প্রেমের উষ্ণ ধোঁয়াতে পর্ব ২১

0
1550

#প্রেমের_উষ্ণ_ধোঁয়াতে
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব_____২১

নিশাতের হৃদপিণ্ড শ্যাম পুরুষের আদলখানি দেখে বিদ্যুৎ গতিতে লাফিয়ে উঠল। শরীরটা যেন অসাড়তা লাভ করল নিমিষেই। সুতির সাদা ওড়নাটা চাদরের ন্যায় জড়িয়ে আছে ওর রোগা দেহে। ভ্রু যুগল পার করে ওড়নাটা আঁখিপল্লব প্রায় ছুঁই ছুঁই। তবুও চিরচেনা সেই সৌম্য আর মনোহর চেহারায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে বেগ পোহাতে হলো না ওর। তার মনে হলো প্রহর এক মাসে অত্যধিক সৌষ্ঠবপূর্ণ হয়েছে। যত বাড়ে দূরত্ব, নয়নাযুগলের পিয়াসা ততই প্রহরকে চক্ষু আয়নায় নতুন করে আবিষ্কার করে যেন। লম্বা সময় ধরে খাবার, ঘুমের অনিয়মে,অযত্নে, অবহেলায় মলিনতা ধারণ করা চেহারায় নির্মল,স্বস্তির হাসি ফুটে ওঠে। দুই দিকে প্রসারিত হয় পাতলা অধরোষ্ঠ। কতটা অনাবিল শান্তি বইছে বক্ষস্থলে ও প্রকাশ করতে পারবে না। কেবল বলতে পারবে তার স্বস্তির এক অংশের মালিক তার প্রহর ভাই। কতকাল শাসন করে না প্রহর, মা*রে না! এই ৩০টা দিন সে নিজের ছোট্টবেলার বুঝ হওয়ার বয়স থেকে আরম্ভ করে আজ পর্যন্ত প্রহরের সকল মা*র,শা-সনগুলোর একেকটা মূহুর্ত স্মরণ করেছে। তার মধ্যে একটা মিষ্টি, মধুর স্মৃতি ওর হৃদয় অত্যধিক নাড়া দেয়।

প্রাইমারির গন্ডি পেরিয়ে নতুন নতুন ষষ্ঠ শ্রেণিতে উঠার পর একদিন ফুপুর বাড়ি যায় নিশাত শিমুলের কথায়। বাড়িতে তখন প্রত্যয় এবং প্রহর দুই ভাই উপস্থিত ছিল। উজ্জ্বল সাহেব সেদিন বড় বড় আঁখ এনেছিলেন বাজার থেকে। আঁখ কার কতটা প্রিয় নিশাত জানে না তবে তার এতটাই প্রিয় যে তেঁতুল দেখলে জিভে যেমন পানি চলে আসে? ঠিক তেমনটাই আঁখ চক্ষে পড়লে অবস্থা হয় ওর। আলতা ভাইঝির পছন্দের ব্যাপারে খুব অবগত। প্রত্যয় ছোট ছোট সাইজে আঁখগুলো কেটে বাড়ির ভেতরে নিয়ে আসে। তার থেকেই আলতা একটা ধরিয়ে দেয় নিশাতের হাতে। বলে,” সবার আগে আমার নিশু টেস্ট করবে আঁখটা মিষ্টি নাকি পানসে। ” ফুপির আদরে আহ্লাদী হয়ে নিশাত কামড় বসায় আঁখে অসতর্কভাবে। তাৎক্ষণিক চিৎকার করে ওঠে,হাত থেকে আঁখের স্থান হয় মেঝেতে। প্রহর রুমে ছিল। চিৎকারে ছুটে আসে বাকি সবার মতোন সেও। নিশাত এর দাঁত ভেঙে মাড়ি থেকে রক্তিম তরল রক্ত ঝরছে। এমতাবস্থায় শিমুল হেসে দিল,সাথে প্রত্যয়ও। আলতা চোখ রাঙালেন দু’টোকে। কড়া সুর তুললেন, ” ফা–জিল দু’টো। আমার মেয়েটার দাঁত ভেঙে গেছে আর তোরা হাসছিস? ” মায়ের কঠিন স্বরে ভাই-বোনের হাসি নিভে যায়। দৃষ্টি কাতর হয়। প্রহর ত্রস্ত পায়ে উদভ্রান্তের ন্যায় এগিয়ে এসে ব্যতিব্যস্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,

” ব্যথা করছে তিলবতী? ”

নিশাত চোখে অস্পষ্ট দেখতে শুরু করল। কথা বলা কষ্ট সাধ্য হয়ে দাঁড়াল তার। মিচমিচে কালো মণিজোড়া হতে বড় বড় দু ফোটা জল উপচে গ্রীবাদেশে পৌঁছাল। প্রহরের ছাই রঙা টি শার্টের অল্পটুকু অংশ টেনে ধরে বলল,

” র,,,ক্ত! র,,ক্ত দেখে ভয় লাগছে ভাইয়া। ”

প্রহর কারো পরোয়া না করে তক্ষুনি নিশাতের শরীর টা টেনে মুখটা নিজের শক্ত বুকে গুঁজল। অভয় দিল সে কোমল মিশ্রিত শীতল কণ্ঠে, ” রক্ত দেখা যাচ্ছে আর? দেখছিস তুই? ”

বুকে ঠোঁট গোঁজ করে রাখা বারো বছর বয়সী নিশাত সেই সময়টায় স্রেফ তুমুল নীরবতা পালন করল। ওই ফাঁকে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে ছুটে এলেন আলতা। প্রহর মায়ের হাতে বক্স দেখে অত্যন্ত আদুরে শব্দ সাজায়। বলে,

” তুই মাথাটা তুলে চোখ বন্ধ রাখবি,ওকে তিলবতী? দু চোখ বন্ধ করে আমার হাতে হাতটা রাখবি শক্ত করে, দেখবি রক্ত নেই, ভয়ও লাগছে না তোর। মানবি তো আমার কথা?”

দাঁতের অসহ্য রকম ব্যথায় মুখে কিছু বলতে পারল না নিশাত। মাথা উপর নিচ করে হ্যাঁ বুঝাল। প্রহর বুক থেকে ওকে সরিয়ে কোমরে হাত রেখে টেনে থরথর করে কাঁপতে থাকা দেহটা আগলে রাখল বাহু বন্ধনে। আলতা তুলা বের করে রক্ত মুছে দিয়ে, একটা ব্যথা দূর করার ট্যাবলেট খাইয়ে দিলেন। ভেঙে আসা দাঁতটা তুলে ফেলতে নিলে প্রহর বাঁধা দিয়ে বলে,

” তুমি নিশুকে সামলাও আম্মু। এটা আমি ফেলে দেবো। ”

ছেলের কাছ থেকে নিশুকে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দেন আলতা। শিমুলের প্রথমে দাঁত ভাঙার কান্ডটা অবলোকন করে হাসি পেলেও পরে বোধ আসে তার মাঝে। নিশাতের পাশে বসে তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না জুড়ে দেয়। অপরদিকে আলতা দেখলেন প্রহর সব আঁখ নিয়ে বাহিরে ফেলে দিচ্ছেন। তিনি প্রচন্ড বিস্ময়ে আবিষ্ট হলেন। অবাকতা বজায় রেখে জিজ্ঞেস করেন,

” এগুলো ফেলছিস কেন?”
” কারো এসব বা**লের ছাইপাঁশ খেতে হবে না,যা কিনা ক্ষ-তির কারণ হয়। তোমার ভাইঝিকে বলে দিও ওকে আর এসব খেতে দেখলে বাকি দাঁতগুলো আমি ভেঙে ফেলব। ”

আঁখ যে শুধু নিশাতের পছন্দসই তা না,প্রহরেরও অত্যধিক প্রিয় ছিল। সেই প্রিয় খাদ্যকে অপ্রিয় ঘোষণা করে সে সেদিন,সাথে তার দেওয়া থ্রে****টে ভয়কাতুরে নিশাত কখনো আর আঁখ খাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করে নি মনোমধ্যে ভুলক্রমেও।

সতেরো বছরের দোরগোড়ায় এসে নিশাতের ভাবাবেগ হলো সেদিনকার শা**সন,কথাগুলো ছিল আদুরে শা*সন। না জানি বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সে আর কি কি স্মৃতির মর্মার্থ বিশ্লেষণ করতে পারবে! তবে তার এটুকু জীবনের সামান্য পরিমাণ বুঝ থেকে সে উপলব্ধি করেছে এক মারা—ত্মক ব্যধি বাসা বেঁধেছে তার অন্তস্থলে। যাকে এড়িয়ে চলত শাসন, শা*স্তি, মা*রের শঙ্কায়, আজ তার জন্য প্রকান্ড অনুভূতি অনুভব করে। গুটি কয়েকদিনের অন্তর্দেশের যেই ব্যাকুলতাকে আখ্যায়িত করেছে ভালোবাসা নামে,ও জানে না সত্যিই তা কিনা। হৃদয়কুহরে অবিশ্রান্ত জড়ো হওয়া অনুভূতিরা খালি জানে প্রহর থাকলে এ জীবনটা একটু আদুরে শাসনীয় হবে,অল্পখানি কঠোর হবে তবুও! তবুও ওর প্রহর ভাই শুধু ওরই নামে লিখিত থাকবে।

প্রহর বাড়ির আঙিনায় দাঁড়িয়ে আছে, সম্মুখে বড়,মেজো,ছোট মামা ও সৌরভ। রোকেয়া, পিংকির মা,ছোট ফুপি,পিংকি সামান্য দূরে উপস্থিত। নিশাত সদর দরজার কাছটার দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। প্রহরের তীর্যক চাউনি ওর দিকে খেয়াল করতেই দুর্বল দেহটা হেলে যায় প্রাচীরে। এই নজরজোড়া কেউ দেখেনি,শা-নিত দৃষ্টি দেখেছে কেবল ও। রফিক আজম খ্যাঁক করে উঠলেন,

” কী জন্য আসছ? তাড়াতাড়ি বইলা চলে যাও। ”
প্রহর সহাস্যে পাল্টা প্রশ্ন নিক্ষেপ করল বড় মামার দিক,
” আপনারা বাড়িতে আসা মেহমানকে বসতে দেন না? নাকি বাড়িতে চেয়ার,সোফা নেই?”
রফিক চমকালেন। ভারী কণ্ঠে বলে উঠলেন,
” বেয়া*দবির সীমা লঙ্ঘন করছো তুমি ছেলে। ”
প্রহর মৃদু হাসে। শ্লেষাত্মক হাসি। বলে,
” ভাগ্নের নাম জানেন না নিশ্চয়ই। এ কারণেই ছেলে সম্বোধন করলেন। প্রহর রাজিন আমার নাম। ”

প্রহর মন্দ বলে নি। স্মরণিকা নিবাসের প্রতিটা মানুষের প্রতি অদম্য ঘৃ*ণায় কখনো তাদের নিয়ে ঘাটেই নি রফিক। ভাগ্নে, ভাগ্নীর নামগুলো পর্যন্ত ভালো করে জানেন না। উনার ঘৃ*ণার তেজ কমার বদলে বাড়ছেই ক্রমশ। গম্ভীর মুখোভঙ্গি এঁটে বললেন,

” যা বলার বলে যাও। এত প্যাঁচাল করার জন্য তোমার মতোন আজাইরা সময় লইয়া বইসা থাকি না। ”

প্রহর ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়ল খোলা অম্বরের নিচে দাঁড়িয়ে। নিঃশ্বাসটা মিশে গেল প্রকৃতিতে। সকাল সকাল একটা মিটিং শেষ করে ঢাকা থেকে গ্রামে ছুটে এসেছে। গত একটামাস অনেক ব্যস্ততা গ্রাস করে নিয়েছিল তাকে।
রোকেয়া হাতে একটা বেতের মোড়া নিয়ে হাজির হলেন। ভাগিনার জন্য ব্যাপক মায়া তাঁর মনে। স্বামীর জন্য প্রকাশ করতেই পারে না,তবে আড়ালে সুযোগ পেলে হাতছাড়া করেন না। প্রহর মামীর হাত থেকে মোড়াটা নিয়ে বড় মামার সামনে রাখল। নম্র কণ্ঠে বলল,
” বসুন। ”
ক্রু**দ্ধ নজর নিক্ষেপ করল সৌরভ। নিশাত কুঁকড়ে আছে। মস্তিষ্ক ছিদ্র করে ফেলছে প্রহরের উপস্থিতি। অজানা আশঙ্কায় ভীত ও। তড়তড় করে মনে পড়ে গেল শিমুলের বলা বাক্যটা। বক্ষস্পন্দন থমকে গেল প্রায় অবিলম্বে। সেকেন্ড বাবদ ছুটতে আরম্ভ করল প্রবল বেগে। নিজের জামা খামচে ধরল নিজেকে মিছে আশ্বাস দিতে। মেকি বিশ্বাস ধারণ করে চিত্ত মাঝে, ‘ ভাইয়া দাওয়াত দিতে আসেন নি। অন্য কোনো কারণে এসেছে হয়ত। ‘ সমস্ত বিশ্বাস, ভরসা,আশা,আবেগ ধূলিসাৎ হলো ওর বাবাকে উদ্দেশ্য করে পুরুষালি মোটা স্বর ভেসে আসতেই,

” সামনের সপ্তাহের শনিবারে আমার এনগেজমেন্ট। আপনাদের সবার দাওয়াত রইল। আশা করি আপনারা আসবেন। আপনাদের মতো আমরা আত্মীয়ের সম্পর্ক ছিন্ন করে উৎসব পালন করতে পারি না। আমি মানি আমার নানার বাড়ি আছে, তিনজন মামা আছেন। লোকসমাজে সেটা আমি গর্ব করে বলি। আমার বিশেষ দিনে বিশেষ মানুষগুলো উপস্থিত থাকবে না সেটা খারাপ দেখায়। অনুষ্ঠান স্মরণিকা নিবাসেই হবে। অনুরোধ রইল- আসবেন। ”
প্রহর অনুরোধ করবার পাত্র নয়। সৌরভের সন্দেহ জাগল। ক্ষেপাটে ভঙ্গিতে কিছু বলতে চাইলে রফিক বাধ সাধেন। রাশভারি গলায় বলেন,
” এবার তুমি যেতে পারো। ”
প্রহর চাপা ক্লেশে জবাব দেয়,” যাব। ” তারপর রোকেয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,” এক গ্লাস পানি হবে মামী?”
রোকেয়ার চোখের পাতা ভার হলো। ছেলেটাকে কখনো আপ্যায়ন করতে পারেন না এ বাড়ির বাঁধানো নিয়মের জন্য। দেয়ালে হেলান দিয়ে স্তব্ধ হয়ে থাকা নিশাতকে জোরে হাঁক ছাড়লেন,
” নিশু পানি নিয়ে আয় তোর ভাইয়ার জন্যে। ”

মায়ের ডাকে কোনো প্রকার হেলদোল হলো না নিশাতের। তার মনের অলিন্দে তীব্রদাহ চলছে। পুড়ে ছাড়খাড় হয়ে যাচ্ছে ও,নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। কানজোড়া,চোখ দু’টো বিশ্বাস করতে চাইছে না প্রহরের মুখের কথা। অথচ কান ও চোখের বিবাদ যে ঘুচে গিয়েছে খানিক্ষণ পূর্বে।
রোকেয়া ডাকলেন আবারও,
” নিশু,,এই নিশু!”
ধরফড়িয়ে ওঠে ওর সমস্ত কায়া। দৌড়ে ভেতরে চলে যায়। রোকেয়া ঠাওর করতে পারলেন না হঠাৎ করে মেয়ের হয়েছে টা কী! নিজে পানি এনে দিলেন প্রহরকে। প্রহর পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে বক্র চাউনি ফেলল দু তলায়। লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে বেতের মোড়ার ওপর গ্লাসটা রেখে নিরাসক্ত গলায় বলল,

” যাই মামী। আমার দৃঢ় বিশ্বাস তোমরা থাকবে অনুষ্ঠানে। ”

বেড়িয়ে যেতেই সৌরভ ভীষণ রা–গমিশ্রিত কণ্ঠে পরপর বলতে থাকল,

” পানি আনিয়ে আবার না খেয়ে চলে গেল। কে বলে দাওয়াত দিতে আসতে? যেখানে সেখানে নিজেদের পাওয়ার খাটাবে। ”

আনোয়ার পাশ থেকে বড় ভাইয়ের লক্ষ্যে প্রশ্ন তৈরি করে,” আপনি ভিতরে আইতে দিলেন ক্যান ভাইজান? ”

” তাদের পাওয়ার আমাদের থেকে বেশি এখন। গ্রামের লোক তাদের মান্য কইরা চলে। ঢুকতে না দিলে ঠিকি ওইখানে দাঁড়াইয়া তামাশা করত। এটা কি ভালা দেখাইত? এই কথা এখানেই থেমে যাক। ”

বরাবরই সবসময়কার ন্যায় নিশ্চুপ চরিত্র পালন করছে রবিন। সে দো**ষী,পাপি**ষ্ঠ,অন্যায়—কারী। তার জন্যই দুই পরিবারে বিচ্ছেদ। এ বাড়িতে তাঁর ঠাঁই মিলছে তা-ই বা কম কী! সুতরাং তাঁর জন্য নীরবতাই আপাতত জীবনের সবথেকে বড় ভূমিকা।
_________________________________
প্রহরের এনগেজমেন্ট উপলক্ষে ঊষা,প্রত্যয় ক্ষণিক সময় আগেই গ্রামের বাড়িতে হাজির হয়েছে। মোশতাক সাহেব এসেই ভাইয়ের সাথে গ্রামের আগত নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে লাগলেন। তনুজার পরিবারের সাথে এখনও উজ্জ্বল সাহেব ও আলতার পরিচয় হয় নি। প্রহর এবং প্রত্যয়ের জীবনে লেখাপড়া হতে রাজনীতিতে সাফল্যের পথে এগিয়ে নেওয়া সবটার অবদান মোশতাক সাহেবের। তাই বড় ভাইয়ের মুখের ওপর কখনও কিছু নিয়ে দ্বিরুক্তি করেন নি উজ্জ্বল সাহেব। ভাই যদি বলেছেন উত্তরে যাবি,তাহলে তিনি সেদিকেই যাবেন। এতটাই ভাই ভক্ত মানুষটা। প্রহরের জন্য পছন্দ করা মেয়েকে এক ঝলক না দেখেই বড় ভাইকে বলেছেন,” নিঃসন্দেহে আপনি আমার দুই ছেলের ক্ষেত্রে বেস্ট ডিসিশন নিবেন। ” আলতা কিঞ্চিৎ দ্বিমত পোষণ করলেও স্বামীর ভাইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা দেখে দমে যেতে হলো। তাছাড়া প্রহরের মনেও সংশয় নেই, তনুজাকেই বিয়ে করবে সে। উল্টো আলতা ভাবত নিশাতের দিকে ঝুঁকে আছে ছেলের মন৷ ভুলভাবনা ছিল তাঁর। ভাবনাটা তাঁর একান্ত ছিল না,উজ্জ্বল সাহেবেরও ছিল। সব চিন্তা নিষ্ফল প্রমাণ করে প্রহর এবং তার সিদ্ধান্ত। চায়ের ট্রে নিয়ে লনের দিকটায় আসতেই দেখলেন গটগট পায়ে প্রহর হেঁটে আসছে। উজ্জ্বল ডাকলেন তাকে,” কোথায় গিয়েছিলে?”
প্রহর সারল্য কণ্ঠে উত্তর দিল,” তোমার শ্বশুর বাড়িতে দাওয়াত দিতে গিয়েছিলাম। ”
উজ্জ্বল উজবুকের মতো তাকালেন ছেলের দিক। উনারই শ্বশুর বাড়ি? এই ছেলের কি মামার বাড়ি লাগে না? আলতা ট্রে টা টেবিলে রেখে প্রহরের দিকে দ্রুত পায়ে আগালেন। নিম্ন আওয়াজে জিজ্ঞেস করলেন,

” শুধু শুধু কেন গেলি? আসবেন না উনারা কেউ। ”
” শিমুল কোথায়?”
” কেন?”
” নিশাতকে আনার ব্যবস্থা করো। ”
ছেলের লালচে চোখ, কঠোরতায় আবদ্ধ মন পড়তে চেষ্টা করলেন আলতা। যা অসম্ভব ব্যাপার স্যাপার। একটু ত্যাড়া–মো করে বললেন,
” ওকে এনে কী করব?”
প্রহর সরু নেত্রে চেয়ে বলল,
” ছোটবেলা থেকে ও বলত ❝প্রহর ভাইয়ার বউ দেখব,বউ দেখব,সুন্দর বউ। ❞ তোমার মনে নেই? তাই ও আমার বিয়ের সকল অনুষ্ঠানে থাকবে। কীভাবে আনবে আমি জানিনা। কিন্তু ওকে চাই। ”

#চলবে~
( ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। প্রহর,নিশুকে নিয়ে এত এত লিখি তবুও নাকি কম কম লিখি! আচ্ছা ওদের নিয়ে বেশি বেশি লিখব।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here