#ফেরারি_প্রেম
#পর্ব_২৬
#নিশাত_জাহান_নিশি
“একটু চুপ থাকুন প্লিজ। জাস্ট ফর টু মিনিটস। এরপর আপনি যা ইচ্ছা তা করুন। আমি কোনো অভিযোগ করবনা।”
নীহারিকার হাত থেকে ঝট করে হাতটা ছাড়িয়ে নিলো রূপল। নীহারিকার কথা সে মানতে নারাজ! হেয়ালী তার মোটেও পছন্দ নয়। সেই কখন থেকেই নীহারিকা তাকে এই ওই বলে বুঝিয়ে রেখেছে। তার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছেনা এই ধোঁয়াশার মধ্যে থাকা। তাই বিরক্ত হয়ে সে তিরিক্ষি পূর্ণ মেজাজে নীহারিকাকে শাসিয়ে বলল,
“এসব কী লাগিয়ে রেখেছেন আপনি? আসার পর থেকেই ভনিতা করে চলছেন। একচুয়েলি কী করতে চাইছেন আপনি? একটু ক্লিয়ারলি বলবেন?”
রূপলের রাগের ধার ধারল না নীহারিকা! এই মুহূর্তে রূপল এবং তার অপ্রয়োজনীয় রাগকে নিয়ে ভাববার সময় নেই তার। প্রশ্নে জর্জরিত রূপলকে উপেক্ষা করে সে আঁড়চোখে পিছনে তাকালো। বাইক থেকে তাড়াহুড়ো করে নামল সানি! অস্থির, নাজেহাল, দিশেহারা সে। কতটা চিন্তিত হলে সে খবরটা পাওয়া মাত্রই দশ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে? চোখেমুখে উদগ্রীবতার ছড়াছড়ি। তা দেখে ব্যগ্র হাসল নীহারিকা। পৈশাচিক আনন্দ খুঁজে পেল সে!
ঠিকানা অনুযায়ী সঠিক জায়গায় পৌঁছাতেই সানি তিনতলা বিশিষ্ট আবাসিক হোটেলটির দিকে তাকালো। এদিক ওদিক তাকানোর সময় নেই কার। পাগলা ঘোড়ার মত সে ছুটে চলল হোটেলটির ভেতরে! নীহারিকা এবং রূপলকে পাশ কাটিয়ে সে হোটেলের ভেতর প্রবেশ করতেই নীহারিকা স্বস্তির শ্বাস ফেলল। স্বাভাবিক হয়ে রূপলের দিকে তাকালো। মাথা থেকে ঘোমটটি সরিয়ে সে হাত দুটো ঝেড়ে বলল,
“তো এবার বলুন? কী যেন বলছিলেন?”
তেতে উঠল রূপল। অধৈর্য্য হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“আপনার মধ্যে কী চলছে কাইন্ডলি একটু বলবেন? সেই কখন থেকে কথায় কথায় আমাকে আটকে রেখেছেন। বোকা বানাচ্ছেন আমাকে? হেনস্তা করছেন?”
“আর পাঁচটা মিনিট অপেক্ষা করুন প্লিজ। এরপর দেখবেন আসল খেলা।”
পূর্ণ মেজাজ নিয়ে রূপল বলল,
“আমারই ভুল হয়েছিল আপনার মত একটা অদ্ভুত মেয়ের পেছনে দৌড়ে আসা! তাকে ধরতে আসা। এসব না করে আমার ফার্স্টেই জিজুকে কল করে খবরটা জানিয়ে দেওয়া উচিৎ ছিল। জিজু এসেই আপনাকে একটা উচিৎ শিক্ষা দিত! বাসায় গেলাম আমি। যার পরিবারের লোককে সে এসে সামলাবে।”
বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে রূপল পিছু ঘুরতেই নীহারিকা বাঁধ সাধল। ব্যাকুল স্বরে বলল,
“একটা মিনিট দাড়ান প্লিজ। আপনি জানতে চাননা আমি এখানে কী করছি? কিছু না জেনে শুনে ভাইয়াকে কিছু বললেই তো হয়ে গেলনা! তাছাড়া বাড়িতে কী কাজ আপনার?”
থামল রূপল। রাগ ভুলে হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেল সে। খানিক ভরাট গলায় বলল,
“সবিতা তার বাড়িতে সুহাসিনীর জন্য ছোটো খাটো একটা মিলাদের আয়োজন করছে! ওখানে আমার এটেন্ড থাকতে হবে।”
অবিলম্বেই রূপলের মুখোমুখি এসে দাড়ালো নীহারিকা। রূপলের দু’চোখে তার অধীর দৃষ্টি জোড়া স্থাপন করে বলল,
“আপনার চোখে জল কেন?”
ইতোমধ্যেই বেঁধে গেল মহা তুলকালাম! হোটেল রুম থেকে সানি টেনে হিঁছড়ে ছেলেটিকে বের করে আনল! শুধু তাই নয় ছেলেটির পেছনে পেছনে দিশাও বের হয়ে এলো! হোটেলের ম্যানেজার হতে মালিকরাও হোটেল থেকে বের হয়ে বাইরে চলে এলো। সানির তার বাবার ক্ষমতার ভয় দেখিয়ে হোটেলের প্রত্যেকটা কর্মচারীকে নাস্তানাবুদ করে রাখল। এই সুযোগে নীহারিকা রূপলকে নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে অনেকখানি দূরে সরে এলো! আড়ালে দাড়িয়ে সে লুকিয়ে লুকিয়ে দিশা, সানি এবং ছেলেটির কার্যকলাপ দেখছে! কোনো কথাবার্তা ছাড়াই সানি ঠাস ঠাস করে চড় মেরে বসছে ছেলেটিকে! সাথে মাথা নুইয়ে কাঁদতে থাকা দিশারও চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করছে। এই দৃশ্য দেখে নীহারিকার চোখ জুড়িয়ে এলো। পৈশাচিক হেসে সে আনন্দে হাবুডুবু খেলেও রূপলের মধ্যে মানবতা বোধ জেগে উঠল! ঘটনাস্থলে যাওয়ার জন্য সে পা বাড়ালো। উদ্বিগ্ন গলায় বলল,
“আরে ছেলেটাকে এভাবে মারধর করছে কেন? কী হচ্ছে ওখানে?”
অমনি নীহারিকার বাঁধ ভাঙা হাসিতে ভাটা নামল! ঝট করে রূপলের হাতটা চেপে ধরল। চলতি পথে রূপলকে থামিয়ে দিলো। দাঁতে দাঁত চেপে মিনমিনিয়ে বলল,
“এই? কোথায় যাচ্ছেন আপনি?”
পিছু ফিরে রূপল চিন্তিত সুরে বলল,
“দেখছেন না ছেলেটাকে মারছে? ওখানে কী হচ্ছে আমাকে দেখতে হবে।”
“আরে রাখুন আপনার সমাজ সেবা! এত তোড়জোড় করে ঘটনা বাঁধালাম আমি আর আপনি যাচ্ছেন ঘটনার জট খুলতে?”
অবাক হলো রূপল। কপাল কুচঁকে নীহারিকার দিকে তাকালো। দৃষ্টি তার সূচালো। উদ্ভট গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“মানে? কী বলতে চাইছেন আপনি?”
“মানেটা পরে বলছি। আগে বলুন আপনার ফোনে ব্যালেন্স আছে?”
“আছে। কেন?”
“ফোনটা একটু দিন তো।”
“কেন? কী দরকার? কাকে কল করবেন?”
“এত প্রশ্ন করছেন কেন? দিন না ফোনটা। কথা বলার সময় তো সব শুনবেনই। আমি তো আর লুকিয়ে ছুপিয়ে কথা বলব না।”
বাধ্য হয়ে রূপল তার ফোনটি নীহারিকাকে দিলো। ফোনটি হাতে পেতেই নীহারিকা পুলিশ কল করল! বলল এখানে দুটি ছেলে এবং একটি মেয়ের মধ্যে তুমুল মা’রা’মা’রি হচ্ছে! কাউকেই থামানো যাচ্ছেনা। খুব শীঘ্রই যেন তারা ঘটনাস্থলে আসে! নয়ত পরিস্থিতি আরও বিগড়ে যাওয়ার সম্ভবনা আছে। পুলিশকে খবরটা জানিয়ে-ই নীহারিকা কলটি কেটে দিলো। রূপল উল্লুক হয়ে নীহারিকার দিকে তাকিয়ে রইল! কলটি কেটে নীহারিকা বাঁকা হেসে রূপলের দিকে তাকালো। বিষম খেয়ে রূপল নীহারিকার দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,
“কী হলো ব্যাপারটা?”
দাঁত কপাটি বের করে নীহারিকা বলল,
“প্রতিশোধ নিলাম।”
“কীসের প্রতিশোধ?”
“ভালোবাসার বিনিময়ে ধোঁকার!”
নীহারিকার হেয়ালী কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলনা রূপল। বেকুব হয়ে কেবল উচ্ছ্বল নীহারিকার পানে তাকিয়ে রইল। বড়োজোর আধাঘণ্টার মধ্যেই ঘটনাস্থলে পুলিশ চলে এলো! কোনো পক্ষের কথা ভালোভাবে না শুনেই পুলিশ তিনজনকেই গাড়িতে উঠিয়ে নিলো! টাকার লোভ সামলাতে পারলনা তারা। তিনজনের থেকে মোটা অঙের টাকা কামাতে পারবে বলে লোভে তাদের চোখদুটো চকচক করছিল! ক্ষণিকের মধ্যেই নীহারিকা বেশ তৎপর হয়ে উঠল। দ্রুত গলায় রূপলকে বলল,
“আর বেশিক্ষণ এখানে থাকা যাবেনা। চলুন আমরা এখান থেকে পালাই।”
রূপলকে নীহারিকা বাধ্য করল ঘটনাস্থল থেকে সরে যেতে। দুজনই বাইকে ওঠে এবার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো। নীহারিকার কথামত রূপলও ছুটছে! কোনোরূপ যোগ জিজ্ঞাসা ছাড়াই। বাইক দ্রুত গতিতে ছেড়ে রূপল কিছু সময় মৌন রইল। অতঃপর কৌতূহল ধরে রাখতে না পেরে সে এবার মুখ খুলে নীহারিকার দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,
“এবার একটু বলবেন আপনার মাথায় চলছেটা কী? এই প্রথম আমার নিজেকে এতটা বোকা মনে হচ্ছে! কারো কথামত ছুটছি তো ছুটছি।”
নীহারিকা এবার বেশ তৎপর হয়ে উঠল। রূপলকে বৃত্তান্ত খুলে বলার জন্য প্রস্তুত হলো। খোলসা গলায় বলল,
“তাহলে গল্পটা বরং আপনাকে খুলেই বলি। শুনুন তবে।”
কয়েকদফা রুদ্ধ শ্বাস ফেলে নীহারিকা নিজেকে স্থির করল। পুরোপুরি নিজেকে ধাতস্থ করে সে গলাটা খানিক ঝাঁকিয়ে বলল,
“এক দেশে এক রাজকুমারী ছিল। রাজকুমারীটি দেখতে কালো এবং বেটে ছিল! যদিও রাজকুমারীরা মানুষের কাল্পনিক চিন্তাধারায় অতিমাত্রায় সুন্দরী এবং নিঁখুত হয়। তবে এই রাজকুমারীটি ছিল কালো এবং বেটে! শারীরিক গঠনের দিক থেকে তার অনেক খুঁত ছিল। সবাই বলত তার চেহারায় নাকী অদ্ভুত এক মায়া ছিল। কেউ একবার তার দিকে সুনজরে তাকালে তার থেকে আর চোখ ফেরাতে-ই পারবেনা! যদিও তাদের এসব বানোয়াট কথায় রাজকুমারী বিশ্বাস করত না তবে একদিন সে এই কথাগুলোই তার স্বপ্নে ভুল করে দেখা রাজকুমারের মুখে শুনে বিশ্বাস করে নিয়েছিল! সেই রাজকুমারের নিঁখুত জাল বিছানো কথার জালে ফেঁসে গিয়ে সে রাজকুমারকে তার মন দিয়ে বসেছিল। তাদের দুজনের প্রণয় হলো। বেশ চলছিল তাদের দিনকাল। তবে হুট করেই একদিন তাদের মাঝখানে চলে এলো এক সুন্দরী ডাইনি! ডাইনিটি আর কেউ নয়, ডাইনিটি ছিল রাজকুমারীর প্রাণপ্রিয় সখী! রূপের ঝলক দেখিয়ে ডাইনিটি রাজকুমারীর কাছ থেকে তার রাজকুমারকে কেড়ে নিলো! সেই সময়কার দুঃখী এবং বোকা রাজকুমারী ভেবেছিল রাজকুমারকে এত সহজে তার থেকে আলাদা করা সম্ভব নয়। তাকে ছাড়া রাজকুমার আর কাউকে ভালোবাসতে পারবেনা। কিন্তু যেদিন তার বিশ্বাস মিথ্যা প্রমাণিত হলো সেদিন রাজকুমারীও তার মনকে শক্ত করে নিলো! পাথরের মত শক্ত এবং লোহার মত কঠিন! রাজকুমারী অপেক্ষা করছিল কবে সে তার সাথে হওয়া বিশ্বাসঘাতকতার প্রতিশোধ নিবে! কবে ঐ বিশ্বাসঘাতকদের আসল মুখোশ সবার সামনে টেনে খুলবে। সেই সময় এবং সুযোগ যে এত দ্রত রাজকুমারীর হাতে ধরা দিবে কে জানত? আজ সুযোগ পেতেই রাজকুমারী বিশ্বাসঘাতকদের প্রতিশোধ নিলো! ঘাড় থেকে তাদের গলা আলাদা করতে না পারলেও গারোদের পেছনে ঠিক কয়েক ঘণ্টার জন্যে হলেও নিতে পারল!”
নীহারিকার প্রতিটি কথা রূপল বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনল। নীহারিকা কী বুঝাতে চাইল রূপল ঠিক বুঝতে পারল। তবুও সে মৌণ রইল। নীহারিকাকে আরও কিছু বলার সুযোগ দিলো! কয়েক দফা শ্বাস ফেলে নীহারিকা পুনরায় বলল,
“সেই রাজকুমারীটি আর কেউ নয় আমি! নিজেকে আমি রাজকুমারী বললাম কারণ, আমার কাছে আমি সত্যিই রাজকুমারী! শুধু সুন্দর হলেই যে রাজকুমারী হওয়া যায় বিষয়টা কিন্তু এমন নয়। আমি মনে করি রাজকুমারী হওয়ার মত সমস্ত গুন আমার মধ্যে আছে! আমি যেমন সাহসী, আত্নবিশ্বাসী, পরোপকার, দয়ালু, কঠিন মনের মানুষ এবং প্রয়োজনে সরল সেই সব গুন একজন রাজকুমারীর মধ্যে থাকে! ছোটো বেলায় দাদুর মুখে রাজকুমারীর অনেক গল্প শুনতাম। তখন মনে হত ইশ, আমিও যদি রাজকুমারী হতাম! তাই চেষ্টা করতাম রাজকুমারীর সমস্ত গুন নিজের মধ্যে আয়ত্ত করতে। আমি অতি আবেগী মানুষ নই। মাঝে মাঝে কষ্ট পেলে আমিও কাঁদি। তবে প্রয়োজনের তুলনায় বেশী নয়। যারা আমাকে কষ্ট দেয়, আমার সাথে প্রতারণা করে, বিশ্বাসঘাতকতা করে আমি তাদের ছাড় দিইনা! তাদের জন্য আমার কোনো মায়া হয়না! অল্পতেই ভেঙে পড়িনা আমি। বিশ্বাস করি, কারো জন্য জীবন থেমে থাকেনা। নতুন করে জীবনকে সাজিয়ে নিতে হয়। আমি আমার যাবতীয় না বলা দুঃখ কষ্ট আমার মায়ের কাছে শেয়ার করি। মায়ের আঁচল ধরে কাঁদি। তবে পৃথিবীকে তা বুঝতে দিইনা!”
“আপনি কী কোনোভাবে আমাকে পিঞ্চ করছেন?”
“পুরুষ মানুষদের এত দুর্বল হওয়া মানায় না মিস্টার রূপল! যে আপনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করল আপনি তার জন্য এখনও কষ্ট পাচ্ছেন? তারই জন্য কাঁদছেন? ছিচকাঁদুনি মেয়েদের মত? আমাকে দেখেছেন? কীভাবে বিশ্বাসঘাতকতার প্রতিশোধ নিলাম? যে আমাকে ঠকালো তার জন্য আমার মোটেও কষ্ট হচ্ছেনা। বরং আনন্দ হচ্ছে। এতদিনে আমার মনস্কামনা পূর্ণ হয়েছে। একটা মেয়ে হয়ে যদি আমি নিজেকে এভাবে সামলাতে পারি তাহলে আপনি একটা ছেলে হয়ে কেন নিজেকে সামলাতে পারছেন না? কথায় কথায় এখনও তার জন্য কাঁদেন! এসব ছেলেমানুষী বাদ দিন। নিজের মনকে শক্ত করুন। একবার শক্ত হয়ে দেখুন কেউ আপনাকে ভাঙতে পারবেনা।”
দুজনই চুপচাপ! নীহারিকার প্রতিটি কথা রূপলের কাছে শিক্ষনীয় মনে হলেও কথার পিঠে নীহারিকাকে কিছু বলার সাহস খুঁজে পেলনা সে! নিজেকে খুব ছোটো এবং বিবেকহীন মনে হলো। তার বয়সের ছোটো একটা মেয়ের থেকে তার জ্ঞান নিতে হলো? নীহারিকাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে রূপল সোজা তার বাড়ি চলে গেল। সবিতার বাড়িতে যাওয়ার মর্জি হলোনা তার! সবকিছু তিক্ত মনে হচ্ছিল তার। ভেতরে ভেতরে নিজের প্রতি নিজের ক্ষোভ জন্মাতে লাগল।
রুমে ঢুকে রূপল ভেতর থেকে তার রুমের দরজাটা লক করে দিলো। গাঁ থেকে শার্টটা টেনেটুনে খুলল। উগ্র মেজাজ নিয়ে সে ঘরের প্রতিটি আসবাবপত্র ছড়াতে ছিটাতে লাগল। মুহূর্তের মধ্যেই সাজানো ঘরটিকে এলোমেলো করে দিয়ে সে বিধ্বস্ত হয়ে একটি সিগারেট ধরালো! গরম মাথা নিয়ে খাটের উপর বসল। গাঁ থেকে জবজবিয়ে ঘাম ঝরছে তার। দুর্বিষহ গরম লাগছে। গাঁ থেকে যেন আগুনের তাপ বের হচ্ছে। একের পর এক সিগারেটে টান দিচ্ছে সে। আস্ত সিগারেটটি শেষ হতেই সে সিগারেটটি মেঝেতে ছুড়ে মারল! দাঁতে দাঁত চেপে ক্ষোভ ঝেড়ে বলল,
“আমার অবস্থান এখন এতটাই খারাপ হয়ে গেল যে একটা হাঁটুর বয়সী মেয়ের থেকে আমার জ্ঞান নিতে হচ্ছে? কী হয়ে গেল আমার এসব? আমি কী সত্যিই এতটা আবেগী হয়ে গেলাম যে মেয়েদের মত হুটহাট কেঁদে ফেলি? যাকে বলে ছিচকাঁদুনি? আমার সেই রাগ-জেদগুলো কোথায় গেল? কী থেকে কী হয়ে গেলাম আমি?”
বলেই রূপল নিজের মাথার চুল নিজেই টানতে লাগল! খাট থেকে নেমে সে ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়ল। নিজের মধ্যে নেই সে। রাগে জেদে হাত-পা মেঝেতে আছড়াতে লাগল সে! পাশেই ডেস্কের উপর থেকে ফোনটি নিয়ে সে সজলের নাম্বারে কল করল! ঐ পাশ থেকে সজল কলটি তুলতেই রূপল চ্যাচিয়ে বলল,
“এই কোথায় তুই?”
পড়ার চাপে নাজেহাল সজল। বিছানার আনাচে কানাচে কেবল বই খাতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। মাঝখানে শুয়ে সে কলম কামড়াচ্ছে আর সামনে একটি বই নিয়ে পড়ছে এবং অন্য একটি বই তার মাথার উপরে চেপে রেখেছে! অবস্থা তার বেহাল। এরমধ্যেই রূপলের ফোন। ধরাশায়ী হয়ে সে ব্যস্ত গলায় বলল,
“ভাই আমি তো হোস্টেলে। এক্সাম চলছে আমার।”
“ভিডিও কল দিচ্ছি। কলটা তোল।”
ফোনটি কেটেই রূপল ওয়াইফাই অন করল। সজলের হোয়াইট’স অ্যাপ নাম্বারে ভিডিও কল দিলো। তড়তড়িয়ে শোয়া থেকে ওঠে বসল সজল। গলা ঝাকিয়ে কলটি তুলল। একটি বই এখনও তার মাথার উপরে রয়ে গেছে! আকস্মিক রূপলের কল পেয়ে দিশেহারা হয়ে গেছে সে। সজলের দিকে সূক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকানোর সময় বা ইচ্ছা কোনটিই হলোনা রূপলের। মেঝেতে বসে থেকেই সে ঝাঁজালো গলায় সজলের দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,
“আচ্ছা ভালো করে দেখ তো। আমার মধ্যে কী কোনোকিছুর পরিবর্তন এসেছে?”
রূপলের প্রশ্নে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল সজল! প্রশ্নের আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলনা সে। দ্বিতীয় বার জিজ্ঞেস করতেও ভয় করছিল তার! যদি রূপল রেগে যায় তাই। তবুও জড়তা নিয়ে সজল কাঠ কাঠ গলায় শুধালো,
“বুঝিনি ভাই আবার বলেন?”
অমনি রূপলের মেজাজ আরও চওড়া হয়ে গেল! বসা থেকে দাড়িয়ে গেল সে। তিরিক্ষিপূর্ণ গলায় শুধালো,
“বাংলা বুঝিস না তুই? ভালো করে আমার দিকে তাকিয়ে দেখ আমার মধ্যে কোনো পরিবর্তন এসেছে কী-না বল?”
এমনিতেই রূপলকে ভয় পায় সজল! তার উপর একই প্রশ্ন দুইবার করার পরেও সে প্রশ্নের মানে বুঝতে পারছেনা। এই অবস্থায় সে আবারও কী করে একই প্রশ্ন তৃতীয় বার করতে পারে? মনে ভয় নিয়ে সজল ঠকঠক করে কেঁপে উঠল। বলল,
“কেমন পরিবর্তন ভাই?”
“আমার মধ্যে কী কোনো মেয়ে মেয়ে ভাব আছে?”
“আস্তাগফিরুল্লাহ্! নাউযুবিল্লাহ্! এসব আপনি কী বলেন ভাই? আমাদের বংশের মধ্যে তো কোনো ‘গে’ নাই!”
#চলবে…?