প্রেম পিয়াসী পর্ব ২৪

0
524

#প্রেম_পিয়াসী ❤️
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্ _মৌমিতা
#পর্ব__________২৪.

এক জোড়া শালিক পাখি উড়ে এসে বসলো ইলহামের পায়ের কাছে। ইলহামের হাতে তার লাভবার্ডস জোড়ার খাবার। হয়তো খাবারের আশায় এই নতুন কপোত-কপোতীর আগমন। ইলহাম হাতের খাবার গুলো লাভবার্ডসেদের খাঁচায় ঢেলে দিয়ে আরেক মুঠো খাবার নিলো। সেগুলোই শালিকের জোড়াকে নিবেদন করলো নীচে মেঝেতে। খাবার পেলেও অজানা মানবীর ভ/য় তারা কাটাতে পারছিলো না। তাই ইলহাম পা টিপে টিপে চলে গেলো ছাদের অন্যপাশে। সে চলে যেতেই শালিক পাখি দুটো নির্ভয়ে ঠুকরে ঠুকরে খেতে লাগলো খাবার গুলো। ইলহাম দেখছিলো মনোযোগ দিয়ে। ঠিক তখনই তার ফোনটা ডাক চিৎকার পেড়ে কেঁদে উঠলো। ইলহাম হাতের প্যাকেটটা নিয়েই দৌড়ে গেলো ফোনটার কাছে। তার পায়ের ধপধপ শব্দে শালিক পাখি দুটো ভ/য়ে উড়ে গিয়ে ছাদের রেলিঙের উপর বসে পড়লো। ইলহামের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই বললেই চলে। কাল সকালে রাদকে ওমন অদ্ভুত একখানা প্রস্তাব করে বসলে কোনোরূপ জবাব না দিয়েই লাপাত্তা হয়ে যায় রাদ। কি অদ্ভুত মানুষ। এতো ভালোবাসে তাকে। বিয়ে করারও স্বপ্ন দেখে। অথচ সামান্য একটা উত্তর দিতে গোটা একদিন পার করে ফেলেছে। না জানি আরও কতকাল পার করবে।

ফোনটা হাতে তুলতেই ফোনের স্ক্রিনে একটা অপরিচিত নাম্বার দেখতে পেলো ইলহাম। কয়েক মুহুর্ত কেবল তাকিয়েই রইলো নাম্বারটার প্রতি। মনে মনে গবেষণা করে বের করার চেষ্টা করলো এটা কার নাম্বার? ওপাশের মানুষটি অধৈর্য্য হয়ে বারবার ফোনটা দেখতে লাগলো। একটা কল পিক করতে কারোর এতোটা সময় লাগে? অদ্ভুত।

কলটা কেটে যাওয়ার ঠিক দুই সেকেন্ড আগে কলটা রিসিভ করে ইলহাম। প্রথমে কি তার কথা বলা উচিৎ নাকি শোনা উচিৎ? ভাবতে ভাবতে আরও পাঁচ সেকেন্ড সময়কে ভাসিয়ে দিলো ইলহাম। তার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ওপাশের অধৈর্য্য ব্যাক্তিটি অধৈর্য্য গলাতেই বলে উঠলো,

—-“থ্যাংক গড। সামান্য একটা ফোন কল সুইটহার্ট! একটা ফোন কল পিক করতে তোমার কত সময় প্রয়োজন?”

কন্ঠটা শুনে ইলহামের তেমন কোনো অসুবিধা হয়নি মানুষটাকে চিনতে। পূর্বের সব অভিমান জাগ্রত হয়ে উঠলো হঠাৎ। ভারী বি/রক্ত গলা বলল,

—-“কেন ফোন করেছেন! কি চাই?”

রাদ থতমত খেয়ে গেলো। যা তার কাশির শব্দেই বেশ স্পষ্ট।

—-“কি আবার চাইবো! যা প্রয়োজন ছিলো, অলরেডি আই গট ইট। সো?”

—-“সো না তো আমি দেখে নিবো। আর শুনুন, ইউ হ্যাবে’ন্ট গট ইট! আমি চাইলে এখনও আপনাকে রিজেক্ট করতে পারি।”

—-“হোয়াট?”

—-“ইয়েস।”

ইলহাম বেশ ভাবের সাথে ইয়েস বলল। ওদিকে রাদ ফুঁসে উঠলো। কোমরে হাত চেপে বলল,

—-“থ্যংক গড, তুমি এখন আমার সামনে নেই। নয়তো বোঝাতাম…”

—-“ইশশ! কি বোঝাতেন হু? আমি কি ভ/য় পাই আপনাকে?”

—-“আর ইউ সিরিয়াস? তুমি আমাকে ভ/য় পাও না!”

—-“প্রশ্নই আসেনা। আমি আপনাকে ভ/য় পাবো? শুনেন রাখুন মিস্টার? এই ইলহাম না কাউকে ভ/য়/টয় পায়না।”

—-“ও রিয়েলি। একটা টেস্ট হয়ে যাক তবে?”

—-“হু হু! আই ডোন্ট কেয়ার!”

ইলহামের ভাব ক্রমাগত বাড়ছে। যা বুঝে মুচকি হাসছে রাদ। তার ভেতরে ঘটে চলা শ/য়/তানি বুদ্ধিটা আজ যদি কাজে লাগাতে না পারে, তবে জীবনই বৃথা। কথাটা ভেবেই হেসে উঠলো। বলল,

—-“ওকে। আমি তোমায় একটা ডেয়ার দিচ্ছি। তুমি যদি এক্ষনি আমাকে দেখে ভ/য় পাও, তবে তুমি আমাকে একটা গাঢ় চুমু খাবে। অন মাই লিপস। উইথআউট এনি এক্সকিউজ। যদি কোনো এক্সকিউজ দেখিয়েছো, তবে কিন্তু তার শা//স্তি হবে। ডান?”

ইলহাম বেশ ভাব নিয়ে নড়েচড়ে দাঁড়ালো। আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে দেখে নিলো কেউ কোথাও আছে কিনা। না, দূর-দূরান্ত অব্দি সে ব্যতীত আর কেউ নেই। এমনকি শিরিনও নেই। তাই ভাবটা আরও এক ধাপ বেড়ে গেলো। গলা উঁচু করে বলল,

—-“হ্যাঁ ডান।”

ইলহামের কথাটা শেষ করতে দেরী হলেও রাদের তার সম্মুখে এসে দাঁড়াতে দেরী নেই। অবশ্য সম্মুখে বললে ভুল হবে। তার পেছনে। ইলহাম তখনও সামনের দিকে উঁকিঝুঁকি দিয়ে যাচ্ছিলো। যতদূর সে জানে, রাদ অফিসে। সুতরাং এই মুহুর্তে তার সামনে এসে হাজির হওয়াটা অসম্ভবই বটে।

রাদ ধীরগতিতে ইলহামের কাঁধের উপর হাত রেখে আলতো করে চাপ দিতেই আকস্মিক চমকে উঠলো ইলহাম। রাদের ভ/য়ে নয়, মানুষের ভ/য়ে। কিন্তু পেছন মুড়ে যা দেখলো, তাতে আরও দিগুন মিলিয়ে চমকে উঠলো। অর্থাৎ ভ/য়া/ন/ক রকমের ভ/য় পেলো। ইলহামের একের পর এক চমকে ওঠা দেখে রাদ ফিক করে হেসে দিলো। কান থেকে ফোনটা নামিয়ে কল কেটে ইলহামের দিকে পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে করলো। এক ভ্রু নাচিয়ে বলল,

—-“আই ডিডেন্ট এক্সপেক্ট দ্যাট, তুমি এতোটাও ভ/য় পাবে।”

ইলহামের হেঁচকি উঠে গেলো। পূর্বের ন্যায় কানে ফোনটা চেপে রেখেই ক্রমাগত হেঁচকি দিতে লাগলো৷ রাদ তার কান্ড দেখে না হেসে পারছেনা। হাসতে হাসতে ইলহামের কান থেকে ফোনটা নামিয়ে নিলো। কোনো মতে হাসি থামিয়ে বলল,

—-“ডেয়ার ভুলে যাওনি তো আবার?”

ডেয়ারের কথা শুনে ইলহামের হেঁচকির বেগ আরও কয়েকগুন বেড়ে গেলো। দু’হাতে মুখ চেপে ধরে একখানা অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো রাদের দিকে। রাদ একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে রেলিঙের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়ালো। ইলহাম হেচকি দিতে দিতেই বুলি আওড়ানোর চেষ্টা করলো,

—-“আ..আপনি!! ক..কক-কোত্থেকে এলেন?”

—-“আমার রুম থেকে পায়ে হেঁটে চলে এসেছি। রাস্তা সরু এমন স্বল্প তাই গাড়ি আনতে পারিনি।”

ইলহাম হেঁচকি দিতে দিতেই ভ্রু কুঁচকে তাকালো। এই মুহুর্তে সে মজা করার অবস্থায় নেই। তার আসল ভ/য় যে ঐ ডেয়ারে।

—-“তো… আব.. এখন কি…”

টেনে টেনে কথাটা বলে এক পা এগিয়ে ইলহামকে দেওয়া ডেয়ারের কথা মনে করাচ্ছে রাদ। ইলহামের গলা শুঁকিয়ে আসছে ভয়ে। সবটাই হয়েছে নিজের বোকামির ফল। সে যে আস্ত একটা বোকার হদ্দ সেটা আজ আবারও প্রমান হলো। রাদ এতোটাও বোকা নয় যে খালি কলসি বাজিয়ে এমন একটা ডেয়ার দিবে! সে বুঝেশুনেই ফাঁদে ফেলেছে তাকে।

—-“অন মাই লিপস। এন্ড অভিয়েসলি ডিপলি। রিমেম্বার দ্যাট।”

রাদ আঙ্গুল তাক করে নির্দেশিত কন্ঠে বলল কথাটা। ইলহাম আঁ/তকে ওঠা ভঙ্গিতে মুখ থেকে হাত নামিয়ে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। বুকের ভেতরটা কেমন আকুপাকু করছে তার। এটাকেই হয়তো বলে অন্যের নামে গ/র্ত খুঁ/ড়লে নিজেকেই পড়তে হয়।

রাদ এক পা এক পা করে ক্রমান্বয়ে ইলহামের দিকে এগিয়ে আসছে। ইলহাম ভ/য়, অস্থিরতা এবং এক নাম না জানা অনুভূতিতে ক্রমান্বয়ে সিঁটিয়ে যাচ্ছে। দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই বারবার মনে হচ্ছে, নীচের দিকে তলিয়ে যাচ্ছে। দুরু দুরু কাঁপছে অন্তরের অন্তস্তল।

—-“ম্ ম্ মা! মাআআ…”

ইলহাম বেশ জোরেশোরে চেঁচিয়ে উঠে মায়ের নাম নিলো। রাদ ঘটনার আকস্মিকতায় চমকালো বেজায়। চমকানো দৃষ্টি জোড়া পেছনের দিকে নিক্ষেপ করতেই সুযোগ বুঝে তাকে পাশ কাটিয়ে দৌড় দিলো ইলহাম। কিন্তু সে পথ সহজগম্য হলোনা। তার পূর্বেই তার চালাকি ধরা পড়লো একদম হাতেনাতে। তাকে ছুট্টে পালাতে দেখে ক্ষপ করে হাতটা ধরে নিলো রাদ। একটানে নিজের খুব কাছে টেনে আনলো। নিজের সাথে চেপে ধরে বলল,

—-“বলেছিলাম না, নো এক্সকিউজ?”

—-“ম্ মা, সত্যি এসেছিলো!”

—-“তাই? তাহলে এবার সত্যি সত্যি শা/স্তি/র জন্য তৈরি হয়ে যাও। মনে আছে তো?”

—-“ক্ ক্ কেনন!!”(কাঁদো কাঁদো মুখ করে)

—-“উফ! এভাবে তাকালে আমার হার্ট এ/ট্যা/ক এসে যাবে তো। তুমি কি চাও? গোটা একটা ক্রিকেট টিম, একটা ফুটবল টিম তৈরি না করেই আমি ম//রে যাই?”

রাদের নির্লজ্জ বানীতে লজ্জায় কুঁকড়ে পড়লো ইলহাম। শুঁকনো গলায় ঢোক গিলে বলল,

—-“আ্ আপনি খুব খা/রা/প!”

—-“জানি তো। এবার ফটাফট চুমু খাও৷ নয়তো ডাবল শা/স্তি/র জন্য তৈরি হও।”

ইলহাম আঁ/ত/কে উঠল। আর কত শাস্তি এড করবে লোকটা? কথাটা বলে রাদ তার আরও কাছে চলে এলো। ইলহামের শরীর,মন জুড়ে অদ্ভুত এক অনুভূতির অদম্য অস্থিরতা বিরাজ করছে। সর্বাঙ্গের প্রতিটা লোমকূপ শিহরণে স্তব হয়ে উঠেছে। ভ/য়, জড়তা কিংবা লজ্জা কোনো কিছুই কাটিয়ে উঠে সে রাদকে চুমু খেতে পারবেনা। এ যে অসম্ভব। কিন্তু চুমু না খেলে যে রাদ আরও ভ/য়া/ন/ক কিছু করে বসবে। একদম বিশ্বাস নেই তাকে দিয়ে।

—-“শ..শুনুন না? ব..বলছিলাম যে…”

—-“অলনি কিস। ডিপলি ডিপলি ডিপলি। নয়তো…”

ইলহামের বুকের ভেতরটা ছ্যাঁত করে উঠলো রাদের কন্ঠে। কেমন মাতাল করা কন্ঠ তার। এক্ষনি তো এমন ছিলোনা। হঠাৎ তবে…

আর কিছু ভাবতে পারলোনা ইলহাম। তাহার পূর্বেই তার কোমর আলিঙ্গন করে আরও খানিকটা কাছে টেনে আনলো রাদ। বাঁকা হেসে বলল,

—-“থ্যাংকস টু মি, সুইটহার্ট। কত সহজ করে দিলাম তোমায়। এখন তো এটলিস্ট চুমু খাও!”

—-“আ্ আমি পারবোনা!”

ফট করে বলে উঠলো ইলহাম। রাদ শুনেও শুনলোনা যেন। তার অপেক্ষা দৃঢ়তম হচ্ছে। ইলহাম প্রায় অনেক্ষন বাহানা করলো। কিন্তু রাদ যখন তার কোমরে ক্রমাগত গভীর ছোঁয়া আঁকছিল তখন এর ভবিষ্যৎ ভেবে ভয়েই হঠাৎ চুমু আঁকল রাদের গাঢ় লাল ঠোঁট জোড়াতে। রাদ প্রথম দফায় ভড়কে গেলেও পরক্ষণে নিজের অধিকার বুঝে নিতে কোনোরূপ ব্যয়কুণ্ঠ করলো না। অর্থাৎ কৃপণতা করলোনা। ইলহাম তাকে ঠোঁটের পরশ দিতে গিয়ে যেন গ্লুর মতো আঁটকে গেলো। রাদের বুকে দু-হাত ঠেসে দিয়ে নিজেকে ছাড়াতে গেলেও বৃথা হলো। রাদ তাকে আরও শক্ত করে আষ্টেপৃষ্টে ধরেছে নিজের সাথে। গাঢ় ছোঁয়াকে গাঢ় থেকে গাঢ়তর করেও থামছেনা একদম। ইলহাম একটা সময় ইচ্ছে মতো কিল-ঘুষি বসালো রাদের বুকে। রাদ ইলহামের কান্ড দেখে না পেরে তাকে ছেড়ে দূরে সরে এলো। কপাল কুঁচকে নিরাশ কন্ঠে বলল,

—-“নিজে না পারো, এটলিস্ট আমাকে তো বাঁধা দিওনা। এটা আমার মৌলিক অধিকার।”

ইলহামের মুখটা হা সূচক হয়ে গেলো। চোখ মুখ কুঁচকে মুখ ঝামটি দিয়ে বলল,

—-“চুমু খাওয়া মৌলিক অধিকার তা কোন কাব্যে প্রকাশিত?”

রাদ ভাবনা সূচক ভঙ্গিতে কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে মাথা চুলকে হাসলো। বাচ্চা সুলভ কন্ঠে বলল,

—-“কার আবার? রাদকাব্যে!”

—-“আপনি না সত্যি খুব খা/রা/প। খা/রা/পের খা/রা/প। চরমের খা/রা/প। আমি আপনাকে বিয়ে করবো না। আপনি রিজেক্ট।”

—-“বিয়ে না করলে এসব মৌলিক অধিকার আমি ঠিকই আদায় করে নিবো। তো ভাবো বিয়ে করে সওয়াব নিবে নাকি বিয়ে না করে..”

—-“উফফ! চুপ করুন। মা-কে বলে দিবো।”

কাল যখন রাদ ইলহামকে সঙ্গে করে নিয়ে আসে, মান্নাত বেগম ইলহামকে দেখে ভীষণ কান্না করেন৷ কেন সে না জানিয়ে এমন করে চলে গেলো? তার কি একটুও মনে হয়নি এই মায়ের কথা? সে না থাকলে ঘরটা যে একদম ফাঁকা ফাঁকা লাগে। সে কি বোঝেনা?
মান্নাত বেগমের কান্নার বেগ ক্রমাগত প্রকান্ড হচ্ছিলো। তাকে শান্ত করতেই হঠাৎ ইলহাম তাকে মা বলে সম্মোধন করে। এবং যথারীতি ইলহামের মুখ থেকে এই ডাকে সে তার কান্না ভুলে যায়। রাদও সবার মতোই ভীষণ অবাক হয়। সেই থেকেই ইলহাম মান্নাত বেগমকে মা বলে ডাকছে।

রাদ হেঁসে উঠলো। আচমকা ইলহামের হাত ধরে ঠিক পূর্বের ন্যায় নিজের কাছে টেনে আনলো। বলল,

—-“কি বলবে মাকে? আমি তোমায় ভালোবাসার গভীর ছোঁয়ায় আলিঙ্গন করেছি?”

ইলহামের বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে। সত্যি লোকটার মুখে কিছু আটকায় না। নির্লজ্জ প্রেমিক পুরুষ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here