#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৩১
_________________
বেশ বিষন্ন মাখা মুখ নিয়ে তাকিয়ে আছে প্রিয়তা অপূর্বের মুখের দিকে। তার ফট করে বলে ফেলা ভালোবাসি কথাটা শুনে অপূর্বের রিয়াকশনটা কেমন হলো ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। কারন অপূর্বের দৃষ্টি শান্ত, মুখের ভাব ভঙ্গিও শুরু থেকে যেমন ছিল এখনও তেমনই। প্রিয়তা বুঝচ্ছে না অপূর্বকে ইমোশনাল হয়ে ভালোবাসি শব্দটা উচ্চারণ করে ভুল করলো কিনা। প্রিয়তার হুস আসলো হুট করেই নিজের হাতটা অপূর্বের হাতের ওপর থেকে সরিয়ে নিলো সে। বললো,
‘ আমি একটু আসছি,
বলেই দ্রুত বেগে বসা থেকে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে গেল প্রিয়তা। কেমন একটা অসস্থিকর ফিলিংস হচ্ছে তার। সে কি ভুল করলো তবে অপূর্বকে তার চেপে রাখা মনে কথাগুলো বলে। প্রিয়তা চলে গেল, আর অপূর্ব চুপচাপ বসে রইলো। যেন নীরবতাই তার বর্তমান কাজ, অপূর্ব মুখে হাত দিলো এমনটা নয় অপূর্ব বুঝতে পারে নি প্রিয়তা তাকে পছন্দ করে। অপূর্ব অনেক আগে থেকেই বুঝেছিল প্রিয়তার চোখই তো দেখা হলে কথা বলতো। আর অপূর্বের চাহনীও যে প্রিয়তা বুঝতে পারে এটাও বুঝে ফেলেছে অপূর্ব। অপূর্ব যে মেয়েটাকে ভালোবাসে সেই মেয়েটাও অপূর্বকে ভালোবাসে কথাটা শোনার পর অবশ্যই অপূর্বের খুব খুশি হওয়ার কথা কিন্তু অপূর্ব খুশি হতে পারছে না বিশেষ করে কাল রাতের ঘটনার পর। এবার কি করবে অপূর্ব? অপূর্বের চোখে মুখে বিস্ময়ের আভাস ভেসে উঠলো। অপূর্ব তার চোখ বন্ধ করে ফেললো। কোথাও গিয়ে চরম লেভেলের ভয় কাজ করছে অপূর্বের মাঝে। না অপূর্বকে কেউ ভালোবাসতে পারে না। অপূর্বদের কখনো নিজের জীবনে কাউকে আনতে নেই, এতে তো অপূর্ব আর জীবনে আসা ব্যক্তি দুজনেরই ক্ষতি। কিন্তু অপূর্ব রাজনীতিবিদ কথা শোনার পর প্রিয়তা এত ইমোশনাল হয়ে পড়লো কেন?’
অপূর্ব একা মনে কথাগুলো ভেবে চোখ খুলে ফেললো। এমন সময় ফোনটা বাজলো তার আকিব কল করেছে অপূর্ব বেশি না ভেবেই কলটা ধরলো। অপূর্ব কল ধরতেই আকিব বলে উঠল,
‘ ভাই আমি এসেছি ভিতরে তো গাড়ি যাবে না।’
‘ তুমি ওখানেই থাকো আকিব আমি আসছি।’
‘ আচ্ছা ভাই।’
বলেই ফোন কাটলো আকিব।’
আর অপূর্ব কিছুক্ষন নিশ্চুপ হয়ে বসে রইলো। প্রিয়তার আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাবে না। মেয়েটার চোখের দিকে তাকালে অপূর্বও না ইমোশনাল হয়ে পড়ে। কিন্তু অপূর্বকে কি এত দ্রুত ইমোশনাল করা সহজ, তারপরও ভয় লাগে। ইদানীং অপূর্বের ভয়ের পাল্লা কেমন যেন ধীরে ধীরে বাড়ছে। এই ভয়ই তো তাকে না দিচ্ছে কাছে যেতে না দিচ্ছে দূরে যেতে আর নাহি দিচ্ছে ভালো থাকতে।’
অপূর্ব না কিছু ভেবে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। আশেপাশে তাকালো হঠাৎই চোখ গেল প্রিয়তার রুমের টেবিলটার দিকে। অপূর্ব বেশি না ভেবেই অগ্রসর হলো টেবিলটার দিকে।’
___
রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়তা চোখ বেয়ে অজস্র পানি পড়ছে তার। প্রিয়তার খুব কষ্ট হচ্ছে, কষ্টটা ঠিক কোন বিষয়টা নিয়ে এটাই বুঝতে পারছে না সে। অপূর্ব একজন রাজনীতিবিদ এটা জানার পর থেকেই প্রিয়তার খারাপ লাগছে বাবার মৃতদেহটার কথা মনে পড়ছে। প্রিয়তা জানে, এই রাজনীতিবিদদের জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই যখন তখন যে কারো হাতে মৃত্যু ঘটতে পারে তাদের। আর অপূর্বের কিছু হয়ে গেলে তখন। না না প্রিয়তা এসব কি ভাবছে? ভালোবাসা পাওয়ার আগেই হারানোর ভয়। কিন্তু প্রিয়তা এখন অপূর্বের মুখোমুখি হবে কি করে? এইভাবে ফট করে ভালোবাসি কথা বলে চরম লেভেলের ভুল করেছে প্রিয়তা একদমই ঠিক হয় নি কাজটা।’
হঠাৎই প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই পিছন থেকে বললো গ্র্যান্ডমা,
‘ তোমার রুমে কি কাল কেউ ছিল প্রিয়তা?’
প্রিয়তা যেন চমকালো, ভড়কালো, অবাক হলো। পিছন ঘুরে বললো,
‘ কই না তো কে থাকবে গ্র্যান্ডমা।’
‘ আমি একবার তোমার রুমে যেতে চাই প্রিয়তা?’
প্রিয়তার বুকটা যেন কেঁপে উঠলো এখন কি করবে সে। কি জবাব দিবে গ্র্যান্ডমাকে। প্রিয়তাকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবারও বললো গ্র্যান্ডমা,
‘ কি হলো চলো তোমার রুমে যাই প্রিয়তা?’
উত্তরে খানিকটা চমকানো গলায় বললো প্রিয়তা,
‘ হুম চলো কেন নয়।’
বলেই ভয়ে ভয়ে প্রিয়তা চললো গ্র্যান্ডমাকে নিয়ে। এদিকে ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হচ্ছে প্রিয়তার। মনে মনে বলছে খুব অপূর্ব যেন এখন ওয়াশরুমে থাকে।’
অন্যদিকে গ্র্যান্ডমা এগিয়ে চলছেন প্রিয়তার রুমের দিকে। কতক্ষন আগে এখান থেকে কাউকে যেতে দেখেছে গ্র্যান্ডমা যদিও সেই সময় তার চোখে চশমা ছিল না সত্যি দেখেছে নাকি ভুল ঠিক বুঝতে পারছেন না তাই সন্দেহের বসেই প্রিয়তার রুমে যাওয়া তার।
প্রিয়তা তার হাত কচলাচ্ছে, গ্র্যান্ডমা অপূর্বকে দেখে ফেললে কি হবে কে জানে। অতঃপর প্রিয়তা আর গ্র্যান্ডমা হাঁটতে হাঁটতে চলে আসলো প্রিয়তার রুমের কাছে দরজা চাপানো ছিল। প্রিয়তার দরজার কাছাকাছি আসতেই খানিকটা উচ্চস্বরে বললো,
‘ দাদিমা তুমি এত দ্রুত হেঁটে কেন আমার রুমে যাচ্ছো একটু আস্তেও তো হাঁটতে পারো।’
উত্তরে গ্র্যান্ডমা কিছু না বলেই দ্রুত প্রিয়তার রুমের দরজা সামনে দাঁড়িয়ে দরজা খুলে ফেললেন। আশপাশে তাকাতেই মুচকি হাসলেন তিনি। কারন তার সন্দেহ ভুল কেউ নেই প্রিয়তার রুমে। তার মানে চোখে চশমা না থাকায় ভুলই দেখেছেন তিনি। প্রিয়তা ভয়ে ভয়ে গ্র্যান্ডমার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ দাদিমা কেউ কি আছে?’
প্রিয়তার কথা শুনে গ্র্যান্ডমাও বললেন,
‘ না আমার চোখের ভুল ছিল বোধহয়।’
এরই মাঝে সেখানে উপস্থিত হলো আয়মান। গ্র্যান্ডমা আর প্রিয়তাকে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো,
‘ কি ব্যাপার তোমরা দুজন ওখানে কেন দাঁড়িয়ে আছো গ্র্যান্ডমা?’
হুট করেই আয়মানের কন্ঠ কানে আসতেই গ্র্যান্ডমা, প্রিয়তা দুজনেই তাকালো আয়মানের দিকে। গ্র্যান্ডমা তো খুশি হয়ে বললো,
‘ তুমি এসেছো আয়মান?’
আয়মানও খুশি হয়ে বললো,
‘ হুম গ্র্যান্ডমা। কিন্তু তোমরা দুজন এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিলে?’
উত্তরে আয়মানকে নিজের রুমের দিকে নিয়ে যেতে যেতে বললো গ্র্যান্ডমা,
‘ তেমন কোনো ব্যাপার নয় আয়মান ওই একটু প্রিয়তার রুমে হাঁটতে হাঁটতে ঢুকতে যাচ্ছিলাম।’
গ্র্যান্ডমার কথা শুনে একপলক প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে এতটুকুই বললো আয়মান,
‘ ওহ!’
গ্র্যান্ডমা আর আয়মান চলে গেল আর প্রিয়তা কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে দ্রুত ঢুকলো নিজের রুমে। অপূর্ব কোথায় লুকিয়েছে দেখতে হবে তাকে।’
প্রিয়তা রুমে ঢুকে আশেপাশে অপূর্বকে খুঁজতেই অবাক কারন রুমে অপূর্ব নেই প্রিয়তা ওয়াশরুম, বেলকনি, রান্নাঘর সবজায়গায় দেখলো কিন্তু অপূর্ব কোথায়ও নেই। তাহলে অপূর্ব গেল কই?’ প্রিয়তার চোখ যখন অস্থির হয়ে অপূর্বকে খুঁজছিল তখনই প্রিয়তার চোখ গেল তার টেবিলটার দিকে অপূর্বের গায়ে জড়ানো খয়েরী শার্টটাও সেখানে রয়েছে তার মানে অপূর্ব সত্যি সত্যিই চলে গেছে। আকিব এসে পড়েছিল বোধহয়।’
প্রিয়তা এগিয়ে গেল তার টেবিলটার দিকে কিছু একটা আছে সেখানে। হয়তো অপূর্বের দিয়ে যাওয়া কোনো মেসেজ।’
____
ঘড়িতে এগোটার কাঁটায় ছুঁই ছুঁই। আকিবের আনা ক্রিম কালার ফুলহাতার টিশার্ট পড়ে গাড়িতে বসে আছে অপূর্ব। কতক্ষন আগেই গাড়িতে এসে বসেছে সে। অপূর্ব ঠিকভাবে বসতেই আকিব গাড়ি চালাতে শুরু করলো কতদূর এগোতেই বললো আকিব,
‘ ভাই কাল রাতে কি হয়েছিল আপনি প্রিয়তার এখানে কেন উঠে ছিলেন আর এত আঘাত কি করে পেলেন।’
উত্তরে গম্ভীর আওয়াজেই বললো অপূর্ব,
‘ প্রতিশোধের আঘাত দিয়েছে আকিব।’
আকিব যেন চরম ভাবে অবাক হলো। বললো,
‘ কি ভাই?’
‘ পুরনো দিনের ভুল বোঝাবুঝিটা বোধহয় আবার জাগ্রত হয়েছে আকিব।’
অপূর্বের কথা শুনে আকিব অনেকক্ষন চুপ থেকে বললো,
‘ সে ফিরে এসেছে ভাই?’
‘ হয়তো। আমার একটা ইনফরমেশন চাই আকিব?’
অপূর্বের কথা শুনে বিস্ময়ের ভিড়েই বললো আকিব,
‘ কোনো ব্যাপার না ভাই হয়ে যাবে।’
উত্তরে অপূর্ব আর কিছু বলে না। নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকে জানালার দিকে তাকিয়ে রয় নিশ্চুপ প্রকৃতির দিকে। এই মুহূর্তে প্রিয়তাকে ছাড়া আর কিছু ভাবতে ইচ্ছে করছে না অপূর্বের। এতক্ষণে নিশ্চয়ই প্রিয়তা তার ক’অক্ষরের লিখে আসা চিরকুটটা পেয়েছে।’
‘ চিঠিটা পড়ে আঘাতটা কি খুব পাবে তুমি?’
___
নীরবে অপূর্বের লিখে যাওয়া চিরকুট হাতে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়তা। যেখানে গোটা গোটা অক্ষরে লিখে গেছে অপূর্ব,
‘ তুমি খুব ভালো মেয়ে কিন্তু কি বলো তো মাঝে মধ্যে কিছু কিছু অনুভূতিকে খুব বেশি গুরুত্ব দিতে নেই। দুনিয়া বড্ড নিষ্ঠুর মায়াবিনী, এখানে ভালোবাসার মূল্য খুব কঠিনভাবে দিতে হয়। তাই আমি চাই না আমার জন্য তোমার জীবনটা কঠিন হোক, জটিলতায় ভেসে বেড়াক। আমার জীবন রঙিন নয় কিন্তু তোমার জীবন রঙিন হোক। পারলে আমায় ভুলে যেও,
আর হ্যাঁ সবসময় ভালো থাকবে। কারন তোমার জীবনটাকে যে সুন্দর করতে হবে। আমি আছি, কাছ থেকে না হলেও দূর থেকে আমি আছি তোমার পাশে। সবশেষে বলবো আমার সেবা করার জন্য শুকরিয়া প্রিয় প্রেমবালিকা। তোমার জীবনটা আমিহীন সুখের হোক।’
ইতি,
~ অপূর্ব!’
প্রিয়তা অপূর্বের চিরকুটটা বুকে জড়িয়ে ধরলো। খারাপ লাগছে তার। তার প্রথম ভালোবাসা বোধহয় অসমাপ্তই থেকে যাবে। প্রিয়তা কান্না ভেজা মুখশ্রী নিয়েই বললো,
‘ আমার সুখ চাইলেন অপূর্ব কিন্তু আমার সুখটা যে আপনি এটা বুঝলেন না।’
____
দুপুরের কড়া রোদ্দুরে আচ্ছন্ন চারপাশ। গাছের পাতা দুলছে থেকে থেকে বার বার, পাখিরা উড়ছে মন খুলে, বাতাস বইছে মন ছুঁয়ে, ঘাসের ডগায় ছোট্ট ছোট্ট ঘাসফড়িংরা লাফাচ্ছে বারংবার। আর এসবের ভিড়েই ভার্সিটি শেষে একটা বড় গাছের নিচে সাদা বেঞ্চের ভিড়ে বসে আছে প্রিয়তা। চোখে মুখে বিষন্নতা। আজ চারদিন হলো অপূর্বের সাথে তার দেখা নেই যোগাযোগ নেই। ভালোবাসা মানুষকে খুব কাঁদায় বেশি কাঁদায় প্রিয় মানুষটার শূন্যতায়, তাকে না পাওয়ার যন্ত্রণায়। প্রিয়তা দীর্ঘ শ্বাসের নিঃশ্বাস ফেলে একা একা আওড়ালো,
‘ আপনি খুব খারাপ অপূর্ব। আমাকে বুঝলেন না।’
প্রিয়তার কথা শেষ হতে না হতেই পাশ থেকে খুব গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠল কেউ,
‘ আমাকে খারাপ বলো না মেয়ে, আমি সত্যি সত্যি খারাপ হয়ে গেলে তুমি কিন্তু ভয় পেয়ে যাবে।’
#চলবে….
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে]
#TanjiL_Mim♥️