#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৩২
_________________
হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে প্রিয়তা অপূর্বের মুখের দিকে। আশ্চর্যের বিষয় হলো আজ অপূর্ব মুখে মাস্ক পড়েনি খুব স্বাভাবিকভাবেই এসে বসেছে সে প্রিয়তার পাশে। কিন্তু অপূর্বের কথাটা। এই লোকটা সবসময় এমন করেই কথা বলে। কিন্তু শুনতে বেশ লাগে। প্রিয়তা কিছু বলছে না চুপচাপ বসে রয়েছে শুধু।’
অন্যদিকে অপূর্ব চুপচাপ তাকিয়ে আছে প্রিয়তার মায়া ভরা সেই চোখের দিকে। যা দেখে প্রিয়তা বললো,
‘ এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?’
উওরে অপূর্ব খুব স্বাভাবিকভাবেই জবাব দিলো,
‘ বারে কারো পাশে এসে বসেছি, যার পাশে বসেছি সেই ব্যক্তিটা আমায় খারাপ বললো অথচ তাকে আমি দেখবো না এমনটা হয় হয় নাকি। যতই হোক সাবধানতারও তো একটা বিষয় আছে।’
অপূর্বের কথা শুনে হতাশ প্রিয়তা। এই লোকটা অলওয়েজ ত্যাড়া। ঘুরিয়ে কথায় বলতেও যেন বেশ পটু। প্রিয়তা অপূর্বের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ খারাপ বললেই দেখতে হবে নাকি।’
‘ অবশ্যই হবে। যতই হোক প্রেম বালিকা বলে কথা। কখন সখন মেরে দেয় বলা যায়।’
প্রিয়তা আর জবাব দিলো না। কিছুক্ষন চুপ থেকে পুরোই উল্টোটপিকে বললো,
‘ আমি জানি অপূর্ব আপনি কেন আমায় আপনাকে ভুলে যেতে বলেছেন। আমি এটাও জানি আপনিও আমাতে আসক্ত। শুধু পরিস্থিতির জন্য হয়তো কাছে আসতে চান না। আপনার চিরকুট, আপনার কথা বলার ধরন, আপনার চোখ সবই বুঝতে পারি আমি। আপনিও আমায় ভালোবাসেন তাই না অপূর্ব?’
অপূর্ব জবাব দেয় না চুপ করে রয়। এই প্রশ্নের উত্তর অপূর্বের কাছে বারংবার বাজছে হা বাসি। কিন্তু মুখ ফুটে বলছে না। অপূর্বকে চুপ থাকতে দেখে প্রিয়তার যা বোঝার বোঝা হয়ে গেছে। প্রিয়তা সামনের দিকে তাকালো। খুব শান্ত স্বরেই বলতে লাগলো,
‘ আমি তখন দশম শ্রেণীর ছাত্রী। নতুনই ভর্তি হয়েছি কেবল। আনুমানিক প্রায় তিন চার বছর আগের কথা। আমার বাবাও আপনার মতো একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন অপূর্ব। আমি আর আমার বুবু বাবা মায়ের দুই সন্তান ছিলাম। বাবা আমাদের দুই বোনকেই ভীষণ ভালো বাসতেন। বাবা আমাকে আদর করে ‘পিহু’ বলে ডাকতেন। বাবা মাকেও ভীষণ ভালোবাসতেন শুনেছিলাম তাদের নাকি লাভ ম্যারেঞ্জ হয়েছিল। যাই হোক সব মিলিয়ে আমাদের পরিবারটা খুব সুন্দরই ছিল। বাবার আদর, মায়ের বকা, বুবুর ভালোবাসায় পুরো ভরপুর ছিলাম আমি। কিন্তু হঠাৎ একদিন খবর এলো বাবাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না কোথায় গেছে না গেছে কেউই কিছু বলতে পারছিল না। বাবার শুভাকাঙ্ক্ষীরাও তখন চুপচাপ ছিলেন। সেইসময় আমাদের পরিবারের ওপর দিয়ে যে কি গিয়েছিল অপূর্ব তা বোঝানো সম্ভব নয়। বাবা সেই বছরেই ইলেকশনে দাড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু ইলেকশনের ১৭ দিন আগেই বাবা নিখোঁজ হলেন। তারপর টানা ১৫ দিন পর ইলেকশনের ঠিক দুইদিন আগে বাবার মরদেহ মিললো খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে বেশ খানিকটা দূরে নর্দমার একটা ডাস্টবিনে মধ্যে। ব্যাস বাবা চলে গেলেন, কেউ তাকে চাকুর আঘাতে আঘাতে নিহত করেছিল। বাবার মারা যাওয়ার শোকে মাও চলে গেলেন তারপরই শুরু আমাদের দু’বোনের অবহেলা। শুরুতে শুরুতে চাঁচি বেশ ভালোবাসতেন আমাদের। কিন্তু ধীরে ধীরে চাঁচির ব্যবহার বদলে গেল খুলনায় আমাদের বড় হয়ে ওঠা স্মৃতির বাড়িটাও বিক্রি করে দিলেন। বুবুর জীবনে একটা কাপুরুষকে এনে দিলেন। জানেন তো অপূর্ব বুবুর বরটা না মোটেও ভালো না চরিত্রহীন বলতে পারেন। বুবুকে যে কতবার মারে তার হিসাব নেই। কয়েকবার আমার সাথেও,
বলেও থেমে গেল প্রিয়তা না আর বলা যাচ্ছে না নিশ্বাস ভাড়ি হচ্ছে তার খুব বেশি ইমোশনাল হয়ে পড়েছে প্রিয়তা। চোখ ভিজে গেছে তার।’
প্রিয়তার কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেল অপূর্ব। অপূর্ব খুব নিশ্চুপেই বললো,
‘ তোমার সাথে কি করেছে?’
প্রিয়তা থেমে থাকে না এই কথাগুলো প্রিয়তা কাউকে বলে নি। কিন্তু কেন যেন মুখ ফসকে বেরিয়ে এলো আজ। প্রিয়তা চুপ থাকে তারপর বলে,
‘ লোকটা খুব বাজে অপূর্ব। খুব বাজেভাবে স্পর্শ করতে চাইতো আমায়। সেদিন ছিল এক অন্ধকার রাত বুবু বিয়ের পর সেইবার দ্বিতীয়বারের মতো আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। সচরাচর আমি দরজা আঁটকে ঘুমাই না সেদিনও ঘুমাই নি। তখন রাতে,
আর বলতে চায় না প্রিয়তা ওসব ভাবলে নিজের ওপর ঘৃণা আসে প্রিয়তার। প্রিয়তা তাও থেমে যায় নি। কান্না ভেজা স্বরে বললো,
‘ খুব বাজে। কেন যেন মনে হচ্ছে কথাগুলো বললে আপনি আমায় পছন্দ করতে চাইবেন না। কিন্তু তাও আমি বলবো আমায় বাজে ভাবে ছুঁতে চেয়েছিল অপূর্ব। কিন্তু ভাগ্য ভালো থাকায় কিছু করতে পারে নি। সেদিন আমি খুব পেয়েছিলাম বুবুকে বলবো তাও বলতে পারি নি। এরপর থেকেই শয়তানটার থেকে দূরে দূরে থাকি আমি।’
এভাবে চলছিল জীবন। চাঁচির আড়ালে পড়াশোনা করেছি। তারপর যখন দেখলাম চাঁচি আমাকে টাকার বিনিময়ে ৬০ বছরের বুড়োর সাথে বিয়ে দিতে চাইলো তখনই ঠিক করলাম এ বাড়িতে আর নয়। তাই সেদিন বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে এসেছিলাম। বুবুকেও বলেছিলাম আমার সাথে আসতে কিন্তু শোনে নি। বাবার জন্যই আজ আমাদের এই অবস্থা মা নাকি অনেকবার বাবাকে রাজনীতি থেকে সরে আসতে বলেছিল কিন্তু বাবা শোনে নি যার পরিনতি আজ আমাদের দুইবোনকে ভোগ করতে হচ্ছে। তারা তো চলে গেছেন আর আমাদের দেখুন। যাই হোক,
এই কথাগুলোর বলার অর্থ এতটুকুই অপূর্ব আমার বাবাও শক্তিশালী ছিলেন কিন্তু শেষ পরিনতি সেই অন্যের হাতের মৃত্যুই হলো। বিরোধী দলের লোকেরাই এমনটা করেছিলেন। তবে জীবনে যদি খোঁজ পেতাম কে এমনটা করেছে তাহলে আমি নিজ হাতে তাকে খুন করতাম অপূর্ব। আমার জীবনে দুজন মানুষকে খুন করার খুব ইচ্ছে। এক. বুবুর বর রহিম মির্জা আর আমার বাবার খুনি।
জীবন খুব ক্ষুদ্র অপূর্ব, রাজনীতি ভালো নয়। এটা নিজের সাথে সাথে প্রিয়জনদেরও ক্ষতি করে। আপনি আমার হতে চাইলে নিশ্চয়ই এটাকে ছেড়েই আসতে হবে। হয়তো আপনি আসবেন না। তাও আমি বললাম।’
প্রিয়তার কথা শুনে অপূর্ব কিছু বলে না। নিশ্চুপ থাকে সে। অপূর্ব অনেকক্ষণ চুপ থেকে বলে,
‘ তোমার বাবার নাম কি ছিল প্রিয়তা?’
অপূর্বের কথা শুনে প্রিয়তাও বেশি না ভেবে বললো,
‘ আতিকুল ইসলাম।’
নামটা শুনে অপূর্বের বুকে কামড় দিলো। তিন চার বছর আগের একটা রাতের কথা ভেসে উঠলো। লোকটা আর্তনাদ করছিল কিন্তু অপূর্ব শোনে নি। অপূর্ব পুরো দমে স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো। তবে কি সেই?’
অপূর্ব আর ভাবতে পারলো না সব এলেমেলো হয়ে গেল তার। ঘুটঘুটে নীরবতায় চললো চারপাশে প্রিয়তা ওতটুকু বলে চুপ হয়ে গেল নীরবে। তারপর কিছুক্ষন পর আবার বললো,
‘ জানেন অপূর্ব শুনেছিলাম ঢাকার একজন নেতা আশিকুর জামান যাকে সংক্ষেপে মুখার্জি মশাই ডাকা হয়। সেই নাকি তার দলের কোনো এক ছেলেকে দিয়ে মেরেছিল বাবাকে। পুলিশ তদন্ত চালিয়ে ছিল কিন্তু ক্ষমতার জোরে খুনটাকে এক্সিডেন্ট বলে ধামাচাপা দেওয়া হলো। না জানি কতটা যন্ত্রণা নিয়ে বাবা দুনিয়া ছাড়লেন, কেউ হয়তো একটু এগিয়েও যায় নি সেদিন। এগিয়ে গেলে হয়তো বাবা বেঁচে যেতেন।’
বলেই দীর্ঘ শ্বাস ফেললো প্রিয়তা। অতঃপর প্রিয়তা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। অপূর্বের কিছু বলার অপেক্ষার না থেকেই বললো,
‘ আমায় যেতে হবে অপূর্ব। তবে যাওয়ার আগে একটা কথা বলবো ভবিষ্যতে কি হবে এটা ভেবে এখনই কষ্ট পাবেন না। আমাকে যেতে হবে যাচ্ছি আমি ভালো থাকবেন অপূর্ব। আপনার জীবন আমিহীন সুখের হোক।’
বলেই আর না দাঁড়িয়ে চলে যায় প্রিয়তা। অন্যসময় হলে অপূর্ব ঠিক বলতো গাড়ি করে নিয়ে যাওয়ার কথা কিন্তু এই মুহূর্তে কেমন একটা হয়ে গেছে অপূর্ব। মন তাকে বার বার হানা দিচ্ছে ‘ভুল করেছিস অপূর্ব, অনেক বড় ভুল সেদিন তুই একটু মায়া দেখালে আজ হয়তো সত্যি প্রিয়তার আর ওর বুবুর জীবনটা অন্যরকম হতো। তুই অপরাধী অপূর্ব, প্রিয়তা তোকে কখনো ক্ষমা করবে না।’
অপূর্ব তার ফোনটা বের করলো আকিবকে একটা কল করে বললো,
‘ আকিব বাড়ি যাবো গাড়ি নিয়ে আমার সামনের রাস্তায় আসো।’
উওরে আকিবও ‘ঠিক আছে ভাই’ বলে গাড়ি নিয়ে ছুটে আসলো।’
____
নির্জন রাত। নিজের বিছানায় চুপচাপ বসে আছে অপূর্ব অপরাধ বোধ তাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। তারওপর প্রিয়তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা প্রিয়তার দুলাভাইকে তো একদমই ছাড়বে না অপূর্ব। একদমই না।’
অপূর্ব হন হন করে কিছু একটা ভেবে রুম থেকে বের হলো। আকিব মেসেজ দিলো,
‘ আকিব খুলনা যাবো একটা কাজ আছে আমার। একটা লোককে খুন করতে হবে।’
অতঃপর অপূর্ব বেরিয়ে গেল।’
…
রাত জুড়ে বিষন্নতা। পড়ার টেবিলে চুপচাপ বসে আছে প্রিয়তা। আজ অপূর্বকে কতকিছু বলে ফেললো সে। হঠাৎই প্রিয়তার মোবাইলটা টুুং করে উঠলো অপূর্ব মেসেজ দিয়েছে। প্রিয়তা খুশি মনে মেসেজটা দেখলো মেসেজ দেখেই চোখ মুখ ঘাবড়ে গেল প্রিয়তার। কারন অপূর্ব লিখেছে,
‘ শোনো মেয়ে, আমি যদি তোমার হয়ে কাউকে খুন করে দেই তাহলে কি তুমি খুব বেশি কষ্ট পাবে?’
#চলবে….
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে]
#TanjiL_Mim♥️