#প্রেম_পিয়াসী ❤️
#লেখিকাঃমুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্ব_______১৮.
প্রণয় এলোমেলো পা ফেলে একপ্রকার ছুটছে সামনের দিকে। সে জানেনা তার গন্তব্য কোথায়? কিন্তু, সে এইটুকু বেশ ভালো করে বুঝতে পারছে অনন্যার সাথে আলভির এই বিয়েটা কিছুতেই হতে পারেনা। কিছুতেই না! এই বিয়েটা হলে যে সব কিছু শেষ হয়ে যাবে। তার অনন্যা.. অনন্যা যে দম ঘুটে ম/র/বে প্রতি পদে পদে!
এলোমেলো চিন্তায় এবং রাগে প্রণয়ের ভেতরটা জ্ব/লে/পু/ড়ে যাচ্ছে। চোখ জোড়া ঝাপসা হয়ে এসেছে সেই প্রথম দিকেই। এখন সে স্থান টইটম্বুর করছে নোনা জলে। বারবার কেঁপে উঠছে হৃদপিণ্ডটা। সবটা আবার কি করে ঠিক হবে?
কথাগুলো ধ্যানমগ্ন অবস্থায় ভাবতে ভাবতে পা চলছিলো তার অতি দ্রুত বেগে। ঠিক এমন মুহুর্তে কারোর সাথে সংঘর্ষ ঘটতে পারে বুঝে কুলিয়ে উঠতে পারেনি সে। হাতে ফোন চাপতে চাপতে হেঁটে যাচ্ছিলো অন্তু। আকস্মিক কারোর সাথে ধাক্কা খেতে হাত থেকে ফোনটা ছিটকে পড়ে মেঝেতে। ফোন বলতে পাগল অন্তু। কেননা, এই ফোনেই আছে তার সব মধুমালতিদের ভীড়। অর্থাৎ তার সো কল্ড সকল গার্লফ্রেন্ডস। ফোনটার হয়তো কিচ্ছু হয়নি। তবে অন্তুর অনেক কিছু হলো। রা/গে ক্ষি/প্ত হয়ে সামনের আগন্তুককে না দেখেই ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলো। আকস্মিক চড় খেয়ে চমকে ওঠে প্রণয়। ঘটনা বুঝতে তার কয়েক মিনিট লাগে। চড় মা/রা/র পর অন্তু বুঝতে পারে চড়টা অন্যকাউকে নয়, বরং তার প্রিয় বন্ধু প্রণয়কে মে/রে/ছে। তাই খানিক খারাপ লাগা থেকেই সরি বলতে চাইলো। তবে প্রণয় তাকে সেই সুযোগ দিলোনা। চোখের পলকে বেরিয়ে গেলো ওখান থেকে। অন্তু অবাক নয়নে তার যাওয়ার পানে দেখলো। বার কয়েক পিছু ডাকলো বটে। কিন্তু প্রণয়ের কোনো সাড়া পেলোনা।
____________________________________________
মাঝের একটা দিন বড় অদ্ভুত ভাবেই কেটে গেলো। অর্থাৎ, অনন্যার মেহেন্দি অনুষ্ঠানের পাট চুকিয়ে আজ হলুদের অনুষ্ঠান করতে মেতেছে সকলে। এই গোটা একটা দিনে প্রণয়কে একটা বারের জন্যও দেখেনি কেউ। রাদ তাকে দিনরাত খুঁজে যাচ্ছে পা/গ/লে/র মতো করে। কিন্তু ছেলেটা যেন কোথাও নেই। আজ রাত ঠিক ৮ঘটিকায় শুরু হলো অনন্যার গায়ে হলুদ। যথারীতি অনন্যাকে নিয়ে এলো ফুলেফুলে সজ্জিত স্টেজে। গান,নাচ,মাতামাতি,হুড়োহুড়ি কোনো কিছুরই কমতি রাখছে না কেউ। কিন্তু অনন্যা এই সব কিছু থেকে অনেক দূরে। যেন হাজার হাজার ক্রোস মাইল পথ পেরিয়ে বসে আছে সে। কেবল একটা মানুষের অপেক্ষায়। আর সে হলো প্রণয়। অনন্যার মন বলছে প্রণয় আসবে তাকে নিতে। কিন্তু সময়ের ফেরে বারবার মন ভে/ঙে ভেতরটা হাহাকার করে যাচ্ছে। মাইলের পর মাইল রাস্তা কেবল ফাঁকাই পড়ে আছে তার কল্পনায়। কোত্থাও যে প্রণয় নেই। তবে কি সে মিথ্যে আশায় বুক বেঁধেছে? আসবেনা প্রণয়? সত্যি কি আসবে না সে?
দু’গালে শীতল কিছুর ছোঁয়া পেতেই চমকে উঠলো অনন্যা। ইতি ঘটলো তার সমস্ত অবান্তর, অযাচিত ভাবনাদের। ঘোলাটে দৃষ্টি জোড়া মেলে সামনের মানুষটাকে দেখতেই ভেসে উঠলো প্রণয়ের বিধ্বস্ত, এলোমেলো মুখখানা। যা দেখতেই বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো অনন্যার। এক রকম কেঁপে উঠলো সে। প্রণয়ের কপাল কেটে র/ক্ত ঝড়া জায়গাটা চটলা দিয়ে শুঁকিয়ে গেছে। অনন্যার ভেতরটা ধরাক করে উঠলো পূর্বের ন্যায়। উপস্থিত শ শ মেহমানদের তোয়াক্কা না করে ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে ফেললো সে। প্রণয়ের দুগালে হাত চেপে কপালের
কা/টা স্থানে দৃষ্টি রেখে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে শুধালো,
—-“ক..কোথায় ছিলেন আপনি? আ..আর একি অবস্থা করেছেন নিজের?”
—-“অ..অনু.. (কয়েক লহমা পেরোতে)
পারবোনা আমি ছাড়তে তোকে,
কোনোমতে আর হারতে তোকে!
সরে যেতে আর আমি পারবোনা।
তোর বায়না সব, রেখে দিবো সাজিয়ে~
তুই চাইলে বল, হয়ে আছি রাজি রে!
পালাতে আমি পারবোনায়ায়ায়া!~~~”
প্রণয়ের রক্তিম চোখে নোনাজল গুলো বানভাসির ন্যায় গড়িয়ে গেলো। কাতর কন্ঠে সুরে সুরে জানিয়ে দিলো তার মনের কথা। যা বুঝতে অনন্যার এক লহমাও প্রয়োজন পড়লোনা। হু হু করে ডুকরে কেঁদে উঠে ঝাপটে ধরলো প্রণয়কে। তাদের সামনে দাঁড়ানো শ শ জনতা কেবল হা করে তাকিয়ে রইলো তাদের কান্ড দেখে। এক জোড়া প্রেমিক শালিক পাখি বহু প্রতিক্ষার পর যেন ফিরে পেলো একে অপরকে। তবে হ্যাঁ, এই খুশিটা কেবল ইয়ং জেনারেশনের মাঝেই দেখা যাচ্ছে। বাকি বয়স্ক সবার মাঝে চাপা গুঞ্জন উঠেছে ‘এসব নিতান্তই বেহায়াপনা ব্যাতিত আর কিছু না’। ছ্যা ছ্যা! মেয়ের শিক্ষার কি শ্রী! জনসমাজে কেমন নির্লজ্জের মতো জড়িয়ে আছে অন্য এক পরপুরুষকে।
ইলহাম ভীড় ঠেলে দৌড়ে এসে দাঁড়ায় স্টেজের সামনে। অনন্যা এবং প্রণয়কে একসাথে দেখে আনন্দে দিশেহারা হলো সে। যা বহিঃপ্রকাশে উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে উঠে বলল,
—-“ইয়েসসসসস।”
তার পিছু পিছু ছুটে এলো রাদ। প্রণয় ফিরেছে খবরটা পেয়ে তাদের কেউই আর স্থীর থাকতে পারলো না। ইলহামের পাশে এসে দাঁড়িয়ে অনন্যা এবং প্রণয়কে একসাথে দেখে তার খুশিও যেন কম হলো না। মনের অজান্তেই ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠলো সন্তোষ জনক হাসি। ভালোবাসার জয় হোক। ঠিক এভাবেই।
আকস্মিক প্রণয় এবং অনন্যার ভ্রম কাটে অন্তুর জোড়ালো হাতে হেঁচকা টানে আলাদা হওয়াতে। ঝড়ের বেগে তেড়ে এসে দু’জনকে আলাদা করার তাগিদে পেছনের দিকে টেনে নেয় প্রণয়কে। প্রণয় নিজেকে সামলাতে না পেরে পড়ে যায় মেঝেতে। যা দেখতে চোখ গুলো চড়কগাছে চড়ে যায় মেহমানদের। কারোর কারোর মুখে অবাকের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠতে হাত চেপে নেয় মুখে। অনন্যা দাঁড়িয়ে যায়। তার কন্ঠনালি হাঁকিয়ে ওঠে “প্রণয় ভাই” বলে। ডাকটা অন্তুর কানে পৌঁছাতেই আরও ক্ষি/প্ত হয়ে ওঠে অন্তু। ততক্ষণে রাজিয়া বেগম, মিলাদ এবং মান্নাত বেগম হাজির হন স্টেজে। রাজিয়া বেগমের মুখখানা দেখা যাচ্ছিলো না যেন। রা/গে, ক্ষো/ভে ভেতরে ভেতরে ফোঁস ফোঁস করছেন তিনি। এই দিন দেখার পূর্বে ম/র/লো না বলে বড্ড আক্ষেপ হলো তার।
প্রণয় মেঝেতে পড়ে পেছন মুড়ে দেখার চেষ্টা করলো, তাকে আ/ক্র/ম/ণ করা ব্যক্তির মুখখানা। অন্তু আবারও তেড়ে এলো প্রণয়ের পানে। ক্ষপ করে তার শার্টের কলারটা চেপে ধরে হেঁচকা টানে দাঁড় করিয়ে দিলো। প্রণয় ব্যা/থায় চোখমুখ কুঁচকে নিচ্ছিলো ঠিকই তবে মুখে একটা কথাও বলছিলো না। কারন সে খুব ভালো করেই জানে, অন্তু তাকে কেন মা/র/তে এলো।
—-“আমার বোনের বিয়েতে এসে নাটক করছিস হ্যাঁ? কি ভেবেছিস! বন্ধু হওয়ার খাতিরে আমি সবটা মুখ বুঁজে সহ্য করবো? শা*লা!!”
দাঁতে দাঁত চেপে রাঙা চোখে একপ্রকার শা/সা/নি দিলো অন্তু। কথার শেষোক্ত লাইনে পৌঁছে ধরাম করে একটা ঘু/ষি মা/র/লো প্রণয়ের মুখে। প্রণয় পেছনের দিকে হেলে পড়তে পড়তে পড়লোনা। কোনোমতে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর মাঝে আরও একটা ঘু/ষি পড়লো মুখে। প্রণয় এবার পিছিয়ে পড়লো দু’পা। ইতিমধ্যে ছুটে এলো অনন্যা। প্রণয়ের র’ক্ষ’ক হতে গিয়ে ভ’ক্ষ’ক হলো নিজের ভাইয়ের জন্য। নিজের ক্রো/ধ/কে সংবরন করতে না পেরে আকস্মিক ধাক্কা মে/রে বসলো অন্তুকে। একপ্রকার র/ণচ/ণ্ডী রূপ নিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো অন্তুর প্রতি,
—-“খবরদার ভাইয়া!! আর একবার যদি তুমি উনার গায়ে হাত তুলেছো..”
এ কোন অনন্যাকে দেখছে সবাই? যে মেয়ে কোনো দিন কারোর চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলেনি, সে মেয়ে আজ.. একটা বাইরের ছেলের জন্য নিজের ভাইয়ের গায়ে হাত তুললো? এই ছেলে তো তাদের মেয়েকে একদম অ/ন্ধ করে দিয়েছে।
—-“কি বললি? আবার বল!”
অন্তু রাগে বিস্ময়ে অন্ধ হয়ে গেলো যেন। অনন্যার এতোটা ভ/য়া/ন/ক দুঃসাহস ছিলো না কোনোদিন।
—-“আমি বলেছি উনার গায়ে তুমি আর একটাবারও হাত তুলবেনা। এর ফল কিন্তু ভালো হবেনা ভাইয়া!”
অনন্যার র/ণচ/ণ্ডী রূপ যেন টললো না এক চিমটিও। সে পূর্বের ন্যায়ই, বলা বাহুল্য পূর্বের চেয়ে আরও
ভ/য়ং/ক/র গলায় বলল। অন্তুর সাথে সাথে রাজিয়া বেগম এবং মিলাদ সাহেবের মুখখানাও দেখার মতো হলো। অবিশ্বাসের এক কালো ছায়ায় মুড়িয়ে যাচ্ছে তাদের দৃষ্টি।
অন্তু তেড়ে আসে আবারও। অনন্যা এবং অনন্যার কথা কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করলো সে। প্রণয়ের কলার চেপে ধরলো পূর্বের ন্যায়। দাঁতে দাঁত চেপে
বি/ষবান ছুড়লো অন্তু!
—-“কি করেছিস আমার বোনের সাথে? বল! টাকার লোভ তোকে আজ এতো নীচে নামিয়ে দিয়েছে যে তুই আমার বোনকেও ছাড়লিনা? লিয়ার কথা মনে নেই তোর? কি করেছিস ওর সাথে জানে আমার বোন? বলেছিস কোনোদিন? নিশ্চয়ই না… তোদের মতো টাকা লোভী কাপুরুষরা কোনো দিন মুখ ফুটে বলতেও পারবেনা এসব! অন্তত, লজ্জার বালাই থাকলে তো আরও নয়!”
উপস্থিত জনগনের মাঝে একরাশ কৌতুহল চেপে বসে। কৌতুহল জাগে অনন্যার মাঝেও। লিয়া কে? জানতে চায় তার মন?
—-“দেখ অন্তু, পাস্ট ইজ পাস্ট। পাস্ট নিয়ে ঘাঁটতে গেলে কারোরই ভালো হয়না। ওটা আমি ভুলে গেছি। তুইও ভুলে যা। এটলিস্ট অনন্যার সামনে এসব কথা তুলিস না। ঘটনার মোড় কোনদিকে যাবে হয়তো তুই নিজেও জানিস না। দেখ ভাই? আমি অনন্যাকে ভালোবাসি! হ্যাঁ, মানছি আমার ওতো টাকা পয়সা নেই। কিন্তু বিশ্বাস কর, আমার থেকে বেশি ভালো ওকে কেউ বাসতে পারবেনা। এবং আমি এটাও বিশ্বাস করি, অনন্যাও আমাকে খুব ভালোবাসে। ওর মতো একটা মানুষ আমি খুব ভাগ্য করে পেয়েছি।”
—-“যে মানুষের টাকা নেই, সে মানুষের সুখটা আসলে কোথায় আমি খুব ভালো করেই জানি প্রণয়। এই যে আমি! তোর বড় লোক বন্ধু। ঐ যে রাদ। সেও তোর বড়লোক বন্ধু। তোদের মুল উদ্দেশ্যই থাকে বড়লোক মেয়ে পটানো। যদি তা না পারিস তখন দেখিস কি করে বড়লোক ছেলে,মেয়েদের হাত করে, ইমোশনাল ব্ল্যা/ক/মে/ই/ল করে বন্ধু বানানো যায় কিনা। শা*লা, তুই আমার বোনকে ভালোবাসার কথা ভাবলি কেমন করে? কি যোগ্যতা আছে তোর হু? কি এমন আছে তোর যে তুই আমার বোনকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখলি?”
প্রণয়ের শুঁকনো মুখখানা প্রসারিত হলো মলিন হাসিতে। কয়েক মুহুর্তে কিছু বলল না। স্রেফ একহাত উঠিয়ে রাখলো অন্তুর কাঁধে। অতঃপর কিছু সময় পেরিয়ে এসে মলিন স্বরে আওড়ালো,
—-“বিশ্বাস কর ভাই, ও তোর বোন হয়েও অনেক বেশি আলাদা। ওর মাঝে যা আছে তা হয়তো আরও একশবার জন্মানোর পরেও তোর মাঝে আসবেনা। তুই ওর আশেপাশেও নোস। শী ইজ এবস্যুবলেটলি…”
প্রণয় কথাটা শেষ করার পূর্বেই ঠাস করে এক শব্দ হলো। অন্তু হাতের জোড় দেখিয়ে কসিয়ে মা/র/লো প্রণয়কে। অনন্যা ছুটে গিয়ে তার ভাইকে আটকাতে চাইলে রাজিয়া বেগম হাত টেনে ধরলো তার। চড় খেয়ে প্রণয় মাথা নীচু করে ছোট্ট করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। পরন্তু, অন্তুর যেন লাগাম এলো না এবারেও। পূণরায় কলার চেপে ধরলো প্রণয়ের। রা/গে ফেটে বলে উঠলো,
—-“লিয়ার সাথে রাত কাটিয়েও কি মনে হয়েছিলো ও আলাদা? ওর সাথে ঠিক কি কি করেছিস মনে নেই তোর?”
পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যেতে অন্তুর এই কথাটাই যথেষ্ট ছিলো অনন্যার জন্য। থমকে গেলো সে। তার ভাই, কি বলছে এসব? প্রণয় ভাই কারোর সাথে রাত কাটিয়েছেন? না না! তিনি তো এমন নন!
—-“ওও তাই নাকি রে? বাট আই নিউ দ্যাট দ্য পারসন, হু স্পেন্ট দ্য নাইট উইথ লিয়া! ওয়াজ নট প্রণয়! বাট সামওয়ান এলস। এন্ড আই থিংক তুইও চিনিস তাকে। ইভেন ডাজ ভেরী ওয়েল।”
কথাগুলো বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে বলতে অন্তুর সম্মুখ পানে এসে দাঁড়ালো রাদ। হাত দুটো পকেটে গুঁজে ভাবখানাই বেশ আলাদা। গম্ভীর তার চাহনি। অন্তুর অহংকার গুঁড়ো হতে রাদের এহেম ভঙ্গিমা কিছু কম ছিলোনা। প্রণয় শুঁকিয়ে কাঠ হয়ে থাকা গলায় ঢোক গিললো। তার ভেতরটা ক্রমশ কেঁপে উঠছে। অন্তু নিজের কার্যাদি কি করে চাপিয়ে দিচ্ছে তার উপর। তার কি মোটেও অপরাধবোধ হচ্ছে না?
অন্তু ঢোক গিললো অজানা ভ;য়ে। চুপসে এলো তার গলা। কাঁপল কিঞ্চিৎ। বলল,
—-“মানে? প্রণয় নয় অথচ অন্যকেউ? আর আমি তাকে চিনি! শোন রাদ, এমন সময়ে এসব অবান্তর কথাগুলো বলিস না প্লিজ। আর তাছাড়া, তুই এসবের কিছু জানিসও না। সো প্লিজ…”
—-“কে বললো আমি কিছু জানিনা? ইভেন এটা বল, আমি যা জানি সেটা তুই জানিস না। সো,কিছু না জেনে প্রণয়কে ব্লেম করা বন্ধ কর। আর এক্ষনি কি বলছিলিস ওকে? প্রণয়ের মতো ছেলেরা কি করে? টাকার এতো অহং/কার তোর? কবে থেকে হলো এমন? দোষ টা জন্মসূত্রেই নাকি… হোয়াটএভার! দ্য ফ্যাক্ট ইজ, প্রণয় এবং অনন্যা দু’জন দু’জনকে ভালোবাসে। আর কাল ওদের যথা সময়ে বিয়েটাও হবে। আমি দিবো। দেখি কার কি বলার আছে।”
অন্তু নিজের কথাগুলো শেষ করার পূর্বেই এক প্রকার ছিনিয়ে নিলো রাদ। সে তার বলা কথাগুলো সম্পূর্ণ করে রাজিয়া বেগমের দিকে তাকালো। ওমনি রো/ষপূ/র্ণ কন্ঠে ক্ষে/পে উঠলো তিনি,
—-“আমার মেয়েকে একটা দু’টাকার ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার অধিকার কে দিয়েছে তোমায়? কি ভাবো নিজেকে? দু’দিন হয়নি কিছু টাকার মুখ দেখেছো এরই মাঝে এতো দা/প/ট বেড়েছে? শোনো রাদ, তোমার ঐ দু’পয়সা দিয়ে না আমি এই রাজিয়া বেগম আমার পা-টাও মুছিনা। এই শোন, তুই যদি আলভিকে বিয়ে করতে না পারিস তো গলায় কলসি বেঁধে ডুবে ম/র/বি নদীতে! কলঙ্কিনী.. তোকে পেটে ধরাটাই পা/প হয়েছিলো আমার!”
মুখে যা এলো লাগামহীন শ্রোতে ভাসিয়ে দিলো রাজিয়া বেগম। রাদ যেন শুনেও শুনলোনা কথাগুলো। অথচ প্রতিটা ঠেস মা/রা কথা রাজিয়া বেগম তাকে উদ্দেশ্য করেই নির্গমন করেছে।
রাদ গিয়ে অনন্যার হাত ধরে নিয়ে এলো প্রণয়ের সামনে। প্রণয় একবারও তাকালো না অনন্যার পানে। সে ভেবে নিয়েছে অনন্যা তাকে নির্ঘাত ভুল বুঝেছে। ভুল বোঝারই কথা। অনন্যা কি ভাববেনা, তার ভাই তাকে ভুল বলতে পারেনা!
—-“ভালোবাসিস প্রণয়কে?”
রাদ প্রশ্ন করে। অনন্যা নির্দ্বিধায়, নিঃসংকোচে জবাব দেয়,
—-“হ্যাঁ ভাইয়া। ভালোবাসি আমি উনাকে।”
প্রণয় যেন চমকে উঠলো। এতোকথার পরেও অনন্যার এহেম দৃঢ় বিশ্বাস এবং নিঃসংকোচ ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশে! ভরে উঠলো তার নেত্রকোন।
—-“সন্দেহ হচ্ছে না তো প্রণয়কে? হলে বলে দে! আমি তোকে সবটা ক্লিয়ার করবো।”
—-“না ভাইয়া, সন্দেহ আমায় হয়নি। তবে ভ/য় হয়েছে। ভ/য় হয়েছে, যদি মানুষটাকে পেয়েও হারিয়ে ফেলি!”
রাদ ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো। অনন্যার মাথায় হাত বুলিয়ে কয়েক মুহুর্ত জড়িয়ে ধরলো নিজের সাথে। অতঃপর বলল,
—-“বিয়ে করবি ওকে?”
—-“তুমি পাশে থাকবে তো ভাইয়া? তুমি আমার পাশে থাকলে আমার আর কাউকে দরকার নেই।”
—-“শুধু আমি একাই থাকবো নাকি তোর ভাবিকেও চাই?”
অনন্যা ছোট্ট করে হেসে বলল,
—-“ভাবিকে তো মাস্ট চাই।”
ইলহাম দূরে দাঁড়িয়েই হাসলো। হাসলো রাদও। অনন্তর হাত বাড়িয়ে টেনে আনলো প্রণয়কে। দু’জনকে দু’হাতে আগলে রেখে ভরসা দিয়ে বলল,
—-“আমার বোনের বিয়ে আমি একাই দিবো। আশাকরি কাউকে আমার প্রয়োজন পড়বেনা। কিরে বেটা রাজি তো?”
শেষোক্ত কথাটা রাদ প্রণয়কে উদ্দেশ্য করে বলল। প্রণয় না হেসে পারলোনা। হেসে পড়ে বলল,
—-“শা/লা তুই থাকতে আর কাকে চাই বল?”
হাসলো রাদ, অনন্যা এবং ইলহাম। অতঃপর কারোর তোয়াক্কা না করেই অনন্যার হলুদের অনুষ্ঠান আবারও শুরু হলো। শুধু বর পাল্টালো। বাকি সব কাজ একই রইলো।
চলবে
[ বিঃদ্রঃ ঘুমন্ত পাঠকরা জাগ্রত হও🙂 হও ভাই হও]