খোঁজ পর্ব ১৯

0
514

#খোঁজ ১৯তম_পর্ব
লেখক মোঃ কামরুল হাসান

কয়েক বার চেষ্টা করার পরে-ও আলম সাহেব তার বন্ধু হাবিবুর রহমান সাহেবের ফোন কল রিসিভ করলেন না! পুলিশ হাবিবুর রহমানের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন।

হাবিবুর রহমান সাহেব ভীষণ চিন্তিত হয়ে বলে, আরেক বার চেষ্টা করে দেখুন স্যার। এরকম তো হওয়ার কথা নয়! আমি ফোন করছি তবুও সে রিসিভ করছে না! নিশ্চয়ই সে কোন ঝামেলায় আছে?

পুলিশ অফিসার জিজ্ঞেস করলেন, তার আর কোন নাম্বারের কথা আপনার জানা আছে কি? থাকলে সেই নাম্বারে ট্রাই করা যেতে পারে। হাবিবুর রহমান বলেন, না স্যার! আমি তার এ-ই একটা নাম্বারই জানি।

অফিসার কিছু একটা ভেবে বললেন, উনার মতো ব্যাস্ত মানুষেরা কিন্তু অপরিচিত নাম্বার থেকে আসা কল অনেক সময় রিসিভ করতে চান না! সেরকম কিছু নয়তো হাবিব সাহেব?

অফিসারের মুখে এমন কথা শুনে তিনি আঁতকে উঠে বলেন, না,না, তা কেন হবে? আমি তো তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু! আপনাকে তো আমি সে কথা আগেই বলেছি। তারপরও আপনারা আমাকে বিশ্বাস করতে পারছেন না?

অফিসার আর কিছু না বলে, আরও একবার চেষ্টা করার সুযোগ দিলেন তাকে। কিন্তু এবারেও কেউ ফোন রিসিভ করলো না। এবার অফিসার হাবিবুর রহমান সাহেবের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, সত্যি ব্যাপারটা কি, একবার খুলে বলুন তো দেখি? এক ঘন্টা ধরে আমরা আপনার কথায় নেচে চলেছি! কিন্তু কাজের কাজ তো কিছুই হলো না।

সত্যি বলতে আমার যা মনে হচ্ছে আপনি তাকে ইচ্ছাকৃত ভাবে ফাঁসাতে চাইছেন। এখন ভালোয় ভালোয় সত্যি কথাটা বলে দেন। তাতে আপনারও ভালো, আমাদের সময় নষ্ট হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যায়! তাহলে এইসব আপনারই কান্ড তাই না?

হাবিবুর রহমান সাহেব এই প্রথম নিজের চোখের জল মুছে বললেন, আপনাদের যদি তাই মনে হয়? তবে আমি আমার দোষ স্বীকার করে নিচ্ছি! অফিসার এই কথায় রেগেমেগে বেরিয়ে গেলেন। যাওয়ার সময় বলে গেলেন আর আধ ঘন্টা সময় দিচ্ছি আপনাকে। এরমধ্যে সত্যি বলার জন্য তৈরী হোন। নয়তো কি করে, এবং কিভাবে সত্যি কথা বলাতে হয় তা আমার বেশ জানা আছে!

হাবিবুর রহমান তার কৃতকর্মের জন্য অনুতাপ করতে লাগলেন। কেন তিনি নিজের অজান্তেই এমন জঘন্য কাজে জড়িত হলেন। একবারও কি তার খোঁজ নেবার প্রয়োজন ছিলো না! একবার কি যাচাই করার দরকার ছিলো না, কেন আলম এমন লুকোচুরি খেলছে? হোক না আলম তার অকৃত্রিম পরোপকারী বন্ধু! তবুও একবার খোঁজ নেওয়ার দরকার ছিলো না কি?

তার-ও তো জীবনে পাপের একটা অধ্যায় থাকতে পারে? তার উপকার করেছে বলেই যে তাঁকে সাধু পুরুষ ভাবতে হবে। এমনটা মোটেও ঠিক হয়নি। আজ তাই তো সেই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে উপকারি বন্ধুর পাপের ভার কাঁধে তুলে নেওয়া ছাড়া আর কোন রাস্তা খোলা নেই তার সামনে!

অফিসার বাইরে থেকে ঘন্টা খানেক পরে এসে হাবিবুর রহমান কে তলব করলেন। এবার উনাকে এমন একটা রুমে নিয়ে যাওয়া হলো। যার আশেপাশের চিত্র দেখেই তিনি বুঝতে পারলেন, স্বীকার তাঁকে করতেই হবে। কারণ স্বীকার করানোর জন্য এমন সব জিনিস সেই ঘরে মজুত আছে, যা দেখে তিনি মনে মনে আঁতকে উঠেন।

টেবিলের একপ্রান্তে অফিসার ও আরেক প্রান্তে হাবিবুর রহমান বসলেন। তিনি বসতেই অফিসার জিজ্ঞেস করলেন, এবার বলুন হাবিব সাহেব! অদিতি ও তার মেয়ে মিতুলের সাথে আপনি কি করেছেন? তারা এখন কোথায়? অফিসারের প্রশ্নের জবাবে তিনি চিন্তিত হয়ে ভাবছেন, এদের কে তিনি আর কি জবাব দিবেন? কি জবাব শুনলে এরা খুশি হবে?

উনাকে চুপ করে থাকতে দেখে অফিসার কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রুক্ষ কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, নাকি মায়ার মতো অদিতি ও তার মেয়েকেও মেরে দিয়েছেন? তিনি অফিসারের প্রশ্নের জবাব খুঁজে পেলেন না। হাবিবুর রহমান কে চুপ করে থাকতে দেখে অফিসার হেসে বলেন, মনে রাখবেন সবসময় ছাই দিয়ে আগুন ঢেকে রাখা যায় না। একটু সুযোগ পেলেই সেই ছাই চাপা আগুন আত্মপ্রকাশ করবে। তেমনি আপনি যতোই চেষ্টা করেন কিন্তু সত্যি প্রকাশ পাবেই।

এই কথা বলে অফিসার একজন কনস্টেবল কে নির্দেশ দিলেন কিছু একটা নিয়ে আসার জন্য। সেই সাথে অফিসারের চোখে এক রকম হিংস্রতাও ফুটে ওঠে। তা দেখে হাবিবুর রহমান বুঝতে পারলেন, এখন তাকে টর্চার করা হবে। তাই সে মনে মনে দোষ গুলো নিজের কাঁধে নিতে প্রস্তুত হয়ে গেলেন!

ঠিক সেই সময় অফিসারের কথাগুলো কে যুক্তিযুক্ত প্রমাণ করে দিয়ে হাবিবুর রহমানের ফোনটা হঠাৎ বেজে উঠে। সৈয়দ শামসুল আলম নিজেই কল ব্যাক করেছেন। এক কনস্টেবল ফোনটা নিয়ে দৌড়ে আসে অফিসারের কাছে। অফিসার হাবিবুর রহমান কে ইশরা করে কথা চালিয়ে যেতে।

তারপর কল রেকর্ড করার কার্যক্রম শুরু করে দেন। হাবিবুর রহমান ফোন রিসিভ করে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করে, কেমন আছিস আলম? আলম সাহেব সালামের জবাব দিয়ে বলে, আলহামদুলিল্লাহ! এরপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন কি কারণে তাঁকে ফোন করা হয়েছে?

হাবিবুর রহমান কোন ভণিতা না করে সরাসরি বলে, আমাদের ড্রাইভার কে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। সে পুলিশের জেরার মুখে আমার নাম বলে দিয়েছে। এখন সব দোষ আমার ঘাড়ে এসে পড়বে। পুলিশ যে কোন সময় আমাকে গ্রেফতার করতে পারে। এখন আমি কি করবো আলম? তুই তো জানিস আমার কোন দোষ নেই! তবুও কি সেই পাপের প্রায়শ্চিত্ত আমাকেই করতে হবে?

সৈয়দ শামসুল আলম একটুখানি হেসে জবাব দেন। কপালের লিখন কে খণ্ডন করতে পারে? এই কথা শুনে হাবিবুর রহমান উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এর মানে কি? আমি সব দোষ নিজের কাঁধে নিয়ে নিবো!

আলম সাহেব আবারও হেসে বললেন, হুম কপালের লিখন কে খণ্ডাতে পারে হাবিব! পুলিশ তোকে গ্রেফতার করলে আমার নামটা বলে দিস! হাবিবুর রহমান হয়তো ভাবতে পারেনি আলম এমন কথা বলবে? তাই না শোনার ভান করে আবার জিজ্ঞেস করে পুলিশের কাছে কি বলবো আমি?

আলম সাহেব এবার একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, বলবি যা জানার আমি জানি! সত্যি বলতে নিজের অজান্তেই তুই আমার পাপের ভাগিদার হয়েছিস! তুই যা করেছিস তাতো আমাকে সাহায্য করার জন্য করেছিলি। এমনকি তোর জানাও নেই আমার কি উদ্দেশ্য ছিলো? তাই আমি চাই না, আমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত অন্য আরেজন নির্দোষ মানুষ করুক! আলম সাহেবের কথায় প্রচন্ড অনুশোচনা ও হতাশা মিশ্রিত ছিলো। তিনি যেনো কোন কারণে মর্মে মর্মে মরে যাচ্ছিলেন!

আর কোন কথা না বলে তিনি লাইনটা কেটে দিলেন। অফিসার আলম সাহেবের কথায় ভীষণ আশ্চর্য হলেন। ভাবলেন, তিনি কি কারণে ছেলের বউকে অপহরণ করলেন? আর এখন এমন অনুশোচনার আগুনেই কেন পুড়ছেন?

আমি বাড়িতে শুয়ে শুয়ে নানান চিন্তা করছিলাম। এমন সময় আমার মা এসে বললেন, সায়েম আমাদের বাড়িতে পুলিশ এসেছে! আমি মায়ের কথায় তারাতাড়ি গিয়ে দেখতে পেলাম, আমাদের স্থানীয় থানার অফিসার এবং লিটু দুজনেই আমাদের ড্রয়িং রুমে বসে আছে। আমাকে দেখে লিটু ফিরে তাকালো আমার দিকে। জিজ্ঞেস করার আগেই সে আমাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে সবকিছু খুলে বললো।

আমি তার কথা শুনে বললাম, একথা আমি কক্ষনো বিশ্বাস করি না! আমার বাবা আমার প্রতি যেমনই হোক না কেন? তাই বলে তিনি এমন জঘন্য কাজ কিছুতেই করতে পারেন না! হয়তো তিনি আমার প্রতি তেমন সন্তুষ্ট নন! তাই বলে তিনি মানুষ খারাপ নন লিটু! আমি হলপ করে বলে দিতে পারি বাবাকে নিয়ে কেউ চক্রান্ত করছে। তাঁকে ফাঁসিয়ে দিতে চাইছে!

লিটু আমার কাঁধে তার একটা হাত রেখে বললো, আমি জানি, কোন সন্তানই নিজের বাবাকে অপরাধী দেখতে চায় না! সে কথা কখনো মনেও করে না। কিন্তু অপরাধী কারও না কারও ভাই, বাবা, সন্তান! আমরা সঠিক ইনফরমেশন পেয়েই এসেছি। যাইহোক স্থীর করেছি আমি আমার বাবাকে এভাবে পুলিশকে নিয়ে যেতে দেবো না!

পিছন থেকে বাবা আমাকে বললেন, তুমি চুপ করে থাকো! উনারা সঠিক লোককেই ধরতে এসেছে। অদিতির অপহরণের জন্য আমি নিজেই দায়ী! উনাদের কাজে বাঁধা দিও না।

লিটু বাবার হাতে হাত কড়া লাগাতে গেলে বাবা সেটা সরিয়ে দিয়ে বললেন, তার দরকার নেই! চলুন আমি স্বইচ্ছায় যাচ্ছি আপনাদের সাথে। বাবার কথা শুনে আমি হঠাৎ করেই যেনো আমার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছিলাম। কিন্তু মা আমাকে পিছন থেকে ধরে ফেললেন। মা জিজ্ঞেস করলেন, সায়েম তোর কি হয়েছে?

উনি কেন পুলিশের সাথে গেলেন? যা জেনেছি তাই মা’কে বললাম। মা এই কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, সবের মূলে টাকার গরিমা বংশের অহমিকা! আমি মনে করেছিলাম কথাটা শুনে মা হয়তো ভেঙে পড়বে? কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে মা বললেন, আমি জানতাম সে একদিন না একদিন এমন কোন কাজ করে বসবে। আহ্! মানসম্মান টিকিয়ে রাখতে গিয়ে মানুষটা একেবারে সব খুইয়ে বসলেন!

আলম সাহেব কে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য নিয়ে আসা হলো। কর্তব্যরত অফিসার জিজ্ঞেস করলেন, আপনার পুত্রবধূ অদিতি কে আপনিই অপহরণ করিয়েছিলেন? আলম সাহেব অল্প কথায় জবাব দিলেন, জ্বি! অফিসার জিজ্ঞেস করলেন, কেন? তিনি অফিসারের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, সেটা বলা কি বাধ্যতা মূলক?

অফিসার গম্ভীর কন্ঠে বলেন হুম, তা বলতে পারেন? আলম সাহেব বললেন, অপরাধটা আমি করেছি! সেটাই কি যথেষ্ট নয়? কারণটা না হয় অজানাই থাকলো! অফিসার হেসে জবাব দিলেন, এমনতো হতে পারে নিজের বন্ধু কে বাঁচাতেই আপনি মিথ্যা বলছেন? শুনেছি ছোটবেলা থেকেই আপনি পরোপকারী মানুষ!

এবার অফিসারের কথা শুনে তিনি হেসে উঠে চোখের চশমাটি পরিষ্কার করে চোখে লাগিয়ে জবাব দিলেন, এই যুগে কারও উপকার করার মানুষই খোঁজে পাওয়া মুসকিল। সেখানে কারও পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে অন্য কেউ এগিয়েই আসবে সেটা হাস্যকর নয়!

অফিসার আলম সাহেবের কথায় সায় দিয়ে বলে, ঠিক বলেছেন। কেউ কারও উপকারও উদ্দেশ্য ছাড়া করে না। হয়তো আপনিও তাই করে এসেছেন? এখন তবে বলুন কেন নিজের পুত্রবধূকে অপহরণ করতে হলো আপনাকে?

আলম সাহেব এবার ঘৃণা মিশ্রিত কন্ঠে জবাব দিলেন, মেয়টা আমার ছেলের যোগ্য ছিলো না! তাই আমি তাকে অপহরণ করিয়ে আমার ছেলের অজান্তেই তার উপকার করতে চেয়েছিলাম। অফিসার আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করে, মেয়েটা ধনী ঘরের নয় বলে আপনি তাকে অপহরণ করলেন? সত্যি আপনারা ধনী ঘরের মানুষরা সাধারণ মানুষকে মানুষ বলে স্বীকৃতি দিতেও রাজি নন! কিন্তু কেন?

এবার অফিসারের দিকে তাকিয়ে আলম সাহেব বললেন, মেয়েটা গরীব ঘরের বলে প্রথমে মেনে না নিলেও, পরে আমি তাকে পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু যখন জানতে পারলাম মেয়েটা একটা নীচ প্রকৃতির মানুষ! তখন আমি সহ্য করতে পারলাম না। আমার ছেলের বউ গরীব ঘরের মেয়ে হোক। তাই বলে সে চরিত্রহীনা হবে? সেটা আমি কেমন করে মেনে নিতে পারি বলুন?

আমাদের বংশের বউয়েরা কখনো পরপুরুষের সামনে পর্যন্ত যেতো না। এমনকি সায়েমের মা-ও সহজে কখনো কোন পরপুরুষের সামনে যায় না। আর সেখানে সেই মায়ের ছেলের বউ হবে চরিত্রহীনা! আর যাইহোক আমি এটা মেনে নিতে পারি না। তাই অদিতি কে আমি অপহরণ করিয়ে আমার ছেলের জীবন থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছি।

অফিসার উনার কথা শুনে জিজ্ঞেস করে আপনি কিভাবে বুঝতে পারলেন আপনার ছেলের বউ একজন চরিত্রহীনা নারী?

আমার একজন কর্মচারী বিল্লু অদিতিকে প্রথম বার দেখেই এই কথা বলে। পুলিশ অফিসার আলম সাহেবের কথায় হেসে উঠে বলে, আপনার মতো একজন শিক্ষিত উচ্চবিত্ত পরিবারের মানুষ একজনের কথায় বিশ্বাস করে ফেললেন, আপনার ছেলের বউ চরিত্রহীনা! আর কোন প্রমাণ ছাড়াই আপনি মেনেও নিলেন সেটা?

নাহ্! প্রমাণ ছাড়া মেনে নেইনি আমি। সে আমাকে যখন বলে এই মেয়েক সে বহু আগে থেকেই চিনে, এবং মেয়েটির একটা বাচ্চাও আছে। তখন আমি সেই কর্মচারী বিল্লুর টুঁটি চেপে ধরে জিজ্ঞেস করি প্রমাণ দিতে পারবে কি-না? তখন সে আমার হাত থেকে মুক্তি পেতে বলে, প্রমাণ দিতে পারবে। এবং অদিতির সেই বাচ্চাটিকে আমাকে দেখাতে নিয়ে যায়। এমনকি সেসময় সেখানে অদিতিও উপস্থিত ছিলো। আমি তার কোলে তার বাচ্চা মেয়েটি কে দূর থেকে দেখে চলে আসি।

এরপর সেই কর্মচারীটি আমাকে বলে, একসময় তার সাথেও অদিতির নিবিড় সম্পর্ক ছিলো। সে আজও অদিতি কে ততোটাই ভালোবাসে যতোটা তখন বাসতো। এই কথা শুনে আমি ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করি, এই কথার মানে কি? সে বলে যদি অপরাধ না নেন। তবে সে আপনার ছেলের জীবন থেকেও চলে যাবে, এবং চিরতরে আমার ভালোবাসা আমার হয়ে যাবে!

সেই ধুরন্দর শয়তান আমার মনের কথা বুঝতে পেরে ছিলো। যে আমি অদিতিকে আমার ছেলের পাশে আর দেখতে চাই না! তাই সুযোগ বোঝে এই কথা বলে বসে আমার সামনে। আমিও অদিতি কে সরিয়ে দেওয়ার একটা সহজ পথের সন্ধান পেয়ে জিজ্ঞেস করি কেমন করে?

সে তখন তার পরিকল্পনার কথা আমার সামনে উপস্থাপন করে। কেমন করে অদিতি কে সহজেই অপহরণ করা যাবে। তার মেয়ে মিতুল কে সেই শয়তানটা কব্জা করে অদিতি কে সহজেই অপহরণ করে নেয়। বলতে গেলে নিজের জীবনের ঝুঁকি আছে জেনেও অদিতি এই পথে অগ্রসর হয়। হাজার হলেও তো সে-ও একজন মা!

মেয়ের জীবন বাঁচাতে সেই শয়তানের সব শর্ত সে বিনাবাক্যে মেনে নেয়। অদিতির হাত থেকে এমন ভাবে নিজের ছেলেকে বাঁচাতে পেরে আমিও সন্তুষ্টই ছিলাম। কিন্তু যখন একটা মেয়ের খুন হয়ে গেল, তখন আমি বুঝতে পারি। একি সর্বনাশের পথে আমি হেঁটে চলেছি!এর শেষ কোথায়?

আলম সাহেবের কথা শুনে অফিসার জিজ্ঞেস করে, সেই কাজের মেয়ে মায়াকে কেন খুন করালেন? এর জবাব দিতে গিয়ে আলম সাহেব হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে বলেন, এর কিছুই আমি জানি না! আমি তো কাউকে খুন করতে চাই নি! এমনকি অদিতিকেও নয়।

আমিও বুঝতে পারছিনা কেন বিল্লু ঐ নিরীহ মেয়েটাকে খুন করলো? এরপর কয়েকবার ফোনে আমার সাথে যোগাযোগ হলেও সে এর কোন জবাব আমাকে দেয়নি। এরপর সে আমার হাতছাড়া হয়ে যায়। কখন কোথায় থাকে এর কিছুই আমি জানি না।

পুলিশ অফিসার অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, তবে কি বলতে চাইছেন, অদিতি ও তার মেয়ে মিতুল এখন কোথায় কি অবস্থায় আছে আপনি জানে না? আলম সাহেব আবারও একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, নাহ্! আমি সত্যিই জানি না। তবে গত কয়কদিন আগে আমার ছেলেকে আঘাত করার পরে তার সাথে শেষ কথা হয়েছে।

অফিসার আগ্রহের সাথে জিজ্ঞেস করে, তখন সে কোথায় ছিলো? আমি তাও জানি না! তবে আমার মনে হয়েছে সে আমাদের আশেপাশেই ছিলো। কারণ আমার ছেলের উপর আক্রমণ সে-ই করে ছিলো। তাতেই আমি বুঝতে পেরেছি সে আশেপাশেই কোথাও আছে।

তা আপনার সেই কর্মচারী বিল্লুর ঠিকানাটা কি? আমি জানি না! তার ছবি নিশ্চয়ই আপনার কাছে আছে? নাহ্! তাও নেই! এবার অফিসার একটু কড়া কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা সত্যি করে বলুন তো আপনার এই কর্মচারীটি আসলে কে? আপনার কাছে তার কোন ঠিকানা নেই! তার কোন ছবি পর্যন্ত নেই!

আমার তো মনে হয় আপনি এতোটা নির্বোধ নন যে একজন অপরিচিত কে আপনার কাছে রাখবেন?

আরেকটা কথা আপনার পুত্রবধূ যদি চরিত্রহীনা হয়েও থাকে। তবে সেটা আপনার ছেলে কে জানালেই তো সব চুকেবুকে যেতো। সে তার স্ত্রী কে ডিভোর্স দিতে পারতো! আপনি তা করলেন না কেন?

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here