#তুমি_শুধু_আমারই_হও
লেখনীতে- অরনিশা সাথী
|৮|
ঘুম ভেঙে নিজেকে উৎসবের কাঁধে মাথা রাখা দেখেই তড়িৎগতিতে সরে যায় অর্নি। এতে উৎসবের কোনো হেলদোল নেই। ও নিজের মতোই ফোনে ব্যস্ত। অর্নি ফোন বের করে সময় দেখে নিলো। এতটা সময় এভাবেই উৎসবের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়েছে ভাবতেই অস্বস্তি হতে লাগলো। আচ্ছা লোকটা কি এতক্ষণ যাবত এভাবেই বসে ফোন দেখেছে? স্ট্রেইঞ্জ! একটা মানুষ এতসময় কিভাবে ফোনে ডুবে থাকতে পারে ভেবে পায় না অর্নি।
আড়াইটে নাগাদ সিলেট শহরে পৌঁছে গেলো ওরা। হোটেলে যার যার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। অর্নি আর নূর ইচ্ছে করেই ওদের সাথে তরীকে নিলো। ওরা তিনজনে একই রুমে থাকবে। তরীর মোটেও ইচ্ছে ছিলো না অর্নি আর নূরের সাথে রুম শেয়ার করার। কিন্তু সিনিয়র বলে কথা, হাসিমুখে এইটুকু সম্মান তো করতেই হবে। সকলে মিলে ফ্রেশ হয়ে নিচ তলায় চলে আসে লাঞ্চের জন্য। লাঞ্চ করে দু ঘন্টা রেস্ট নিয়ে তারপর বের হবে আশেপাশে ঘুরে দেখার জন্য৷
নূর আর তরী শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে গেছে রুম থেকে। অর্নি লাস্টে শাওয়ারে যাওয়াতে ওর একটু লেট হয়ে যায়। নূর অবশ্য একসাথেই যেতে চেয়েছিলো, অর্নি পাঠিয়ে দেয় ওকে। ফোর কোয়াটার আর টি-শার্ট পড়ে রেডি হয়ে নেয় অর্নি। ভেজা এলোমেলো চুলেই নিচে নেমে আসে ও। নূরের পাশের চেয়ারে গিয়ে বসে পড়লো অর্নি। তারপর দুজনে মিলে খেতে শুরু করলো৷ এক পর্যায়ে দেখলো উৎসব আর ওর বন্ধুরাও অর্নিদের টেবিলেই আছে। লোকটা মাঝে মাঝে কেমন অদ্ভুত চোখে তাকায় অর্নির দিকে৷ ফলে অর্নি বেশ অস্বস্তি বোধ করে৷ একই টেবিলে মাহিরও ছিলো। অর্নি আর উৎসবকে আলাদা আলাদা বসতে দেখে বললো,
–“আমি না কনফিউজড, আচ্ছা অর্নি তুমি কি সত্যিই উনার সাথে রিলেশনশিপে আছো? নাকি আমি যাতে বিরক্ত না করি সেজন্য মিথ্যে বলেছো আমায়?”
অর্নি বিড়বিড় করে বললো,
–“এতই যখন বুঝেন তাহলে আবার বিরক্ত করেন কেন?”
–“কিছু বললে?”
মাহিরের কথায় অর্নি চমকে বললো,
–“ক্ কই না তো।”
মাহির সন্দেহের দৃষ্টিতে ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বললো,
–“আমার মনে হচ্ছে তোমরা দুজনেই আমাকে মিথ্যে বলছো, তোমাদের মাঝে কোনো রিলেশন টিলেশন নেই৷”
নূর ধমকের স্বরে বললো,
–“আপনাকে কে বলেছে রিলেশন নেই? অর্নি আমার ভাইয়ের জিএফ। আমার উডবি ভাবি। একদম অন্য নজরে তাকাবেন না ওর দিকে। আলবাদ রিলেশন আছে আমার ভাইয়ার সাথে ওর।”
নূরের কথায় উৎসবের বন্ধুরা আরেক দফা অবাক হলো৷ উৎসব রিলেশনশিপে আছে? অর্নির সাথে? কই ওরা তো এই ব্যাপারটা জানে না। ওদের থেকে কি তাহলে লুকিয়ে গেলো ব্যাপারটা? উৎসবের এতে কোনো পাত্তা নেই৷ ও নিজের মতো ফোন দেখছে আর খাচ্ছে। আর অর্নি খাওয়া বাদ দিয়ে টেবিলের সবার রিয়্যাকশন দেখছে এই মূহুর্তের। মাহির নাকোচ করে বললো,
–“আমার তবুও সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে৷ তোমার ভাই বা অর্নি তো কিছু বলছে না৷ তুমি আগে আগে এত কথা বলছো কেন? যত প্যাঁচঘোচ তোমার মধ্যে, আ’ম সিয়র। ওরা নিজেদের মতো আলাদা আলাদা থাকছে এক বাসে আসলেও নিজেদের মতোই এসেছে। কোনো কাপল কাপল বিহেভিয়ার তো ওদের মধ্যে দেখলাম না আমি।”
নূর রাগান্বিত স্বরে বললো,
–“আপনি কি আমার ভাই আর অর্নির উপর নজর রাখছিলেন?”
–“চোখে পড়েছে তাই বললাম। এতকিছু বলার পরও ওরা কেউ কিছু বলছে না। আ’ম ড্যাম সিয়র ওরা রিলেশনে নেই।”
মাহিরের কথায় উৎসব এবার খাওয়া বন্ধ করলো। গম্ভীর চোখে তাকালো মাহিরের দিকে। তাতে মাহিরের মনোবল কিছুটা নড়বড়ে হয়ে গেলো। উৎসব মাহিরের দিকে শান্ত দৃষ্টি রেখে বললো,
–“এত সিয়রিটি কোত্থেকে আসছে? রিলেশনে থাকলেই কি সবসময় যার তার সামনে কাপলদের মতো বিহেভিয়ার করা লাগবে? সবাইকে বুঝাতে হবে আমরা রিলেশনে আছি? আমাদের দুজনের মাঝে কি সম্পর্ক, আর ঠিক কতটা গভীর এসব আমরা দুজনে জানলেই তো হয়। অন্য কাউকে জানানোর প্রয়োজন মনে করছি না আমি। প্রত্যেকেরই আলাদা লাইফ আছে৷ রিলেশনে থাকলে যে সারাটা সময় একে অপরকে দিতে হবে এমন না। নিজেদের পারসোনাল লাইফও থাকে৷ বিএফ/জিএফ ছাড়াও ফ্রেন্ড, ফ্যামিলি থাকে। তাদেরও সময় দেওয়া উচিত। তবে হ্যাঁ তাই বলে এই সুযোগে অন্যকেউ এসে আমার জিএফকে নিজের করে পেতে চাইবে এটা টলারেট করবো না কিন্তু। আমরা আমাদের মতো আছি, তুমি তোমার মতো থাকো। এবার ছাড় দিলাম। নেক্সট টাইম থেকে বি কেয়ারফুল।”
কথাগুলো এক নাগাড়ে বলে উৎসব টেবিল ছেড়ে উঠে গেলো। নূর ওর ভাইয়ের যাওয়ার দিকে ফ্লাইং কিস করে বললো,
–“জিও ভাই, একদম যোগ্য জবাব দিছো।”
উৎসব নূরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। এদিকে অর্নি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে উৎসবের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। লোকটা কি বলে গেলো? ধুর! এই নূরের প্ল্যানে গন্ডগোল তো হবেই। অন্যভাবেও তো মাহিরকে বোঝানো যেতো। এর মাঝে ওর ভাইটাকে কেন টানলো? এখন হৃদিতা আপুরা কি ভাবছে? উনারা তো মেবি সত্যি সত্যিই ভেবে নিচ্ছে অর্নির সাথে উৎসবের রিলেশন আছে। আর উৎসবটাও না, সামান্য একটু নাটক করতে বলা হয়েছিলো আর ইনি কিনা ধ্যাত!
–
সায়ান আর উৎসব এক রুম নিয়েছে৷ আর আহনাফ আর হৃদিতা কাপল হওয়ায়তে ওরা একরুমে। উৎসব ব্যালকোনিতে দাঁড়িয়ে বাইরের পরিবেশ দেখছিলো। তখনই পেছন থেকে আহনাফ উৎসবের পিঠে চাপড় মারে৷ উৎসব ভ্রু কুঁচকে পেছন ফিরে ওর বন্ধুদের দেখতে পেয়ে বিরক্ত হলো বেশ। উৎসব খুব ভালো করেই জানে এই মূহুর্তে ওরা কি জানতে এসেছে এখানে। উৎসব ওদের ইগনোর করে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো। হৃদিতা বিছানায় উঠে উৎসবকে টেনে তুললো। উৎসব ক্ষানিকটা বিরক্ত হয়ে বললো,
–“সমস্যা কি? এভাবে পিছে পড়ে আছিস কেন?”
আহনাফের উত্তর যেন রেডি করাই ছিলো। উৎসবের প্রশ্নে চট করেই বললো,
–“তার আগে তুই বল, পালাচ্ছসি কেন?”
উৎসব এক ভ্রু কুঁচকে বললো,
–“কি যাতা বলছিস? পালাবো কেন?”
–“অর্নির সাথে তুই রিলশনে আছিস আর এটা আমরা জানি না? বাইরের একটা ছেলে জানে অথচ আমাদের কখনো এই কথাটা বলিসনি তুই, এই আমরা তোর বেস্ট ফ্রেন্ড?”
সায়ানের প্রশ্নে উৎসব কয়েক সেকেন্ড নিরব থেকে বললো,
–“কোনো রিলেশন টিলেশনে নেই আমি।”
এই কথাটা যেন সায়ান, আহনাফ বা হৃদিতা, কারোরই বিশ্বাস হলো না। চোখমুখ কুঁচকে তাকিয়ে আছে উৎসবের দিকে। উৎসব বললো,
–“আচ্ছা, রিলেশনে গেলে তো মানুষের মাঝে অনেক চেঞ্জ আসে। আমার মাঝে তোরা সেরকম কোনো চেঞ্জ খেয়াল করেছিস? করিসনি তো। আর সবথেকে বড় কথা আমি রিলশলে জড়ালে তোরা অবশ্যই জানতে পারতি৷ আমি নিজে বলতাম তোদের৷ কিছু লুকিয়েছি এই অব্দি তোদের থেকে? লুকোয়নি তো, তারপরও এসব ভাবিস কি করে?”
আহনাফ ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। তারপর বললো,
–“তাহলে নূর যে___”
–“সবটাই একটা ড্রামা ছিলো।”
অতঃপর উৎসব ওর বন্ধুদের সব খুলে বললো। সব শুনে হৃদিতা বললো,
–“অর্নির সাথে তোর সম্পর্কটা হলে ভালোই হয় কিন্তু। দুজনকে মানাবে ভালো। আর নূরেরও এই খানটায় দূর্বলতা আছে। আমি খেয়াল করেছি নূরকে। অর্নিকে ভাবী বলার সময় ওর চোখমুখে অন্যরকম খুশির ঝলক দেখা যায়।”
উৎসব ভ্রু কুঁচকে ফেললো হৃদিতার কথায়। হৃদিতার মাথায় একটা থাপ্পড় মেরে বললো,
–“ডিটেকটিভ হয়ে গেছিস মনে হয়? চারিদিকে শুধু চোখ বুলাস।”
হৃদিতা ওর মাথা ডলতে ডলতে বললো,
–“আশেপাশে নজর রাখা ভালো।”
উৎসব আরো কিছু বলতে চাইলে সায়ান ওকে থামিয়ে দিলো। এবং বললো,
–“হৃদি তুই যত যাই বলিস না কেন, অর্নির পাশে উৎসবের থেকে মাহিরকেই বেশি জোস লাগবে।”
সায়ানের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো উৎসব। সায়ানের কথাটা যেন উৎসবের একদমই পছন্দ হলো না। অর্নি আর মাহির এই নামদুটো পাশাপাশি ভাবতেও অসহ্য লাগলো উৎসবের। আচমকাই উৎসব বিছানা ছেড়ে নেমে সায়ানকে ঠেলে রুম থেকে বের করে দিয়ে বললো,
–“বের হো তুই রুম থেকে৷ তোরে যেন আমি আর এই রুমের আশেপাশেও না দেখি।”
উৎসবের এমন কথায় সায়ান পুরো তাজ্জব বনে গেলো। ছেলেটা হুট করেই ওকে রুম থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছে কেন? তাছাড়া এই রুমের বাইরে গিয়ে ও থাকবে কোথায়? রুমটা তো ও আর উৎসব দুজনে শেয়ারে নিয়েছিলো। আহনাফ উৎসবের সামনে এসে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
–“ওকে শুধু শুধু রুম থেকে বের করে দিচ্ছিস কেন তুই?”
আহনাফ এই কথাটা বলার সাথে সাথে উৎসব আহনাফ আর হৃদিতাকে রুম থেকে বের করে দিয়ে বললো,
–“তোরা সবগুলাই ডিস্টার্ব।
এই বলে ধরাম করে দরজা আটকে দিলো উৎসব। ওদিকে দরজার বাইরে করিডোরে দাঁড়িয়ে সায়ান, আহনাফ, হৃদিতা একে অপরের দিকে তাকিয়ে উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। ওদের এই হাসিটাও যেন উৎসবের এই মূহুর্তে একদমই সহ্য হলো না। তাই ভিতর থেকে ওদের উদ্দেশ্যে খিটখিটে গলায় বললো,
–“তোরা যাবি এখান থেকে নাকি আমি আসবো?”
উৎসবের এমন কথায় ওরা হাসতে হাসতেই সেখান থেকে চলে গেলো।
–
ম্যানেজারের থেকে অনেক কষ্টে পারমিশন নিয়ে ছাদটা হালকা পাতলার মাঝেই বেশ সুন্দর করে সাজিয়েছে অর্নি আর নূর৷ তরীও রাজি হয়েছে রুশানকে প্রপোজ করার জন্য। মেয়েটা প্রথমে কিছুতেই রাজি হচ্ছিলো না। পরে যখন অর্নি বললো, সেদিন ওরা দুজনে ইচ্ছে করে রুশানের নামে মিথ্যে বলেছিলো রুশান ওদের ইগনোর করেছে বলে। রুশানের কারো সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। তরীই রুশানের লাইফে ফার্স্ট গার্ল। তখন তরী মেনে নিয়েছে সবটা৷ তবুও কিছুটা সংকোচ ছিলো মনে। কিন্তু রুশান তরীকে ভালোবাসে এটা জানার পর আর কোনো দ্বিধা নেই রুশানকে প্রপোজ করার। তরী নিজেও মনে মনে পছন্দ করতে শুরু করেছিলো রুশানকে। তখনই অর্নি আর নূর উল্টাপাল্টা বলে যার ফলে তরী সরে আসে। কিন্তু ওর অজান্তেই রুশানকে মন দিয়ে ফেলেছিলো ও। তাই আজ যখন অর্নি আর নূর সবটা এক্সপ্লেইন করলো ওকে ও আর না করেনি।
তরী আগে থেকেই সেজেগুজে রেডি হয়ে ছাদে অপেক্ষা করছিলো রুশানের জন্য। অর্নি আর নূর রুশানকে নিয়ে আসতে গেছে। মিনিট পাঁচেক বাদেই দেখা গেলো অর্নি দুহাতে রুশানের চোখ ধরে ছাদে নিয়ে আসছে। পাশে নূরও আছে। রুশান অর্নির থেকে বেশ কিছুটা লম্বা হওয়াতে অর্নির এভাবে ধরে আনতে কষ্ট হচ্ছে, তবুও ম্যানেজ করে নিচ্ছে।
তরীর সামনে এসে মুখোমুখি দাঁড় করালো রুশানকে৷ রুশান হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলছে,
–“এই তোরা দুজন কি শুরু করলি রে? সিড়ি বেয়ে কোথায় নিয়ে এলি আমাকে? ছাদে? আবার ধাক্কা দিয়ে ফেলে টেলে দিবি নাকি? দেখ দোস্ত এই কাম ভুলেও করিস না। আমি সিঙ্গেল মানুষ এখনো বিয়াশাদী কিচ্ছু করি নাই। কমপক্ষে তিন চারটা বাচ্চাকাচ্চার মুখ দেখতে দে আগে।”
তরী মুখ টিপে হাসছে রুশানের কথায়৷ আর ওদিকে অর্নি আর নূর দুজনেই বেশ বিরক্ত হলো। নূর ক্ষানিকটা ঝাঁজালো কন্ঠে বললো,
–“এই তোর আজাইরা প্যানপ্যানানি বন্ধ কর তো৷ বিয়া আর বাচ্চা ছাড়া মনে হয় বা’লডার মুখে আর কোনো কথাই নাই।”
অর্নি বললো,
–“আচ্ছা হইছে, তোরা দুইজনে আবার ঝগড়া শুরু কইরা দিস না। এহন আমরা যে কাজে আসছি সেটা আগে ফুলফিল করি।”
অর্নির কথায় নূর সহমত জানালো। কিন্তু বাঁধ সাধলো রুশান। অসহায় কন্ঠে বললো,
–“দেখ আর যাই করস, আমারে ধাক্কা দিয়া নিচে ফালাইস না দোস্ত।”
অর্নি আর নূর এবার উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। দুজনে একসাথেই বললো,
–“ওয়ান, টু, থ্রি____”
এই বলে রুশানের চোখ ছেড়ে দিলো অর্নি। রুশান চোখ ডলে সামনে তাকাতেই দেখলো তরী একগুচ্ছ গোলাপ হাতে দাঁড়িয়ে আছে৷ ফুলগুলো রুশানের দিকে এগিয়ে দিয়ে তরী হাসিমুখে বললো,
–“আই লাভ ইউ রুশান।”
রুশানের মনে হচ্ছে ও স্বপ্ন দেখছে। তাই আবারো ভালো করে দু চোখ ডলে সামনে তাকালো। কিন্তু না ও তো স্বপ্ন দেখছে না। তরী তো সত্যি সত্যিই ওর সামনে ফুল হাতে দাঁড়িয়ে আছে। তবে কি তরী সত্যিই প্রপোজ করলো ওকে? এসব ভাবনার মাঝেই রুশান আচমকা জোরে চিৎকার করে উঠলো। ডান হাতে অর্নি আর নূর বেশ জোরে চিমটি কেটেছে। রুশান বা হাত দিয়ে ডান হাতের বাহু ডলতে ডলতে বললো,
–“আগে প্রপোজটা এক্সেপ্ট করে নেই, তারপর তোদের দুজনকে দেখছি আমি।”
এই বলে রুশান তরীর হাত থেকে ফুলগুলো নিয়ে নিলো। তারপর অর্নির কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। অর্নিকে বললো,
–“তোর বা হাতটা দেখি?”
অর্নিও কিছু না বুঝেই বা হাতটা তুলে ধরলো রুশানের সামনে। অমনিই রুশান একটানে অর্নির হাত থেকে রিং খুলে নিয়ে তরীর সামনে হাটু গেড়ে বসে বললো,
–“আই লাভ ইউ তরী, উইল ইউ বি মাইন?”
তরী একগাল হেসে ‘ইয়েস’ বলতেই রুশান উঠে তরীর অনামিকা আঙ্গুলে রিংটা পড়িয়ে দিলো। পুরো ঘটনা বুঝতে অর্নির কিছুক্ষণ সময় লাগলো। বিষয়টা বুঝতেই অর্নি ওর আঙুলের দিকে তাকালো। কিছুদিন আগেই অর্নবের সাথে গিয়ে মার্কেট থেকে এই রিংটা কিনেছিলো অর্নি। অর্নির বেশ পছন্দের রিংগুলোর মধ্যে একটা রিং এইটা। অর্নি কাঁদোকাঁদো ফেসে রুশানের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,
–“রুশাইন্ননা__তুই আমার রিং নিলি কেন? দে বলছি, এটা আমার খুব পছন্দের।”
রুশান সরে গিয়ে বললো,
–“জানি তো, আর সেজন্যই তো তোর এই পছন্দের রিংটা নিয়ে আমি আমার অনেক পছন্দের একজন মানুষকে পড়িয়ে দিলাম।”
নূর কিছু বলার জন্য এগিয়ে আসতেই রুশান নূরকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–“তোর পায়েলটা কিন্তু অনেক জোস নূর।”
রুশানের কথায় নূর সেখানেই দাঁড়িয়ে যায়। একবার পায়ের দিকে তাকিয়ে পায়েলটা দেখে নিয়ে বললো,
–“থাকা বাবা, আমি কিছু বলে আমার এই পায়েলটা আবার হারাতে চাই না।”
ওদের তিন বন্ধুর এরকম খুনশুটি দেখে তরী মুচকি হাসলো। সত্যিই আজকালকার যুগে এরকম বন্ধু পাওয়াও ভাগ্যের ব্যাপার। অর্নি রুশানকে তাড়া করলে ও দৌড়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে যায়৷ অর্নিও ছুটে রুশানের পেছনে৷ কয়েক সিড়ি নেমেই অর্নি পায়ের সাথে বেজে পড়ে যেতে নিলে একজোড়া হাত অর্নিকে আগলে নেয়৷ একটানে অর্নিকে নিজের কাছাকাছি নিয়ে আসে। অর্নি দ্রুত চোখ খুলে দেখতে পায় মাহির ওকে ধরে রেখেছে। মাহিরের চোখজোড়া অর্নিকেই দেখছে পলকহীন ভাবে৷
চলবে~
[