প্রেম পিয়াসী পর্ব ২০

0
556

#প্রেম_পিয়াসী ❤️
#লেখা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্ব_________২০.

আধঘন্টার মাঝেই পরিপূর্ণ তৈরি ইলহাম। তার লম্বা কেশ গুলো আজ বাঁধেনি ইচ্ছে করেই। না বাঁধাতেই ভীষণ ভাল্লাগছে বলে ঠাওর হলো। তার লেহেঙ্গাটা রাদের শেরওয়ানির ন্যায়ই অফ হোয়াইট। উপরের হাফ পার্টের পুরোটা জুড়ে সাদা সুতোর নকশা এবং তার উপর স্টোনের ঝাকঝকম কাজ। নীচের পার্টটেও তার আংশিক কাজের ঘনঘটা। লেহেঙ্গার ওড়নাটা শাড়ীর আঁচলের ন্যায় তুলে দিলো ইলহাম। উ*ন্মুক্ত জঠরে একটা বিছা পড়ে নিলো। বিছা পড়ায় টাইট হয়ে আঁকড়ে ধরলো একঝাক সৌন্দর্য্য। কপালের ঠিক মাঝখানে সাদা পাথরের টিপটা দিতে দিতে নিজের সর্বাঙ্গে একবার অবলোকন করলো ইলহাম। রাদের ভাষ্যমতে এই পোষাকে সে সত্যিই মনোরঞ্জক লাগছে।

দু’গালের সাথে তাদের এক আদুরে বিচরণ। ইলহাম চুলগুলো কানের পাশে ঠেলে দিতে কানের ছোট্ট ঝুমকোটা নড়ে উঠলো। ইলহামের ঠোঁটের কোনে বিচরণ করলো মনোহর হাসির ঝলক। এমনিতেই অনেক দেরী করে ফেলেছে সে। তাই বাড়ন্ত লেহেঙ্গার অংশ গুলো জাগিয়ে ধরে ছুট্টে গেলো নীচে। সিঁড়ি ধরে দ্রুত নীচে নামতে নামতে দেখা মিললো প্রত্যাশিত মুখখানার। রাদ ড্রয়িং রুমে দাঁড়িয়ে ফোন টিপছে। সে অবশ্য খেয়াল করেনি ইলহামকে। ইলহাম এক ছুট্টে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে দাঁড়ালো রাদের সামনে। রাদ ফোন থেকে মুখ তুলতে আপনাআপনিই তার চোখ জোড়া রসগোল্লা পাকিয়ে গেলো। মানুষ যখন এক্সপেকটেশনের থেকে বেশি কিছু পায় তখন হয়তো এমনটাই হয় তার রিয়াকশন। ইলহাম আগ্রহমন্ডিত দৃষ্টিখানা নিক্ষেপ করলো রাদের পানে। রাদ তাকে দেখে পুলকিত হলো। ফোনটা পকেটে রাখতে রাখতে দু’হাত গুঁজে দিলো পকেটের ভেতর। একটু দূরে স্বরে এক অন্যরকম চাহনিতে আবিষ্ট করলো ইলহামকে। তার চোখের ভাষা বরাবরের ন্যায় এক ভিন্ন অনুভূতি জাগিয়ে তুললো ইলহামের মনে। ইলহাম মাথা নীচু করে ফেললো তড়িঘড়ি। তার কোনো এক অজানা কারনে ভীষণ লজ্জা লাগছে। বুকের ভেতরটা দুরুদুরু কাঁপছে। রাদ পুলকিত কন্ঠেই বলল,

—-“ইশশ! মনে হচ্ছে আমার রাজ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে মায়াবী পরীর বিচরণ ঘটেছে। আমি ধন্য তোমার পদচারণে মনোহরিনী।”

ইলহাম কয়েক মুহুর্তের জন্য অন্য এক কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে গেলো। ঘোর কাটলো রাদের পরশে। রাদ তার হাত ধরে বলল,

—-“চলো। ওদের বিয়ে পড়ানো হয়তো শুরু হয়ে গিয়েছে। তোমাকে ছাড়া তো যেতে পারছিনা।“

ইলহাম বুকের ভেতরকার সকল অস্থিরতা দমিয়ে ভেতরে ভেতরে ছোট্ট একটা নিশ্বাস ছাড়লো। ছোট্ট জবাবে বলল,

—-“চলুন।”

বিয়ের সকল প্রক্রিয়া শেষ হলো। অনন্যাকে নিয়ে যাওয়ার পালা এলো। বেশ মন খারাপ নিয়ে কাঁদো কাঁদো মুখ করে অনন্যা কেবল তার মাকেই খুঁজছিলো। তবে, ভদ্রমহিলার দেগামে এবং টাকার অহং/কার বরাবরের মতো এবারেও জমিনে পা পড়লো না। এমনকি তিনি মেয়ের বিদায়েও উপস্থিত হলেন না। নিজের কিছু অযৌক্তিক দেমাগি ভাবকেই আত্মস্থ করে ঘরে দোর দিয়ে বসে ছিলেন। অন্তুরও একই দশা। শ খানেক লোকের মাঝে হারিকেন লাগিয়েও অন্তুকে দেখা গেলোনা। গতকাল রাত থেকেই অন্তুর দেখা মেলেনি। এক্ষেত্রে মায়ের সকল ভূমিকা এবং দায়িত্ব পালনে অগ্রসর হয়ে এলেন মান্নাত বেগম। তিনিই রাজিয়া বেগমের সকল খালি জায়গা পূরণ করে অনন্যাকে বিদায় দিলেন তার আপন বাড়িতে। যেতে যেতে রাদ প্রণয়কে বেশ ভালো করে বুঝিয়ে দিলো, “বৌভাতে অনন্যা এ বাড়িতে নয়, তার ভাইয়ের বাড়িতে অর্থাৎ রাদের বাড়িতে ফিরবে।”

রাদের এহেম প্রস্তাবে মিলাদ সাহেব বেশ নারাজ হলেন। তার মেয়ের বৌভাত কেন রাদের বাড়িত হবে। প্রশ্ন উঠলে রাদ সুন্দর এবং সাবলীল ভাষায় জানিয়ে দিলো, “আপনার বউ আপনার একমাত্র কন্যার সাথে সকল সম্পর্কের ইতি টেনেছে। তাহলে কিসের ভিত্তিতে অনন্যাকে তার ভাই, এই ন/র/কে পূণরায় ফেরত পাঠাবে।

রাদের জবাব পেয়ে একদম চুপসে গেলো মিলাদ সাহেব। অনন্যাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে রাদ অন্তর্মূখি হয়ে ফিরে আসলো। বিয়ে শেষ হতেই মেহমানরা প্রায় অর্ধেক সাফা হয়ে গেলো। বাকি যারা থাকলো তারা সকলেই একরকম র/ক্তে/র আত্মীয়।

_______

ক্লান্ত শরীরটা টেনে কোনো রকমে বিছানায় এলিয়ে দিতেই হাতের ফোনটা টুং করে উঠলো ইলহামের। প্রথম দফায় বেশ বিরক্ত নিয়ে ফোনের স্ক্রিনে তাকালো। পরক্ষণেই ভেতরের সমস্ত বিরক্তি যেন উবে গেলো কোথাও। ফোনের ম্যাসেজটা আর কারোর নয়, বরং রাদের। নিজের অজান্তেই বুকের ভেতরটা এক অদ্ভুত প্রশান্তিতে হাঁকিয়ে উঠলো। শোয়া থেকে চট করে উঠে দাঁড়িয়ে পূণরায় নজর বুলালো ফোনের স্ক্রিনে। তাতে স্পষ্ট হয়ে ভেসে আছে রাদের ছোট্ট ম্যাসেজটি।

“ছাঁদে এসো। অপেক্ষা করছি।”

ইলহামের পরনে এখনোও পূর্বের লেহেঙ্গাটি। বিয়ে বাড়ির সকল ব্যস্ততাময় সময়কে পারি দিয়ে সবেই ফ্রী হতে পারলো। এতক্ষণ ঢের বিরক্তিতে থাকলেও এখন যে তার ছিটেফোঁটাও নেই। কারনটা হয়তো রাদ। ইলহাম জানেনা হঠাৎ কি হয়েছে ওর! মনের অজান্তেই কি ভালোবেসে ফেললো লোকটাকে?

ছাঁদে যাওয়ার সিঁড়ি ধরে উপরে এসে দাঁড়াল ইলহাম। খুব অদ্ভুত এক অনুভূতির সঞ্চালন হচ্ছে গোটা অঙ্গ জুড়ে। দুরুদুরু বুক কাঁপছে লাগাতার। হৃৎস্পন্দনের তুমুল ঝগড়া সেও শুনতে পাচ্ছে স্পষ্ট। ঢিপ-ঢিপ ঢিপ-ঢিপ আওয়াজ তাদের। গুনে গুনে পা ফেলার সঙ্গে অন্তস্তলের তারবিহীন কাঁপনি যেন ক্রমশ বর্ধমান হচ্ছে। ইলহাম অন্ধকারের আবছায়া ঠুকরে খুঁজছে মানুষটাকে। কিন্তু,ছাঁদের এপাশ থেকে ওপাশ পুরোটাই মানবহীন নিস্তব্ধতায় খা খা করছে একরকম। ইলহামের সর্বাঙ্গে বি//ষা//দি//ত এক শ্রোত বয়ে গেলো। রাদ যে বলল ছাঁদে অপেক্ষা করছে? কোথায় তবে? পুরো ছাঁদটাই তো ফাঁকা পড়ে আছে।

বেশ রা/গ হলো ইলহামের। এ কেমন মজা হলো? নিজেই ডাকলো অথচ নিজেই নেই। পুরনো বিরক্তির ছাপ গুলো পূণরায় স্পষ্ট হলো কপালের ভাঁজে। একই সাথে একটা খারাপ লাগা। হঠাৎ কত খুশি হয়েছিলো মানুষটা ওকে ডেকেছে ভেবে! সমস্ত খুশির সমাপন ঘটলো মুহুর্তেই। মুষড়ে পড়লো আনন্দে বিমোহিত থাকা নাজুক মনটা।

বড় করে বার কয়েক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ইলহাম। আজ বোধহয় অমাবস্যা। কোথাও চাঁদমামা কিংবা তার পরিবারের দেখা নেই। অর্থাৎ তাঁরাদের সেই ঝলমলানি। গোটা অম্বর ফ্যাকাসে রঙের হয়ে আছে। ক্ষনেক্ষনে মেঘ সরে নিকষ অন্ধকার কামড়ে ধরছে গোটা রজনীকে। ক্ষনে ক্ষনে মেঘেদের হাঁটে আবার সেই ফ্যাকাসে রঙ।

ইলহাম মন খারাপ করে চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো। ঠিক তখনই ঘটলো এক অনাকাঙ্ক্ষিত কান্ড। পেছনে কারোর অস্তিত্ব প্রগাঢ় ভাবে আবিষ্কার করল। ইলহামের পা জোড়া থেমে গেলো আপন গতিতে। মনের ভেতর ঝড় উঠলো কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিটিকে আবিষ্কার করে। তবে তা যেন সেগুঁড়ে বালি। ইলহাম মানুষটিকে দেখার লোভে পেছন মুড়ে তাকাতে তাকাতে পেছনের ব্যাক্তিটি তাকে গভীর ছোঁয়ায় আলিঙ্গন করলো। ইলহাম চমকে উঠলো। এ ছোঁয়া তার অপরিচিত! মানুষটা যে রাদ নয়, সেকথা বুঝতে তার দেরী হলো না এক সেকেন্ডও। ভেতর ভেতর কেঁপে উঠল অজানা ভ/য়ে। রাদ না হলে কে? কথাটা ভেবেই ভ/য়ে কুঁকড়ে পড়লো বুকটা।

অমনি উপলব্ধি হলো লোকটা তার উন্মুক্ত জঠরে কেমন বি/ষা/ক্ত ছোঁয়ায় নিঃশ্বাস ভারী করে চলেছে! ইলহাম এবার ঢের বুঝতে পারলো এ অন্তু ছাড়া কেউ নয়! ততক্ষণে তুমুল যু//দ্ধ শুরু হলো নিজেকে ছাড়ানোর। ছটফটিয়ে ম//র//তে লাগলো, হাত ছুটতে লাগলো ক্রমাগত! ঠিক তখনই কর্ণকুহরে প্রবেশ করলো অন্তুর লাগামহীন বানী,

—-“আজ তোমায় কাছে পেতে কত কাঠখড় পোড়াতে হয় আমাকে! অথচ রাদ? কি অবলীলায় পেয়ে যাচ্ছে! আচ্ছা, সত্যি করে একটা কথা বলবে? কি এমন পেয়েছো রাদের কাছে যা আমি দিতে পারিনি? টাকা পয়সা? তা তো আমারও কম নেই! ফি//জি//ক্যাল রিলেশন? তা কি আমি চাইনি? তবে কেন পড়ে আছো ওর কাছে? কি এমন পাচ্ছো বলো? আমিও তাই দিবো তোমায়। ইলহাম!! আ..আমি যে আর পারছিনা তোমায় ছাড়া। কত ভালোবাসি তোমায় বোঝোনা তুমি?”

ইলহামের অন্তর আত্মা অব্দি চির চির করে উঠলো অন্তুর কথা গুলোতে! অন্তুর প্রতিটি ছোঁয়ায় এক বি/ষা/ক্ত পানসিটে ভাব খেলে যাচ্ছে ক্রমশ। অন্তুর হাত জোড়া একস্থানে স্থীর নেই! যা উপলব্ধি হতেই ঘৃ/ণা/য় গুলিয়ে উঠছে ইলহামের ভেতরটা। শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়েও দূরে সরাতে পারছেনা হিং//স্র পশু সমতুল্য অন্তুকে। চোখের কোন বেয়ে অঝোর ধারায় শুরু হলো জল প্রবাহ! কান্নারত মন টা শুধু একটা মানুষকেই খুঁজতে লাগলো অসহায়ের ন্যায়।

—-“ভালোবাসা? ভালোবাসা নামক এই ছোট্ট শব্দটির মানে জানো তুমি? জানলে হয়তো আজ ইলহাম রাদের কাছে নয়, অন্তুর কাছে থাকতো। কেবল থাকতোই না! বাধ্য হতো থাকতে। কেন জানো? ঐ ছোট্ট শব্দটি.. ভালোবাসা! তার টানে।”

ইলহামের কঠোর গলাটি শ্রবণগোচর হতেই কেমন তাচ্ছিল্য করে হাসলো অন্তু। ইলহামের গাল চেপে জোরপূর্বক ঠোঁট মুখ ঘষতে লাগলো ইলহামের গলায়। চাপা গলায় ঠোঁট কামড়ে বলল,

—-“ভালোবাসা! আরে যে ভালোবাসায় ফি//জি//ক্যা//ল কোনো চাহিদা পূরণ হবেনা সে ভালোবাসা আবার কেমন ভালোবাসা? আর এখানে টান.. চাহিদা পূরণেই টান বাড়ে জান। আদারোয়াইজ, সেই রিলেশনে কোনো ভাবেই টিকে থাকা সম্ভব নয়। এই একটা কথা বুঝতে তুমি আর কত সময় ব্যয় করবে বলো তো?”

পূণরায় অন্তু নামক মানুষটার প্রতি অতীতের সমস্ত বিতৃষ্ণা গুলো মনের উপর ঝেকে বসতেই শরীরের সমস্ত শক্তি এক করে তাকে ধাক্কা দিলো ইলহাম। অন্তু এক ধাক্কাতেই কুপোকাত প্রায়। টালমাটাল অবস্থায় পেছনের দিকে কয়েক কদম ছিটকে পড়ে ছাঁদের রেলিঙে ধাক্কা খেয়ে নীচে পড়লো। ইলহাম ফুঁসে উঠলো। ফুঁসতে ফুঁসতে চোখ মুছে একজোড়া অবজ্ঞা দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো অন্তুর পানে। বলল,

—-“তোমাদের মতো অশিষ্ট, জাত হীন অমানুষরা আর জানেই বা কি? তোমাদের মতো বন্য পশুরা ভালোবাসার মানে এটাই বুঝতে পারে। কিন্তু রাদ তা পারেনা। বিশ্বাস করো, উনি সত্যি তা পারে না। উনি সত্যিকার ভালোবাসতে জানে, ভালোবেসে আগলে রাখতে জানে। আমি হয়তো ওসবের যোগ্যও নই কোনোদিন। কিন্তু উনি, ভালোবেসে এই আমাকে.. আমার মতো অনাথ মেয়েটাকে মাথায় করে রেখেছে। প্রতিটা পদক্ষেপে শক্ত করে হাতটা ধরে রেখেছে। একটা অনাথ মেয়েকে গোটা একটা পরিবার দিয়েছে। এরপরেও আমার আর কি চাওয়ার থাকতে পারে? জানতে চাইলে না,রাদের কাছে কি এমন আছে যা তোমার কাছে নেই? জেনে রাখো, রাদের কাছে আমার প্রতি যে পবিত্র ভালোবাসা আছে তা হয়তো তোমাদের মা ছেলের মাঝেও নেই। তার ভালোবাসার সাথে তোমাদের মতো কিছু উচ্চশ্রেণীর অমানুষের ভালোবাসার তুলোনা করতে আমার সত্যি গায়ে বাঁধছে। কিন্তু কি করার? এটাই বাস্তবতা।”

অন্তু ক্ষে/পা চাহনিতে ইলহামকে গিলে খাবে যেন। ততক্ষনে ছাঁদের রেলিঙ ধরে দাঁড়িয়ে পড়েছে অন্তু। ইলহামের একেকটা কথা তার শরীরে যেন সূচ ফুটালো। ক্ষে/পা চাহনিতে তাকে ধ্বং//স করতে পারলেও তেমন আক্ষেপ হবেনা। কথা গুলো বলো ইলহাম চলে আসতে নিলেই অন্তু তার হাতটা ধরে ফেলে। ইলহাম পূর্বের ন্যায় ফোঁস করে ওঠে। এবার তার রা/গ আকাশ স্পর্শ করলো যেন। ইচ্ছে করছে ঠাটিয়ে চড় মা/র/তে। কিন্তু মা/র/লো না। বরং নিজেকে শান্ত করতে চেষ্টা করলো। কিন্তু, সেটাই যেন হলো তার সবচেয়ে বড় বোকামি। অন্তু তার শান্ত ভঙ্গিমাকেই অ//স্ত্র করলো। ইলহামের হাতটা শক্ত করে চেপে রেখে সহসা ইলহামের পরনে শাড়ির ন্যায় ওড়নাটা টেনে খুলে ফেললো। অন্তুর হাতের জোরে ওড়নাটা সেফটিপিন গুড়িয়ে অন্তুর হাতে চলে গেলো। ইলহাম চক্ষু লজ্জায় মুষড়ে পড়লো ভেতর থেকে। এক ঝটকায় অন্তুর থেকে হাতটা ছাড়িয়ে আড়াল করলো নিজেকে। তার বুক ফেটে কান্না আসতে লাগলো এবার।

অন্তু বিকট শব্দে হেসে উঠলো। ইলহাম যথাসম্ভব নিজেকে আড়াল করে উল্টোদিকে ঘুরে দাঁড়ালো। এবার যেন সমস্ত সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে অন্তু। ইলহামের চোখের জল বাঁধ মানলো না। সহসা ঝর্ণার ন্যায় গড়াতে লাগলো গাল বেয়ে।

—-“এমন কামনীয় নারীকে কেউ ডিনাই করতে পারে বলোতো? আমি তো পারিনা। তাতে তুমি আমাকে পশু বললেও আমার কোনো প্রবলেম নেই।”

বলেই হাতের মাঝে ইলহামের ওড়নাটা পেঁচাতে লাগলো অন্তু। ইলহাম লজ্জায়, অপমান চোখ জোড়া বন্ধ করলো। এই মুহুর্তে তার ম//রে যেতে ইচ্ছে করছে। কেন বোকার মতো রাদের ম্যাসেজ পেয়ে ছাঁদে আসতে গেলো? কই রাদ তো এর আগে কোনোদিন তাকে ম্যাসেজ করে ডাকেনি ছাঁদে। বরং প্রয়োজনে নিজে সঙ্গে করে সব স্থানে হাজির হয়েছে। তাহলে আজ কেন ভাবলো না, এটা কোনো ট্র্যা//প হবেনা!

ইলহামের হেঁচকি তোলা কান্নায় আত্মতুষ্টি পাচ্ছে অন্তু। পেছন থেকে এক পা এক পা করে এগোতে লাগলো। লালসাতুর দৃষ্টি ইলহামের উদাম পিঠে। একই সাথে শরীরে বিভিন্ন খাঁজে বিরাজ করছে। অন্তু বাঁকা হাসছে। সে খুব ভালো করেই জানে ইলহাম ম//রে যাবে, তবুও এমন অবস্থায় নীচে নামবে না। তাই এটাই সুযোগ।

অন্তুর কিলবিল করা হাতটা এগিয়ে এলো ইলহাম কাঁপতে থাকা শরীরের খাঁজে। কেমন লোভাতুর দৃষ্টি তার। কোনো হিং//স্র পশু যেন হার মানবে ওর কাছে।

ইলহাম অনুভূতি শূন্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে! লজ্জায় অপমানে ক্রমশ ঢুকে পড়ছে অতল গহ্বরে। অন্তু তাকে ছুঁই ছুঁই এমন পর্যায়েও যেন কোনো ভাবাবেগ ঘটেনি তার ভেতরে। কেবল একটা শব্দ ব্যাতীত!

আকস্মিক এক ভ/য়া/ন/ক শব্দ কেঁপে উঠল ইলহাম। কেঁপে উঠল অমাবস্যার নিকষ কালো অন্ধকার এই রজনী। একই সঙ্গে ঝনঝন করে কম্পন তুললো গোটা ছাঁদ। অন্তু ছিটকে পড়েছে দূরে। ইলহাম ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে মুখ উঁচিয়ে তাকালো সামনে। রাদ দাঁড়িয়ে আছে। না, সে ভুল দেখছেনা। রাদই দাঁড়িয়ে আছে র/ক্ত/চ/ক্ষু নিয়ে। ইলহামের কান্নার বেগ বেড়ে কাঁপিয়ে তুললো রাদের বুক পাঁজরের হাড়টিকে। রাদের র/ক্তি/ম অক্ষি কাঁচ ভেঙ্গে এখনি যেন আ/গু/নের জ্ব/ল/ন্ত লা/ভা/দের আবির্ভাব ঘটবে। তবে ইলহামের কান্নার শব্দে অবাক করে দিয়ে শান্ত হয়ে গেলো ঐ দৃষ্টি জোড়া। মুমূর্ষু হয়ে উঠলো যত্রতত্র,

—-“সুইটহার্ট!“

ইলহামের দু’গালে হাত রেখে আর কোনো কথা আওড়াতে পারলো না রাদ। তার পূর্বেই নিজেকে আড়াল করতে ইলহাম লুটিয়ে পড়লো রাদের প্রশস্ত বক্ষঃস্থলে। কান্নায় ভেঙে পড়ে হু হু করে কেঁদেই চললো। রাদের ভেতরটা ভেঙে চৌচির হয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। সে কিছু বললো না। সামনের দিকে তাকিয়ে অন্তুর হাতে ইলহামের ওড়নাটা দেখে বাকি যা বোঝার বুঝে নিলো।

#চলবে___

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here