসি। উদ্দেশ্য প্রত্যাশা আপুকেও ছাদে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু আপুর রুমে আলতো করে কয়েকবার নক করার পরও যখন আপু দরজা খুললো না তখন বুঝলাম, আপু আজ দ্রুতই ঘুমিয়ে পড়েছে। অগত্যা আমরা তিনজনই খাবার ও একটা মাদুর নিয়ে ছাদে চলে এলাম।

প্রায় মধ্যরাত, পূর্ণিমা রাতের জ্যোৎস্নালোকিত পরিবেশ, অবিরাম ঝিঁঝি পোকার ডাক, ক্ষণে ক্ষণে ডুকরে উঠা কুকুরের মৃদু আর্তনাদ, অদূরে ডেকে উঠা পেঁচার ডাক, সব মিলিয়ে রাতের এ সময়টা দারুণ উপভোগ্য হয়ে উঠেছে। উপরন্তু মধ্যরাতের টুকটাক এই খাওয়াদাওয়া সময়টাকে আরও মনোরম এবং স্নিগ্ধ করে তুলেছে।
খাবার খাওয়া শেষে প্রোজ্জ্বল ভাই আমাদের দুজনের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করলেন,
” নুডলস কেমন হয়েছে?”

আমি চট করে বললাম,
” আগে বলুন, আমার কফি বানানো কেমন হয়েছে?”

অভ্র ভাই কফির মগে চুমুক দিয়ে বিস্তৃত হেসে বললেন,
” এজ অলওয়েজ, বেস্ট।”

এবার প্রোজ্জ্বল ভাই কফি খেয়ে ভ্রুজুগল কুঞ্চিত করে বললেন,
” দিনের মধ্যে কতবার প্রশংসা শুনতে হয় তোর? কিছুক্ষণ আগেই তো বললাম, তুই কফিটা ভালো বানাস। তোর যদি আরও তেল খেতে মন চায়, তাহলে তোকে আবারো তেল মেরে বলছি, কফি তুই ভালো বানাস। আর এবারের কফিটাও ভালো হয়েছে। ”

প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের খোঁচা মারা কথাগুলো শুনে খানিক রাগ হলো বটে। তাই ঈষৎ রুষ্ট স্বরে বললাম,
” মানুষের প্রশংসা করতে কি আপনার টাকা লাগে প্রোজ্জ্বল ভাই? আপনি এমনভাবে প্রশংসা করলেন, মনে হলো কেউ আপনাকে দিয়ে জোর করে প্রশংসা করিয়েছে। মানুষ প্রশংসা করে মিষ্টি স্বরে। আর আপনি প্রশংসা করেন নিমে জর্জরিত স্বরে। ”
আমার কথা শেষ হওয়া মাত্রই অভ্র ভাই সশব্দে হেসে উঠলেন। বললেন,
” এটা একদম ঠিক বলেছো চন্দ্রিমা। প্রোজ্জ্বলের কাছ থেকে প্রশংসার আশা করা আর মরুভূমিতে জল খোঁজা একই রকম। ”

প্রোজ্জ্বল ভাই যেনো আমাদের এসব কথার কোনো তোয়াক্কাই করেন না এমন ভান করে বললেন,
” আমি এমনই। আমার কথা কারোর ভালো না লাগলে কিছু করার নেই। ”

আমি বললাম,
” আপনার এমন স্বভাবের কারণে কিন্তু আপনার বউ থাকবে না, বলে দিলাম প্রোজ্জ্বল ভাই। ”

” না থাকলে না থাকুক। আমি কি জোর করবো না কি তাকে? আমার এ স্বভাবের উসিলায় যদি আমার বউ না হয় তাহলে আলহামদুলিল্লাহ। সারাজীবন চিরকুমার এর ট্যাগ লাগিয়ে চলতে পারবো। ”

এবার অভ্র ভাই বাঁকা হেসে টিপ্পনী কেটে বললেন,
” উপর উপর দিয়ে চিরকুমার আর ভেতর ভেতর দিয়ে চার বউয়ের বর। ছিঃ, প্রোজ্জ্বল মশাই। এই ছিলো তোর মনে!”

আমিও অভ্র ভাইয়ের কথার তালে তাল মিলিয়ে বললাম,
” ছিঃ, প্রোজ্জ্বল ভাই। আপনার ক্যারেক্টার এতো ঢিলা! মামা মামি জানলে কি ভাববে বলুন তো!”

প্রোজ্জ্বল ভাই যে আমাদের কথায় লুচির মতো ধীরে ধীরে ফুলতে শুরু করেছে তা উনার চাহনি দেখে বুঝাতে বাকি রইলো না। অভ্র ভাইয়ের সাথে মিলে প্রোজ্জ্বল ভাইকে জালিয়ে সেই কফি খাওয়ার প্রতিশোধটা পূরণ করতে পেরে মনে প্রশান্তির হাওয়া বয়ে গেলো।

আমাদের কফি খাওয়া শেষ হতেই প্রোজ্জ্বল ভাই বললেন,
” চন্দ্রিমা। তুই এসব নিয়ে নিচে যা। আমরা একটু পর আসছি। তখন তোর কারণে কথা বলতে পারিনি অভ্রর সাথে।”

মাদুরসহ এতো এঁটো প্লেট আর মগ একা হাতে নিয়ে যাওয়ার কথা শুনে চোখজোড়া বড় বড় হয়ে এলো আমার। বিস্মিত কণ্ঠে বললাম,
” এতোগুলো আমি নিয়ে যাবো?”

অভ্র ভাই জিজ্ঞেস করলেন,
” হ্যাঁ। কোনো সমস্যা চন্দ্রিমা?”

আমি কিছু বলতে যাবো এর পূর্বেই প্রোজ্জ্বল ভাই বললেন,
” তোর নিয়ে যেতে কি সমস্যা? তোকে আমাদের দুজনের সাথে রাতের আড্ডায় নিয়েছি, এর বদলে এইটুকু কাজ করতে পারবি না!”

আমি প্রতিবাদী কণ্ঠে বললাম,
” না, পারবো না একা করতে। আপনারা আসলে কি হয়?”

প্রোজ্জ্বল ভাই এবার বিরক্তি সহিত বললেন,
” বললাম তো, আমাদের একটু জরুরি কথা আছে। আর কখন থেকে দুইটা ছেলের মধ্যে কাবাব মে হাড্ডি হয়ে বসে আছিস তুই! যেতে বললাম না তোকে!”

প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের এহেন হুকুম আমার কাছে পাহাড়সম মনে হলো। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম, একা হাতে আমি মোটেও এগুলো নিয়ে নিচে যাবো না৷ তাই প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের কথার রেশ ধরে আমার মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো।
আমি তৎক্ষনাৎ চাহনি ও কণ্ঠে আকাশসম বিস্ময় প্রকাশ করে বললাম,
” আস্তাগফিরুল্লাহ, নাউজুবিল্লাহ! ছিঃ ছিঃ, প্রোজ্জ্বল ভাই, অভ্র ভাই আপনারা এমন! ”
®সারা মেহেক

#চলবে?
(
যারা গল্প পড়ছেন, একটু সাড়া দিয়ে যাবেন। এ গল্পের পাঠকদের চিনে রাখতে চাই😊)

গ্রুপ:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here