প্রেমের উষ্ণ ধোঁয়াতে পর্ব ২৫

0
1570

#প্রেমের_উষ্ণ_ধোঁয়াতে
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব_____২৫

তনুজা শাড়ির আঁচলটা একটু উপরে উঠিয়ে ঘরণী ভাব ধারণ করল। হালকা নীল চুলের গোছা হাত খোঁপা করার বৃথা চেষ্টা চালাল ও। পারল না,অদক্ষ সে এসবে। শাড়িটাও মায়ের থেকে পরে এসেছে। শাড়িতে অনভ্যস্ত হওয়ার দরুন সিঁড়ির ধাপ বইতে বেগ পোহাতে হচ্ছে প্রচুর। শুনেছে প্রহরের শাড়ি অত্যন্ত পছন্দ, তাই তার ওয়েস্টার্ন বেশভূষা ছেড়ে শাড়ি পরিধানের রুটিন চালু। আলতার কাছ থেকে প্রহরের রুম কোনদিকে জেনে নেয়। দরজার সামনে দাঁড়িয়েই হাঁক ছাড়ল অবিশ্রান্ত, হাঁপানো কণ্ঠে,

” প্রহর সাহেব! এসেই শুনলাম আপনার নাকি পায়ে ব্যথা! কীভাবে ব্যথা পেলেন?”

প্রহরের নজর মোবাইলের স্ক্রিনে নিবদ্ধ। সটান হয়ে শুয়ে আছে সে। পায়ে ব্যান্ডেজ। সাদা ব্যান্ডেজের ওপর বৃত্ত আকারে লালচে রক্ত। ব্যান্ডেজটা দাঁতে দাঁত চেপে ধৈর্য্য ধরে রাখছে সে মায়ের মায়াভরা অশ্রুসিক্ত চোখে চেয়ে বাধ্য হয়ে। নতুবা এরকম কা**টাছেঁড়া তার জন্য সাধারণ ব্যাপার। রাজনীতিতে ঢোকার পদক্ষেপেই সে একটা ঝড়ের সম্মুখীন হয়েছিল। টানা দশটা দিন পড়েছিল হসপিটালে গু–লিবিদ্ধ হয়ে। অতঃপর বড়ো,ছোট আ””ঘাত সইয়ে যাওয়া শিখে গিয়েছে, তিনটে স্টিচ লেগেছে এমনতর ক্ষত তুচ্ছ মাত্র।

” ঢুকার অনুমতি কি পাব না? “— মিহি কণ্ঠের উৎসুক প্রশ্ন।

প্রহর মোবাইল থেকে দৃষ্টি সরিয়ে চাইল দরজার সমুখে অবস্থিত তনুজাকে। চাহনি দীর্ঘায়িত হলো না, এক পল ছিল বোধহয়। ভারী গলায় আসার অনুমতি দেয়,” আসুন। ”

তনুজা বিদ্যুৎ গতিতে ঘরে ঢুকল। দ্রুত বেগে প্রশ্ন করল আবার,

” বললেন না তো,ব্যথা কীভাবে পেলেন?”

প্রহর মোবাইলটা শিয়রে রাখে, বালিশের পাশে। তনুজার চেহারায় অস্থিরতার ছাপ পরিস্ফুটিত। বুকের অভ্যন্তর ভাগের উত্তেজনা চোখে,ওষ্ঠাধরে,মুখচ্ছবিতে প্রস্ফুটিত হচ্ছে ক্রমশ। চোখের সূক্ষ্মতায় সবটা পর্যবেক্ষণ করে ঠোঁটের কোণ বাঁকাল সে এবং তা সম্পূর্ণ তনুজার দৃষ্টি লুকিয়ে, অগোচরে। বিদ্রুপের স্বরে বলে,

” আপনার কি কষ্ট হচ্ছে? ”

তনুজা থমকালো। বুকে তীব্র তোলপাড় অনুভব করল। চকিতে তাকাল প্রহরের মুখের দিক। অচিরেই চক্ষুগহ্বরে আঁটকালো প্রশ্নাত্মক চাহনি। কুচকুচে কালো মণির ওই গহনে মন হারিয়ে বসল পর পর। নড়ল মেরুন রঙে রঙিন হওয়া দু অধর,

” কষ্ট হওয়ার ব্যাপারটা কি মন্দ? আমার সকল কষ্ট আপনাকে ঘিরেই হবে,কারণ আপনিই আমার ভবিতব্য। ”

ক্রমে ক্রমে জিতার পাল্লা ভারী হচ্ছে প্রহরের। মাথার পেছনে হাত গলিয়ে বলল,

” শক্ত বাংলা শব্দ শিখে ফেলেছেন আপনি বিদেশীনি। একটা সিক্রেট বলি আপনাকে? এটা একটা ইশারা বলতে পারেন আপনার জন্য। অথবা সতর্কবাণী। ”

অদ্ভুত কথার ধাঁচে তনুজার অক্ষি যুগল ছোট ছোট আকৃতিতে পরিণত হলো নিমিষেই। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নেত্রপাত করল। কণ্ঠে প্রবল আগ্রহ,

” বলুন। ”

প্রহর উঠে বসল। বিছানার পাশের ড্রয়ার থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে সিগারেট ধরাল। এক টান দিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে দূষিত করে ফেলে রুমের পরিবেশ। বলে,

” নরম জাতের মেয়েগুলো প্রচন্ড বোকা হয়। সেই বোকাসোকা, গুটিশুটি মেরে থাকা, ভয়ে হাঁটু কাঁপা মেয়েকে আমার ভীষণ মনে ধরে। এমন একটা মেয়েকে আমি এতটা চাই,যতটা চাইলে সে আমার বুকের বাম দিকের নরম মাংসপিণ্ড খুবলে খুবলে রক্তা**ক্ত করলেও আমার মূক হয়ে থাকা ছাড়া কোনো উপায় নেই। ”

তনুজা নিরব, স্তম্ভিত। ভাবনার দেশে পাড়ি জমাল। প্রহরের চরিত্র সম্পর্কে যতদূর জেনেছে শ্যামবর্ণ এই সৌষ্ঠবদেহী পুরুষের জীবনে কোনো নারীর ছোঁয়া নেই। তবে কি ওকে কোমল হতে বলছে? ওর ম্যাচিউর,সরাসরি কথা ব্যক্ত করার দিকটা কি প্রহরের মনের বিরোধী? উদ্যোগী হয়ে জানতে চাইল,

” আপনি কি আমাকে নরম স্বভাবের হতে বলছেন?”

উক্ত প্রশ্নের জবাবে বাক্য ব্যয় করল না প্রহর। আহত পা টা মেঝেতে স্পর্শ করে নির্বিকারচিত্তে বলল,

” আপনাকে শাড়িতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে তনুজা। ”

তনুজার গোলগাল গড়নের মুখশ্রীখানি অরুণ রঙে ছেয়ে গেল অবিলম্বে। গোলাপি পাতলা ঠোঁটে জায়গা পেল লজ্জালু হাসি। কেবলই এক বাক্য তবুও অতিরিক্ত ভারী ঠেকল ওর নিকট। নুইয়ে গেল মস্তক। পরক্ষণেই প্রহরের ঝাঁঝমিশ্রিত গলায় হকচকালো ও,ভাবতে বাধ্য হলো অত্যধিক।

” আপনি বুঝদার হতে পারেন,কিন্তু আপনার মাথার এক অংশ ফাঁকা। “– এহেন একটা কথা কেন বলল প্রহর? ঠাওর করা অত্যন্ত মুশকিল হয়ে পড়ছে। প্রহরকে বুঝা আর কোনো কঠিন ধাঁধা সলভ করা যেন প্রায়ই এক। সমীরণ কি তবে ঠিক বলেছে! কিছু জিজ্ঞেস করবে তার পূর্বেই হাতে শার্ট নিয়ে গটগট পায়ে বেরিয়ে গেল প্রহর। তনুজা বিস্মিত নেত্রে নির্নিমেষ তাকিয়ে রইল তার যাওয়ার পথে।

টি শার্টের ওপর শার্ট জড়িয়ে একেক করে সবকটা বোতাম মুক্ত করে রাখল প্রহর। শার্টের হাতা নিপুণ হাতে ভাঁজ করে কনুইয়ের একটুখানি কাছে এনে থামল। ঘাড় দুই দিকে কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে কাত করে পুরোদমে ফিটফাট হয়ে গেল, মাথায় যে স্থানের প্রতিচ্ছবি অংকন করেছে,সেখানে যাওয়ার নিমিত্তে। পথিমধ্যে মোশতাকের ডাক শ্রবণন্দ্রিয় হতেই এগিয়ে গেল ড্রইংরুমের আড্ডাস্থানে। পরিচিত তিনটি চেহারার দেখা পেল। তনুজার বাবা,মা ও চিরশ–ত্রুর স্থানে খাসভাবে বসানো সমীরণের। মোশতাক সাহেব তাকে দেখে মুখে শুকনো হাসি কায়েম রেখে বলে উঠলেন,

” কোথায় ছিলে? তোমার শ্বশুর,শ্বাশুড়ি এসেই তোমার খোঁজ করছেন। ”

” ঘুমিয়ে ছিলাম। “- নম্র কণ্ঠে প্রতুত্তর করে প্রহর। মোশতাক সাহেবের মন জুড়িয়ে গেল। প্রত্যয় মাঝে মাঝে উনার এক কাঠি উপরে থাকলেও প্রহর যেন তাঁরই শিষ্য। তার স্বভাব সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত তিনি। বেপরোয়া স্বভাবের ছেলেটা উনাকে মান্য করে, এতে খুব খুশি খুঁজে পান তিনি। একটা ছেলের ইচ্ছে ছিল উনার। ঊষাকে নিয়ে উনি সন্তুষ্ট নন,তেমনটা না৷ মেয়ে উনার জন্য গর্ব। তবুও প্রহরকে পেয়ে একটা ছেলে পেয়েছে যেন। তনুজার বাবা স্মিত হেসে বললেন,

” বসো বাবা। আমরা তোমার আর তনুজার এনগেজমেন্ট নিয়েই কথা বলছিলাম। ”

প্রহর চারদিকে দৃষ্টি মেলে বসল ঠিক ঠিক সমীরণের পাশে। মৃদু চাপা স্বরে বলল,

” তোর বাপ আমাকে দুই দুবার মা-রতে চেয়ে এখন মুখে মধুর বুলি আওড়াচ্ছে। তোরা কি গিরগিটির বংশধর? ”

সঙ্গে সঙ্গে সমীরণের সমগ্র আদলে ক্রোধেরা হানা দিল। সংবরণ করতে চাইল সে নিজেকে। চোয়াল শক্ত রেখে বলল,

” মুখ সামলে কথা বল। ”

” কত সামলাব বল। তোর বোন আমাকে পুরোই বেসামাল করে দিয়েছে। এখন তুই সামলাতে বললে হবে? তোর বোনটা অনেক কাজের। বোনের মতো মানুষ হো। ”

সমীরণের মুখোভঙ্গি আরো কঠিন হতে কঠিন হয়ে আসল। মোশতাক সাহেব ওদের দিকে তৃপ্ততার চাহনি নিক্ষেপ করলেন।

” তোমাদের দুজনকে একসাথে বসে থাকতে দেখে ভালো লাগছে। ”

” স্বাভাবিক। বন্ধুদের পাশাপাশি ভালো মানায়। ”

মনে মনে ঘোর বিরোধিতা করল কেউ প্রহরের উচ্চারিত বাক্যের। ভার্সিটির প্রতিটা দেয়াল,মাঠ,ঘাট সবকিছু স্বাক্ষী দুজনের মধ্যকার দ্বন্দ্ব, মা-রপিটের। উঠে দাঁড়াল প্রহর।

” আমার এখন যেতে হবে। আপনারা থাকুন। ”

মোশতাক সাহেব আনন্দপূর্ণ মেজাজে জিজ্ঞেস করলেন,
” কোথায় যাচ্ছো?”
প্রহরের নির্বিঘ্নে,ভাবলেশহীন বাক্য, ” মন যেদিকে চায়। সঠিক বলতে পারছি না। ”

মোশতাক সাহেব কিছু একটা আন্দাজ করলেন। হুঁশিয়ার করলেন ইশারায়, ” লক্ষ্য মনে রেখো। ”

ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল সে এক পলক মোশতাক সাহেবের দিকে। তৎপরে সমীরণ ও তার বাবা-মাকে দেখে নিল। কণ্ঠে তাচ্ছিল্যভাব, ” আমি আমার নির্ধারণ করা লক্ষ্য ভুলি না,আমার চাওয়াও ভুলি না। ”

ছুটির ঘন্টা বাজতেই তাড়াহুড়ো করে সব ছেলেমেয়ে বের হতে উদ্বুদ্ধ হয়। নিশাত বেঞ্চে বসে একে একে সবার বেরিয়ে যাওয়া অবলোকন করছে। ওর পাশে বসা সাথী তাড়া দিতে লাগল,

” নিশু উঠ,উঠ। সবাই চলে যাইতাছে। তুই কী ঘুমিয়ে পড়ছিস?”

ব্যাগের উপর থেকে ঝটপট মাথা তুলে বসল নিশাত। চোখ দু’টো অসম্ভব রক্তিম। নিঃশ্বাসও মুক্ত হচ্ছে নিঃশব্দে। ঠোঁটযুগলের চামড়া শুকিয়ে টান টান ভাব। এই বুঝি ফেটে রক্ত ঝরবে, লালের আবীরে ছেয়ে যাবে অধরোষ্ঠ। সাথীর দ্বিধাগ্রস্ত কণ্ঠ,

” তুই কি অসুস্থ? বাড়ি যাইবি না?”
নিশাতের মিহি স্বর ভাসল সমগ্র কক্ষে,” যাব। তুই যা,আমি বের হব একটু পর। ”
” শিমুল আসে নি বইলা তোর মন খারাপ? ”
নিশাত জিহ্বা দিয়ে শুষ্ক অধরজোড়া সিক্ত করে জবাব দেয়,” জানিনা। ”
” আমি বুঝছি। ও এহন আইব না। তোর ফুপাতো ভাইয়ের না আংটি বদলের অনুষ্ঠান কাল?”

নিশাত মাথা নাড়িয়ে বলল,” হু। ”

প্রহরের এনগেজমেন্ট শনিবারে হবার কথা পাকাপোক্ত হয়। শনিবার আসতে এখনও মাঝে একদিন। খুব কি দেরি? না,দেরি নয়। তবে এনগেজমেন্টের পাকা দিন পরিবর্তন করে আগামীকাল শুক্রবারের সময় ধার্য করা হলো। নতুন করে পুনর্বার দাওয়াত পাঠায় মজুমদার বাড়িতে। দ্বিতীয় বার দাওয়াত দিতে আর প্রহর আসে নি,এসেছে চেয়ারম্যান অর্থ্যাৎ উজ্জ্বলের বিশস্ত এক লোক। তনুজাকে ভালোবেসে ওকে ভুলে বসেছে প্রহর নামক জ-ঘন্য লোকটা। ভুলে বসেছে শাসন,মার””ধর করা। কেউ যে শাসন,মা”রধর এতটা বি”শ্রীভাবে মিস করতে পারে সেটা প্রেমে না পড়লে কখনোই উপলব্ধি করত না নিশাত। প্রহর যদি ডেকে বলে,’ গাধী কাছে আয় তোকে মা””রি। ‘ তাহলে নিঃসংকোচে এগিয়ে যাবে ও। গাল পেতে দিয়ে বলবে,’ ইচ্ছেমতোন থাপ্প–ড় দিন। ছোট আমি,কষ্টের ওজন সইতে পারছি না প্রহর ভাই। ‘

মিনিট বিশ পর, সবার শেষে নিঃশক্তি দেহটা টেনে স্কুলের গেইট পেরিয়ে অবিন্যস্ত দৃষ্টিতে এদিক সেদিক তাকাতে লাগল বিরতিহীন। উদ্দেশ্য টমটম খোঁজা। এ শরীর নিয়ে হেঁটে যাওয়া সম্ভব নয়। স্কুল ছুটির সময়ে টমটমের মেলা বসে,গিজগিজপূর্ণ অবস্থা থাকে। অথচ এখন দুস্তিথি পড়েছে।

টমটম না পেয়ে সমুখে পা ফেলতেই আত্মা ধুম করে লাফিয়ে উঠল নিশাতের। ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল মুহূর্তেই। কপাল হতে কানের পাশ দিয়ে এক ফোঁটা ঘাম বিন্দু বেয়ে গেল। তিরতির করে কম্পনরত আঁখিপল্লব মেলে সম্মুখে নিক্ষেপ করল ভীতু চাহনি। পানি চিকচিক করছে চক্ষুকোলে,বক্ষস্থলের ধড়ফড়ের আওয়াজ শ্রবণগ্রন্থিতে প্রবেশ করছে অবলীলায় তড়তড়িয়ে। আচমকা একটা বাইক এসে শরীরের খুব সন্নিকটে ব্রেক কষায় শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। দৃষ্টি চমৎকৃত। মাথায় হেলমেট পরে একজন সুঠাম পুরুষ বাইকে বসে আছে। গা টা ছমছম করে উঠল বিপদ বুঝতে পেরে। বাম পা পিছিয়ে নিতেই শীতল স্বর এলো কর্ণকুহরে,

” আমার পেছনে বস। ”

কণ্ঠটা ওর অতিশয় চেনা। কতশত,সহস্র, লক্ষ্য বার শ্রবণপথে এসেছে এ সুর। বহু বার লহরীর সূচনাপাত ঘটিয়েছে হৃদয়ের গোপন কুঠুরিতে। নিশাত নিস্পন্দ হয়ে চেয়ে রইল অপলক,বেহিসাব। ঝাঁঝমিশ্রিত গলা শুনতেই নড়েচড়ে উঠল।

” তোকে কি কোলে করে বসাতে হবে?”

অল্পক্ষণ সময় নিয়ে আমতা আমতা করল,

” আপনি এখানে কী করছেন?”

” তোদের স্কুলের মেয়েগুলো হেব্বি কিউট দেখতে। আমি এতদিনে বিয়ে করলে আমার মেয়েও সিক্স নয়ত সেভেনে পড়ত, না রে? বাচ্চা বাচ্চা মেয়ে দেখে বাচ্চার বাপ না হওয়ার আফসোস করতে চলে এলাম এখানে। আর প্রশ্ন করবি?”

শেষের কথাটা চিবিয়ে চিবিয়ে বলল প্রহর। নিশাত অপ্রতিভ হলো, সিরিয়াস মোমেন্টে হাসবার মতোন দুঃসাহসিক কান্ডখানা করতে যাচ্ছিল আবার। কোনোমতে ঠোঁটে ঠোঁট শক্ত করে চেপে ধরে আটকাল অভদ্র হাসিটুকু। মন্দ বলে নি প্রহর। বিয়ে করলে ঠিকি তার একটা বাবু থাকত,সে হতো বাবুর বাপ। কাঁধ থেকে স্কুল ব্যাগ খুলে সুবোধ বালিকার ন্যায় বাইকে উঠতে যাবে টেনে ব্যাগটা নিয়ে নিল প্রহর। বলল

” তোর ব্যাগটা এত ভার কেন? কি ভরেছিস এতে? লিলিপুট হয়ে এত বড় ব্যাগ নিয়ে হাঁটিস। ”

নিশাত উঠে বসে দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে। প্রহরের কাঁধ স্পর্শ করবে কি-না ভাবতে লাগল। নিস্পৃহ কণ্ঠে উত্তরে বলল,

” আজ গাইডসহ এনেছিলাম। তাই ওজন বেশি। ”

” আচ্ছা। ধরে বস আমাকে। ”

ও বোকার ন্যায় প্রশ্ন করে বসল,” কোথায় ধরব?”

প্রহর ঘাড় বাঁকিয়ে দেখল ওকে। অত্যন্ত মনোযোগের সহিত চাইল। ইতস্তত অনুভূতিতে হকচকিয়ে গেল নিশাত। হেলমেটে ঢাকা মুখ,দৃষ্টি সে পরখ করতে পারল না। তবে নিশ্চিত সেই চোখ দু’টির নজর গভীর, অনিমেষ।

” আগে আমার সাথে বাইকে উঠলে কোথায় ধরতি? কাঁধ, ঘাড়, পেট সব আপাতত তোর সম্পত্তি। যেভাবে পারিস মালিকানা খাটা। ”

মনের আনচান, বেতাল অনুভূতি সমেত প্রহরের পেট জড়িয়ে ধরল ও। চাওয়ার বৃদ্ধি হলো। স্পৃহা জাগছে পিঠে মাথা ঠেকিয়ে দিতে। প্রহর বাইক স্টার্ট দিয়ে বলল,

” তোর লিপস্টিকের ঘ্রাণটা সুন্দর। সেদিন রাতে কি এটাই ছিল ঠোঁটে? ”

নিশাতের শীর্ণ কায়ায় তরঙ্গ খেলে গেল। হড়বড়িয়ে প্রশ্ন করল তখনি,

” কোন রাতে?”

প্রহর দৃষ্টি সামনে নিবিষ্ট রাখে। নির্লিপ্ত সে,

” জ্বরের ঘোরে আমাকে চুমু খেয়েছিলি যে রাতে। ”

নিশাতের মাথা ঘুরছে। এটা কী শুনল সে! নিজ কানকে বিশ্বাস করা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। উত্তেজনা ভীড় জমালো কণ্ঠে,

” আমি চুমু খেয়েছি?”

প্রহর ক্ষিপ্রতায় বলল,
” তাহলে কে খেয়েছে? রফিক আজম বলে আমি চরি**ত্রহীন। আর আমার মোবাইলে থাকা ছবি বলে চরিত্র**হীনের বেঁচে যাওয়া অবশিষ্ট চরিত্র লুন্ঠনের চেষ্টা চালিয়েছে তাঁর সুন্দরী কন্যা মেহরিন মজুমদার নিশাত। ”

নিশাতের মুখ হা হয়ে গেল,” ছবি?”

” বহুদিন পর সুযোগ পেয়েছি মামুজানের পেটে ডায়রিয়া,আমাশয়ের উৎপত্তি ঘটানোর। হাতছাড়া করি কীভাবে? ”

#চলবে,,,
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here