#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১৬
_________________
বেশ ভাবনা নিয়েই নিজের রুমে দাঁড়িয়ে আছে অপূর্ব। চোখে মুখে অশেষ বিষন্নতার ছোঁয়া। অপূর্ব সত্যি বুঝচ্ছে না SA আর এই শাহরিয়ার আদনান আসলেই কি একজন মানুষ নাকি দুজন আলাদা ব্যক্তি। অপূর্ব তার ফোনটা বের করলো কল করলো আকিবের নাম্বারে। দু’বার রিং হতেই ফোন তুললো আকিব। বললো,
‘ জ্বী ভাই বলুন,
আকিবের কন্ঠ কানে আসতেই বললো অপূর্ব,
‘ আকিব আমার একটা লোকের ফুল বায়োডাটা চাই।’
উওরে বেশ বিস্ময় নিয়েই বললো আকিব,
‘ কার ভাই?’
আকিবের কথা শুনে বেশি না ভেবেই বেশ গম্ভীর কণ্ঠে বললো অপূর্ব,
‘ শাহরিয়ার আদনান।’
____
রাতের নিকষ কালো অন্ধকারের ঘেরা চারপাশ। গাছের পাতাগুলো নড়ছে আনমনে, বেলকনি বেয়ে হাল্কা হিমশীতল বাতাস আসছে। দরজা জুড়ে সাদা পর্দাগুলো নড়ছে আপনমনে। আর এসবের মাঝে রান্নাঘরে চা বানাচ্ছে প্রিয়তা। তন্দ্রা দাদিমা রুমে বসে টিভি দেখছেন। আজ প্রিয়তাই ইচ্ছে পোষণ করলো যে সন্ধ্যার পরের চা টা সেই বানাবে দাদিমাও শুনলো, অনেকদিন তো হলো নিজ হাতের চা খাওয়া আজ নয় ওই অল্প বয়সী যুবতী মেয়ের হাতে চা খাওয়া যাক। প্রায় আধ ঘন্টা পর গরম গরম দু’কাপ দুধ চা বানিয়ে রুমে ঢুকলো প্রিয়তা তারপর গ্র্যান্ডমার দিকে এক কাপ চা এগিয়ে দিয়ে বললো,
‘ খাও দাদিমা।’
দাদিমাও নিলেন খুশি হলেন খুব। তারপর চায়ের চুমুক দিয়ে বললো,
‘ বাহ নাতনি তো দেখি খুব ভালোই চা বানাতে পারে।’
মুচকি হাসে প্রিয়তা। বলে,
‘ তোমার ভালো লেগেছে দাদিমা,
উওরে দাদিমাও মাথা নাড়িয়ে বলে,
‘ হুম খুব, তা আজকে কেমন কাটলো দিন। ভার্সিটি ভর্তি হতে পেরেছো তো?’
‘ হুম দাদিমা।’
‘ খুব ভালো কাল থেকেই ভার্সিটি যাবে তো?’
‘ হুম।’
বলেই চা খেতে খেতে গল্প জুড়ে দেয় দুজন। হঠাৎই প্রিয়তা বলে,
‘ দাদিমা তোমার মোবাইলটা একটু দিবে,
দাদিমাও শুনলো বিছানার উপর থেকে নিজের ফোনটা এনে প্রিয়তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
‘ হুম নেও কাউকে ফোন করবে বুঝি?’
উওরে খানিকটা নিরাশ হয়ে বললো প্রিয়তা,
‘ হুম বুবুকে আজ কতদিন হলো বুবুর সাথে কথা হয় না।’
প্রিয়তার মন খারাপ দেখে ওর মাথা হাত বুলাতে বুলাতে বললো গ্র্যান্ডমা,
‘ মন খারাপ করো দিদিভাই ফোন করে কথা বলে নেও,
প্রিয়তাও শুনলো চোখের ভিড়ে খানিকটা পানি আসায় সেটা মুছে নিজের রুমের উদ্দেশ্যে দৌড়ালো প্রিয়তা। তারপর ডাইরির পৃষ্ঠার থেকে বোনের নাম্বারটা লিখে কল করলো তক্ষৎনাত। পর পর তিনবার কল করলো প্রিয়তা, কিন্তু হতাশার বিষয় হলো প্রেমা ফোন তুললো না। প্রিয়তার চোখে পানি চলে এলো আবার। কান্না ভেজা কন্ঠ নিয়েই বললো,
‘ তুই ফোন কেন তুলছিস না বুবু?’
এমন সময় হঠাৎই যেন অপূর্ব তার পাশে এসে দাঁড়ালো। বললো,
‘ এভাবে কেঁদো না মেয়ে, তুমি কাঁদলে যে একদমই সুন্দর দেখায় না।’
প্রিয়তা যেন চমকালো,পাশ ফিরে তাকালো তক্ষৎনাত কিন্তু আশেপাশে কাউকেই দেখলো না। সে কি ভুল শুনলো, কেন যেন মনে হলো অপূর্ব তাকে কিছু বললো তাকে কাঁদতে বারন করলো। কিন্তু এটা কি করে সম্ভব অপূর্ব এখানে কি করে আসবে। হয়তো তার মনের ভুল।’
____
পরেরদিন দুপুরের কড়া রোদ্দুরে আচ্ছন্ন চারপাশ পাশ। টিভি রুমের সোফায় বসে আছে অপূর্ব। গা জুড়ে থাকা কালো শার্টটা ঘেমে লেপ্টে আছে শরীরের সাথে। আজ একটা ছেলের সাথে তুমুল বেগে ঝগড়া হয়েছে অপূর্বের, ইলেকশনের মিটিং নিয়ে কিছু একটা ডিসকাস হচ্ছিল সবার সাথে তখনই অপূর্বকে নিয়ে উল্টো পাল্টা কথা বলায় রেগে যায় অপূর্ব। আর রেগে গিয়ে গায়ে হাতও তুলে বসে সে। আজ আকিব ছিল না অপূর্বের সঙ্গে তাই তাকে দমানোরও কেউ ছিল না। শেষে অপূর্ব সবাইকে উপেক্ষা করে চলে আসে বাড়ি। আজ যেন মাথাটা একটু বেশিই গরম হচ্ছে অপূর্বের। একই তো শাহরিয়ার আদনানের বায়োডাটার কোনো খবরই এখন পর্যন্ত আকিব কিছু দিতে পারছে না তাকে তারপর দলের মানুষের উটকো ঝামেলা। অপূর্ব জোরে জোরে নিশ্বাস ফেললো এমন সময় বাড়ির ভিতর উৎকন্ঠা অবস্থা নিয়ে দৌড়ে আসলো আকিব। চুলগুলো এলেমেলো, চোখে মুখে বিষন্নতা। আকিব হতভম্ব হয়ে দৌড়ে আসতে গিয়ে সোফার সাথে উস্টা খেয়ে উল্টে পড়লো সোফার ওপর তারপর বললো,
‘ অপূর্ব ভাই,
অপূর্ব চোখ খুলে তাকালো শান্ত গলাতেই বললো,
‘ তুমি আজও ঠিকভাবে হাঁটা শিখলে না আকিব।’
উওরে আকিব বললো,
‘ ওসব বাদ দিন ভাই আগে টিভিতে নিউজের চ্যানেলটা দেখুন,
‘ কেন কি দেখাচ্ছে নিউজে,
আকিব বললো না, নিজেকে সামলিয়ে তক্ষৎনাত সোফা থেকে উঠে অপূর্বদের টিভিটা ছাড়লো। অপূর্বও তাকালো টিভির পর্দায়। আকিব নিউজের চ্যানেলটা ধরতেই এক ভদ্র মহিলা বলছে,
‘ ব্রেকিং নিউজ! আশকোনার ছাত্রদলীয় নেতা আবু তালেবের ছেলে শাহরিয়ার আদনান আজ সকালে নিজ বাড়িতে খুন হয়েছে, কি করে কি হলো কেউ কিছু বলতে পারছে না। কোনো এক বিশেষ কারনে বাড়ির সবাই গিয়েছিলেন তাদের এক আত্মীয়ের বাড়ি। শাহরিয়ার আদনানেরও নাকি সকালের দিকে যাওয়ার কথা ছিল ওখানে কিন্তু উনি না যাওয়ায় এবং ফোন করলে ফোন না তোলায় কেমন সন্দেহ লাগে সবার। পরে দুপুরের দিকে বাড়ি এসে তাকে খুন হতে দেখা যায় বাড়িতে, মুখটাকে পুরো থেতলে দিয়েছে খুনি। ঘটনা স্থলে পুলিশও পৌঁছে গেছেন ইতি মধ্যে। তদন্ত চলছে,
বলেই আদনানের মৃতদেহের মুখটা ফ্যাকাসে করে দেখাতে লাগলো টিভিতেই। আদনানের মা বাবার সাথেও কথা বলা হচ্ছে এমনটাও দেখাচ্ছে টিভিতে।’
অপূর্ব যেন দু’মিনিটের জন্য পুরো থমকে গেল এটা কে করলো। অপূর্বের ভাবনার মাঝেই আকিব বললো,
‘ ভাই খবরাখবর বের করতে গিয়েই এই নিউজটা চোখে পড়ে। কে বা কারা করেছে জানা নেই। আপনার কি এখনো মনে হয় ভাই শাহরিয়ার আদনানই এস এ।’
উওরে আকিবের দিকে তাকিয়ে বললো অপূর্ব,
‘ আদনানকে কে মারতে পারে আকিব?’
‘ জানি না তো ভাই।’
‘ জানতে হবে আকিব।’
‘ ঠিক আছে ভাই পুলিশ তো তদন্ত করছে।’
‘ পুলিশের আশায় বসে থাকা যাবে না আকিব, এ নিশ্চয়ই কোনো বড় ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে।’
‘ হতে পারে ভাই।’
অপূর্ব কিছু বলে না। গভীর ভাবনায় মগ্ন হয়। টিভির পর্দায় দৃষ্টি রাখলো আবার। আদনানের দেহটা চোখে পড়লো। না যা হলো একদমই ঠিক হয় নি, একদমই না। কিন্তু আদনানকে মারলো কে এই ‘এস এ’। না এখনও এস এর চাপ্টার ক্লিয়ার হয় নি। এই এস এ কে জানতেই হবে, আদনান যদি এস এ হয় তাহলে নিশ্চয়ই এস এর ওপর আরো কোনো বড় মাথা আছে যে আড়াল থেকে এসব করছে, কিন্তু তার সাথে এই আদনানের কি শত্রুতামি থাকতে পারে, আদনান তো এখন পর্যন্ত রাজনীতির দলেই যুক্ত হয় নি, দলে যুক্ত হওয়ার আগেই, না আর ভাবা যাচ্ছে না। অপূর্ব তার চোখ বন্ধ করে ফেললো। এস এর বিষয়টাকে ঠিক যতটা সহজভাবে নিয়েছিল অপূর্ব বিষয়টা ততটাও সহজ নয়। আবার সবকিছু জট পাকিয়ে গেল, কে হতে পারে এই শাহরিয়ার আদনানের খুনি? কে?’
____
অন্ধকার বদ্ধ রুমে টিভি চলছে একটা। টিভিতে আদনানের খুনের নিউজ দেখাচ্ছে। সোফার ওপর পায়ের পা রেখে বসে আছে এক সুদর্শন যুবক। টিভির চ্যানেলের দিকে তাকিয়ে ভয়ংকর এক হাসি দিয়ে বললো সে,
‘ এবার কি করে SA কে খুঁজে বের করবে অপূর্ব? এবার তো আরেক ঝামেলা এসে মাথায় ঝট পাকালো এবার কি হবে?’
বলেই উচ্চ স্বরে হাসলো যুবকটি। ঘর কাঁপানো এক ভয়ংকর হাসি।’
____
বিকেলের ফুড়ফুড়ে বাতাস। মাথায় ওড়না মুড়িয়ে বাড়ি থেকে সল্প খানিকটা দূরত্বে একটা টিউশনি পড়াতে যাচ্ছে প্রিয়তা। আজই প্রথম দিন তার টিউশনির। টিউশনটা বাড়ির কাছাকাছি হওয়ায় বোরকা পড়েনি প্রিয়তা তবে মুখে ভালোমতো ওড়না মুড়িয়ে যাচ্ছে সে। কাল ভার্সিটি থেকে ফিরেই গ্র্যান্ডমা তাকে নিয়ে যায় স্টুডেন্টের বাড়ি, কথাও হয়েছে ফ্যামিলির সাথে। বাসায় গিয়ে পড়াতে হবে এমনটাই বলেছে তারা প্রিয়তারও টিউশনিটা খুব দরকার ছিল তাই রাজি হয়ে যায় আর স্টুডেন্টের বাড়িটাও খুব কাছে হওয়ায় খুব বেশি অসুবিধা হবে না বলে মনে করে প্রিয়তা। প্রিয়তা আনমনাই এগিয়ে চললো সামনে। এমন সময় একটা টেক্সি গাড়ি এসে থামলো প্রিয়তার সামনে। তারপর গাড়ির ভিতর থেকে একটা উঁচা লম্বা চুড়া উজ্জ্বল শ্যামবর্নের একটা ছেলে বের হয়ে বললো তাকে,
‘ এক্সকিউজ মি মিস আপনি কি বলতে পারবেন এখানে তন্দ্রা বিলাস নামের আলিশান একটা একতলা বাড়ি কোথায় আছে? আমি অনেক দূর থেকে এসেছি আপনি যদি জেনে থাকেন তাহলে একটু বলবেন প্লিজ।’
প্রিয়তা ভড়কালো, চমকালো, অবাক হলো খুব। এই ছেলে গ্র্যান্ডমার বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করছে কিন্তু কে এই ছেলে, সে তো জানে গ্র্যান্ডমার এখানে চেনা কেউ নেই তাহলে। প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই আবারও বললো ছেলেটি,
‘ কি হলো মিস আপনি জানেন তন্দ্রা বিলাস কোথায় আছে?’
প্রিয়তা নিজের ভাবনা থেকে বের হয় তারপর মাথা নাড়িয়ে বলে,
‘ হুম চিনি,
প্রিয়তার কথা শুনে ছেলেটির মুখে যেন হাসি ফুটে উঠলো। পাক্কা তিনঘণ্টা যাবৎ এই তন্দ্রা বিলাস খুজে চলেছিল ছেলেটি কিন্তু কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছিল না। যাকেই জিজ্ঞেস করেছে কেউ বলতে পারে নি। যাক ফাইনালি কেউ তো বললো সে জানে এই তন্দ্রা বিলাস সম্পর্কে। ছেলেটির হাসি মাখা মুখ দেখেই বললো প্রিয়তা,
‘ আপনার কি কাজ তন্দ্রা বিলাসে?”
‘ কাজ তো একটা আছেই যাই হোক আপনি শুধু বলুন বাড়িটা কোথা থেকে কোথায় গেলে পাবো।’
প্রিয়তা বেশি ভাবলো না। বললো,
‘ এখানে থেকে সোজা গিয়ে ডানে যাবেন তারপর দুটো মোর পেরোলেই তন্দ্রা বিলাস বাড়ি। তবে ডানে যাওয়ার পর কিন্তু আপনি এই গাড়িতে যেতে পারবেন না আপনাকে হেঁটেই যেতে হবে রাস্তা ছোট কি না।’
ছেলেটি খুশি হলো। বললো,
‘ থ্যাংক ইউ মিস ভালো থাকবেন।’
বলেই ছেলেটিও তার টেক্সি গাড়িতে উঠে ছুটলো তন্দ্রা বিলাসের উদ্দেশ্যে। আর প্রিয়তা কিছুক্ষন ছেলেটির যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে বেশি না ভেবে ছুটলো নিজের কাজে। কিন্তু তারপরও মনে প্রশ্ন একটা রয়েই গেল, কে এই ছেলে? কি সম্পর্ক এর সাথে গ্র্যান্ডমার?’
#চলবে…..