#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৪১
_________________
রাত আটটা। লকাপের ভিতরে উল্টোদিকে মুখ করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে আব্রাহাম ইফতিয়াত আসফি ওরোফে আহিল মাহামুদ। তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো প্রথম দিকে আচ করতে না পারলেও এখন যেন একটু হলেও আচ করতে পারছে। কেউ তো আসবে এখন যে আহিলের সাথে এমনটা করেছে। এ তো শুধু একজনই করতে পারে সে হলো ভাবার আগেই চিরচেনা এক কন্ঠ কানে ভেসে আসলো আহিলের কানে কেউ ডাকলো তাকে। বললো,
‘ আহিল।’
আহিল ঘুরে তাকালো তার সামনেই শার্ট প্যান্ট পড়ে দাঁড়িয়ে আছে অপূর্ব। আজ বহুবছর পর সেই পুরনো দিনের বন্ধু রূপের শত্রুটাকে দেখতে পাচ্ছে আহিল। আহিল এগিয়ে আসলো কিছুটা সামনে। অপূর্বও এগিয়ে আসতে লাগলো আহিলের দিকে। মুখোমুখি হলো দুজন। শুধু মাঝে রইলো লকাপের গ্রিল। সবার আগে অপূর্বই বললো,
‘ আচ্ছা এই মুহূর্তে তোকে ঠিক কোন নামে ডাকলে তুই খুশি হবি?’
আহিল কিছু বললো না চুপ করে রইলো। যা দেখে অপূর্ব বলতে লাগলো,
‘ আহিল মাহামুদ, আব্রাহাম ইফতিয়াত আসফি নাকি শাহরিয়ার আদনান ওরোফে SA.
আহিল যেন চমকালো চরমভাবে চমকালো। অপূর্ব তার এই লুকিয়ে রাখা পরিচয়টা সম্পর্কেও জানে। আহিলের চোখ মুখ দেখে হাল্কা হাসলো অপূর্ব। বললো,
‘ কিরে অবাক হলি নিশ্চয়ই ভাবছিস তো যে আমি কি করে জানলাম আশকোনার ছাত্র দলীয় নেতার মৃত ছেলে সম্পর্কে। আমার ভাবতেও অবাক লাগে সামান্য একটু কনফিউশানে রাখার জন্য তুই এত খেলা খেল্লি। একটা জীবিত ছেলেকে মৃত দেখালি। শাহরিয়া আদনানের মতো সেইম একজন মৃত ছেলেকে রেখে গোল খাওয়াতে চাইলি। তা আসল শাহরিয়ার আদনান আমেরিকায় থাকে তো। তুই তো নিশ্চয়ই জানিস তা।’
আহিল চরমভাবে অবাক হলো। এতকিছু অপূর্ব কি করে জানে। হুম শাহরিয়ার আদনান মরে নি। আসল কথা যেই মুহুর্তে শাহরিয়ার আদনানের খবর দেখানো হয়েছিল সেই মুহূর্তে আসল শাহরিয়ার আদনান ছিল আমেরিকায়। ওখানেই পড়াশোনা করে সে। আর আদনানের পুরো বিষয়টাই ছিল সাজানো নাটক। শুধুমাত্র অপূর্বকে কনফিউশান আর এস এর বিষয়টা ধাপা চাপা দেওয়ার জন্য ওসব করা হয়েছিল।’
আহিল অনেকক্ষন চুপ থেকে হাসলো। চোখের চশমাটা হাল্কা ঠিক করে বললো,
‘ তার মানে তুই সব জানিস?’
উত্তরে ডোন্ট কেয়ার ভাবে বললো অপূর্ব,
‘ হুম সেই শুরু থেকে। শাহরিয়ার আদনানকে আমি চিনি না। এটা হয়তো তুই ভালো মতোই জানতি কিন্তু তুই এটা বুঝিস নি আমার দলে আমি একা নই আমার আরো অনেক লোক আছে। যার মৃত্যু ঘটেছিল তার মুখটা থেতলে গেছিল কিন্তু হাত ওটা তো ঠিক ছিল। আদনানের একটা ছবি দেখেছিলাম আমি যে ছবিতে ওর ডান হাতে একটা তিল ছিল কিন্তু যার মৃত্যু হয়েছিল তার ডান হাতে কোনো তিল ছিল না।’
আহিল বিস্ময়ের চোখে তাকালো। আর অপূর্ব হাসলো বললো,
‘ এই জিনিসটা খেয়াল না করা ছিল তোর প্রথম ভুল। আমার ভালোবাসার দিকে নজর দেওয়াটা ছিল তোর সেকেন্ড ভুল, আর তোর থার্ড নাম্বার ভুল ছিল আমারই ভালোবাসার হাতে আমারই মৃত্যু কামনা করা। আচ্ছা তুই ভাবলি কি করে অপূর্ব যাকে ভালোবাসে তার প্রতি অপূর্ব কোনো নজর থাকে না। প্রিয়তার ফেসবুক একাউন্ট, তোর সাথে ওর চ্যাট সব কিছুই দেখেছি আমি। এত সহজ অপূর্বকে মারা। তুই চাইলেও আমার কিছু করতে পারবি না আহিল। আমার শুধু দুঃখ একটাই তুই আমায় বুঝলি না আজও পুরনো ঘটনাকে নিয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার বাসনায় বসে আছিস। রুহিকে আমি,
অপূর্ব পুরো কথা শেষ করার আগেই আহিল যেন রেগে গেল। চোখ মুখ লাল বর্ন ধারন করলো তার। আহিল অপূর্বের দিকে চোখ লাল করে তাকিয়ে বললো,
‘ চুপ কর আমি তোর মুখে রুহির নাম শুনতে চাই না।’
অপূর্ব থেমে যায়। খানিকটা অসহায়ত্ব কন্ঠ নিয়ে বলে,
‘ তুই আজও আমায় বিশ্বাস করছিস না আহিল।’
আহিল জবাব দেয় না। চুপ করে থাকে। রাগ হচ্ছে তার ভীষণ রাগ।’
‘ তুই কেন বুঝতে চাস না আমার রুহির মৃত্যুর পিছনে কোনো হাত নেই।’
‘ থেমে যা অপূর্ব আর কত মিথ্যে বলবি।’
‘ আমি মিথ্যা বলছি না সেদিনও বলি নি আর আজও বলছি না।’
আহিল নিজেকে সামলালো খুব শান্ত ভাবে বলতে লাগলো,
‘ আচ্ছা ঠিক আছে যা মানলাম তুই কিছু করিস নি তাহলে রুহি কেন তোর নাম লিখে গেল। ওর কি তোর সাথে শত্রুতা ছিল।’
অপূর্ব জবাব দেয় না।’
‘ কি হলো এখন চুপ কেন এই প্রশ্নের উত্তর আছে তোর কাছে। আর তুই তো বলেছিলি এটা নাকি তোর পিছনে করা একটা ষড়যন্ত্র তা এতদিনে নিশ্চয়ই সেই ষড়যন্ত্র করা ব্যক্তিটির খোঁজ পেয়ে গেছিস৷ পেয়ে গেলে তার নাম বল আমায়, আমি তাকে নিজ হাতে শাস্তি দিয়ে তোর সাথে আবার আগের মতো হয়ে যাই।’
অপূর্ব এবারও চুপ থাকে। যা দেখে আহিল হাসে। হাসতে হাসতে বলে,
‘ কি হলো সত্যিটা বের হলো তো। তুই যদি সত্যি কিছু না করতি তাহলে এভাবে চুপ থাকতি না। একটা কথা জেনে রাখ আমি তোকে ছাড়বো না। তোর জন্য আমি যতটা না কষ্ট পেয়েছি তার থেকে দিগুণ কষ্ট তোকে ফেরত দিবো। কি ভেবেছিস এই চার দেয়ালে বন্দী রাখলেই আহিল তোকে ছেড়ে দিবে। একদমই দিবে না। এখন যা, তোকে আর সহ্য হচ্ছে না। জেল থেকে বের হলে দেখা হবে।’
অপূর্ব আহত হলো আহিলের কথায়। বিনিময়ে আর কিছু না বলেই চলে যেতে লাগলো।’
আহিল শুধু তাকিয়ে রইলো অপূর্বের যাওয়ার পানে খানিকটা শব্দ করে বললো,
‘ বিশ্বাসঘাতক!’
অপূর্ব শুনলো, তবে কিছু বললো না চলে গেল নিজের মতো। হয়তো আহিলের জায়গায় সে থাকলেও এমনটাই করতো।’
___
গভীর রাত। ঘড়িতে এক টা ছাড়িয়েছে। আকাশটা অন্ধকারে টুইটুম্বর তেমন কোনো তারা নেই। বিষন্নতায় আঁটকে ধরেছে চারপাশ। হিমশীতল বাতাস বইছে, বার কয়েক মেঘও ডেকেছে হয়তো বৃষ্টি নামবে। অপূর্ব ছাঁদে বসে আছে। হাতে তার বিয়ারের বোতল। মাঝে মাঝে জীবনটাকে বড্ড অসহায় মনে হয়। মনে হয় সব থেকেও অনেক কিছু নেই। জীবন সুন্দর আবার সুন্দর না। কেমন যেন এলেমেলো।’
অপূর্ব বিয়ারের বোতলে চুমুক দিলো কিছু ভালো লাগছে না তার। প্রিয়তার সাথে একটু কথা বলতে পারলে বোধহয় ভালো লাগতো। অপূর্ব তার ফোনটা হাতে নিলো নিরদ্বিধায় কল করলো প্রিয়তার নাম্বারে মেয়েটা নিশ্চয়ই এতক্ষণে খুলনা চলে গেছে। অপূর্ব কল করার তিন চার সেকেন্ডর ভিড়েই কল রিসিভ হলো প্রিয়তা কিছু বলার আগেই অপূর্ব বলে উঠল,
‘ জানো তো মেয়ে জীবন বড্ড খারাপ। আসলে সেদিন মরে গেলেই মেইবি ভালো হতো। তোমার আরো শক্ত পক্ত করে গুলিটা করা উচিত ছিল। নিশানাটাও ঠিক মতো করতে শিখলে না।’
প্রিয়তা কিছু বলে না চুপ করে থাকে। যা দেখে অপূর্ব বলে,
‘ কথা বলছো না কেন?’
প্রিয়তা মুখ খুললো। খুব স্বল্প স্বরে বললো,
‘ আমার কথা কি আপনি বিশ্বাস করবেন অপূর্ব?’
প্রিয়তার কথাটা শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে বললো অপূর্ব,
‘ না। তুমি জীবনে বিশ্বাস করার মতো কিছু করেছো আমার সাথে।’
‘ অবিশ্বাস করার মতো আমি কতগুলো কাজ করেছি অপূর্ব।’
‘ তুমি আমার হৃদয়ে আঘাত করেছো এর পর আর কি করতে চাও। এটাই তো অনেক বড় কাজ।’
প্রিয়তা আর কিছু বলতে পারে না। নীরবতা চলে দুজনের মাঝে। নীরবতা ভেঙে অপূর্ব বলে,
‘ একদিন খোলা চুলে কালো শাড়ি পড়ে আমার সামনে আসবে মেয়ে তোমায় না খুব করে কালো শাড়িতে দেখতে মন চাইছে।’
‘ আমার কালো শাড়ি নেই।’
‘ দিলে তো আবার আঘাত করে। তুমি বড্ড খারাপ আর নিষ্ঠুর তোমার প্রতিটা কথায় আমার যন্ত্রণা লাগে।’
‘ আমি সত্যি বলেছি কালো শাড়ি নেই আমার।’
‘ থামো তো আর একটাও কথা বলবে না তুমি এত হৃদয়হীন কেন?’
‘ আমি হৃদয়হীন নই অপূর্ব।’
‘ মিথ্যে বলো না মিথ্যে একদম সহ্য হতে চায় না।’
‘ আপনি কি এই মাঝরাতে আমার সাথে ঝগড়া করার জন্য ফোন করেছেন?’
‘ ঝগড়া নয় প্রেম করার জন্য ফোন করেছি।’
‘ এটাকে প্রেম বলে।’
‘ হুম বলে তো তুমি বুঝবে না।’
‘ আমি সত্যি আপনায় বুঝতে পারি না।’
‘ অপূর্ব কঠিন পদার্থ দিয়ে তৈরি এত সহজে তাকে বোঝা যায় নাকি।’
‘ তাহলে কঠিন থেকে সহজ হয়ে যান আমি ঠিক বুঝে নিবো।’
‘ তোমায় যেদিন মারবো যেদিন বুঝে নিও।’
‘ তাহলে আজ কেন বাচিঁয়ে রাখলেন?’
‘ এই যে মাঝরাতে তোমার সাথে কথা বলার জন্য।’
প্রিয়তা জবাব দিলো না। আবারও চললো দু’জনের মাঝে নীরবতা। অপূর্ব অনেকক্ষন পর বললো,
‘ শোনো আর কথা বলতে ভালো লাগছে না রাখি।’
বলেই ফোন কেটে দিলো অপূর্ব। বিয়ারে চুমুক দিলো আবার। এরই মাঝে আকাশ পথ বেয়ে বৃষ্টি নামলো অপূর্বকে ভিজিয়ে দিলো কঠিনভাবে। অপূর্ব আকাশ পথে তাকালো খুব শীতল শব্দে বললো,
‘ তুমি আমার বিষন্ন ভরা রাতের বৃষ্টিতে ভেজা শ্রাবণ মাস,
আমি তোমার ওই মায়াবী চোখে শুধুই দেখছি আমার সর্বনাশ। যে সর্বনাশের শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই।’
#চলবে….
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে]
#TanjiL_Mim♥️