#প্রেমের_উষ্ণ_ধোঁয়াতে
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব____১৪
প্রত্যয় ঊষার মাথায় হাত দিয়ে আলতো বারি দিল। বলল,
‘ নিশুকে নিয়ে ভেতরে আয়। ঠান্ডা লেগে যাবে। ‘
ঊষা রা*গী চাহনি নিক্ষেপ করল সঙ্গে সঙ্গে । প্রত্যয়ের সাথে আজ ভোরেও ঝ গড়া হয়েছে। কণ্ঠে ক্ষোভ,
‘ তোমার চিন্তা করতে হবে না আমার জন্য। ‘
‘ তোর চিন্তা করে কে? তোর চিন্তা করবে তোর বয়ফ্রেন্ড। হাবলু বয়ফ্রেন্ড। ‘
চোখ গোল গোল করে চাইল ঊষা। কণ্ঠনালিতে তিরস্কারের ধ্বনি,
‘ কেন তোমার জেলাস হচ্ছে? ‘
‘ মোটেও না। তোর ব্যপারে জেলাস! ও আল্লাহ, ভুলেও না। আমার এত দুর্দিন আসে নি। ‘
‘ হতেও পারো। আমার একটা প্রেম প্রেম সম্পর্ক আছে কিন্তু তোমার নেই। সো স্যাড। ‘
প্রত্যয় সাথে সাথেই প্রশস্ত বুক ফুলিয়ে প্রবল আত্মবিশ্বাস দেখায়,
‘ আমারও হবে একদিন। ‘
‘ ইন ইউর ড্রিমস। ‘
‘ হবে,খুব শীগ্রই হবে। প্রেম কেন হবে? একদম বউ সাজিয়ে নিয়ে আসব মৃন্ময়ীকে। ‘
কথাটা ঊষার হৃদয়স্পর্শ করল। ভাঙ্গন শুরু হলো অন্দরমহলের কোথাও। অদৃশ্য তরল লাল রক্ত বেয়ে গড়াতে লাগল নিম্নতলে। এটা কেবল অনুভব করল ঊষা। জোরালো,জেদি অনুভূতি। চিকন, সরু ওষ্ঠযুগলে কপট হাসি ফোটে ওঠে। ফকফকা সাদা দাঁতগুলো দেখিয়ে বলে উঠল,
‘ আমরা সবাই অপেক্ষায় থাকব মৃন্ময়ী ভাবীর। ‘
এক সেকেন্ডও অতিক্রম করতে পারল না সময়। নিশাতের হাত ধরে বাড়ির ভেতরে চলে এলো। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকলে একটার বদলে দু’টো যন্ত্রণা ফেইস করতে হত তাকে। নিজের ভেতরকার সৃষ্ট যন্ত্রণায় প্রলেপ পড়ার আগেই প্রত্যয়ের চেহারা জুড়ে মৃন্ময়ীকে এখনও অবধি না পাওয়ার বিরহের দেখা মিলত। এটাও বিশাল ভয়ং*কর যন্ত্রণা ওর জন্য। প্রত্যয়ের কষ্ট ওর কোমল বক্ষস্থলে গভীর ক্ষত করে। ক্ষতটা শুকায় না। আদৌ শুকাবে কিনা জানা নেই ওর। তবে যেদিন ওর প্রত্যয় ভাই মৃন্ময়ী নামের অত্যন্ত রা/গী মেয়েটাকে পেয়ে যাবে সেদিন প্রাণখোলা হাসি হাসবে ও। রেহাই মিলবে প্রত্যয় ভাইয়ের অপূর্ণতার বিষাদ হতে। ঊষার মতে,” নিজের যতই অপূর্ণতার তালিকা থাকুক, আমরা যাকে চাই? মনেপ্রাণে, পা”গল হয়ে চাই? সেই প্রিয় মানুষের পূর্ণতা মানেই আমাদের জীবন অনেকাংশে পূর্ণ। আর তার যন্ত্রণা মানে আমাদের হৃৎপিণ্ডে গাঢ় দগদগে ক্ষ*ত। ” ঊষার কাছে ভালোবাসার মানেই এটা। ত্যাগ,বিরহ,সুখের ভাগাভাগি বিহীন ও কখনো ভালোবাসা কল্পনা করে নি। মা মা-রা যাবার পর মজার ছলে বাবাকে বলেছিল,’ একটা বিয়ে করিয়ে দেই বাবা?’
মোশতাক সাহেব ওর চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে জানান,’ কথাটা যদি তুই আমায় যৌবন বয়সে জিজ্ঞেস করতি,তখনও স্পষ্ট উত্তর শুধুই হতো, “না। ” এখনও উত্তর ” না। “। তোর মার বিহনে আমার একমাত্র মন সঁপেছি আমি,সেই মন কি আর ফেরত পেয়েছি? একটাই মন। একজনের জন্যই ত্যাগ করেছি তাহলে দ্বিতীয়জনকে কী দেবো? ভালোবাসা একজনের তরেই হয়,অন্যজনের তরে হয় কেবল সমঝোতা। ‘
বাবার এই কথাগুলো এখনও মনে গেঁথে আছে ওর। সেও মন ত্যাগ করেছে,শুধু প্রত্যয় ভাইয়ের জন্য। আর প্রত্যয় ভাই মন দিয়েছে মৃন্ময়ীকে। ও নাহয় সমঝোতায় বিশ্বাসী হবে কিন্তু প্রত্যয় ভাইয়ের জীবনটা হোক ভালোবাসাময়।
নিশাত এত সময় চুপচাপ সব দেখছিল। ঊষা ওকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে আসতেই মিহি কণ্ঠে প্রশ্ন করল,
‘ মৃন্ময়ী কে আপু?’
ঊষা ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস বিমোচন করে। ভিতরের অনুভূতির প্রতিফলন যেন চেহারায় না হয় কঠিন চেষ্টায় অন্তর্লিপ্ত। ছোট্ট একটা মেয়ে যে এখনও প্রেম শব্দটার সঙ্গে নিবিড়ভাবে পরিচিতি লাভ করে নি,তাকে প্রেমবিরহ দেখানো নিতান্তই তুচ্ছ। ওর পছন্দের হলুদিয়া পাখিটার কখনো এসবের সাথে সাক্ষাৎ না হোক। বরং শরৎ এবং বসন্ত আসুক নিশাতের জীবনে বারংবার।
‘ ভাইয়ার পছন্দের মানুষ। ‘
নিশাতের সরল দৃষ্টির পরিবর্তন হলো। ঘন ঘন ভ্রুঁ জোড়া ললাটে লাগল কিঞ্চিৎ। মরিয়া হয়ে বলে উঠল,
‘ প্রত্যয় ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড আছে? কবে থেকে হলো? তুমি দেখেছ তাকে?’
‘ গার্লফ্রেন্ড না। মৃন্ময়ী ভালোবাসে না ভাইয়াকে। ভাইয়া রাজনীতিবিদ বলে অপছন্দ করে। গত এক বছর ধরে রিজেক্ট হয়ে আসছে বেচারা। লম্বা কাহিনী। পরে বলব তোমায়। এখন চলো ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিবে। বাবাও আসছেন। ‘
দুই ভাই শহরে এসে গার্লফ্রেন্ড জুটিয়ে ফেলল। ফুপি জানে এ কথা? অবশ্যই জানবে। উনার ছেলেরা আবার চু রি করে কিছু করেন না। বড়দের মানেন নাকি! যা করে সামনাসামনি। দুটোই ত্যাড়া প্রকৃতির। প্রহর ভাইয়া একটু বেশি। ত্যাড়া,সাই-কো,বেয়া-দব শব্দ তিনটি তার সাথেই অত্যধিক মানানসই ও যোগসূত্র। ঊষা আপু বলেছে বলে নয়ত সে কখনো ওকে এ বাড়ি নিয়ে আসত না। এসব ভাবতে ভাবতে ও ঊষার পিছু পিছু আসল।
একেবারে দক্ষিণের রুমের দরজাটা খুলে দিয়ে ঊষা ওর দিকে তাকায়। মায়াবী দৃষ্টি। বলল,
‘ এটা তোমার রুম নিশাত। এক রাতের বিশেষ অতিথির জন্য আমি নিজে সাজিয়েছি রুমটা। ‘
একটু স্তব্ধ হয়ে বিষন্ন স্বরে বলে,
‘ তোমাকে বলে কইয়ে আনতে পারলে আমি বহুদিন রেখে দিতাম। কিন্তু তোমার বাবা দিবেন না। শুনেছি আমাদের বাড়ির লোকদের পছন্দ করেন না তিনি। কী কারণে জানিনা,তবে আংকেল একদিন জানবেন তাঁর বাড়ির সবথেকে সুন্দর, হলুদ পাখিটা আমাদের বাড়ির খুশির কারণ। তোমাকে আমরা ভীষণ ভালোবাসি নিশাত। ভালো না বেসে থাকাও যাবে না। ভারী মিষ্টি তুমি। ‘
প্রশংসার ভারে নিশাতের মাথা ঝুঁকে গেল। কপোলদ্বয় রঞ্জিত হলো ঈষৎ লালে। ঊষা মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় চেয়ে রইল খানিক সময়। যেতে যেতে বলল,
‘ তুমি ফ্রেশ হও,আমি আসছি। ‘
সিংগেল মানুষের জন্য পারফেক্ট, গুছানো একটা ছোট কক্ষ। সাথে লাগোয়া একটা ছোটোখাটো বেলকনি। বিছানার মাথার দিকে দেয়ালটায় লতার মতো এলোমেলো হয়ে শোভা পাচ্ছে কিছু ফেইরি লাইট। লাল,নীল নয় স্রেফ হলেদেটে আলো খেলা করছে সমস্ত কক্ষে। ফেইরি লাইটের দুই পাশে দু’টো পেইন্টিং। রুমের একপাশে একটা সোফা,টি-টেবিল আরেক পাশে একটা ওয়াড্রব। আরো একটু দৃষ্টি বুলাতেই নিশাতের উৎসুকতায় ভরপুর নয়নযুগলে আঁটকালো লাভ শেইপের রেড কালার দু’টো ছোটআকৃতির বালিশ।
নিশাত অনতিবিলম্বে মনে মনে বালিশ দুইটার নামকরণ করল,” বাচ্চা বালিশ। ” এরকম একটা রুমই ও সবসময় চেয়েছিল। কিন্তু মা’র কাছে আবদার করলে মা”’ইর একটাও মাটিতে পরবে না। প্রয়োজন ব্যতীত আজাইরা আবদার পছন্দ করেন না রোকেয়া। সকালে গোসল দিয়েছে, এত ঠান্ডায় আর একবার স্নান মানেই জ্বর তড়তড়িয়ে চলে আসবে। তার থেকে হাত মুখ ধুয়ে নিলেই চলবে। ফ্রেশ হয়ে বেলকনিতে আসল ও। নজর সোজা গিয়ে পড়ল তিনটে ক্যাকটাসের ওপর। মাঝের টবের ক্যাকটাসটার গায়ের কাঁটার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করল নিশাত,
‘ আপনি ঠিক ক্যাকটাসের মতো প্রহর ভাই। কাছে গেলেই মনে হয় কাঁটা বিঁধে শরীরে। ‘
‘ কিন্তু আবারো যে কাছে যেতে হবে তোমাকে। ‘
অকস্মাৎ মেয়েলি স্বরে শিউরে উঠল নিশাতের তনু মন। বিনা সময় ব্যতীত মাথা ঘুরিয়ে চাইল। লাজুক হাসল। ঊষা হাতের শপিং ব্যাগ টা দেখিয়ে বলে উঠল,
‘ চলো খেয়ে নিবে,তারপর রেডি হতে হবে। ‘
‘ আমার ভয় লাগছে আপু। ‘
‘ ভয় কেন? আমার দৃঢ় বিশ্বাস ভাইয়া তোমাকে কিছু বলবে না। ‘
নিশাত মাথা নুইয়ে বলল,
‘ আমাকে মে-রে ফেলবে। ‘
ঊষার হাসি পেল। ভরসা দিয়ে বলে,
‘ বিশ্বাস করো ভাইয়া তোমাকে মা-রবে না। বরং খুশি হবে। গত তিন বছর ধরে ভয়েও ভাইয়াকে কেউ জন্মদিনের উইশ করতে পারে নি। কিন্তু এবার তুমিই পারবে। তিন বছর আগে জন্মদিনে কেক ফেলে দিয়ে রুমে দরজা বন্ধ করেছিলেন সারারাত। পরের বছর কাকি মণি উইশ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু কঠিনভাবে নিষেধ করে দিয়েছে ভাইয়া। এর পেছনের রিজন টা জানি না। তবে জন্মদিনের প্রতি অন্যরকম একটা রা**গ চেপে রেখেছে। ‘
‘ আমার সাথেও যদি রেগে যায়?’
‘ রাগবে না৷ তাই তো ভাইয়াকে বহুদিন তোমায় দেখি না বলে আবদার করে নিয়ে এসেছি। ‘
‘ কেন রাগবে না?’
‘ কারণ তুমি স্পেশাল। বড্ড স্পেশাল। ‘
নিশাত বিস্ময়কর দৃষ্টি তাক করল। কণ্ঠনালি ভেদ করে বেরিয়ে এলো একটাই শব্দ, ‘ স্পেশাল? ‘
ঊষা মাথা নাড়িয়ে বলে,’ হুম। এখন চলো খাবে। বাবা ভীষণ ক্লান্ত ছিলেন,তাই মেডিসিন নিয়ে শুয়ে পরেছে। সকালে দেখা করবেন তোমার সাথে। প্রত্যয় ভাই আগেই খেয়ে নিয়েছেন। প্রহর ভাইয়ের নির্দিষ্ট নিয়ম নেই, মনমর্জি হলে খায়। ‘
‘ আমি খাব না আপু। দুপুরে খেয়ে পেট ভরা। চলো যাই। ‘
‘ তুমি একা যেতে হবে। যেভাবেই হোক ভাইয়াকে মানিয়ে ছাদে নিয়ে যেতে হবে তোমার। আমরা সবাই অপেক্ষা করছি। প্রত্যয় ভাই,আরুশি,তুবা,নাদিম সবাই অপেক্ষা করছি ছাদে। বাকিদের তুমি চেনো না,পরিচয় করিয়ে দেবো। ভাইয়াকে সারপ্রাইজ দিবে বলে ওরা লুকিয়ে আছে। তুমি প্লিজ মানিয়ে নিয়ে এসো। ‘
নিশাতের বার বার মনে হচ্ছে ঠিক বারোটায় ও মারা**ত্মক ধরনের ঝামেলায় পড়তে যাচ্ছে। এখনই হৃদস্পন্দন বেসামাল হয়ে পড়ল। ঊষা তাকে নিয়ে রুমে এসে বলল তোমাকে সাজিয়ে দিই আগে,তারপর আমি রেডি হয়ে নেবো। তুমি একেবারে ভাইয়াকে নিয়ে ছাদে চলে আসবে।
—————————–
লং একটা হোয়াইট বারবি গাউন পড়তে হলো নিশাতকে ঊষার জোরাজোরিতে। লম্বা কেশ উন্মুক্ত করে দিয়ে মাথায় সাদা স্টোনের ক্রাউন পরিয়ে দিল। কানে স্টোনের গোল ইয়ারিং। হাতে একটা ব্রেসলেট,সাথে ঠোঁটে টকটকে লাল লিপস্টিক দিয়ে দিল। দর্পণে নিজের প্রতিবিম্ব চক্ষে পড়তেই রক্তিম অধরদ্বয় অল্পস্বল্প আলাদা হলো আনমনে নিশাতের। বদনে স্পর্শ করল লাজ। ঊষার আনন্দিত গলা,
‘ ইয়েস প্রহর ভাইয়ার মামুর মেয়ে প্রিন্সেস নিশু তৈরি। ‘
নিশাতকে নিয়ে প্রহরের দরজার সামনে আসল ঊষা পা টিপে টিপে। দরজাটা ভেজানো। ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ আমি যাচ্ছি। তুমি ধীরে ধীরে যাও। অপেক্ষায় থাকব। ‘
নিশাত সূক্ষ্ম ঢোক গিলল। ইতোমধ্যে দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ওর সঙ্গ ছেড়ে দিবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার মনে হচ্ছে তাকে বলির পাঠা বানানো হলো। কোথায় গিয়ে খুশি হয়েছিল এখানে এসে! কিন্তু আনন্দের জলাঞ্জলি তখনই হলো যখন ঊষা কানে কানে জানায় প্রহর ভাইয়ের বার্থডে সেলিব্রেট করতে কৌশলে অনুরোধ করে এখানে আনিয়েছে ওকে। এটা প্রহর ভাইও জানে না। ঊষা গত একমাস ধরে ওকে দেখার জন্য বার কতক বলেছে, তাই সুযোগে ওর মন রাখতে নিয়ে এসেছে প্রহর। নয়ত মানুষটা ওকে দেখলেই কেমন দাঁত কিড়মিড় করে চোখ রাঙায়। মুখ দেখলেই বুঝা যায় সহ্য করতে পারে না। এখন কী হবে নিশাত জানে না,শুধু জানে গাল,হাত-পা রক্ষা করতে হবে।
দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকল। কেউ নেই। হালকা সমীরণ,বৃষ্টি মিলেঝুলে শীতল করে রেখেছে কক্ষ। দুহাতে ভারী,মোটা গাউন টা আলগে আরো দু কদম এগিয়ে গেল সে। নিস্তব্ধ রুমে কারো অস্তিত্ব না পেয়ে বুকের উচাটন ক্রমশ বেড়েই চলেছে, ঘড়ির কাটার শব্দের ন্যায় অভ্যন্তরেই টিকটিক, টিকটিক আওয়াজ। শীতল কণ্ঠে টেনে টেনে ডাকল,
‘ প্রহর ভাই,,,,।’
নিজের কণ্ঠ শুনে নিজেই হতবাক ও। চিকন,বাজে শুনালো ডাকটা। গলা ঝেড়ে আবারও ডাকল,
‘ প্রহর ভাই। ‘
বাথরুমের দরজা মেলে দ্রুত পদে বেরিয়ে এলো প্রহর। মেঝে থেকে দৃষ্টি উঠাতেই বুক লাগাতার দরফর করতে লাগল নিশাতের। লোমশপূর্ণ পা, উপরের অংশ উদোম, পরনে কেবল একটা সাদা তোয়ালে। এসব দেখে উল্টো ঘুরে তাড়াহুড়োয় চলে যেতে নিয়ে হুমড়ি খেয়ে ধপ করে পড়ল মেঝেতে। ব্যথায় ককিয়ে উঠল মৃদু। সেদিকে খেয়াল নেই। এখনো চোখে ভাসছে শুধুই প্রহর ভাইয়ের তোয়ালে ঢাকা অর্ধ উন্মুক্ত দেহ। উঠার চেষ্টা করতে নিলে শুনল,
‘ বাথরুম থেকে ডেকে নিয়ে এসেছিস আমার রুমে এক্সি-ডেন্ট করার জন্য? ‘
তিরিক্ষি মেজাজ আচ করতে পেরে উঠতে নিয়ে আবারো পড়ল মেঝেতে। গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা। এত বড় ড্রেস সামলে ওঠা দায় হয়ে পড়েছে।
প্রহর এক নজর তাকিয়ে বলে,
‘ পড়ে থাক।উঠতে পারলে উঠবি নয়ত গড়াগড়ি খেল। আমার সরলসোজা, ভদ্র মুড নষ্ট করে ফেলেছিস তুই। ‘
কাপড় নিয়ে নিশাতকে এভাবে ফেলে রেখে ফের বাথরুমে চলে গেল। ফিরে এলো এক মিনিটের মাথায়। নিচে বসে কর্কশ কণ্ঠে ধমকালো,
‘ আবারো একটা জঙ্গলের মতো ড্রেস পড়েছিস? সেই ড্রেস নিয়ে মেঝেতে বসে কোমর ভেঙে ডান্স টাও কিন্তু জোশ হচ্ছে। গড়াগড়ি ডান্স। একটুর জন্য আবারও নায়িকা হতে পারলি না। এরকম সেজেছিস কেন?’
নিশাত ভুল করেও কোনোরকম মুগ্ধতার আভাস দেখে নি প্রহর ভাইয়ের দুই চোখে। সরল,স্বাভাবিক চাহনি। কণ্ঠে রাগের চিহ্ন। প্রমাণিত, ওকে দেখতেই পারে না প্রহর ভাই। মাথা নুইয়ে উঠতে গেলে প্রহর এক টানে নিজের কোলে তুলে নিল। শক্ত করে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। রসকষহীন কণ্ঠ ,
‘ কেন এসেছিস আমার রুমে? চিনলি কিভাবে এটা আমার রুম?’
‘ ঊষা আপু দেখিয়ে দিয়েছে। ‘
‘ কেন?’
‘ আমি আসতে চেয়েছিলাম তাই। ‘
নিশাত সাপোর্টের জন্য আস্তে আস্তে দুই হাত প্রহরের গলার দিকে নিয়ে গেল। সে যদি ফেলে দিতে নেয় গলায় ঝুলে পড়বে ও, যেন ফেলতে না পারে। এতে মা*রতেও পারবে না। চোখ বন্ধ করে জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিল। ভয় ভয়,দুর্বল কণ্ঠস্বর,
‘ কানটা একটু কাছে আনবেন প্রহর ভাই। ‘
প্রহর ভুরু কুঁচকায়। ঘন ঘন পল্লবের কম্পনের খেলা দেখে। ঠোঁট জোড়ার নড়চড় দেখে। মায়াবী মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্টয়মান।প্রশ্ন করল,
‘ তোর মতলব ভালো না। আমার প্রতিপক্ষের সাথে হাত মিলিয়ে আমায় খু***ন করতে আসিস নি তো?’
নিশাত কিংকর্তব্যবিমূঢ়। চোখ মেলে উত্তর দেয়,
‘ আপনাকে মার-ব কেন?’
‘ মার**তেই পারিস। কারণ আমি তোকে মা-রি। ‘
‘ প্রহর ভাই,,।’– ব্যগ্র কণ্ঠে ডাকে নিশাত।
‘ বল। ‘
‘ আমি সত্যিই কিছু বলব। ‘
প্রহর বিছানায় বসল নিশাতকে কোলে রেখেই। কান টা ওর মুখের কাছে পেতে দিয়েই বলল,
‘ বল। ‘
‘ হ্যাপি বার্থডে প্রহর ভাই। ‘
নরম সুরের বাক্য শ্রবণ হতেই নিশাতকে ছিটকে ফেলল বিছানার মাঝখানে প্রহর। নিশাত স্তব্ধ। প্রহর আলতো ঝুঁকে আসল ওর দেহের ওপর। ঠান্ডা স্বর ধাক্কা খেল চার দেয়ালে,নিশাতের কানে,
‘ বাহ! নিশু তুই চালাক হয়ে গেলি। আরেকবার উচ্চারণ কর তো। ‘
নিশাতের শ্বাস আঁটকে আসছে। অন্যত্র চেয়ে খুব লজ্জামাখা কণ্ঠে বলল,
‘ একটু দূরে সরুন না প্রহর ভাই। ‘
‘ কেন?’
ধারা*লো প্রশ্ন। দূরত্ব আরো ঘুচল। কথায় তালগোল পাকিয়ে ফেলল নিশাত। ভুলবশত মুখ থেকে বেরিয়ে এলো,
‘ কাছে আসবেন না। কেমন অস**ভ্য ফিলিং হচ্ছে প্রহর ভাই।’
বলা শেষ করে দুই হাতে নিজের মুখ চেপে ধরল। প্রহর আরেকটু গভীর হয়ে কঠোর গলায় ফিসফিস করে উচ্চারণ করল,
‘ আসবোই। কারণ আমি অস**ভ্য। সেজেগুজে বার্থডে উইশ করার আগে মনে পড়ে নি প্রহর ভাই প্রচুর খারাপ,প্রচুউর?’
#চলবে,,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কাল দেই নি,তাই আজ বড় পর্ব দিয়েছি।)