#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১৮
_________________
বেশ খানিকটা অবাক সাথে হতাশা ভরা চেহারা নিয়ে তাকিয়ে অপূর্বের বাবা অপূর্বের মুখের দিকে। খুন করার মতো কত বড় শক্ত পক্ত কথা বললো অথচ কত শান্ত গলায়। যেন খুব স্বাভাবিক একটা কথা। অপূর্বের বাবা অপূর্বের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ কে করেছে এমনটা?’
‘ তুমি সব জানো বাবা?’
‘ একটু আকটু। তোমায় এটাক করেছে তুমি কি তাকে এমনি এমনি ছেড়ে দিবে,
‘ মানুষ খুব খারাপ বাবা?’
‘ কে ক্ষতি চাইছে তোমার আকিব,
‘ ও আমার ভাই বাবা ও এমনটা কখনোই করবে না।’
‘ আকিবের বাবা তো আমার বন্ধু।’
হাসে অপূর্ব। বলে,
‘ ড্রাইভার কারো বন্ধু হয় নাকি,
‘ ড্রাইভারের ছেলে বন্ধু হতে পারলে ড্রাইভার কেন হতে পারবে না।’
আবারো হাসে অপূর্ব। যেন তার বাবা হাসানোর মতো কিছু বলেছে। ছেলের হাসির দিকে মলিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো অপূর্বের বাবা। ছেলেটা যে কষ্ট পেয়েছে সেটা ঠিকই বুঝেছেন উনি। অপূর্বের বাবা অপূর্বের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ তোমার কি মনে হয় ওই সব করেছে?’
‘ ও খুব বোকা বাবা কিন্তু আমায় খুব ভালোবাসে।’
‘ ভালোবাসার মানুষেরাই কিন্তু সবচেয়ে বড় আঘাতটা করে অপূর্ব।’
‘ তাহলে তো তুমিও করতে পারো বাবা।’
অপূর্বের বাবা থমকে গেলেন এই কথাটা একদমই আশা করেন নি তিনি ছেলের মুখে। অপূর্বের বাবা চুপ হয়ে গেল যা দেখে অপূর্ব তার বাবার কোলের ওপর থেকে মাথাটা সরিয়ে বললো,
‘ ঘুমাতে যাও বাবা রাত অনেক হয়ে গেছে।’
উওরে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো অপূর্বের বাবা,
‘ তুমি ঘুমাবে না।’
শুঁকনো হাসে অপূর্ব। বলে,
‘ হুম ঘুমাবো তো তুমি যাও,
কিন্তু অপূর্বের বাবা গেলেন না ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন। যা দেখে অপূর্ব বলে,
‘ আজ রাতে কি এখানে থাকার প্ল্যান করেছো বাবা?’
‘ তুমি যাও আগে,
অপূর্ব শুনলো বাবার কথা এক নিমিষেই রাজি হয়ে বললো,
‘ ঠিক আছে গুড নাইট বাবা।’
বলেই মোবাইল হাতে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে চলে যায় অপূর্ব। হঠাৎই অপূর্বের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে বললো অপূর্বের বাবা,
‘ কাল ওকে সত্যি মারবে অপূর্ব?’
জবাবে কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে অপূর্ব,
‘ দেখি,
অতঃপর চলে যায় অপূর্ব। আর ফিরে তাকায় না সে আর ছেলের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থ মেরে দাঁড়িয়ে থাকে অপূর্বের বাবা। সে বুঝেছে
‘আজ তার ছেলের মন ভালো নেই’
____
সকালের ফুড়ফুড়ে আলো। গাছের পাতা নড়ছে আনমনে, শিরশিরিয়ে আসছে শীতল বাতাস। হঠাৎই টেবিলের কর্নারে থাকা এলার্ম ঘড়িটার বিকট শব্দ কানে আসতেই বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো প্রিয়তা। ভার্সিটি যেতে হবে তাকে, প্রিয়তা বেশি না ভেবেই দ্রুত ছুটে গেল ওয়াশরুমের দিকে,
বাড়ির চারদিকটা ঘুরে ঘুরে দেখছিল আয়মান। এই প্রথমই সে আসলো তার গ্র্যান্ডমার বাড়ি। এর আগে শুধু ফোনেই যা কথা বলেছে এই যা। আয়মানের বাবা জানে না আয়মান এখানে এসেছে। জানলে হয়তো আসতে দিত না। আয়মান বুঝে না আয়মানকে তার বাবা এখানে কেন আসতে দিতে চায় না। নিজেও আসে না আর তাকেও আসতে দিতে চায় না। আয়মান চারপাশ ঘুরতে ঘুরতে উঠে পড়ে ছাঁদে। তারপর খয়েরী রঙের রেলিংয়ের সাথে গা এলিয়ে দাঁড়ায় সে। এমন সময় হঠাৎই চোখ গেল তার কালো বোরকা পরিধিত হতভম্ব হয়ে এগিয়ে আসা এক রমনীর দিকে, মেয়েটা যে প্রিয়তা তা আয়মান ওর চোখ দেখেই বুঝেছে। আয়মান ডাকলো প্রিয়তাকে হঠাৎই বললো,
‘ এই যে মিস এড্রেস ওয়ালী এমন হতভম্ব হয়ে যাচ্ছেন কই?’
প্রিয়তা যেন চমকালো ছাঁদের দিকে তাকালো সে। কালকের সেই ছেলে আয়মানকে দেখে খানিকটা অবাক হয়ে বললো,
‘ আপনি?’
‘ হুম আমি তা যাচ্ছেন কই?’
প্রিয়তা বেশি ছড়ালো না হেঁটে যেতে যেতে বললো,
‘ জ্বী ভার্সিটি।’
বলেই আর না দাঁড়িয়ে চলে গেল প্রিয়তা। আর আয়মান প্রিয়তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে মুচকি হাসলো। তার কি মেয়েটাকে ভালো লেগেছে ঠিক বুঝতে পারলো না।’
___
ঘড়ির কাঁটায় ঠিক দুপুর বারোটার কাটায় ছুঁই ছুঁই। অপূর্ব বসে আছে আসিফ নামের সেই ছেলেটিকে আনা পুরনো বাংলোর ভিতর। তাকে ঘিরে ধরে আছে অনেক লোক। অপূর্ব চুপচাপ বসে আছে কাউকে কিছুই বলছে না সে, হঠাৎই তুহিন এগিয়ে আসলো বললো,
‘ ভাই আকিবকে ফোন করেছি ও আসছে?’
উওরে শুধু এতটুকুই বলে অপূর্ব,
‘ ঠিক আছে।’
অপূর্ব বসে আছে চুপচাপ। প্রায় দশ মিনিটের মতো সময় নিয়ে আকিব আসলো অপূর্বের কাছে। অপূর্ব স্থির দৃষ্টিতে শুধু তাকিয়ে রইলো আকিবের আসার পানে, আকিব এসে দাড়ালো অপূর্বের থেকে চারহাত দূরত্ব নিয়ে। আকিব দাড়াতেই অপূর্ব তুহিনকে কিছু ইশারা করলো তুহিনও বুঝলো সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত সকলকে ইশারা করলো তুহিন। তুহিন ইশারা করতেই বাংলোতে উপস্থিত সবাই চলে গেল ওখান থেকে শুধু থেকে গেল তুহিন আর আকিব। পাশাপাশিই দাঁড়িয়ে ছিল। আকিব অপূর্বের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
‘ কিছু কি হয়েছে ভাই? আপনায় ঠিক লাগছে না।’
অপূর্ব এবার বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো একটু একটু করে এগিয়ে যেতে লাগলো সে আকিবের দিকে। তারপর শান্ত গলায় বললো,
‘ কাল সকালে তুমি কোথায় ছিলে আকিব?’
আকিব খানিকটা থমকালো। বললো,
‘ কেন ভাই আপনার কথা মতো শাহরিয়া আদনানের খোঁজ করতে গেছিলাম?’
‘ খোঁজ করতে গেছিলে নাকি খুন করতে?’
আকিব অবাক হলো, চরম অবাক হলো। ভড়কানো গলায় বললো,
‘ এসব আপনি কি বলছেন ভাই?’
‘ বেশি বোকা সেজো না আকিব, তোমাকে বোকা ভেবে এতদিন আমি ভুল করেছি, কি করে তুমি আমার সাথে বেইমানি করলে আকিব? আমি তোমায় বন্ধু ভেবেছিলাম, আমায় এভাবে ঠকালে আমারই লোক হয়ে আমাকেই খুন করতে সাহায্য করলে?’
আকিব যেন আকাশ ভেঙে পড়লো, তার বুক ধড়ফড় করছে এসব কি বলছে তার অপূর্ব ভাই। আকিব থমথমে গলায় বললো,
‘ এসব কি বলছেন ভাই?’
‘ তুমি কিছু বুঝচ্ছো না আকিব?’
আকিব মাথা নাড়ালো যার অর্থ সে সত্যি কিছু বুঝচ্ছে না। অপূর্ব আকিবের মাথা নাড়ানো দেখে তুহিনকে বললো,
‘ আকিবকে ভিডিওটা দেখাও তুহিন?’
তুহিনও অপূর্বের কথা মতো এগিয়ে এসে মোবাইল হাতে দেখালো একটা ভিডিও ফুটেজ। যেখানে দেখাচ্ছে শাহরিয়া আদনানের পেটের ভিতর থেকে ধারালো চাকু বের করছে আকিব। আকিব যেন এই ভিডিও দেখে থমকে গেল। অপূর্বকে ঘাবড়ানো গলায় বললো,
‘ ভাই আমি কিছু করে নি আমি আদনানকে মারি নি?’
অপূর্ব শুঁকনো হাসে। বলে,
‘ আমি তোমায় একবারও বলেছি তুমি আদনানকে মেরেছো আকিব।’
আকিব ঘাবড়ে গেছে তার শরীর থরথর করে কাঁপছে। অপূর্ব আকিবের দিকে এগিয়ে গেল প্যান্টের পিছন থেকে ধারালো চাকু বের করলো সে। তারপর শান্ত ভাবেই বললো আবার,
‘ এমনটা কেন করলে আকিব, তুমি তো আমার বিশ্বস্ত ছিলে।’
আকিব অসহায় দৃষ্টিতে অপূর্বের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
‘ আমি কিছু করি নি ভাই বিশ্বাস করুন।’
অপূর্ব হাসে। মারাত্মক রহস্যময়ী হাসি দেয় সে। তারপর একপলক আকিবের দিকে তাকিয়ে তুহিনকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘ বিশ্বাস, মানুষ তো বিশ্বাসের উপযোগী নয় তাই না তুহিন?’
তুহিনও সায় দেয় অপূর্বের। বলে,
‘ জ্বী ভাই। আমিও ভাবি নি আকিব এমন কিছু করবে?’
অপূর্ব তুহিনের থেকে দৃষ্টি সরায় বলে,
‘ দেখলে তো আকিব তুহিনও তাই বলছে।’
আকিব ভেবে পায় না কি বলবে এখন। তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করা হচ্ছে এটা কি তার অপূর্ব ভাই বুঝচ্ছে না। সে সত্যি কিছু করে নি। আকিবকে চুপ থাকতে দেখে আবারও বলে অপূর্ব,
‘ তোমায় এখন মেরে দিলে তুমি কি খুব যন্ত্রণা পাবে আকিব?’
আকিব জবাব দেয় না। নির্বিকার হয়ে শুধু তাকিয়ে রয় সে অপূর্বের দিকে। অপূর্ব একটু একটু করে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে আকিবকে। তারপর বলে,
‘ আমি তোমার থেকে এমনটা আশা করি নি আকিব, বিদায় বন্ধু।’
বলেই হাতে থাকা ধাঁরালো চাকুটা চালালো অপূর্ব। সঙ্গে সঙ্গে থমকে গেল আকিব চোখ বন্ধ করে নিলো নিমিষেই।’
প্রায় পাঁচ সেকেন্ড পর,
হঠাৎই আকিব বুঝলো সে কোনো আঘাত পায় নি। তার কোনো কষ্টও লাগছে না। তবে কি আকিবকে মারে নি অপূর্ব।’
অন্যদিকে,
তুহিন হতভম্ব হলো হুট করে কি থেকে কি হলো সে বুঝে উঠতে পারলো না। কারন অপূর্ব তার হাতের চাকুটা আকিব নয় সোজা তুহিনের পেটের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়েছে। তুহিন এলিয়ে পড়লো নিচে, তাজা রক্তে ফ্লোর গেল ভিজে। অপূর্ব তুহিনের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ মানুষ আসলেই বিশ্বাসের উপযোগী নয় তুহিন?’
#চলবে…..
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।]
#TanjiL_Mim♥️