#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৪২
_________________
রাত তখন গভীর থেকে আরো গভীর হলো। বৃষ্টির তেজ বাড়লো আরো। অপূর্ব ভিজচ্ছে, বৃষ্টির পানিতে তার পুরো শরীর মাখোঁ মাখোঁ অবস্থা। অতিরিক্ত বৃষ্টিতে ভেজার ফলে তার চোখ দুটো লাল হয়ে আসছে। খানিকটা শীত শীতও করছে বোধহয় কিন্তু তাও অপূর্ব উঠছে না। চুপচাপ বৃষ্টিতে ভিজছে আর গভীর ভাবে কিছু ভাবছে। ভাবনাগুলো যেন অনেক জটিল তবে এই জটিল ভাবনাগুলোর উত্তর অপূর্বের জানা তাও সে ভাবছে।’
‘ গভীর রাতে এভাবে বৃষ্টিতে ভিজচ্ছিস কেন ভাই? জ্বর আসবে তো।’
অয়নের কন্ঠ শোনা গেল। ছাতা হাতে মাত্রই ভাইয়ের জন্য ছাঁদে এসেছে সে। অয়নের ডাকটা বোধহয় অপূর্বের কানে গেল না। কারন তার কোনো হেলদোল দেখা যাচ্ছে না এমনকি ঘুরেও তাকালো না। অয়ন এবার আর একটু এগিয়ে গেল সামনে অপূর্বের কাঁধে হাত দিয়ে বললো,
‘ ভাই,
এবার অপূর্ব ঘুরে তাকালো। চোখ দুটো চরম লাল বর্ন ধারন করেছে তার। অপূর্বের চাহনি দেখে খানিকটা ঘাবড়ালো অয়ন। বললো,
‘ কি হয়েছে ভাই?’
অপূর্ব কয়েকবার পলক ফেললো। দৃঢ়তার স্বরে বললো,
‘ কি হবে কিছুই হয় নি। তুই এখানে কি করছিস ঘুমাস নি।’
‘ ঘুমিয়ে ছিলাম তো হঠাৎ বৃষ্টির শব্দে ঘুম ভাঙলো। খিদেও পেয়েছিল তখনই হেঁটে যাওয়ার সময় দেখলাম তুই রুমে নেই। কখন থেকে ভিজচ্ছিস এভাবে চোখ লাল হয়ে গেছে তো।’
অপূর্ব জবাব দিলো না। যা দেখে অয়ন আবার বলে,
‘ কি হলো ভাই জবাব দিচ্ছিস না কেন?’
‘ এমনি ভালো লাগছে না তুই যা।’
‘ যাবো মানে তুই যাবি না।’
‘ হুম যাবো আগে তুই যা,
‘ আমার সাথেই চল ভাই আর ভিজলে ঠান্ডা লেগে যাবে তো,
অপূর্ব তাও উঠলো না চুপচাপ বসে রইলো অনেকক্ষন। অয়নও গেল না সে পণ করেই নিয়েছে সে গেলে ভাইকে নিয়েই যাবে। অয়নের কান্ডে অপূর্বের হাঁক পড়লো। বললো,
‘ তুই এখনো যাচ্ছিস না কেন?’
‘ তুই চল আমার সাথে আমি জানি আমি চলে গেলেও তুই আরো এক ঘন্টায়ও রুমে যাবি না।’
‘ যাবো বললাম তো তুই যা।’
‘ আমার সাথে চলো না,
এবার আর অপূর্ব মানা করতে পারলো না। হাতে থাকা খালি বিয়ারের বোতলটা ধরেই উঠে দাঁড়ালো। বললো,
‘ ঠিক আছে চল।’
অয়ন খুশি হলো। মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো,
‘ হুম চলো,
অপূর্ব আর অয়ন হাঁটা দিল। মাঝে অপূর্ব বললো,
‘ বুঝলি অয়ন ভাবছি খুব শীঘ্রই তোর জন্য একটা ভাবি আনবো,
‘ সত্যি বলছিস ভাই তুই আমার জন্য ভাবি আনবি,
‘ হুম আনবো। একা জীবন আর ভালো লাগে না বুঝলি।’
অয়নের মুখের হাসি যেন আরো বাড়লো। সে খুব খুশি হয়েছে ফাইনালি তার ভাই বিয়ের জন্য রাজি হচ্ছে।’
এরই মাঝে হেঁটে যেতে যেতে অপূর্ব এক সাংঘাতিক কাজ করে বসলো। অয়নকে বাড়ির ভিতর ঢুকিয়ে ছাঁদের দরজা বন্ধ করে দিলো। কিছুক্ষনের ভিড়ে আহাম্মক বনে গেল অয়ন। অপূর্ব দরজা আটকাতেই হতাশ হয়ে বললো,
‘ এটা কি হলো ভাই?’
‘ কিছুই হয় নি তুই রুমে যা। তোর ভাবিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা এখনো বাকি আমার।’
‘ বৃষ্টির মধ্যে স্বপ্ন দেখবি ভাই,
‘ তুই হয়তো জানিস না অয়ন তোর ভাবি এই বৃষ্টির জন্যই আমার অনেকটা আপন হয়েছে।’
‘ রুমে চল না প্লিজ এভাবে ভিজলে জ্বরের অসুখ বাঁধবে তোর।’
‘ বাঁধবে না অপূর্বকে অসুখে আঁকড়ে ধরা এত সহজ নাকি।’
‘ তুই কেন বুঝতে চাচ্ছিস না ভাই আমি কিন্তু বাবাকে ডাকবো।’
‘ এমন করিস না অয়ন বাবা খুব বকবে আমায় তুই কি ভেবেছিস আমি এভাবে বলবো ইডিয়েট। বাবাকে আমি ভয় পাই নাকি। শেষে দেখবি বাবা আমি দুজনেই বৃষ্টিতে ভিজচ্ছি তাই কথা না বাড়িয়ে
রুমে যা নইলে,
‘ নইলে কি?’
‘ নইলে অহনার কথা কিন্তু বাড়িতে লিক হতে আমার দু’সেকেন্ড সময় লাগবে।’
অয়ন থেমে গেল। আর কিছু বলতে পারলো না তার ভাইকে বিশ্বাস নেই সত্যি সত্যি যদি বলে দেয় তখন। অয়ন কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে বললো,
‘ তুউ কিন্তু কাজটা ঠিক করছিস না ভাই।’
উত্তরের কোনো জবাব আসলো না। অতঃপর অয়ন হতাশ হয়েই চলে গেল তার রুমে। আর অপূর্ব দরজার পাশে হেলান দিয়ে বসে রইলো চুপচাপ। তার মস্তিষ্ক এখনও ঠান্ডা হয় নি। কোথাও গিয়ে বন্ধু হারানোর যন্ত্রনা অনুভব হচ্ছে তার।’
___
সূর্যের প্রবল তেজ। ঘড়ির কাটায় আনুমানিক এগারোটা বাজে। প্রিয়তা হাঁটছে, বোনের সাথে দেখা করার জন্য মনটা উতলা হয়ে আছে তার। চোখের কোণে পানি জমছে, তার জন্যই তার বুবুটা আজ জেল খানায় বন্দী হয়ে আছে। খুলনার এই জেলখানাটায় একজন পুলিশ আছে যাকে প্রিয়তা চেনে তার বাবার বন্ধু ছিল। পুলিশটির সাথে কথা হয়েছিল প্রিয়তা। বলেছে তার বুবুকে নাকি ছাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে।’
.
জেলখানার একদম শেষ প্রান্তের লকাপে বসে আছে প্রেমা। চোখ মুখ শান্ত যেন কিছুই হয় নি। রহিম মারা যাওয়ার পর যেন প্রেমা বেশ শান্তিতেই আছে। এমন শান্তি পাবে আগে জানলে বোধহয় প্রেমা আরো আগেই মেরে দিত রহিমকে। ভেবেই হাল্কা হেঁসে উঠলো প্রেমা। কিসব ভাবছে সে, খুন করার পর বোধহয় এমন সব ভাবনাই মাথায় আসে সবার।’
‘ বুবু,
হঠাৎই প্রিয়তার ভয়েসটা কানে আসতেই যেন প্রেমা সতেজ হলো। বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো এগিয়ে গেল প্রিয়তার দিকে খুব স্বাভাবিক গলায় বললো,
‘ তুই এখানে?’
উত্তরে কান্না ভেজা স্বরে বললো প্রিয়তা,
‘ বুবু তুই আমার জন্য এমনটা কেন করলি?’
প্রেমা হাল্কা হাসে। বলে,
‘ ওহ রাজনীতিবিদ তাহলে সব বলে দিয়েছে তোকে।’
প্রিয়তা মাথা নাড়ায় বলে,
‘ এমনটা না করলেও তো পারতি,
‘ কিভাবে পারতাম শয়তানটা যে তোর ওপর নজর দিয়েছিল। আমার বোনের দিকে যে বাজে নজর দিয়েছে তাকে আমি কিভাবে ছাড়ি।’
প্রিয়তা কেঁদে দেয়। বলে,
‘ তোকে এখান থেকে কি করে ছাড়াবো বুবু?’
‘ ছাড়াতে হবে না আমার ভাগ্যে যা আছে তাই হবে।’
‘ এভাবে বলিস না বুবু।’
প্রেমা হাত বুলায় প্রিয়তার মাথায় হাল্কা হেঁসে বলে,
‘ তা রাজনীতিবিদকে বিয়ে কবে করছিস তুই?’
‘ উনি আমায় মেরে ফেলতে চায় বুবু।’
এবার প্রেমা আরো উচ্চ স্বরে হাসে। বলে,
‘ তাহলে তো ভালোই তুইও তাকে মেরেছিস আর সেও তোকে মারবে কাহিনি শোধবোধ।’
‘ তুই কি আমার সাথে মজা নিচ্ছিস?’
‘ আরে মজা নেওয়ার কি আছে যা সত্যি তাই বলছি। তোরা খুব ভালো থাকবি দেখিস।’
প্রিয়তা কিছু বলে না। দু’জনের মাঝে চলে অনেকক্ষনের নীরবতা।’
‘ চাঁচি কোথায় আছে বুবু?’
‘ আছে হয়তো এখানেরই আশেপাশে। বুঝলি প্রিয়তা সব মানুষ আপন হয় না। সবসময় চোখ কান খোলা রেখে চলবি কে আপন আর আপন নয় সেটা ভালোভাবে বুঝে চলাফেরা করতে হবে। দুনিয়াটা বড্ড বাজে বুঝলি।’
‘ আজ যদি বাবা মা বেঁচে থাকতো তাহলে খুব ভালো হতো তাই না বুবু।’
‘ যারা চলে গেছে তাদের ভেবে লাভ আছে বল, যারা চলে যায় তার আর ফিরে আসে না। তাই যারা চলে গেছে তাদের কথা না ভেবে একা বাঁচতে শিখ। আর তাছাড়া এখন তো তোর রাজনীতিবিদ আছে তাই বেশি ভাবিস না।’
উত্তরে শুধু এতটুকুই বলে প্রিয়তা,
‘ হুম।’
___
জেলের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়তা। চোখের পানি শুকিয়ে বুকভরা দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসছে তার। চাঁচির সাথে দেখা করার ইচ্ছে থাকলেও করে নি। প্রিয়তা সামনের রাস্তা ধরে এগিয়ে যেতে লাগলো। কি করবে না করবে বুঝতে পারছে না বুবুটাকে কিভাবে ছাড়াবে তাও ভেবে পাচ্ছে না। আচমকাই মোবাইলটা বেজে উঠল প্রিয়তার। প্রিয়তা ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখলো অপূর্ব কল করেছে। প্রিয়তা খুব ইতস্তত হয়ে বললো,
‘ এই লোকটা আবার কি বলবে কে জানে?’
প্রিয়তা ফোনটা তুলতেই অপরপ্রান্তে জানালার পাশে বিছানায় শুয়ে থাকা অপূর্ব বললো,
‘ বুঝলে মেয়ে তোমার মৃত্যুর ডেট ফিক্সড করে ফেলেছি। আগামী এক দু’সপ্তাহের মধ্যে তোমায় মেরে ফেলবো।’
‘ খুশি হয়েছি আমি।’
‘ খুশি তুমি হবে কেন খুশি তো হবো আমি।’
‘ ওই একই হলো।’
‘ এক হয় নি। কোথায় আছো বলো তো তোমার বুবুর সাথে দেখা করেছো?’
‘ হুম করেছি।’
‘ খুব ভালো শোনো আমার না জ্বর হয়েছে সাথে মাথাও যন্ত্রণা করছে একটু মাথা টেপার দরকার ছিল তুমি কি একবার আসবে আমার কাছে ভয় নেই দু’সপ্তাহের আগে তোমায় কিছু করছি না।’
‘ আমি খুলনায় আছি অপূর্ব।’
‘ তো।’
‘ তো মানে কি? আমি কি করে আপনার কাছে যাবো এখন?’
‘ সেটা তোমার বিষয় তবে পায়ে হেঁটেই আসো আমি কিছু মনে করবো না।’
‘ আপনার কি মাথা গেছে খুলনা থেকে ঢাকা আমি পায়ে হেঁটে যাবো।’
‘ হুম আসবে কি হয়েছে? গুলি করার সময় তো এমনিই হেঁটে হেঁটে এসেছিলে এখন কি সমস্যা?’
‘ ফোন কাটুন তো।’
‘ কাটবো না জলদি আসো না হলে বুঝোই তো।’
‘ আপনি কেন বুঝতে চাইছেন না বলুন তো।’
টুং টুং ফোন কেটে দিল অপূর্ব। আর প্রিয়তা দাঁড়িয়ে পড়লো অপূর্বের কি সত্যি মাথা গেছে নাকি সত্যি সত্যি তাকে যেতে বলছে। কিন্তু প্রিয়তা তো অপূর্বদের বাড়ি চেনে না আর এখন ঢাকা পৌঁছাতেও তো অনেক সময় লাগবে। প্রিয়তা নানা কিছু ভাবতে ভাবতে এগিয়ে চললো বাড়ির পথের দিকে। বাড়িতে কেউ নেই চাচাও দোকানে বসেছে। প্রিয়তা আসার আগে রান্না করে এসেছিল। প্রিয়তা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। অপূর্বের মাথা বোধহয় সত্যি সত্যিই গেছে।
‘ কিন্তু মানুষটা জ্বর বাঁধালো কি করে? কাল রাতে বৃষ্টিতে ভিজেছিল নাকি।’
__
বাড়ির ভিতর ঢুকতেই খানিকটা অবাক হলো প্রিয়তা। কারন সদর দরজা খোলা তাদের
‘ তবে কি ছোট আব্বু দোকান থেকে এসে পড়েছে।’
#চলবে….
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে]
#TanjiL_Mim♥️