#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৩৯
_________________
ভার্সিটির পুরো ক্লাসরুম স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে তাদের আব্রাহাম স্যার আর পুলিশগুলোর দিকে। তারা কেউ বুঝচ্ছে না হুট করে পুলিশ কেন তাদের স্যারকে ধরে নিয়ে যেতে এসেছে। কি করেছে কি তাদের আব্রাহাম স্যার।’
এদিকে,
আব্রাহাম তাকিয়ে আছে পুলিশগুলোর দিকে বিষয়টা একদমই তার ধারনার বাহিরে ছিল। তবে আব্রাহাম বেশি ঘাবড়ালো না খুব স্বাভাবিকভাবেই জবাব দিলো,
‘ আমার অপরাধ কি অফিসার?’
উত্তরে তানভীর বললো,
‘ অপরাধের কথা না হয় পুলিশ স্টেশন গিয়ে বলা যাক মিস্টার আব্রাহাম ইফতিয়াত আসফি। যদিও এটা নকল নাম। তবে আপাতত আপনি ধরে নিতে পারেন অন্যের আইডেন্টিটি নিয়ে ভার্সিটির টিচার হিসেবে বেআইনিভাবে জয়েন হওয়ার অপরাধে আপনায় গ্রেফতার করা হচ্ছে। আর বাকিটা না হয় কারাগারে বন্দী হয়ে শুনবেন। বিশেষ কেউ বলবে!’
এই বলে আব্রাহামের হাতে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো। ক্লাসরুমের উপস্থিত সবাই জাস্ট অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো পুলিশদের যাওয়ার পানে। অদ্ভুত কান্ড এতদিন তারা যাকে তাদের আব্রাহাম ইফতিয়াত আসফি নামে যাকে ইংরেজি টিচার বলে জানতো অথচ আজ জানলো ওনার নাম আব্রাহাম নয় আহিল মাহামুদ। সবাই স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো পুরো। সবটাই যেন তাদের মাথার উপর দিয়ে গেল।’
___
অন্ধকার রুম। চারপাশে আলোর রেখা নেই মোটেও। ভাঙাচোরা কিছু আসবাবপত্রে ঘেরা চারপাশ, আর এসবের মাঝেই হাত পা আর মুখ বাঁধা অবস্থায় দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে রয়েছে প্রিয়তা। জ্ঞান নেই তার। আচমকাই নড়েচড়ে উঠলো সে পুরোপুরি হুস আসতেই আশেপাশে তাকালো প্রিয়তা। কেমন ঘুটঘুটে অন্ধকার। প্রিয়তার মাথার উপরের দিকটায় ছোট্ট একটা জানালা আছে যেখান থেকে বিন্দু বিন্দু আলো আসছে তাও সুক্ষ্ম। বোধহয় বাহিরে সন্ধ্যা নেমে গেছে। প্রিয়তা বুঝলো না তাকে এখানে কে আনলো?’
হঠাৎই কারো পায়ের ধ্বনি কানে আসলো। পায়ের শব্দ কানে আসতেই ভয়ে গুটিশুটি মেরে বসলো প্রিয়তা। ধীরে ধীরে পায়ের শব্দ আরো নিকটে আসতে লাগলো প্রিয়তা বুঝেছে কেউ একজন আসছে তার দিকে। কিছু সেকেন্ড যেতে না যেতেই একটা গান কানে ভাসলো প্রিয়তার। কেউ গাইছে,
‘ তুমি আমার অনেক শখের,
খুঁজে পাওয়া এক প্রজাপতি নীল
‘ আমি রংধনু রঙে সাজিয়েছি
দেখ এক আকাশ স্বপ্নীল!’
কন্ঠটা যেন চেনা। তবে কি অপূর্ব এসেছে? কিন্তু তা কি করে সম্ভব সে তো। প্রিয়তা বেশি না ভেবে অধিক আগ্রহে তাকালো সামনে কিন্তু অন্ধকারে সামনের ব্যক্তিটিকে চেনা যেন দায়। প্রিয়তার মুখ বাঁধা তাই সে তেমন কোনো শব্দও করতে পারছে না।’
অতঃপর সময়ের অবসান ঘটলো দেখা গেল সেই মধুরকন্ঠস্বরে গেয়ে আসা মানবের মুখশ্রী। কারন তার হাতে ছিল একটা মোমবাতি। মুখটা দেখা যাচ্ছে এখন। প্রিয়তা যেন সত্যি চমকালো মানবের মুখখানা দেখে কারন তার সামনে সত্যি সত্যিই অপূর্ব দাঁড়িয়ে আছে। তবে কি অপূর্ব সুস্থ হয়ে গেছে আচ্ছা গুলিতে আহত হওয়া ব্যক্তিটি কি এত দ্রুত সুস্থ হতে পারে হয়তো পারে হয়তো পারে না।’
অপূর্ব এগিয়ে গেল, আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল প্রিয়তার দিকে। কিন্তু পরে কি যেন ভেবে অপূর্ব আর বেশিদূর এগোলে না কয়েককদম এগিয়ে গিয়ে আবার অন্যদিকে ঘুরে গেল। আগে রুমে লাইট জ্বালানো প্রয়োজন। অপূর্ব তাই করলো পুরো রুম সাঁতরে সুইচ খুঁজে বের করে রুমের লাইট জ্বালালো তাও যেন অন্ধকার ঘুচলো না জিরো পাওয়ারের একটা লাইট জ্বলছে। লাইটের আলো এতটাই কম যে এর চেয়ে মোমবাতির আলোও বোধহয় বেশি।
অপূর্ব আশেপাশে তাকিয়ে হাতের মোমবাতিটা রাখলো একপাশে। তারপর পুনরায় এগিয়ে চললো প্রিয়তার দিকে। মেয়েটা বোধহয় খুব ভয় পাচ্ছে। অপূর্ব ইচ্ছাকৃতভাবে জুতায় খটখট আওয়াজ করছে। কারন এতে প্রিয়তার বোধহয় ভয় পাওয়ার বিষয়টা পুরোপুরি ভয় পাওয়ার রূপে পরিনত হচ্ছে। অপূর্ব তার বুকে হাত দিল ব্যাথাটা যেন আবার নাড়া দিচ্ছে। আজ একপ্রকার জোর জবরদস্তি করে হসপিটাল থেকে চলে এসেছে অপূর্ব। ডাক্তারটা অনেক রাখার চেষ্টা করলেও সক্ষম হয় নি। অপূর্বের হসপিটাল জিনিসটা একদমই পছন্দ হয় না। কেমন যেন অসহ্য অসহ্য লাগে। তারওপর তার বুকে ব্যাথা।’
অপূর্ব তার বুকে হাত রেখেই চেয়ার টেনে বসলো প্রিয়তার সামনে। কতক্ষণ তাকিয়ে রইলো প্রিয়তার চোখের দিকে তারপর মুখ খুলে খুব শীতল স্বরে বললো,
‘ তুমি কি জানো মেয়ে আমি তোমার চোখে বার বার আমার ধ্বংস হওয়া দেখি। আচ্ছা আমায় ধ্বংস করে কি তুমি খুব মজা পাও। হয়তো পাও না হলে এভাবে গুলির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করতে পারতে নাকি।’
প্রিয়তা কিছু বললো না মুখ যে তার বাঁধা যদিও মুখ খোলা থাকলেও এই মুহূর্তে সে কিছু বলতে পারতো না। চুপ করেই রইতো। প্রিয়তা জানে অপূর্ব তাকে আর বিশ্বাস করে না, সে যে গুলি করে নি এটা বললেও অপূর্ব হয়তো বিশ্বাস করবে না। প্রিয়তা মাথা নিচু করে ফেললো। যা দেখে অপূর্ব বললো,
‘ বেশি মন খারাপ করো না তো, তুমি হয়তো জানো না তোমার মন খারাপেও আমার হৃদয় পুড়ে।’
প্রিয়তা আবার তাকালো অপূর্বের দিকে। অপূর্বের হাবভাব ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না সে। হুট করেই অপূর্ব কি ভেবে যেন প্রিয়তার মুখে বাঁধা কাপড়টা খুলে দিল। মুখ খুলতেই প্রিয়তা নিশ্বাস ফেললো বার কয়েক। তারপর বললো,
‘ আমায় মেরে ফেলবেন অপূর্ব?’
অপূর্ব হাসে। কি রহস্যময়ী হাসি তার। সে কি খুব মজা পেয়েছে প্রিয়তার প্রশ্নে। অপূর্ব হাসতে হাসতেই জবাব দেয়,
‘ এটা বলার মতো প্রশ্ন। তোমায় যে মারবো এটা নিশ্চিত। তাই বেশি ভেবো না। অপূর্বের দিকে রিভলবার রেখেছো তার হৃদয়ের আঘাত করেছো এমনি এমনি আর ছেড়ে দিবো নাকি। অপূর্বকে আঘাত করার ফল কতটা ভয়ংকর হয় এটা তো তোমায় জানতে হবে তাই না মেয়ে।’
প্রিয়তা জবাব দেয় না। চুপচাপ মাথা নিচু করে আবার। অপূর্ব যেন এতে বিরক্ত হয় খুব কঠিন গলায় বলে,
‘ একবার বলেছি না মন খারাপ করবে না আমি নিতে পারি না।’
অপূর্বের কথার প্রতি উত্তরে খুব শান্তসৃষ্ট জবাব প্রিয়তার,
‘ আমি মন খারাপ করছি না তো। জানেন অপূর্ব আমার দুলাভাইকে কে মেরে ছিল?’
অপূর্ব যেন খানিকটা অবাক হলো মেয়েটা কি সব জানে তবে। অপূর্ব খানিকটা অবাক স্বরে বললো,
‘ কে?’
‘ আমার বুবু। আজ হয়তো তাকে পুলিশেও ধরে নিয়ে গেছে। সঙ্গে হয়তো চাঁচিও গেছে। চাঁচির বিষয়টা ঠিক জানা নেই। তবে বুবুকে নিয়ে যাবে এতটুকু জানি। কাল রাতে বুবু ফোন করে বলেছিল আজ হয়তো তাকে নিয়ে যাবে। আপনি কি বলতে পারবেন পুলিশগুলো বুবুকে নিয়ে গেছে কি না। আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে।’
অপূর্ব অনেকক্ষন চুপ থেকে বললো,
‘ তোমার বুবু সবটা বলেছে তোমায়?’
‘ কতটুকু সবটা এটা জানি না। বুবু কাল রাতে হুট করেই ফোন করে বলেছিল তাকে নাকি আজ পুলিশে ধরে নিয়ে যাবে সাথে নাকি চাঁচিও থাকতে পারে। পরে কারন জিজ্ঞেস করায় শুধু তারটা বলেছিল সে নাকি দুলাভাইকে মেরে ফেলেছে তাই তাকে নিবে তবে চাঁচির বিষয়টা কিছু বলে নি শুধু তার টুকুই বলেছিল। সবটা জানার জন্য আজ আমি খুলনা যাওয়ার যাবো ভেবেছিলাম কিন্তু তার আগেই আপনি নিয়ে এসেছেন। যাইহোক একটু বলবেন প্লিজ বুবুকে সত্যি নিয়ে গেছে কি না বা আপনি আপনার ফোন থেকে আমার ছোট আব্বু মানে চাচার নাম্বারে একটা কল করে দিন আমি জেনে নিচ্ছি।’
অপূর্ব আবার হাসলো। মেয়েটা বোধহয় তাকে হাসানোর সব পরিকল্পনা ভেবে রেখেছে। অপূর্বের হাসির দিকে নির্বিকার চোখে তাকিয়ে রইলো প্রিয়তা। যা দেখে অপূর্ব বললো,
‘ আচ্ছা তুমি ভাবছো কি করে তুমি বলবে আর আমিও শুনবো।’
‘ ভাবছি না তো শুধু অনুরোধ করছি এখন শুনবেন কি শুনবেন না এটা তো আপনার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। শুধু আমার একটু আফসোস থেকে যাবে আমি কিছু জানতে পারলাম না।’
প্রিয়তার কথা শুনে অপূর্ব অনেকক্ষন চুপ থাকলো। তারপর বললো,
‘ তোমার বুবুকে সকালেই পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে আমি নিজেই তোমার বুবুকে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছি।’
অপূর্ব এবারের কথা শুনে চরম বেগে যেন অবাক হলো প্রিয়তা। অপূর্ব ধরিয়ে দিয়েছে মানে। প্রিয়তার অবাক হওয়ার বিষয়টা অপূর্ব যেন বুঝলো। বললো,
‘ খুব অবাক হলে তাই না। তুমি কি জানো তোমাদের ইউনিভার্সিটির স্যার মিস্টার আব্রাহাম ইফতিয়াত আসফি এখন জেলে। তোমার এই স্যারের কথাতেই তো তুমি আমায় খুন করতে গিয়েছিলে তাই না।’
প্রিয়তা যেন আরো অবাক হলো অপূর্ব এসব কি করে জানলো। প্রিয়তার ভাবনার মাঝে আবারও বললো অপূর্ব,
‘ কি আবারও অবাক হলে তো। আমরা আব্রাহামের বিষয়টায় পড়ে আসি আগে তোমার বুবুর বিষয়টায় যাওয়া যাক। তোমার চাঁচি একটা ব্যবসা করতো এটা তুমি নিশ্চয়ই জানো।’
অপূর্বের কথা শুনে হ্যা বোধক মাথায় নাড়ায় প্রিয়তা যা দেখে অপূর্ব বলে,
‘ কিন্তু কিসের ব্যবসা করে তা হয়তো জানো না।’
এবার না বোধক মাথা নাড়ায় প্রিয়তা। যা দেখে আরো বলে অপূর্ব,
‘ তোমার চাঁচি মেয়ে পাচারের ব্যবসা করতো আর সেই ব্যবসায়ের মুখ্য লিডার ছিল তোমার দুলাভাই। কোন দেশে কোন মেয়ে কতগুলো মেয়ে যায় এইসবই তোমার দুলাভাই দেখতো। মোটামুটি সবই ঠিক ছিল কিন্তু ভেজাল বাজলো কিছুদিন আগে, যখন বিদেশে মেয়ে পাঠাতে গিয়ে একটা মেয়ে কম পড়েছিল। চারিদিকে যখন মেয়ে খোঁজা নিয়ে হুল্লোড় পড়েছিল তখনই তোমার দুলাভাইর নজর আসে তোমার ওপর। মনে পড়ে তোমার কথা। তোমার উপর রাগ তার আগে থেকেই ছিল তাই তোমাকে পাচার করার কথাই ভাবে তোমার দুলাভাই। তো তোমার বুবু কয়েকদিন আগেই জেনে ছিল তোমার চাঁচি আর তোমার দুলাভাইর এই যগন্য ব্যবসার কথা। তখনই তোমাকে পাচার করার কথাটা যখন শোনে তখন আর তোমার বুবু চুপ থাকে না। চুপিসারে খাবারে ভিতর বিষ মিশিয়ে মেরে ফেলে তোমার দুলাভাইকে, ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখার বিষয়টা ছিল জাস্ট লোক দেখানো। এখন তোমার মনে প্রশ্ন জাগছে তো এতকিছু আমি কি করে জানি। তুমি হয়তো সেদিন খুলনা বসে তোমার বুবুকে আমার আর আমার রাজনীতিবিদের কথা বলেছিল। তোমার বুবু সেদিন ছাঁদে বসে আমায় দেখেছিল অনেক্ক্ষণ। আমি বুঝেছিলাম সে বোধহয় কিছু বলতে চাইছে আমায়। তারপর তার সাথে ফোনে কথা হয়, সবটা জানি আমি। এর মাঝে একবার তোমাদের খুলনাতেও গিয়েছিলাম তোমার বুবুর সাথে দেখা করতে তখন জানতে পারি এই ঘটনায় শুধু তোমার দুলাভাই নয় তোমার চাঁচিও আছে।’
প্রিয়তা অপূর্বের কথা শুনে ভাবলো কিছু, সেদিন সত্যি অপূর্বের কথা প্রিয়তা বলেছিল তার বোন প্রেমাকে। অপূর্ব যে রাজনীতিবিদ এটাও বলেছে প্রিয়তা। তার আর অপূর্বের মাঝে ঘটা সব ঘটনাই বলেছিল প্রেমাকে। আর তখনই কি জন্য যেন অপূর্বের ফোন নাম্বারও রেখেছিল সেদিন প্রিয়তা ওতোটা ভাবে নি তবে আজ বুঝলো সব ঘটনা।’
কি অদ্ভুত কান্ড! শেষে কি না প্রিয়তার জন্যই প্রেমা খুনি হলো।’
#চলবে…..