#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৪৬
_________________
হসপিটালের অপারেশন থিয়েটারের বাহিরের একটা চেয়ারে বসে আছে অপূর্ব। বুকের বা’পাশটা খাঁ খাঁ করছে। প্রিয়তা তাকে ছেড়ে চলে যাবে না তো। এমনটা হলে অপূর্ব যে পাগল হয়ে যাবে। অপূর্ব এমনিতে সব মুহূর্তে নিজেকে স্থির রাখতে পারলেও আজ মটেও স্থির রাখতে পারছে না। তার পা কাঁপছে, বুকটা কেমন খালি খালি লাগছে অস্থিরতায় নিজেকে দমিয়ে রাখা দায় হয়ে পড়ছে অপূর্বের। অপূর্ব চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিশ্বাস ফেললো সাথে নিজেকে বোঝালো প্রিয়তার কিছু হবে না। নিয়তি তার সাথে এভাবে খেলতে পারে না। অপূর্ব তার মোবাইলে তানভীরের মেসেজটা দেখলো। যেখানে তানভীর লিখেছিল,
‘ আব্রাহাম জেল থেকে পালিয়েছে অপূর্ব। সাবধান!’
মেসেজটা পড়ে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে অপূর্বের মনে হচ্ছে তার সত্যি প্রিয়তার লাইফে আসা ঠিক হয় নি সে ভুল করেছে। অপূর্ব যখন এসব ভাবতে ব্যস্ত ঠিক তখনই তার কাঁধে হাত রাখলো অপূর্বের বাবা। বললেন,
‘ এভাবে ভেঙে পড়ো না অপূর্ব, আমরা সবাই আছি তো।’
বাবার একটুখানি কথায় অপূর্ব যেন আরো অবুঝ হয়ে পড়লো। হুট করেই বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘ বাবা ওর কিছু হবে না তো, ওর কিছু হয়ে গেলে আমি যে পাগল হয়ে যাবো।’
অপূর্বের কথায় এক গম্ভীর আওয়াজে বললো অপূর্বের বাবা,
‘ ওভাবে বলো না তো বউমার কিছু হবে না। আর নিজেকে সামলাও এমনভাবে চললে আমি আমার নাতি-নাতনীদের মুখ দেখবো কি করে?’ নিজেকে শক্ত রাখতে শিখ আমাকে দেখেছো আজও কত শক্তিশালী আমি। তোমরা চাইলে তোমাদের আরো পাঁচ দশ ভাইবোন গিফট দিতে পারি এখনও।’
অপূর্ব ভ্রু-কুচকে বাবার দিকে তাকালো। বললো,
‘ তুমি কি আমার সাথে মশকরা করছো?’
‘ ইডিয়েটের মতো কথা বলো না তো, এটা একটা মশকরা করার মতো সময়।’
অপূর্ব তার বাবার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রইলো। যা দেখে একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো অপূর্বের বাবা,
‘ ওভাবে তাকাবা না তো, আমি তোমায় মটেও ভয় পাচ্ছি না।’
অপূর্ব ভড়কে গেল বাবার এহেম কথায়। বললো,
‘ আমি ভয় পাওয়ার মতো তাকাই নি বাবা।’
‘ হবে হয়তো তবে তুমি কি জানো তোমার চোখে কেমন লাল লাল মারবেল বসানো তাকালেই মনে হয় রেগে আছো।’
‘ এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে বাবা।’
‘ অদ্ভুত তো এখানে বাড়াবাড়ির কি হলো?’
‘ আমার বউটা অপারেশন থিয়েটারের আছে আর তুমি,
অপূর্বের পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই অপূর্বের বাবা বলে উঠলেন,
‘ তো বউ কি তোমার একার আছে আমার নেই। তুমি জানো তোমার বউয়ের চেয়ে আমার বউ কত সুন্দর? আর আমিও যথেষ্ট সুন্দর।’
‘ কোথায় লেখা আছে তুমি সুন্দর?’
‘ তোমার চেহারায়।’
‘ মানে?’
‘ মানে আবার কি তুমি দেখতে একদম আমার মতো হয়েছো কতশত মেয়ে তোমার জন্য পাগল। মানেটা বুঝলে আমি সুন্দর তাই তুমি সুন্দর আর তুমি সুন্দর বলে মেয়েরা তোমার জন্য এত পাগল।’
বাবার অদ্ভুত লজিকের কথা শুনে অপূর্ব খানিকটা তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললো,
‘ আমার মাথা কিন্তু এবার সত্যি সত্যি গরম হচ্ছে বাবা।’
‘ তো মাথা কি তোমার একার আছে আমার নেই। আমি সবসময় আমার মাথা ফ্রিজের মতো রাখি বলে ভেবো না আমার মাথায় গ্যাসের চুলার মতো আগুন নেই। মনে রাখবে আমার মাথায় আগুন না থাকলে তোমার মতো এত আগুনওয়ালা ছেলের পয়দা দিতাম না।’
অপূর্ব পারুক চুপ হয়ে যাক। এই প্রথম যেন বাবার কথায় পুরোপুরি আটকে যাচ্ছে অপূর্ব। অপূর্ব বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ বউটাকে একবার সুস্থ হতে দেও তারপর তোমায় দেখছি।’
‘ দেখা দেখির কি আছে আমায় আবার বিয়ে দিবে নাকি।’
এবার সহ্যের সীমা অতিক্রম হচ্ছে অপূর্বের। অপূর্বের বাবা ছেলের কাজ দেখে ভিতরে ভিতরে হাল্কা শান্তি অনুভব করছে। অপূর্বের বাবা ইচ্ছে করেই এমনটা করছে কারন তার ছেলেটা যে অস্থিরতায় পুরো শেষ হয়ে যাচ্ছিল। অপূর্ব যথেষ্ট শক্তপক্ত ছেলে সহজে নিজেকে উত্তেজিত করে না কিন্তু আজ। অপূর্বের বাবা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,
‘ শোনো অপূর্ব, আমার কিন্তু এক বছরের মাথাতেই নাতি-নাতনির মুখ দেখতে চাই।’
বাবার কথা শুনে খানিকটা মিনতির স্বরেই বললো অপূর্ব,
‘ ওরে আমার বাপ এবার তুমি চুপ করো। বউডা আমার আগে ভালো হোক তারপর তোমার মুখ দেখাদেখি দেখছি।’
ছেলের কথায় প্রচন্ড বেগে হাসি পাচ্ছে অপূর্বের বাবার কিন্তু তিনি হাসছেন না। নিজেকে শান্ত রেখে বললো,
‘ ঠিক আছে। এবার কিছু সিরিয়াস কথায় আসি। গুলিটা কে করেছে? কেন করেছে? কোনো বিরোধী দলের লোকেরা করেছে?’
উত্তরে গম্ভীর কণ্ঠে বললো অপূর্ব,
‘ আহিল করেছে।’
অপূর্বের বাবা যেন চরম বেগে অবাক হয়ে গেল অপূর্বের কথায়। অবাক হয়েই বললেন,
‘ আহিল কোন আহিল ওই যে বছর খানেক আগে রুহি,
মাথা নাড়ায় অপূর্ব। প্রিয়তার বাবা যেন পুরোপুরি চমকে গেল। নিশ্চুপ বনে ছেলের পাশে বসলেন। বললেন,
‘ ও চায় কি?’
‘ সত্যিটা জানতে চায় বাবা।’
‘ তাহলে বলছো না কেন?’
‘ তুমি কি জানো না আমি কেন বলছি না।’
অপূর্বের বাবা চুপ হয়ে যায় তার মুখ থেকে আর কথা আসে না। বাবাকে চুপ হতে দেখে এবার অপূর্ব বলে,
‘ কি হাওয়া ফুস হয়ে গেল? এই হাওয়া নিয়ে তুমি আমাদের পাঁচ দশ ভাইবোন গিফট করো। ছিঃ
অপূর্বের বাবা কিছু বলতে নিবেন। এরই মাঝে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হলো ডাক্তার। সবাই দৌড়ে গেল ডাক্তারের কাছে আকিব ওরা দাঁড়িয়ে ছিল অপূর্ব আর অপূর্বের বাবার থেকে খানিকটা দূরে তারাও ছুটে আসলো কিন্তু অপূর্ব উঠলো না। ঠায় বসে রইলো। আরোহী উত্তেজিত কন্ঠে বললো,
‘ ডাক্তার সাহেব পেশেন্ট কেমন আছেন?’
ডাক্তার কিছুক্ষন চুপ রইলো যা দেখে অপূর্ব আর চুপ থাকতে না পেরে দৌড়ে এগিয়ে আসলো। বললো,
‘ কি হলো আপনি কথা বলছেন না কেন?’ আমার বউ ঠিক আছে তো ডাক্তার?’
এবার ডক্টর মুখ খুললেন। বললেন,
‘ হুম তিনি ঠিক আছেন আমরা তার বুকে লাগা গুলিটা বের করে ফেলেছি। তবে ওনাকে খুব সাবধানে রাখতে হবে, যত্ন নিতে হবে অনেক। তাহলেই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে।’
সবাই খুশি হলো। অপূর্বও খুশি হলো। যাক তার প্রেম বালিকার কিছু হয় নি। সে ঠিক আছে। অপূর্ব তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘ আমার বউটার তাহলে কিছু হয় নি বাবা। তোমার বলা ডিলটা পাক্কা। আর হ্যা ‘থ্যাংক ইউ’। ফাইনালি তুমি তোমার ছেলেকে কথার জালে হারিয়েই দিলে।’
অপূর্বের বাবা হাসলেন। অপূর্বের পিঠে হাত বুলালো মুহুর্তেই। সবাই হাসলো। আকিব, আরোহী, অয়ন, প্রেমা, প্রিয়তার চাচা, সহ আরো আত্মীয়দের মধ্যে প্রায় সবাই এসেছে। সবার মুখেই হাসির রেখা।’
অপূর্ব আবার গিয়ে বসলো সামনের চেয়ারটায়। এর কিছুক্ষনের মাঝেই অপূর্বের ফোনটা বাজলো। আননোন নাম্বার। তবে নাম্বারটা যে কার তা আন্দাজ করতে পারছে অপূর্ব। অপূর্ব ফোন তুললো কিছু বলার আগেই আব্রাহাম বললো,
‘ বুঝলি অপূর্ব তোর বউয়ের ভাগ্যটাও তোর মতো ভালো যে চ্যালাকে দিয়ে গুলিটা করিয়ে ছিলাম সেই চ্যালায়ও টার্গেট মিস করলো। বেঁচে গেল না তোর বউ তবে বেশিক্ষণ বাঁচবে না ফর এক্সামপেল, ধর তোর বউয়ের অক্সিজেন মাস্কটা তোর আড়ালে কেউ খুলে নিল তারপর তোর বউ শ্বাস রোধ করে মারা গেল, আবার ধর রাতের আধারে কেউ চাকু দিয়ে ক্ষত বিক্ষত করলো তোর বউয়ের পেট, বুঝতেই পারছিস বাবার মতো মেয়েও যাবে আবার এমনও হতে পারে স্যালাইনের সাথে বিষের ইনজেকশন পুস করে মেরে ফেলা হলো। অফার তো কতগুলো দিলাম এবার তোর কোনটা ভালো লাগবে বল।’
আব্রাহামের কথায় এবার অপূর্বের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। চোখ মুখ রক্ত রাঙা রঙে রাঙিত হলো। ছেলের এই রূপটা নজরে আসলো অপূর্বের বাবার। অপূর্ব তার বাবাকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিল যা দেখে অপূর্বের বাবা বললো,
‘ কোথায় যাচ্ছিস?’
‘ কাটা উপড়াতে। শোনো আমি না আসা পর্যন্ত আমার বউটাকে নজরে রাখবে বাবা ওর কেভিনে যেন কেউ না ঢোকে সেটাও খেয়াল রাখবে।’
বলেই হন হন করে চলে গেল অপূর্ব আকিব সঙ্গে যেতে চাইলেও অপূর্ব নিল না।’
অপূর্বের বাবা চেয়ে রইলো ছেলের যাওয়ার পানে সে বুঝেছে ভয়ংকর এক ঝড়ের মুখে পড়তে চলেছে অপূর্ব। তবে শেষের জয়টা অপূর্বেরই হবে দোয়া দিয়ে দিল অপূর্বের বাবা।’
____
সন্ধ্যার আঁধার ঘনিয়ে চারিপাশ অন্ধকারে টুইটুম্বর। শুঁকনো পাতার ভিড়ে এক কবর স্থানের সামনে বসে আছে আব্রাহাম। কবরটা রুহির আব্রাহাম সেই বিকেল থেকেই এখানে বসে আছে তার মনে কোনো ভয় নেই আব্রাহাম জানে অপূর্ব আসছে তার কাছে। আসুক এবার অপূর্ব, আব্রাহাম জেনেই ছাড়বে খুনটা কে করেছে? খুনটা যেই করে থাকুক না কেন তাকে নিজ হাতে শেষ করেই দম ছাড়বে আব্রাহাম। তারপর না হয় সেও চলে যাবে তার রুহির কাছে। আব্রাহাম রুহির কবরে হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
‘ আজ কতগুলো দিন চলে গেল তোমায় দেখি না আমায় ছেড়ে কেন চলে গেলে রুহি?’
জবাব কি আর আসলো? আসলো না তো। আব্রাহাম অনেকক্ষণ ওভাবে থেকে হেঁটে যেতে লাগলো একটা বাড়ির উদ্দেশ্যে বাড়িটা নিজের নয়। বাংলাদেশ আসার পর সে সেখানেই থাকে। অপূর্বের জন্য আব্রাহাম সেই বাড়িতেই অপেক্ষায় করবে এবং হেঁটে হেঁটেই সেখানে যাবে। কারন কোনো তাড়া নেই অপূর্বের আসার যে এখনো ঢের দেরি।’
#চলবে….
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে। নেও মারি নি তোমাদের প্রিয়তাকে বাবারে বাবা কাল সবার হুমকিতে আমি শেষ। ভেবেছিলাম আজ গল্পের এন্ডিং টা দিবো কিন্তু হয়ে উঠলো না। কাল ইনশাআল্লাহ অন্তিম পর্ব সাথে শেষ রহস্যের সমাধান করবো। সবাই প্রস্তুত থেকো]
#TanjiL_Mim♥️