#খোঁজ ২০তম_পর্ব
লেখক মোঃ কামরুল হাসান
অফিসারের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে আলম সাহেব বলেন, হ্যা! আমি অদিতির ব্যাপারটা আমার ছেলে কে জানাতে পারতাম। কিন্তু জানাইনি কেন জানেন? অফিসার কৌতুহল ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে কেন?
কারণ আমার ছেলেটা অতিমাত্রায় উদার প্রকৃতির! এমন লোকেরা সবসময় ঠকে! কষ্ট পায়! সেই যন্ত্রণা প্রকাশ না করে হৃদয়ে জমা রেখে তিলে তিলে মরে। আমি যদি অদিতির অতীত সায়েমের সামনে তুলে ধরতাম। তবে সে মনের মধ্যে প্রথমে প্রচন্ড এক ধাক্কা খেতো। তারপর হয়তো কিছুটা রাগারাগি করতো। যন্ত্রণায় ছটফট করতো ভিতরে ভিতরে! কিন্তু তা কখনও কারও কাছে প্রকাশ করতো না সে।
আর এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে সে হয়তো ধীরে ধীরে কোন নেশায় আসক্ত হয়ে পড়তো! মোট কথা অদিতি যে তার সাথে এমনভাবে বেঈমানী করতে পারে? সেটা সে সহজে কখনো মন থেকে মেনে নিতে পারতো না। আবার তাঁকে ছুঁড়ে ফেলাও তার পক্ষে সম্ভব হতো না। কারণ কিছু নরম মনের মানুষ আছে যারা চাইলেও কঠিন হতে পারে না!
আমার ছেলে সায়েম ঠিক সেই প্রকৃতির মানুষ। তাই সে তার স্বভাবসুলভ উদারতার কারণে অদিতি কে ডিভোর্স দেবার কথা কখনোই ভাবতো না। অদিতি কে আমার ছেলেটা অতিমাত্রায় ভালোবাসে! আর এই পৃথিবীতে নরম মনের মানুষ হওয়ার কারণে কাউকে কখনো আঘাত দেওয়ার কথা সে কল্পনাও করতে পারে না। কিন্তু সে নিজে নিশ্চয়ই প্রচন্ড আঘাত পাবে?
এমনকি অদিতির সাথে সম্পর্কটা ধরে রাখার জন্য সে গুমরে গুমরে কেঁদে বুক ভাসাবে! নিজের মনের মধ্যে সারাক্ষণ জবাব খোঁজে বেড়াবে। একজন বাবা হয়ে আমি আমার ছেলের অমন পরিস্থিতি নিজের চোখে দেখে কেমন করে সহ্য করতাম। আপনিই কথাটা ভেবে দেখুন? আপনি হয়তো বলবেন, অদিতির জন্য তো এখন আপনার পুত্র নেশাগ্রস্ত হয়ে পথে পথে ঘুরছে না? এর জবাব হলো অদিতি এখন নিখোঁজ! যখন ওর খোঁজ পাওয়া যাবে তখন দেখবেন, আমার ঐ ছেলেটা ঠিকই অদিতি কে তার মেয়ে সহ মেনে নিয়েছে। কিন্তু আমি মনেপ্রাণে কখন সেরকমটি চাইনি!
দ্বিতীয়ত বিল্লুর কথা বলছেন। আমি কেন তার উপর এতো বিশ্বাস করে বসলাম? এমনকি তার একটা ঠিকানা ও ছবি পর্যন্ত আমার কাছে নেই! তার জবাব হচ্ছে, পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছে হঠাৎ এসে আপনার জীবনে এমন একটা উপকার করে বসবে। যে, আপনি তাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে বসবেন। এমনকি আপনার আশেপাশের আর সবার চাইতেও বেশি!
সেই মানুষটার কোন নাম ঠিকানার প্রয়োজন আপনার পড়বে না। সেই মানুষটাই আপনার কাছে যথেষ্ট মনে হবে। বিল্লুও আমার কাছে তেমনি একজন উপকারী মানুষ ছিলো। আমি তাকে দু চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারতাম। কিন্তু সে যে কখনো আমার সাথেও এমনভাবে বিশ্বাস ঘাতকতা করবে।আমি তা ঘূনাক্ষরেও বুঝতে পারিনি!
অফিসার জিজ্ঞেস করলেন, তো এখন আপনি বলতে পারছেন না বিল্লু কোথায় আছে? জ্বি, না! আমি জানি না সে এখন কোথায় আছে। তা কোথায় আপনার সাথে পরিচয় হয় এই বিল্লু নামের লোকটার সাথে? একটুখানি ভেবে আলম সাহেব জবাব দিলেন, কিছুদিন আগে আমি একবার ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে কক্সবাজার গিয়েছিলাম। সেখানেই বিল্লুর সাথে আমার প্রথম দেখা হয়। তারপর যখন আমি জানতে পারলাম, সে একটা কাজ খুঁজছে। তখন আমি নিজেই তাঁকে আমার সাথে আসতে বলি। সে-ও এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়।
অফিসার বললেন, বুঝতে পেরেছি। এখন একটা কথা আমাকে খুলে বলুন তো আলম সাহেব! বিল্লু মায়া নামের মেয়েটাকে কেন খুন করতে গেলো? আমি তা বলতে পারবো না স্যার! সোজাসাপ্টা জবাব দিলেন, আলম সাহেব। বললেন, কারণ আমি নিজেও এই প্রশ্নের জবাব খোঁজে পাইনি। এবার অফিসার একটু হেসে বললেন, আপনি যেমন আপনার জবাব খোঁজে পাননি। তেমনি আমরাও যদি বিল্লুকে খোঁজে না পাই! তবে অদিতি ও তার মেয়ের অপহরণের সাথে সাথে মায়ার খুনের ভারও আপনার কাঁধেই পড়বে। সেটা নিশ্চয়ই জানেন?
আলম সাহেব অফিসারের কথা শুনে চুপ করে রইলেন। অফিসার প্রশ্নের জবাব না পেয়ে উঠতে গিয়ে আবার বসে পড়ে জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা আর একটা কথা বলুন তো! আলম সাহেব ভাবলেশহীন ভাবে জিজ্ঞেস করলেন, কি কথা? আমার যতোদূর মনে হচ্ছে হাবিবুর রহমান সাহেবের ফোনটা আপনি তখন ইচ্ছে করেই রিসিভ করছিলেন না। কিন্তু পরে কি মনে করে রিসিভ করলেন? আপনি ইচ্ছে করলেই তো এই কেসটা থেকে বেরিয়ে যেতে পারতেন?
আলম সাহেব জবাব দিলেন, আমি হাবিবের ফোনটা দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম সে নিশ্চয়ই এতোক্ষণে পুলিশ হেফাজতে আছে! অফিসার আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করে, কেমন করে বুঝতে পারলেন? আলম সাহেব একটুখানি হাসার চেষ্টা করে বলেন, আমি আগেই জানতে পেরেছিলাম, ড্রাইভার ধরা পড়ছে! আর ড্রাইভার ধরা পড়ে যাওয়া মানে হাবিবের ধরা পড়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।
হাবিব যখন আমাকে ফোন করে। তখনই আমি বুঝতে পারি, সে হয়তো পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে! কারণ এর আগে প্রথম প্রথম দুএকবার ছাড়া সে আমাকে আর কখনো নিজে থেকে ফোন করেনি। আমিই তাঁকে ফোন করতাম। আমি হাবীবের ফোন পেয়ে চিন্তা করছিলাম এখন কি করবো আমি? প্রথমে ভেবেছিলাম ফোনটা রিসিভ করবো না! কিন্তু ফোনটা যখন আমার সামনেই অবিরত বাজতে লাগলো। তখন অনেক ভেবে বুঝতে পারলাম, পুলিশ একটা সময় ঠিকই আমার কাছে পৌঁছে যাবে। কারণ সত্যটা মিথ্যার আড়ালে খুব বেশি দিন লুকিয়ে রাখা যায় না!
তাই শুধু শুধু একটা নিরীহ মানুষকে কষ্ট দেওয়ার কোন মানে হয় না। এই যে মোবাইলে হাবিব বারবার ফোন করে নিরাশ হচ্ছে! তাকে এভাবে কষ্ট দেওয়াও আমার মনে হলো অনেক বড় পাপ! হাজার হলেও হাবিব আমাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে! তাই আর কোনকিছু না ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম নিজের পাপের প্রায়শ্চিত্ত নিজেই করবো আমি!
মান সম্মানের কথা তো জীবনে অনেক ভাবলাম। এবার না হয় মানবিকতা নিয়ে একটুখানি ভাবি! এই মানসম্মানের দিকে তাকিয়ে নিজের অজান্তেই নিজের মনকেও আমি অনেকবার অসন্তুষ্ট করেছি। সেসময় মনের কথা শুনলে আজ হয়তো হৃদয় গভীরে জমে থাকা আক্ষেপ গুলো থাকতো না?
তবে মায়ার খুনের ব্যাপারে আপনি কিছু জানেন না বলছেন? শেষ প্রশ্নটা আলম সাহেবের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে অফিসার উঠে দাঁড়ালেন। আলম সাহেব জবাব দিলেন আমি আগেও বলেছি। এখনও আবার বলছি। কোন খুন টুন করার কথা কখনো আমি ভাবিনি। সেটা বিল্লুই ভালো বলতে পারবে।
অফিসার হেসে বলেন, বিল্লুর উপর দোষ দিয়ে আপনি বাঁচতে পারবেন না! সেটা নিশ্চয়ই ভালো করে বুঝতে পারছেন? আলম সাহেব চোখ থেকে চশমা খুলে এনে পরিষ্কার করে আবার ঠিকঠাক মতো পড়ে নিয়ে জবাব দিলেন, একটা কথা মনে রাখবেন অফিসার! আমি এখানে নিজের ইচ্ছাতে এসেছি। নয়তো আমাকে এখানে নিয়ে আসতে আপনাদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হতো!
অফিসার এক কনস্টেবল কে ইশারা করতেই মায়ার ছবিটি নিয়ে এলো। অফিসার আলম সাহেবের চোখের সামনে ছবিটি ধরে জিজ্ঞেস করলেন, দেখুন তো এঁদেরকে চিনতে পারেন কি না? আলম সাহেব ভালো করে না দেখে অফিসারকে জিজ্ঞেস করলেন ছবিতে এরা কারা?
অফিসার বললেন, ভালো করে তাকিয়ে দেখলেই বুঝতে পারবেন এরা কারা? এবার আলম সাহেব চশমাটা নেড়েচেড়ে ছবিটি চোখের সামনে নিয়ে দেখে বললেন, ছবির মেয়েটাকে আমি কখনো দেখেছি বলে মনে হচ্ছে না!। কিন্তু তার সাথের ছেলেটার সাথে বিল্লুর অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। অফিসার আগ্রহ নিয়ে বললেন, আর একটু ভালো করে দেখুন তো তাকে চিনতে পারেন কি-না? অফিসারের কথায় তিনি আরেক বার দেখে বলে উঠলেন আরে! এতো বিল্লুই মনে হচ্ছে!
তার নাকের ডান দিকে যে ছোট্ট তিলটা দেখা যাচ্ছে বিল্লুর ঠিক সেই রকম একটা তিল আছে। কিন্তু বিল্লুর গালে যে তিল সেটা তো এরচেয়ে অনেকখানি বড়! আর বিল্লুর গোঁফও আছে। আরও একটু মোটাতাজা সে! তবে ছবির এই ছেলেটাকে বিল্লুর ছোট ভাই বলে বেশ চালিয়ে দেওয়া যাবে। অফিসারের মুখে বিজয়ীর হাসি। ছবিটি আলম সাহেবের হাত থেকে নিয়ে তিনি বললেন, এই ছবিটি তবে আপনার উপকারী বন্ধু বিল্লুরই।
পাঁচ ছয় বছরে মানুষের অনেক পরিবর্তন হয়। এমনকি একটা ছোট্ট তিলও চার পাঁচ গুণ বড় হতে পারে। আলম সাহেব অফিসারের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, সেটা নাহয় বিল্লুর ছবি।কিন্তু পাশের মেয়েটি কে? তার এই কথায় অফিসার বুঝতে পারে মায়াকে আলম সাহেব কখনো দেখেনি। তাই তিনি তাঁকে বললেন, এটাই সেই মায়া! যাকে হাবিবুর রহমান সাহেবের বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিলো। আর আমরা সকলেই যাকে অদিতির মৃতদেহ বলে ভুল করেছিলাম!
আলম সাহেব বিরবির করে বললেন, তবে এটাই সেই মায়া! বিল্লুর বউ ছিলো সে!
পুলিশের এক্সপার্ট এক লোক বিল্লুর,সেই ছবিটাকে এডিট করে গোঁফ লাগালো। আরও কাজ করে ছবিটাকে এমন রুপ দিলো যা দেখে বোঝা যায় এটাই সেই বিল্লু! আলম সাহেব পরের ছবিটা দেখে বললেন, বিল্লু দেখতে ঠিক এইরকমই।
অফিসার উনার কথা শুনে খুশি হয়ে বেরিয়ে গেলেন। এবং সাথে সাথেই হুকুম করলেন কক্সবাজারের সমস্ত থানায় এই ছবি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হোক। অফিসারের সেই হুকুম দ্রুত পালন করা হলো। সকল পুলিশের যার যার সোর্সের হাতেও পৌঁছে গেলো একটা করে কপি।
পুলিশ অফিসার সবাই কে রেডি হয়ে থাকতে বললো, যখনই খবর পাওয়া যাবে, যেনো দ্রুত বেরিয়ে পড়া যায়। পুলিশের ধারণা বিল্লুর নিশ্চয়ই নিজস্ব দল আছে? নয়তো এমন মুন্সিয়ানার সাথে সে পুলিশের চোখে ফাঁকি দিতে পারতো না।
আলম সাহেবের ফোনের কল রেকর্ড এনে দেখা গেলো।বিল্লু যে নাম্বার থেকে তখন তাকে ফোন করে ছিলো। সেটা তখন তার বাড়ি থেকে মাত্র আধ কিলোমিটার দূরেই ছিলো। পুলিশের লোকজন সেখানে তন্নতন্ন করে খোঁজে দেখলো। ঠিক এই জায়গার এক গলির রাস্তার উপর সায়েমের উপর আঘাত করা হয়ে ছিলো।
পুলিশ অফিসার বুঝতে পারছে না, তবে কি অদিতিকে নিয়ে বিল্লু এখানেই কোন বাসায় ছিলো? না-কি অন্য কোন জায়গা থেকে এসে এখানে ঘাপটি মেরে বসে ছিলো সায়েমের উপর আঘাত করার জন্য?
বাবাকে দেখতে আমি এবং আমার মা থানায় গেলাম। বাবা আমার চোখের সাথে চোখ মিলাতে পারছিলেন না! তবুও আমি জিজ্ঞেস করলাম, বাবা যা শুনেছি তা নিশ্চয়ই সত্যি নয়? বাবা আমার প্রশ্নের কোন জবাব দিলেন না। পিছন ফিরে শুধু বললেন, তোমরা এখানে না এলেই আমি খুশি হতাম! আমার আর দুজন ছেলে-মেয়েকে বলবে আমাকে দেখতে আসার কোন প্রয়োজন নেই! আমি সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছি! স্বামী কে এভাবে এই অবস্থায় দেখে আমার মা চোখের পানি ধরে রাখতে পারলেন না।
তিনি ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে চোখের পানি মুছে নিয়ে বাবার উদ্দেশ্য বললেন, কি দরকার ছিলো এসব করার? বাবা মায়ের কথার জবাব দিলেন, দরকার ছিলো! তাই তো আমাকে এই কাজ করতে হলো। ছেলেটা তো তোমার মতো হয়েছে। তার জন্যই আজ আমার এই পরিস্থিতি! মা অবাক হয়ে বললেন, গরীবের মেয়ে বলে সারাজীবন খোঁটা দিয়ে গেলে! আজ-ও তোমার সেই খোঁটা দেবার অভ্যেস গেলো না! এ-সব করে কি শান্তি পেলে তুমি?
বাবা আমাদের দিকে না ফিরেই জবাব দিলেন, ঠিক কথা বলেছো। আমার এই জীবনে প্রচুর অর্থ সম্পদের মধ্যেও কোন শান্তি আমি পাইনি। তাই চেয়েছিলাম নিজের ছেলেটা অন্তত শান্তি পাক। কিন্তু তা-ও বুঝি আর হলো না! আমি ও আমার মা বাবার কথাগুলো আজ একেবারেই বুঝতে পারলাম না। তিনি কোনকিছুর উপর অভিমান করে আছেন। কিন্তু কি সেটা? অনেক চেষ্টা করেও বুঝতে পারলাম না।
বাবা আমার উপস্থিতিতে অস্বস্তি বোধ করছেন সেটা আমি বুঝতে পেরে বললাম, আমি সত্যি বিশ্বাস করতে পারছি না, আমার বাবা এমন মানুষ! যে কি-না নিজের ছেলের বউ কে অপহরণ করাতেও দ্বিধাবোধ করে না? বাবা আমার কথার প্রতিত্তোরে কোন কথা বললেন না! বুঝতে পারলাম তিনি চাইছেন না, আমরা আর এখানে কতক্ষণ থাকি। তাই চলে এলাম। চলে আসার সময় আমার মা বাবাকে বললেন, তোমার দম্ভচূর্ণ হওয়ার জন্য হয়তো এটারই প্রয়োজন ছিলো!
হঠাৎই পুলিশ খুঁজতে খুঁজতে এক বাড়িতে গিয়ে হাজির হলো। যেখানে এক দম্পতি একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে কিছুদিন ধরে বসবাস করছিলো। পুলিশ সেই ফ্ল্যাটের সামনে দাঁড়িয়ে পাশের ফ্ল্যাটের মহিলার সাথে কথা বলতে শুরু করে। মহিলা বললেন, হ্যা এখানে কদিন আগেও এক দম্পতি বাস করতো। কিন্তু তারা কোন সময় কারও সাথে কথা বলতো না। এমনকি তাদেরকে খুব বেশি একটা দেখাও যেতো না। ঐ পরিবারের পুরুষ লোকটি কখন আসতো আর কখন যেতো বোঝাই যেতো না। মহিলার সাথে কথা বলতে গেলেও সে দু’একটা কথা বলে দরজা লাগিয়ে দিতো স্যার! তাই আমি এমন অমিশুক মহিলার সাথে যেচে পড়ে কথা বলতে যাইনি। হঠাৎ করেই কদিন ধরে তাদের আর কোন সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। হয়তোবা তারা চলে গেছেন?
পুলিশ বাড়িওয়ালার সাথে যোগাযোগ করে। বাড়িওয়ালা অফিসারের কথায় বলে, হ্যা ঐ ফ্ল্যাটে এক ভাড়াটিয়া উঠেছিলো। কিন্তু তারা কয়েক দিন থেকেই চলে গেছে। পুলিশ অফিসার বাড়িওয়ালাকে অদিতি ও বিল্লুর ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করে এরাই কি তারা?
বাড়িওয়ালা দুজনের ছবি দেখে বলে, স্যার পুরুষ মানুষটি তো ঠিক আছে। কিন্তু মহিলা তো এই জন নন! অন্য আরেক জন। অফিসার জিজ্ঞেস করলেন আপনি ঠিক দেখেছেন তো? জ্বি স্যার আমি হলপ করে বলতে পারি উনার ওয়াইফ ইনি নন। অন্য আরেকজন! তারা স্বামী স্ত্রী দুজনেই আমার সাথে এই ড্রইং রুমে বসেই ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়ার কথা বলে ছিলো। এরপর কোন প্রয়োজন পড়লে তার স্ত্রী আসতেন। স্বামীটি আমার কাছে আর কখনো কোন দরকারে আসেননি।
বাড়িওয়ালার কথা শুনে অফিসার চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি সেই মহিলার বর্ননা দিতে পারবেন? সে দেখতে কেমন? হ্যা স্যার! সাদামাটা চেহেরার মহিলা। যদিও তিনি ভদ্রমহিলার মতো ব্যাবহার করতেন কিন্তু আমার মনে হয় তিনি ততোটা ভদ্র নন! অফিসার জিজ্ঞেস করলেন, কেন সে কি এমন আচরণ করেছে? না, স্যার! তেমন কিছু নয়। কিন্তু আমার তাকে দেখে এমনটাই মনে হয়েছে।
এমন সময় বাড়িওয়ালার মেয়ে নিজের অজান্তেই হঠাৎ তাদের মধ্যে এসে পড়ে। বাড়িওয়ালা তাকে দেখে বললেন, তুমি ভিতরে যাও মা! মেয়েটি হয়তোবা তাদের কিছু কথা শুনে ফেলে ছিলো। তাই সে আগ বাড়িয়ে বলে, আমার মোবাইলে সেই মহিলার ছবি আছে। অফিসার কৌতুহলের সাথে বলে, কোথায় দেখি?
মেয়েটি মোবাইলে ছবি বের করে পুলিশের হাতে দিলো। অফিসার দেখেই চিনতে পারলেন। এটা তো সেই কাজের মহিলা। মায়ার আগে যে সেই বাসাতে কাজ করতো। অদিতির সাথে সাথে পুলিশ হন্যে হয়ে তাকেও খোঁজে চলেছে!
পুলিশ অফিসার বাড়িওয়ালার কাছ থেকে সেই ফ্ল্যাটের চাবি নিয়ে প্রত্যেকটা রুম ভালো করে সার্চ করলো। আর-ও কোন পোক্ত প্রমাণ পাওয়ার আশায়। কিন্তু সেইরকম কিছুই পাওয়া গেলো না। তবে এইটুকু বুঝতে পারলো এখানে দু’জন নয় তিনজন মানুষ বাস করে গেছে। অফিসার অংকটা সহজেই মিলিয়ে নিলেন। আরেক জন নিশ্চয়ই অদিতি? কিন্তু অফিসার একটা জিনিস কিছুতেই বুঝতে পারছেনা, অদিতির মেয়েটা তাদের সাথে আছে কি-না? তেমন কোন প্রমাণ এখনো তারা খোঁজে পায়নি।
হাবিবুর রহমান সাহেবের বাড়িতেও অদিতির মেয়ে মিতুলের অস্তিত্বে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি! অফিসার কিছুতেই বুঝতে পারলো না। অদিতির সাথে মিতুল কেন নেই?
এবার তিনজনের ছবি হাতে হাতে ঘুরতে লাগলো। অবশেষে পুলিশের একজন পোষ্য খবর দাতা রাত দুপুরে ফোন করে জানালো। কক্সবাজারের এক অখ্যাত ছোটো খাটো হোটেলে বিল্লুর মতো একজনকে দেখা গেছে। তার সাথে বোরকা পড়া একজন মহিলাও ছিলো। অফিসার সেখানের স্থানীয় থানায় যোগাযোগ করে রওনা হয়ে গেল।
সেখানকার অফিসার হোটেলের সামনে দুজন কনস্টেবলকে সাধারণ পোশাকে পাহারায় নিয়োজিত করলেন। লিটু আমাকে এই কথা ফোন করে জানালো। আমিও ওর সাথে যাবো বলে ওদের সাথে বেরিয়ে পড়লাম।
যখন আমরা গিয়ে পৌছুলাম। তখন দুই থানার অফিসার ও কিছু কনস্টেবলকে সাথে নিয়ে সেই হোটেলে অভিযান চালানো হলো। হোটেলের মালিক ও ম্যানেজার কে আগেই জানানো হয়েছিলো। ম্যানেজার সেই রুমের সামনে এসে ইশারায় দেখিয়ে দিলো।
পুলিশের লোকজন পুরো প্রস্তুতি নিয়েই এসেছে। তাদের ধারণা ভিতরে বিল্লুর সাঙ্গপাঙ থাকতে পারে। কিন্তু তাদের ধারণা কে উড়িয়ে দিয়ে বিল্লু উধাও! দরজাটা হালকা ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো। অফিসার দেখতে পেলো, একজন মেয়ে মানুষ হাত-প বাঁধা অবস্থায় উপুড় হয়ে নিথর ভাবে পড়ে আছে।
চলবে,,,,,