#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৪৭ #অন্তিম_পর্ব
_________________
ঘড়িতে তখন একটার কাঁটায় ছুঁই ছুঁই। পুরো একটা অন্ধকার রুমে মোমবাতির আলো সামনে রেখে হাতে ঘড়ি নিয়ে বসে আছে আব্রাহাম। ঘড়ির কাঁটার টিক টিক শব্দ গুনছে সে তার ধারণা অনুযায়ী আর কতক্ষণের মাঝেই অপূর্ব তার নাম্বার ট্রাক করে এখানে এসে যাবে। অবশ্য ট্রাক করে কি কখনই তো জেনে গেছে আব্রাহাম কোথায় আছে? আব্রাহামের থাকা বর্তমান বাড়িটা নির্জন কেউ নেই। বাড়িটার চারপাশে রয়েছে অজস্র গাছপালা। বাড়িটা কাঠের তৈরি, দরজার সামনে কাঠের বারান্দায় মাথার ওপর টিনের চাল। এই বাড়িটায় রুহি থাকতো। প্রায় বিকেলে আব্রাহাম এখানে আসতো, রুহির হাতের রং চা খেতে মেয়েটা জব্বর রং চা বানানো। আব্রাহামের ফেভারিট ছিল। একদিন বিকেলে কারেন্ট ছিল না রুহি নিজ হাতে হাতপাখা দিয়ে আব্রাহামকে বাতাস করছিল আর আব্রাহাম চা খাচ্ছিল। আজ যেন তা সবই স্মৃতি। রুহি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে ছিল তবে খুব সেনসেটিভ। আব্রাহাম আজও তাকে ভুলতে পারে নি। রুহি মারা যাওয়ার পর এখানে কেউ আসে না। বলতে গেলে আব্রাহাম কাউকে আসতে দেয় না। বিদেশ থাকলেও এটা ওপর লোক দিয়ে নজর রেখেছে সবসময়। দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসলো আব্রাহামের।’
এর মাঝেই দরজার বাহিরে কারো আগমনের শব্দ আসলো। আব্রাহাম হাসলো সে বুঝেছে অপূর্ব এসেছে। আব্রাহাম কিছু বলবে এরই মাঝে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো অপূর্ব কারন দরজা খোলাই ছিল। অপূর্বের চোখে অশেষ রাগ। সেই রাগ একটা মানুষকে খুন করার ক্ষমতা রাখে। অপূর্বকে দেখেই হাল্কা হেঁসে বললো আব্রাহাম,
‘ ফাইনালি তুই আসলি অপূর্ব সেই কখন থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করে বসে আছি জানিস।’
অপূর্ব তেড়ে গিয়ে আব্রাহামের কলার চেপে ধরলো। বললো,
‘ এমন করছিস কেন তোর শত্রুতা আমার সাথে তাহলে প্রিয়তাকে মাঝে আনছিস কেন?’
‘ শত্রুতাটা তোর সাথে থাকলেও আমার জ্বালা মিটতো প্রিয়তা মরলেই।’
আব্রাহামের কথায় রেগে গিয়ে আব্রাহামের মুখ বরাবর এক ঘুষি মারলো অপূর্ব। আব্রাহামের কিছু হলো না। উল্টো স্বাভাবিক গলায় বললো,
‘ প্রথমে ভেবেছিলাম তোকে মারলেই শান্তি মিলবে তাই তো প্রিয়তাকে দিয়ে তোকে মারার প্ল্যান করেছিলাম কিন্তু হলো না। পরে ভাবলাম তোকে মেরে কি লাভ তোকে যন্ত্রণা দেওয়াটাই আমার মূল লক্ষ্য তারপরই টার্গেটে তোকে ছেড়ে প্রিয়তাকে আনলাম। তাও দেখ কি লাক বেঁচে গেল। আমার ভালোবাসাকে তুই মারলি আর তোর ভালোবাসাকে আমি মারতে চাইলাম কিন্তু হলো না।’
‘ কতবার বলবো রুহিকে আমি মারি নি।’
বলেই স্ব-জোরে একটা ধাক্কা মারলো অপূর্ব আব্রাহামকে। আব্রাহাম গিয়ে পড়লো সোজা বুকশেলফের তাকের মাঝে। বইটই সব লন্ডভন্ড হয়ে পড়লো নিচে। এবার আব্রাহামও রেগে গেল শুরু হলো দুই বন্ধুর মধ্যে মারপিট।’
অপূর্ব বার বার বললো,
‘ এই মরণ খেলা বন্ধ কর আহিল আমি রুহিকে মারি নি।
আব্রাহাম অপূর্বের কলার চেপে বললো,
‘ তুই যখন মারিস নি তাহলে কে মারলো নাম বল?’
‘ আমি জানি না।’
‘ মিথ্যে বলছিস তুই! তুই সব জানিস। নাম বল অপূর্ব না হলে তোর বউ কিন্তু আজ মরবে তাকে আমার হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।’
অপূর্ব তাও বললো না। অনেক মারলো, আব্রাহামও মারলো শেষে গিয়ে অপূর্ব গুলি বের করে ধরলো আব্রাহামের মাথা বরাবর। এতে আব্রাহাম হাসলো বললো,
‘ মারবি তো মার আমায়।’
বলেই পকেট থেকে নিজের ফোনটা বের করে বললো আব্রাহাম,
‘ আমার লোকেরা বসে আছে হসপিটাল। শুধুমাত্র কিল হার লিখে মেসেজ সেন্ট করবো সঙ্গে সঙ্গে তোর বউ ওখানে শেষ। আমার একজন লোক তোর বউয়ের ওখানে নার্স সেজে গেছে বুঝতেই পারছিস। আমি তো মরবোই সঙ্গে তোর বউকেও মারবো জেনে রাখিস।’
অপূর্ব হতাশায় আবদ্ধ হলো। গুলিটা সরিয়ে ফেললো আব্রাহামের মাথার উপর থেকে। খুবই অসয়হায় গলায় বললো,
‘ এমনটা কেন করছিস? তুই তো আমার ভাই ছিলি।’
‘ আর ভাই।’
অপূর্বের চোখের কোণে পানি জমলো সে মটেও চায় না আব্রাহামের কিছু হোক সে যদি নামটা বলে আব্রাহাম ঠিক নিজেকে শেষ করে দিবে। অপূর্ব যতই আব্রাহামের মাথায় গুলি ধরুক সে মারতে পারে না আব্রাহামকে।’
অপূর্বের এই অসহায়ত্বের সুযোগটাই নিলো আব্রাহাম। হুট করেই অপূর্বের হাত থেকে বন্দুকটা নিয়ে অপূর্বের মাথায় ঠ্যাকালো। বললো,
‘ এবার তুইও মরবি অপূর্ব। ভালোই হলো হসপিটালে তোর বউ আর এখানে তুই।’
অপূর্ব আব্রাহামের দিকে তাকালো। বললো,
‘ মার আমায় তাও প্রিয়তাকে কিছু করিস না।’
আব্রাহাম দমলো না। বললো,
‘ মারবো তোদের দুটোকেই অনেক পুড়িয়েছিস। আমার ভালোবাসাকে মেরেছিস। আমার স্বপ্ন ভেঙেছিস, প্রিয়জন হারানোর ভয়ংকর যন্ত্রণা দিয়েছিস তোদের ছেড়ে দিবো নাকি। তোর গোটা পরিবারকে আমি মারবো, তোর মা, তোর বাপ, তোর ভাই, তোর বউ, আর সবশেষে আকিব।’ তোর ফুল ফ্যামিলি ধ্বংস করে তারপর আমার শান্তি হবে। ওহ তোকে তো একটা কথা বলতে ভুলেই গেছি তোর মা তো আজ তোদের বাড়িতে একা আছে, বিয়ে করতে এসেছিস মাকে একা রেখে একবারও ভাবলি না কিছু হয়ে যেতে পারে।’
অপূর্ব আর নিজেকে সামলাতে পারলো না হুট করেই টেবিলের উপর থাকা বিয়ারের বোতলটা ভেঙে তাক করলো আব্রাহামের গলা বরাবর আব্রাহামের হাত থেকে বন্দুক পড়ে গেল। গলা দিয়ে খানিকটা রক্ত জোড়লো। অপূর্ব আব্রাহামের গলায় রক্ত থেকে যেন আরো অস্থির হয়ে পড়লো হাতের ভাঙা কাঁচের বোতলটা ছুঁড়ে মারলো দূরে তারপর অসহায়ত্বের সঙ্গে বললো,
‘ আমি তোকে আঘাত করতে চাই না আহিল? কেন বুঝচ্ছিস না তুই?’
অপূর্বের কথা শুনে হাসতে হাসতে জবাব দেয় আব্রাহাম,
‘ অথচ জীবনের সবচেয়ে বড় আঘাতটাই তুই দিলি। এতটা বেইমান কি করে হলি?’
আব্রাহামের কথায় ছলছল চোখে আব্রাহামের দিকে তাকায় অপূর্ব। স্তব্ধ হয়ে বসে পড়ে নিচে আর সওয়া যাচ্ছে না। অপূর্ব নিশ্চুপ বনে বললো,
‘ তুই শুনতে চাস তো রুহিকে কে মেরেছে? তাহলে শোন। রুহিকে তোর বাবা মেরেছে।’
মুহূর্তের মধ্যে পুরো প্রকৃতি হয়ে গেল স্তব্ধ, আব্রাহামের মুখ হয়ে গেল নিশ্চুপ নির্বিকার, এতক্ষণের উত্তেজিত ভাবটা কোথায় যেন হারিয়ে গেল। আব্রাহাম অপূর্বের সোজাসুজি বসে বললো,
‘ কে মেরেছে?’
অপূর্ব তাকালো আব্রাহামের দিকে আবারও বললো,
‘ তোর বাবা মোতালেব চৌধুরী।’
‘ তুই মিথ্যে বলছিস নিজেকে বাঁচাতে আমার বাবাকে ফাঁসাচ্ছিস।’
‘ আমি মিথ্যে বলছি না, তোর বাবা কখনোই চায় নি তোর সাথে রুহির সম্পর্ক হোক। কারন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। তার সাথে তোর বাবা এটাও চাইতেন না তুই আমার সাথে মিশিস।
আব্রাহামের বাবা সব সময় চাইতেন তার ছেলে সবার উপরে থাকুক, সাথে একজন রাজনীতিবিদ হোক। কিন্তু আব্রাহাম সেটা চাইতো না কারন রুহি এটা পছন্দ করতো না প্রিয়তার মতো। আর আব্রাহামেরও এটা ভালো লাগতো না অন্যদিকে ভার্সিটির স্টুডেন্ট হয়েও রাজনীতির দলে নাম লিখিয়ে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল অপূর্ব। সামনে অপূর্বকে মোতালেব চৌধুরী ভালোবাসার নাটক করলেও ভিতরে ছিল বিষাদ। সে বুঝেছিল যতদিন অপূর্ব আর রুহি তার ছেলেট মাঝে থাকবে ততদিন কিছু হবে না। আব্রাহামের বাবা ভেবেছিল রুহি মারা গেলে আর অপূর্বের সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট হলে তার ছেলে জেদের বসে রাজনীতিতে ঢুকবে। কিন্তু হলো না। রুহিকে উনি মেরেছেন সাথে জোরজবরদস্তি করে চিঠি লিখিয়ে নিয়েছিলেন তারপর বিষয়টাকে এমনভাবে সাজানো হয়েছিল যে খুনটাকে সবার আত্মহত্যা বলে মনে করলো। আর আত্মহত্যার কারন অপূর্বকে দেখানো হলো।’
অপূর্ব আব্রাহামকে পুরো কথা বলে, হঠাৎই একটা চিঠি বের করলো এই চিঠিটা অপূর্ব পেয়েছিল রুহির বাড়ির পিছনে পলিথিনে প্যাচানো। যেখানে লেখা ছিল,
‘ আমার খুনের জন্য অপূর্ব ভাই নয় আহিলের বাবা দাই। কারন উনি আমাদের সম্পর্ক মেনে নেয় নি।’
কথা গুলো খুব দ্রুত লিখে কোনো রকমের পলিথিনে ভরে জানালার বাহিরে ফেলেছিল রুহি। কাগজে রক্তের দাগ ছিল এখনও আছে শুকিয়ে লাল হয়ে আছে। অপূর্ব এটা যত্নে রেখেছিল ভেবেছিল দেখাবে আব্রাহামকে কিন্তু পরে আর দেখায় নি। কারন অপূর্ব জানে আব্রাহাম তার বাবাকে কতটা ভালোবাসে। আব্রাহামের মা নেই, ছোট বেলা থেকেই পাগলের মতো বাবাকে ভালোবাসতো সে। বাবার কিছু হলেই তার চোখ বেয়ে পানি ঝড়তো নিজেকে এতিম এতিম লাগতো। যেটা অপূর্ব দেখেছে। অপূর্ব চায়নি আহিল আর ওর বাবার মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট হোক। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না, অপূর্ব বুঝতে পারে নি আব্রাহাম এমন রূপ নিয়ে ফিরে আসবে।’
নিশ্চুপ পরিবেশ, স্তব্ধ চারপাশ, কি শুনলো, কি হলো, রুহির চিঠি সব যেন এক মুহূর্তের মধ্যে ঝড় উঠিয়ে দিল আব্রাহামের বুকে। আব্রাহাম এবার বুঝলো অপূর্ব কেন তাকে সত্যিটা বলতে চায় নি।’
রক্ত মাখা শরীর নিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো আব্রাহাম। তার পুরো জীবন যেন এবার পুরোপুরি থমকে গেল। শেষে কিনা সে যাকে জীবনে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসলো সেই তার চরম ক্ষতি করলো। এবার কি করে আব্রাহাম তার বাবাকে খুন করবে?’ আব্রাহাম দরজার পর্যন্ত গিয়ে একটুখানি ঘুরে তাকিয়ে শুধু বলেছে,
‘ সরি ভাই।’
উত্তরে অপূর্ব শুধু তাকিয়েছে আব্রাহামের দিকে। ছেলেটার চোখের দিকে আর তাকানো যাচ্ছে না। বোঝাই যাচ্ছে ভিতর থেকে পুরো দমে ভেঙে পড়েছে।’
আব্রাহাম চলে গেল। আর অপূর্ব ঠায় বসে রইলো। এবার কি হবে? সে বোধহয় আন্দাজ করতে পারছে।’
____
দু’সপ্তাহ পর!’
বারান্দায় ১৩ দিন আগের একটা খবরের কাগজে আজ আবার চোখ বুলাচ্ছেন অপূর্বের বাবা। যেখানে স্পষ্টভাবে দেয়া আছে বিশেষজ্ঞ রাজনীতিবিদ মোতালেব চৌধুরীর ছেলে আহিল মাহামুদ। নিজ বাড়িতে নিজ বাবার কক্ষে নিজেই নিজের মাথায় সুট করে মৃত্যুবরন করেছে। কেন করছে? কারন কি এসব এখনও জানা যায় নি। ছেলের শোকে বাবা পাগল প্রায়। অপূর্বের বাবা দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন। তার ছেলেটা এটারই ভয় পেয়েছিল। আর শেষ পর্যন্ত এটাই হলো। এই জন্যই বলে,
❝সত্য কখনো চাপা থাকে না, সেটা একদিন না একদিন বেরোবেই।❞
অপূর্বের বাবা চায়ের কাপে চুমুক দিলেন। আহিলের জন্য বড্ড খারাপ লাগছে। আবার নিজের ছেলেটার জন্য ভালো লাগছে ফাইনালি তার ছেলে রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছে। এই জন্যই বলে,
❝ছেলেরা বাপ-মায়ের থেকে বউয়ের কথায় নাচে বেশি।❞
না জানি কোন ধানক্ষেতের মধ্যে বউমাকে নিয়ে ঘুরতে গেছে। তার ছেলে তো বিশ্বাস নেই সুন্দর সুন্দর জায়গা থাকতে ধানক্ষেতেই ঘুরতে যাবে। অপূর্বের বাবা পেপার আর চা রেখে উঠে দাঁড়ালেন। তারপর ভিতরে যেতে যেতে ডাকলেন,
‘ অয়ন ওই অয়ন,
উত্তরে নিজের রুম থেকেই সাড়া দিল অয়ন। বললো,
‘ জ্বী বাবা।’
অয়নের কথা শুনে অয়নের বাবাও বলতে বলতে ছুটলেন,
‘ একটার তো বিয়ে দিয়েছি আকিবেরও ছ’দিন পর বিয়ে তুই কবে করছিস। শোন বিয়ের পর যদি বউ পাগলা হোস তাহলে কিন্তু ভাত দিবো না,
বাবার কথা শুনে নিজের রুমে মিট মিট হাসলো অয়ন।’
কারন তার বাবা কি করে জানবে অয়ন তো এখনই বউ পাগল হয়ে বসে আছে। কে জানে সামনে হয়তো ভাতের বদলে বিরিয়ানিই খেতে হবে।’
___
পরন্ত বিকেলবেলা। চারিধারে রোদ্দুরে ভরপুর। অপূর্ব ঘুরতে এসেছে, সারি সারি ধান ক্ষেত বয়ে চলে দূরে। অপূর্ব সত্যি সত্যিই প্রিয়তাকে নিয়ে ধান ক্ষেতে এসেছে। আজ প্রিয়তা কালো রঙের শাড়ি পড়েছে চুল দিয়েছে খুলে, হাতে কালো চুড়িতে বেশ মায়াবী লাগছে তাকে, আর অপূর্ব সেও কালো শার্ট কালো প্যান্ট পড়েছে চুলগুলো এলেমেলো তবে সুন্দর লাগছে বাতাসে খুব দুলছে। আর প্রিয়তা মুগ্ধ নয়নে দেখছে।’
উঁচু একটা মাঠ, সবুজ সবুজ ঘাস। মাথা ওপর বিশাল কাঠগোলাপ গাছ, সেই গাছ বেয়ে পাপড়ি ঝড়ছে, মুগ্ধনীয় বাতাস আকাশটা গাড়ো নীল কি সুন্দর প্রকৃতি।’
কাঠগোলাপের নিচের পাশাপাশি সবুজ ঘাসের ওপর শুয়ে আছে অপূর্ব আর প্রিয়তা। প্রিয়তা এখন মোটামুটি সুস্থ। অপূর্বের আহিলের জন্য আড়ালে অনেক কেঁদেছে কিন্তু কাউকে বুঝতে দেয় না। এরই মাঝে অপূর্বের ফোন বাজলো অপূর্ব ফোনটা দেখলো মুখার্জি মশাই ফোন করেছে। অপূর্ব বিরক্ত নিয়ে ফোন তুলে বললো,
‘ আবার কি হলো ফোন দিয়েছেন কেন?’
‘ তুমি জানো না আমি তোমায় কেন ফোন দেই? আমার দলে নাম লিখ অপূর্ব।’
‘ আমি আর রাজনীতিতে নেই মুখার্জি মশাই বউ নিয়ে সুখে আছি। তাই আমায় আর ফোন করে ডিসটার্ব করবেন না। নয়তো আমার শশুরের খুনের মামলায় আপনায় জেলে পাঠাবো। এতটুকু বলেই ফোন কাটলো অপূর্ব প্রিয়তা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলো। অপূর্ব নিজেকে শান্ত করে বললো,
‘ তোমার ভালো লাগছে এখানে প্রিয়তা?’
উত্তরে প্রিয়তাও বললো,
‘ হুম খুব।’
‘ তোমার কি মনে আছে আমাদের দেখা হওয়া সেই রাতটার কথা। সেদিন খুব বৃষ্টি ছিল তাই না।’
‘ হুম ভীষণ বৃষ্টি ছিল।’
‘ তুমি হয়তো জানো না তোমার আমার প্রেমের প্রথম আলাপন ছিল বৃষ্টি, তোমাকে ঘিরে আমার ব্যাথার সময় ছিল বৃষ্টি, তোমার নিয়ে গড়া আমার অনুভূতির মুহূর্তে ছিল বৃষ্টি, তোমাকে ভুলতে না পারার আমার যন্ত্রণার দিনগুলোতে ছিল বৃষ্টি, মাঝরাতে তোমার ঘরে ঢোকার কালে ছিল বৃষ্টি সবক্ষেত্রেই আমাদের মাঝে ছিল বৃষ্টি তাই আমি চাই ‘আজও বৃষ্টি নামুক’
তোমায় আমায় ভিজিয়ে দিয়ে অনেকক্ষন পর থামুক।’
‘ আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে অপূর্ব? এখন বৃষ্টিতে ভেজার সময়।’
‘ বৃষ্টির আবার সময় অসময় আছে মেয়ে এক সময় আসলেই হয়।’
‘ না হয় না।’
‘ আমাকে রাগিও না তো ছেড়ে ছুড়ে চলে যাবো কিন্তু। এখন কুইকলি বুকে আসো তো অনেকক্ষণ হলো তোমায় বুকে নেই না। দ্রুত আসো তুমি বুকে না আসলে শ্বাসটা বোধহয় এখনই ছেড়ে ছুড়ে চলে যাবে।’
প্রিয়তা শুনলো কুইকলি অপূর্বের বুকে মাথা রাখলো। বললো,
‘ বুবু কবে আমাদের মাঝে ফিরবে অপূর্ব?’
‘ খুব শীঘ্রই। মনে করো তার বেবি হওয়ার আগে।’
‘ আর মুখার্জি মশাই?’
উত্তরে হাসে অপূর্ব। কারন এতক্ষণে তানভীর নিশ্চয়ই এরেস্ট করেছে তার শশুর খুনি মুখার্জি মশাইকে। অপূর্বকে হাসতে দেখে বললো প্রিয়তা,
‘ কি হলো কথা বলছেন না কেন?’
‘ হয়ে গেছে।’
প্রিয়তা খুশি হলো অপূর্বের গালে চুমু একে বললো,
‘ ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভীষণ ভালোবাসি।’
অপূর্ব হাসে তারপর গম্ভীর আওয়াজে বললো,
‘ ঠিক আছে। শোনো তোমায় ২ মিনিট সময় দিলাম যত পারো ভালোবেসো নেও এরপর আর আমি থাকবো না।’
‘ থাকবেন না মানে কোথায় যাবেন?’
‘ বারে তোমার জন্য রাজনীতি ছেড়ে দিলাম এবার অন্যকিছু করে খেতে হবে তো। বাবার হোটেলে আর কতবছর খাবো!’
‘ কেন বাবা তো বললেন তার ব্যবসা ধরতে।’
‘ না বাবার ব্যবসায় আমায় পোষাবে না। ভাবছি কি জানো ভার্সিটি বা কলেজের সামনে একটা ঝালমুড়ির দোকান দিবো। ছেলেরা তোমায় দেখে আর মেয়েরা আমার দেখে ঝালমুড়ি কিনতে আসবে। বেশ লাভ হবে। তারপর বছর শেষে যা ইনকাম হবে তা দিয়ে তুমি আমি থাইল্যান্ড, জাপান, সুইজারল্যান্ড, চায়নাসহ বিভিন্ন দেশে থেকে ঘুরে বেড়াবো। বেশ হবে বলো। আর বাবার ডিলটাও তো পুরো করতে হবে তাই না।’
অপূর্বের কথা শুনে প্রিয়তা চোখ বড় বড় করে বললো,
‘ আপনার কি মাথা গেছে অপূর্ব? কিসব বাজে বকছেন।’
অপূর্ব হাসে প্রাণ খোলা মিষ্টি হাসি দেয়। তারপর প্রিয়তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে আকাশ পানে তাকিয়ে শীতল কণ্ঠে বলে,
❝আমি বিশাল এক সমুদ্রের মাঝ থেকে
কুড়িয়ে এনেছি
এক আশ্চর্যকর ঝিনুক।
তুমি হয়তো বুঝতে পারছো না মেয়ে,
আমি মন থেকে চাইছি প্রকৃতি জুড়ে,
আজও বৃষ্টি নামুক❞
আমাদের ভিজিয়ে দিক, নাড়িয়ে দিক হৃদয়, শীতল করুক শরীর। সূচনাতে তো সে ছিলই উপসংহারেও তার ঠাঁই মিলুক।’
অপূর্বের কথা শেষ হতে না হতেই। নীল আকাশটা হুট করে মেঘে ঢাকলো, প্রকৃতিতে নেমে আসলো অন্ধকার, গাছের পাতা নড়লো, ফুলের পাপড়িরা আরো জোরে নিচে গড়াগড়ি দিল। প্রিয়তা প্রকৃতির রূপ দেখে বললো,
‘ আজ কি তবে সত্যি বৃষ্টি নামবে অপূর্ব?’
উত্তরে অপূর্ব শুধু বললো,
‘ হয়তো নামবে হয়তো না!’
অন্যদিকে,
আকিব বউয়ের ভয়ে আজ দু’দিন যাবৎ বাসা থেকে বের হচ্ছে না ছ’দিন পর কি হবে কে জানে?’
#সমাপ্ত….🌹🌹
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। ফাইনালি শেষ হলো তোমাদের আজও বৃষ্টি নামুক উপন্যাস। অনেকটা সময় নিয়ে ছিল প্রিয়তা আর অপূর্ব। তোমাদের মন কতটুকু জয় করতে পেরেছি জানি না। কিন্তু চেষ্টা করেছি ভিন্নভাবে কিছু লিখতে। আশা করি তোমাদের ভালো লেগেছে উপন্যাসটা। কার কেমন লেগেছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে। আবার ফিরবো কোনো নতুন গল্প বা উপন্যাস নিয়ে ততদিন সবাই ভালো থাকো সুস্থ থাকো আল্লাহ হাফেজ। এই উপন্যাসে অনেক অপেক্ষা করিয়েছি তার জন্য আমি খুবই দুঃখিত।]
#TanjiL_Mim♥️