রাজনীতির অন্তরালে, পর্ব:৩

0
527

#রাজনীতির_অন্তরালে
#তমসা_চক্রবর্তী

#পর্ব-৩

।। ১০ ।।

-“আচ্ছা ডক্টর মল্লিক, এম.এল.এ সাহেবের ঠিক কি কি শারীরিক সমস্যা ছিল একটু ডিটেলে বলবেন”!!

উজানের প্রশ্নে ডিসেম্বরের ঠান্ডাতেও ডক্টর মল্লিকের মাথায় বিন্দু বিন্দু ঘাম মিলির চোখ এড়ালো না। খানিকক্ষণ চুপ থাকার পর ডক্টর মল্লিক আমতা আমতা স্বরে জবাব দিলেন,

-“ধীমান বাবু শারীরিক ভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন অফিসার।খানিকটা ফ্যাটি লিভারের সমস্যা ছিল, কিন্তু সেটা মেজর কিছু নয়”!!

এত তাড়াতাড়ি ডক্টর মল্লিকের থেকে এই স্বীকারোক্তির আশা মিলি বা উজান কেউই করেনি।তাই খানিকটা বিস্মিত হয়েই উজান আবার প্রশ্ন করল,

-“কিন্তু আপনার প্রেশক্রিপশন আর সোনোগ্রাফির রিপোর্ট অনুযায়ী তো মিস্টার অধিকারী গলব্লাডার স্টোনের সমস্যায় ভুগছিলেন”!!

কপালের রেখায় সামান্য ভাঁজ পড়ল ডক্টর মল্লিকের। ইতস্ততভাবে উত্তর দিলেন,

-“সোনোগ্রাফির রিপোর্টটা যে ফেক ছিল সেটা আশা করি আপনারা এতক্ষনে বুঝেই গেছেন।আর রইল বাকি প্রেশক্রিপশন!!ওই প্রেশক্রিপশন না লিখলে কি আজ আমি আপনাদের সাথে বসে কথা বলার অবস্থায় থাকতাম অফিসার!! আমার অবস্থাও হয়ত অমিতের মতোই হতো। পরিবার নিয়ে থাকি এই শহরে। একটা কলেজে পড়া মেয়ে আছে আমার।তাই নেতা মন্ত্রীদের কথা অমান্য করে বিদ্রোহী হওয়ার সাহস আমার হয়নি”।

-“তা বলে আপনি একজন সুস্থ মানুষকে অসুস্থ প্রমান করে তাকে অপারেশন থিয়েটারে মরার জন্য ছেড়ে দেবেন!! প্রয়োজনে আপনি পুলিশের সাহায্য নিতে পারতেন”!!

ঠোঁটের কোণে ব্যাঙ্গাত্মক হাসি ঝুলিয়ে ডক্টর মল্লিক বলে ওঠলেন,

-“পুলিশ!! কলকাতা শহরের বাইরে বেরিয়ে দেখুন অফিসার! মফস্বলে পুলিশ কি আর সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য কাজ করে অফিসার!! পুলিশ তো নেতা মন্ত্রীদের তাবেদারী করতেই ব্যস্ত। নেতা মন্ত্রীদের একটা নির্দেশই যথেষ্ট আমার মতো একজন সাধারণ ডাক্তারকে মিথ্যে অপবাদে গারদে পাঠিয়ে তার জীবনটাকে নরক বানিয়ে তোলার জন্য।

তবে আমি কিন্তু ধীমান বাবুকে মরার জন্য ছেড়ে দিইনি।আমি কলকাতায় যে ডাক্তারের কাছে ওনাকে রেফার করেছিলাম, উনি আমার বন্ধু স্থানীয়।আমি ওনাকে সবই জানিয়ে রেখেছিলাম। উনি আমাকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে ধীমান বাবুর সাথে একান্তে কথা বলে উনি ব্যাপারটা সামলে নেবেন”।

-“আপনার পরিস্থিতি আমরা বুঝতে পারছি ডক্টর মল্লিকে। কিন্তু আইন তো আইনের পথেই চলবে। আর আইনের চোখে আপনি একজন অপরাধী।তাই আপনাকে আমরা অ্যারেস্ট করতে বাধ্য ডক্টর মল্লিক।
তবে আপনাকে একটা শেষ প্রশ্ন অবশ্যই করতে চাই”!!

উজানকে নিজের প্রশ্ন শেষ করতে না দিয়েই ডক্টর মল্লিক বললেন,

-“ধীমান অধিকারীর জন্য ফেক রিপোর্ট আর প্রেসক্রিপশন আমি তাহির হোসেনের নির্দেশ বানিয়ে ছিলাম অফিসার”!!

চমকে উঠে মিলির মুখের দিকে তাকাল উজান।

-“তাহির হোসেন!!মানে রুলিং পার্টির জেলা সভাপতি”!!

।। ১১ ।।

-“আলম, সাবীর,অমিত, ধীমান অধিকারী আর মৌমিতা অধিকারীর কল ডিটেলস এসে গেছে স্যার”!!

বহরমপুর লজের ১০৬ নম্বর রুমের খাটের উপর কল ডিটেলসের কাগজগুলো রাখতে রাখতেই কথাটা বললো অরণ্য।

-“আর ইন্দ্রানী অধিকারীর কল ডিটেলস”!!

ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে অরণ্যকে প্রশ্নটা করল মিলি।

-“আরে এর মধ্যেই আছে।নামটা জাস্ট স্কিপ করে গিয়েছিলাম”!!

-“তাহলে আর কি!!চলো কাজে লেগে পড়ি”!!

প্রায় ঘন্টা ছয়েক অক্লান্ত পরিশ্রমের পর কল ডিটেলস থেকে মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো কিছু তথ্য উঠে এলো মিলিদের সামনে।

আলমের সাথে গত একবছর ধরে নিয়মিতভাবে একটি নম্বর থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে।খোঁজ নিয়ে জানা গেল নম্বরটি জন্নত রেহানা নামক এক মহিলার নামে রেজিস্টার্ড।এই জন্নত রেহানার খোঁজ করতেই উঠে এলো আরও এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।জন্নত রেহানা হল আলমগীর হোসেন ওরফে আলমের তুতো বোন এবং তাহির হোসেন অর্থাৎ রুলিং পার্টির মুর্শিদাবাদ জেলার সভাপতির দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী।

এরই মধ্যে অরণ্যের পরিচিত এক লোকাল রিপোর্টার শান্তনু, ওদের আরও বেশ কিছু জরুরী তথ্য সরবরাহ করার জন্য বহরমপুর লজে পৌঁছায়।

-“চারিত্রিক সুনাম না থাকলেও বেশ কিছু ব্যাপারে ধীমান অধিকারীর কিন্তু যথেষ্ট সুনাম ছিল স্যার। যার মধ্যে অন্যতম হল,আজ অবধি কোনো খুন খারাবিতে ধীমান অধিকারীর নাম জড়ায়নি। এমনকি পার্টির একজন সৎ নেতা এবং একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে ওনার যথেষ্ট সুনাম আছে।আজ পর্যন্ত পার্টির নাম ভাঙিয়ে কোনো সুযোগ সুবিধা নিতে বা পাইয়ে দিতে দেখা যায়নি ওনাকে।ধীমান অধিকারীর আদি বাড়ি করিমপুরে। তাই বরাবরই উনি করিমপুর থেকেই নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন এবং জিতেওছেন।তবে এত বছরেও ওনাকে সেভাবে কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিতে দেখা যায়নি। বহরমপুরের যে বাড়িতে উনি থাকতেন সেটা ওনার পৈতৃক বাড়ি। এমনকি করিমপুরের যে বাড়িতে ওনার ছেলেবেলা কেটেছে সেই বাড়িতে এখনো টালির চালই লাগানো আছে।

অন্যদিকে এই তাহির হোসেন হল পাক্কা সুযোগ সন্ধানী নেতা। পার্টির নামে তোলাবাজি থেকে শুরু করে অসৎ ব্যবসা কোনো কিছুই করতে বাকি রাখেনি তাহির হোসেন। গোপন সুত্রের খবর অনুযায়ী আলমগীর হোসেন আসলে তাহিরেরই লোক।গত একবছর ধরে ধীমান অধিকারীর সব গোপন তথ্য এই আলমই তাহিরকে পাচার করতো”।

একনাগাড়ে এতগুলো কথা বলে একটু থামলো শান্তনু।

-“আচ্ছা, অমিত মানে ধীমান অধিকারীর আগের বডিগার্ডের ব্যাপারে আপনি কিছু জানেন শান্তনু”!!

টেবিলে রাখা চায়ের কাপে ঠোঁট ছুঁইয়ে মিলির প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে শান্তনু ঘুরিয়ে প্রশ্ন করল মিলিকে।

-“মাস খানেক আগে এই অমিত আর মৌমিতা অধিকারীর ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে আপনি বহরমপুরে এসেছিলেন না ম্যাডাম!!

খানিক চমকে উঠে অরণ্য আর উজানের দিকে তাকায় মিলি।

-“আসলে লোকাল রিপোর্টারদের কাছে সব ইনফরমেশন চলে আসে ম্যাডাম। আপনি যেদিন প্রথম গোরা বাজার এলাকায় মৌমিতা অধিকারীর সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে যান, সেদিনই তাহির হোসেনের কাছে খবর পৌঁছে যায়। ওর লোক প্রতি পদে আপনার ওপর নজরদারি চালাতে শুরু করে। সেবার আপনি কেসের যতটুকু তথ্য যোগাড় করেছিলেন সেটা কিন্তু তাহিরের বদন্যতায় ম্যাডাম”!!

-“মানে”!!

আকাশ থেকে পড়লো মিলি। মুচকি হেসে শান্তনু উত্তর দিল।

-“মানেটা তো খুবই সহজ ম্যাডাম। আপনার জন্য ইনফরমেশন সাজিয়ে রেখেছিল তাহির হোসেন।ধীমান অধিকারীকে আপনার সামনে প্লট করার চেষ্টা করা হয়েছিল।যাতে এই কেসে ধীমান বাবুর নাম জড়িয়ে, ওনাকে নিয়ে অযথা টানাটানি করে পাবলিকের কাছে ওনার ভাবমূর্তিটা নষ্ট করা যায়।
কিন্তু তাহিরের কপাল খারাপ। আপনি কেসটা সেরকমভাবে ইনভেস্টিগেট না করেই ফিরে গেলেন।আর তার মধ্যেই তাহিরকে চাপে ফেলে এক বিশাল মহা মিছিলের আয়োজন শুরু করে দিলেন ধীমান অধিকারী।মিছিলের মূল বিষয়সূচি ছিল,রাজ্যে রুলিং পার্টির তহবিল তছরুপ।আর মজার ব্যাপার যে দুটো তহবিল নিয়ে ধীমান বাবু সবথেকে বেশি শোরগোল ফেলতে চেয়েছিলেন তার মধ্যে একটি তহবিল ছিল গত বছর বন্যার সময় তৈরি ত্রান তহবিল।যার নেতৃত্বে ছিলেন তাহির হোসেন”।

-“বলেন কি!!এই কেস তো দিনের পর দিন আরও প্যাঁচালো হয়ে উঠছে”!!

উজানের চিন্তান্বিত মুখটা দেখে শান্তনু আরও বলে,

-“তাহিরের পার্টি অফিসের ভিতরে আরও একটা খবর বেশ কয়েকদিন হাওয়ায় উড়েছিল স্যার”!!

-“কি খবর”!!

ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করল উজান।

-“ধীমান অধিকারীর আগের বডিগার্ড অমিতকে তাহির হোসেনের লোকজনই মেরেছে”!!

-“মাই গুডনেস!!এই একই আভাস অবশ্য আমরা ডক্টর মল্লিকের বয়ানেও পেয়েছি।আর এটাই আরও বেশি করে ভাবাচ্ছে আমাদের”!!

।। ১২ ।।

দু’দিন বহরমপুর, করিমপুরে আনাচে কানাচে তদন্তের জাল বুনে যতটুকু তথ্য পাওয়া গিয়েছিল তার ওপর ভিত্তি করেই, ধীমান অধিকারী আর আলমের বাড়ি সার্চ করার ওয়ারেন্ট বের করলো উজান। লালবাজার থেকে আরও কয়েকজন অফিসার আর লোকাল পুলিশকে নিয়ে ধীমান অধিকারীর মৃত্যুর পাঁচদিনের মাথায় ওনার বাড়িতে পৌঁছায় উজান।একই সময় অন্য আরেকটি টিম নিয়ে আলমগীর হোসেনের বাড়িতে পৌঁছায় অরণ্য।

ধীমান অধিকারীর স্ত্রী ইন্দ্রানী অধিকারীকে আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু করা হয়।আজ কোনো রকম রাখ ঢাক না করে উজান প্রথম থেকেই চালিয়ে খেলতে শুরু করলো।

-“আপনার স্বামী যে দিনের পর দিন মৌমিতা দেবীকে ধর্ষন করতেন সেটা কি আপনার জানা ছিল ম্যাডাম”!!

-“নেতা মন্ত্রীদের ওরকম অনেক দোষ থেকেই থাকে।সব ব্যাপারে ওত নজর দিতে নেই।আর তাছাড়া উনি আমার বা আমার ছেলের কখনো কোনো অযত্ন করেননি।তাহলে আমিই বা কেন‌ এসব নিয়ে মাথা ঘামাতে যাব”!!

নির্লিপ্তভাবে উত্তর দিলেন ইন্দ্রানী অধিকারী।

-“তাই যদি হবে, তাহলে আপনি বারংবার কেন অমিতকে উস্কানি দিচ্ছিলেন মৌমিতা দেবীকে নিয়ে এখান থেকে অন্য কোথাও চলে যাওয়ার জন্য”!!

-“কি আজে বাজে কথা বলছেন আপনারা”!!

-“অমিতের ফোন থেকে ডিলিটেড হোয়াটসঅ্যাপ ম্যাসেজগুলো কিন্তু আমরা অলরেডি রিট্রিভ করেছি মিসেস অধিকারী।তাই অস্বীকার করার চেষ্টা নিরর্থক ম্যাডাম”!!

গলা চড়ালো উজান। উজানের দিকে জ্বলন্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ইন্দ্রানী দেবী বললেন,

-“হ্যাঁ করেছি আমি অমিতকে ম্যাসেজ।কারণ, আমি চাইনি অমিত বা মৌয়ের কোনো ক্ষতি হোক।একদিন দুপুরে ছাদে ওঠার সময় ওদের কথাবার্তা শুনে আমি বুঝতে পারি যে ওদের মধ্যে কিছু একটা চলছে।আর শুধু অমিতকে কেন আমি তো মৌকেও বলেছিলাম ধীমান জানতে পারার আগেই এখান থেকে চলে যেতে”।

-” ধীমান বাবু এই সম্পর্কটার বিষয়ে জানতে পারলে ঠিক কি হতো বলে মনে হয় আপনার”!!

-“ওদের সাথে যা ঘটেছে সেটাই হতো”!

ইন্দ্রানী দেবীর উত্তরে ভ্রু কুচকালো উজান।

-“কিন্তু পুলিশ রিপোর্ট অনুযায়ী তো মৌমিতা দেবীর মৃত্যুটা সুইসাইড আর অমিত নিখোঁজ”!!

ব্যাঙ্গের হাসি ঠোঁটে মেখে ইন্দ্রানী দেবী জবাব দিলেন,

-“আপনার সত্যি মনে হয়,একজন এম.এল.এর এগেইনস্টে গিয়ে কোনো পুলিশ কমপ্লেন লিখবে বা তদন্ত করবে”!!

এতক্ষন চুপচাপ উজান আর ইন্দ্রানী দেবীর কথোপকথন শোনার পর মিলি হঠাৎই প্রশ্ন করল,

-“পরের ইলেকশনটা আপনি তো নিশ্চই রুলিং পার্টির হয়েই লড়বেন!!তাই না ম্যাডাম”!!

জোর চমকালেন ইন্দ্রানী দেবী।আমতা আমতা করে প্রতিবাদের ব্যর্থ চেষ্টা করলেন।

-“এসব কি বল.. ছেন!!আমি কোনদিনই এসব পার্টি পলিটিক্সের মধ্যে থাকিনি”!!

-“তাই!!তাহলে হয়ত আমরাই ভুল শুনেছি। বাদ দিন। আচ্ছা আপনার এই দেওরটি কেমন মানুষ একটু খোলসা করে বলবেন”!!

কথা না বাড়িয়ে প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে প্রশ্ন করল মিলি।

-“বিমান বড্ড আত্মভোলা মানুষ। সংসারের বেড়া জালে আটকে থাকা ওর বরাবরই নাপসন্দ।আমি ধীমানকে বলেছিলাম ওর বিয়েটা না দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমার কথা তখন ও কানেই তোলেনি।

বিয়ের পরেও বিমানের জীবন যাত্রায় কোনো পরিবর্তন আসেনি।কীর্তন দল, ঠাকুর দেবতা নিয়েই ও বেশিরভাগ সময় ব্যস্ত থাকত।এ নিয়ে বাড়িতে অশান্তি হলেই, ও করিমপুরের বাড়িতে গিয়ে থাকতে শুরু করতো। তারপর আবার সব শান্ত হয়ে গেলে বহরমপুরে ফিরে আসত।

এমনিতে ও খুবই ধীর স্থির মানুষ। সচরাচর যাকে কেউ রাগতে দেখেনা। কিন্তু ঠাকুর দেবতা নিয়ে কোনো রকম অনাচার দেখলেই ওর মাথায় রক্ত চড়ে যায়”!!

-“আপনি কি জানেন, ধীমান বাবুর গলব্লাডারে কোনো স্টোন‌‌‌ ছিলোই না।তাহির হোসেনের কথায় ডক্টর মল্লিক মিথ্যে রিপোর্ট বানিয়ে সেদিন আপনাদের কলকাতায় পাঠিয়ে ছিলেন”!!

-“তাই নাকি”!!

চমকালেন ইন্দ্রানী দেবী।তবে খুব বেশি চমকালেন বলে মনে হল না উজানের। মিলির দিকে একবার তাকাতে মিলি চোখের ইশারায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষ করে উঠতে বললো উজানকে।

-“বেশ! আপাতত এটুকুই জানার ছিল”!!

ইন্দ্রানী দেবীর ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসতে গিয়েও দরজার মুখ থেকে আবার ঈন্দ্রানী দেবীর সামনে ফিরে এলো মিলি।ব্যাগ থেকে একটা ছোট্ট বক্স বের করে ইন্দ্রানী দেবীর সামনে খুলে ধরল।

-“দেখুন তো ম্যাডাম,এই মুক্তটা চিনতে পারেন কিনা”!!

রক্তশূন্য মুখে মুক্তটার দিকে তাকিয়ে রইলেন ইন্দ্রানী দেবী।

।। ১৩ ।।

-“ঠাকুর ঘরটা সার্চ করে দেখেছেন”!!

মিলির প্রশ্নে লোকাল পুলিশ কনস্টেবল রহমত আমতা আমতা করে উত্তর দিলেন,

-“না মানে বামুন বাড়ির ঠাকুর ঘরে আমরা ঢুকি কেমন করে ম্যাডাম!! আপনারা দুদিন পর কলকাতায় ফিরে যাবেন, কিন্তু আমাদের তো এখানেই থাকতে হবে”!!

জ্বলন্ত দৃষ্টিতে রহমতের দিকে তাকিয়ে উজান মিলিকে সঙ্গে নিয়ে ঠাকুর ঘরের দিকে পা বাড়াতেই সাদা পাঞ্জাবিতে অবিকল ধীমান অধিকারীর মত একজন মানুষ ওদের পথ আটকে গর্জে উঠলেন,

-“আপনারা অনেক বাড়াবাড়ি করে ফেলেছেন, কিন্তু ঠাকুর ঘরের চৌকাঠ পেরনোর চেষ্টা যদি করতে যান সব কটাকে এখানেই জ্যান্ত পুঁতে ফেলবো। বিমান অধিকারী ঠাকুর দেবতা নিয়ে কোনো রকম অধর্ম বরদাস্ত করবে না।কোনো অজাত কুজাতের লোক যদি ঠাকুর ঘরে ঢোকার চেষ্টা করে তাহলে রক্ত গঙ্গা বইয়ে দেব বলে দিলাম”!!

বিমান অধিকারীর গর্জনকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে ওনার দিকে এগিয়ে গেল মিলি। ঠোঁটের কোনে বিদ্রূপের হাসি ঝুলিয়ে বললো,

-“চোরের মায়ের বড় গলা শুনেছিলাম।এখন তো দেখছি শ্রাদ্ধের চাল কলা খেয়ে অগ্রদানী বামুনেরও গলায় জোর বেড়ে গেছে”!!

বিমান অধিকারী আবার কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ওনাকে থামিয়ে দিয়ে কড়া গলায় উজান বলে ওঠে,

-“প্রথমত, আমরা যারা আপনার ঠাকুর ঘরে ঢুকছি তারা আপনার থেকে অনেক উঁচু জাতের বামুন মিস্টার অধিকারী। আমাদের সারনেমগুলো নোট করে রাখুন। গঙ্গোপাধ্যায় আর রায়।
দ্বিতীয়ত, আর একবারও যদি অন ডিউটি অফিসারকে হুমকি দেওয়ার চেষ্টা করেন তাহলে ফল ভালো হবে না”।

মিলিকে নিয়ে ঠাকুর ঘরে ঢুকে বিমান অধিকারীর মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিলো উজান।

#ক্রমশ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here