আজ রিক্তার মৃত্যুবার্ষিকী শেষ পর্ব

0
461

#আজ_রিক্তার_মৃত্যুবার্ষিকি।
#পর্বঃ- ০৬ [ সমাপ্ত ]

চারিদিক থেকে কমপক্ষে ১৫-২০ টা টর্চ লাইট একসঙ্গে জ্বলে উঠলো। আলফাজ ও তার সঙ্গে থাকা লোকটা কিছু বুঝে ওঠার আগেই গ্রামের লোকটা তার হাতের বৈঠা দিয়ে আলফাজকে আঘাত করলো। ইলিয়াস নিজেও দাঁড়িয়ে না থেকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আঘাত করে শহরের দ্বিতীয় লোকটাকে। আর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে চারিদিক থেকে এগিয়ে আসে টর্চ জ্বালানো সকল পুলিশ সদস্যের দল। আলফাজ ও তার সঙ্গীকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেন পুলিশ। যতটা বিপদের সম্মুখীন হবার আশঙ্কা ছিল, তার কিছুই কষ্ট করতে হয়ে দারোগা মাহবুব আলমকে।

আলফাজ ও তার সঙ্গে গ্রামের যে লোকটা ছিল তার নাম মান্নান মোল্লা। তিনি পেশায় একজন ইজিবাইক চালক। তিনিসহ চারজনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। আলফাজ ও তার সঙ্গী তো আগে থেকে আছে, খুনির সহযোগী হিসেবে ইলিয়াস ও মান্নান মোল্লাকেও পুলিশ আটক করেছে।



সাজু ভাই ও রিক্তার বাবা জুলফিকার মৃধা থানায় দারোগা মাহবুব আলমের সামনে বসে আছে।
রিক্তার বাবা বললো,

– কীভাবে কি করলেন বলেন তো?

– মাহবুব আলম বললেন, আমিও তো সবকিছু জানতাম না। এখনো পুরোপুরি জানি না। যা কিছু জিজ্ঞেস করার সেটা সাজুকে করতে হবে।

– সাজু তুই বল তো কীভাবে এদের ধরলি?

– সাজু বললো, তেমন কিছু না চাচা। সব চোখের সামনেই ছিল, শুধু হিসাব মিলিয়ে একসঙ্গে জড়ো করলাম।

– সেটা কি?

– চাচা শুনুন তাহলে, রিক্তার স্বামী যে রাতে খুন হয়েছে সেই রাতের শেষ দিকে কিন্তু দাদু অসুস্থ হয়েছিল। আমি যখন বাইক নিয়ে ডাক্তার হারুন আঙ্কেলকে আনার জন্য তাদের বাড়িতে যাচ্ছি তখন দেখেছিলাম মান্নান মোল্লা তার ইজিবাইকে করে তিনজন যাত্রী নিয়ে গ্রামের ভিতরে যাচ্ছে। মাঝরাতে অনেকেই যেতে পারে এটা স্বাভাবিক। তাছাড়া দাদুর অসুস্থতার জন্য দুনিয়ার কোনো চিন্তা তখন মাথার মধ্যে ছিল না। রিক্তার স্বামীর উপর যে কোনো বিপদ আসবে সেরকম কোনো তথ্যও তো জানতাম না যে সন্দেহ করবো। তবে ভাবলাম যে পরবর্তীতে মান্নান মোল্লাকে জিজ্ঞেস করে দেখবো অতো রাতে কাকে নিয়ে এসেছিল। কিন্তু সেই সুযোগ আর হচ্ছিল না।
গতকাল সাব্বিরের বন্ধু ইলিয়াস যখন বললো যে, আলফাজ এসে খুন করেছে। তখনই আমার মাথায় ইলিয়াসও ঢুকে গেল।

কারণ হচ্ছে দুটো।
প্রথমত, সাব্বির তার লেখা ডায়েরি লিখে শেষ করতে পারেনি। সুতরাং সেখানে বোঝা যায় যে তাকে কেউ বাহির থেকে ডেকেছে। তাই সে ভিতর থেকে দরজা খুলে বের হয়েছে এবং খুনি ঘরের ভেতর প্রবেশ করে তাকে খুন করেছে। আর সেই রাতে সাব্বির নিজ থেকে দরজা খুলে দেবার মানে হচ্ছে বাহিরের আগন্তুক সাব্বিরের পরিচিত। তাই নিজে নিজে হিসাব করলাম যদি আলফাজ খুন করে তাহলে নিশ্চয়ই তার সঙ্গে এমন কেউ ছিল যিনি সাব্বিরের বিশ্বস্ত। যার ডাকে সাব্বির খুব সহজেই দরজা খুলে দিবে। আর সাব্বির শ্বশুর বাড়িতে এসেছে এটা সে ইলিয়াসকে বলে এসেছে। সেটা তো গতকালই ইলিয়াস বললো যে তাকে গ্রামের বাড়িতে আসার কথা জানিয়েছে। অতএব আলফাজ এখানে সাব্বিরের বন্ধু ইলিয়াসকে ব্যবহার করছে সেটা বোঝা যাচ্ছিল।

দ্বিতীয়ত, আমি ঢাকার এক বড়ভাইকে দিয়ে সাব্বিরের সেই রাতের মোবাইলের কললিস্ট চেক করেছিলাম। সেখানে দেখা গেছে সেই রাতে একটা নাম্বারের সঙ্গে দিনে এবং রাতেও বেশ কিছু সময় কথা হয়েছে। আর ওই নাম্বারটা যে ইলিয়াসের সেটাও চেক করে বের করলাম।

এটা তো গেল সন্দেহ করার কারণ।
সাব্বিরের লাশ নিয়ে যখন লাশবাহী গাড়ি গ্রামের মধ্যে আসে তখন মান্নান মোল্লাকে আমি চাচার বাড়িতে দেখতে পাই। তখনই চাচার বাড়িতে কাজ করা বাদলকে দিয়ে মান্নানকে আলাদা ঘরে নেবার ব্যবস্থা করলাম। তারপর মান্নানকে ভালো করে জিজ্ঞেস করলাম। ভয় দেখালাম, কারণ গ্রামের সহজসরল ইজিবাইক চালক ভয়ে সত্যি কথা বলে দিবে এটা জানতাম। আমি মান্নানকে বললাম,

– তুমি তো নিশ্চয়ই ইলিয়াসকে দেখেছো। চাচার মেয়ে জামাইয়ের বন্ধু, সেদিন রাতে তিনজনের মধ্যে সেও ছিল কিনা বলো। যদি সত্যি কথা বলো তাহলে তোমার ভালো হবে। আর যদি সে নাহয় তাহলে কে ছিল সেই যাত্রী তাদের নামে বলো। এতো রাতে নিশ্চয়ই দুরের কেউ ছিল না, যদি থাকে তাহলে কার বাড়িতে গেছে।

প্রথমে স্বীকার না করলেও পরে অবশ্য সবকিছু মান্নান স্বীকার করে।
মান্নান বলে,
– আমাকে টাকা দিয়েছে তারা। আবার পিস্তল দিয়ে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়েছে। আমি বাধ্য হয়ে তাদের নিয়ে আসছি সাজু ভাই। নদীর পাড়ে দুজন নেমে গেছিল আর একজন আমার ইজিবাইকে পিস্তল নিয়ে বসে ছিল। আমি গাড়িটা নদীর পাড়ে একটু আড়ালে থামিয়ে রাখি। আপনি যখন আপনাদের গাড়িতে করে আপনার দাদুকে নিয়ে গেছেন তখন সব দেখেছি৷ কিন্তু আমরা আড়ালে থাকার জন্য আপনি দেখতে পাননি।
প্রায় ঘন্টা খানিক পরে ওই দুজন এসেছিল তারপর আবার তাদের বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে দিছিলাম। আমাকে বলছিল কাউকে যেন না বলি তাহলে মেরে ফেলবে। টাকার লোভে আর নিজের জীবন বাঁচাতে কাউকে কিছু বলিনি।

মান্নানের সব কথা শুনে আমি বুঝতে পারছিলাম যে ইজিবাইক থেকে সম্ভবত আলফাজ ও ইলিয়াস এরাই নেমেছিল। মান্নান আবার বললো যে সেই বাকি দুজন নাকি গ্রামের মধ্যে আছে। মান্নানকে নাকি কল করেছিল।
মান্নানকে বললাম, যেভাবেই হোক তাদের পুলিশে দিতে হবে। তাই আমাদের যেন সহযোগিতা করে। নাহলে যে ওর অনেক বিপদ হবে সেটাও বুঝিয়ে দিলাম। মান্নান বুঝতে পেরেছিল যে একবার যেহেতু খুনিদের সাহায্য করেছে তাই বারবার মনে সাহায্য করতে হবে। তাই মান্নান আমাকে সাহায্য করার জন্য রাজি হয়ে গেল। আমি মান্নানকে বললাম যে ওদে কল দিয়ে বলো ইলিয়াস সবকিছু পুলিশকে বলে দিয়েছে। মান্নান সেটাই করলো, আর সব শুনে আলফাজ ইলিয়াসকে মারার সিদ্ধান্ত নিল।

বাড়িতে তখন সাব্বিরের লাশের দাফনের ব্যবস্থা করার আয়োজন চলছিল। আমি সুযোগ বুঝে ইলিয়াসকে আলাদা কথা বলতে নিয়ে গেলাম। সেও মান্নানের মতো প্রথমে কিছু স্বীকার করতে চাইলো না। কিন্তু পরে যখন মান্নান এসে সামনে দাঁড়িয়ে বললো তখন আর স্বীকার করা ব্যতিত কোনো উপায় ছিল না। ইলিয়াস আমার হাত ধরে বললো,
– ভাই আমি ইচ্ছে করে করিনি। বিশ্বাস করুন নিজ থেকে এরকমটা করিনি আমি। সাব্বির যেদিন গ্রামের বাড়িতে আসে সেদিনই আলফাজ আমাকে ওর কাছে নিয়ে যায়। জানের মায়া তো সবারই থাকে তাই না? পুরান ঢাকার সেই নির্জন বাড়িতে আমাকে মেরে ফেললে কেউ আমার লাশটাও খুঁজে বের করতে পারতো না। নগদ দুই লাখ টাকা আর সঙ্গে আমার নিজের প্রাণ ফিরে পাবার জন্য রাজি হয়ে গেলাম। তারপর ওরাই আমাকে নিয়ে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে গাড়ি রেখে আমরা ইজিবাইকে উঠি কারণ গ্রামের মধ্যে গাড়ি নিয়ে গেলে সবাই সন্দেহ করতো।
ইজিবাইকের চালক আমাদের নদীর পাড়ে নিয়ে আসে। কারণ আপনাকে সেই রাতে দেখার পড়ে ওই চালককে আলফাজ জিজ্ঞেস করেছিল। সে বললো, বাইকে তো সাজু ভাই যাচ্ছে। আপনার পরিচয় শুনে আলফাজ ভাই বাড়ি পর্যন্ত গাড়ি নিয়ে আসতে চায় নাই। নদীর পাড়ে ইজিবাইক রেখে আমি আর আলফাজ এসেছিলাম। আমি সাব্বিরকে কল দিয়ে যখন বললাম যে আমি চলে এসেছি তখন সাব্বির অবাক হয়েছিল। কিন্তু সে সন্দেহ করে নাই কারণ আমাকে দিনের বেলা বারবার বলছিল যে গ্রামের মধ্যে একা একা ভালো লাগে না তাই তুই থাকলে ভালো হতো। আমি তাই রাতে কল দিয়ে বললাম যে দোস্ত সারপ্রাইজ দিতে চলে এসেছি।
সাব্বির নিজেই বলেছিল যে বাড়ির ভিতর দুটো বাড়ি আছে। একটা বড় পুরনো আমলের কাঠের। আরেকটা নতুন তোলা হয়েছে পাকাবাড়ি। নতুন ঘরে নাকি সাব্বির আছে আর ওর শ্বশুর শাশুড়ী পুরনো আমলের কাঠের বাড়িতে।
আমি দরজা খুলতে বললাম, সাব্বির দরজা খুলে দিল আর সঙ্গে সঙ্গে আলফাজকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।
আলফাজ ওর মুখ চেপে ধরে সঙ্গে সঙ্গে গুলো করে কিন্তু শব্দ হয়নি। আলফাজ সাব্বিরের পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে। আমরা দুজন দ্রুত সেখান থেকে বের হয়ে যাই। আর তখন একটা গাড়ি আসতে দেখি, সম্ভবত সেটা আপনি ছিলেন। কারণ পরে সেই ইজিবাইকের চালক বলেছিল যে বাইকের লোকটা আর এই গাড়ির লোক একই৷ আপনাদের নাকি নিজস্ব গাড়ি আছে।
আমার বাসস্ট্যান্ড গিয়ে আবারও শহরে রওনা দিলাম। তারপর দিনের বেলা সাব্বিরের মাকে কল দিয়ে বললাম সাব্বির মারা গেছে।
আন্টি নাটোর থেকে সন্ধ্যার পরে ঢাকা পৌঁছান। কিন্তু আমি তাকে ব্যস্ততার অজুহাত দিয়ে তার সঙ্গে রাত এগারোটার দিকে দেখা করি৷ তারপর সেই শেষ রাতে আবার আন্টির সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে রওনা দেই।

আমি বললাম,
– তাহলে আপনার আলফাজদের কথা স্বীকার করলেন কেন?

– কারণ ওরা সাক্ষী হিসেবে আমাকে বেশিদিন বাঁচিয়ে রাখবে না এটা জানতাম। হয়তো সেদিনই মারতো, কিন্তু কেন মারলো না জানি না।

আমি বললাম,
– আলফাজ এখান বাগেরহাটেই আছে। আপনি আর মান্নান মোল্লা যদি সাহায্য করেন তাহলে আলফাজকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।

ইলিয়াস রাজি হয়ে গেল। কারণ আলফাজের সব কথা বলে দেবার পরে আলফাজ ওকে পথের কাটা হিসেবে সরিয়ে দেবে এটা ইলিয়াস ভালো করে বুঝতে পেরেছে। তাই সে আমাকে সব ধরনের সাহায্য করতে রাজি হয়ে গেল। আমি যেহেতু এর আগেই মান্নানকে দিয়ে আলফাজের কাছে কল দিয়ে সব বলতে বলেছিলাম। তাই আলফাজ নিজেই ইলিয়াসকে কল করে এবং রাতে নদীর পাড়ে দেখা করতে বলে। আমি সাব্বিরের লাশ দাফন হবার পর দাদুকে দেখতে যাবার নাম করে বাইক নিয়ে গ্রাম থেকে বের হয়ে গেলাম। মান্নান সেই কথা আলফাজকে বলে দিল, আলফাজ তখন মান্নানকে রাতে রেডি থাকতে বললো। আর টাকার লোভ দিল পঞ্চাশ হাজার।

দারোগা মাহবুব আলমের দিকে তাকিয়ে সাজু বললো,
– আমি তখন আপনার কাছে আসলাম। তারপর তো আপনাকেই বললাম যে রাতে একটা কাজ করতে হবে বেশ কিছু লোক লাগবে। আপনিও সবাইকে প্রস্তুত করলেন। তারপর কি হয়েছে সেটা তো জানেন।
স্থান নির্বাচন করে দিছিলাম আমি। রাত সাড়ে আটটা থেকে নয়টার মধ্যে ইলিয়াসকে আসতে বলেছিলাম। আর মান্নানকে বলেছিলাম সে যেন আলফাজদের সঙ্গে থাকে।

রিক্তার বাবা বললো,
– বাহ সাজু, তুই তো ভালো বুদ্ধি জানিস।

মাহবুব আলম বললেন,
– কিন্তু সেই ডায়েরি? সেটা লেখার কারণ কি হতে পারে বলেন তো সাজু সাহেব?

– সাব্বির সম্ভবত সুইসাইড করতে চেয়েছিল। ওর মাকে তো সেটাই বলেছিল কল দিয়ে তাই না? হয়তো শ্বশুর শাশুড়ীর এরকম মনোভাবে নিজে কষ্ট পেয়েছিল বেচারা। তাই সবটা লিখে নিজের আবেগ প্রকাশের চেষ্টা করেছিলো। আলফাজ তাকে খুন না করলেও সম্ভবত আত্মহত্যা করে মারা ডেত সাব্বির।

রিক্তার বাবা বললো,
– আমার রিক্তাকে ওই ছেলে কেন মারলো?

– সেটা আদালতে জানতে পারবেন। তাছাড়া সব জিজ্ঞেস করার জন্য দারোগা স্যার তো আছেই।

থানা থেকে বিদায় নিল সাজু। বাইক নিয়ে এগিয়ে চললো খুলনার দিকে। সাজুর দাদু আগের চেয়ে মোটামুটি সুস্থ আছে।

বাগেরহাট পর্যন্ত যেতেই যোহরের আজান দিল। খানিকটা সামনে গিয়ে দশানী আর মাজার মোড় পার হয়ে ষাটগম্বুজ মসজিদের সামনে বাইক রাখলো। ষাট গম্বুজ মসজিদ থেকে যোহরের নামাজ পড়ে বের হতে প্রায় দুইটা বেজে গেল। বাইকে উঠে স্টার্ট করার আগে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো ঢাকা থেকে ডিবি অফিসার হাসান আলী তিনবার কল করেছে।
সাজু কলব্যাক করলো।

– কেমন আছেন ভাই?
– আলহামদুলিল্লাহ, তুমি কেমন আছো। তোমার সেই মামলা শেষ হয়েছে?
– শেষ হয়নি ভাই, তবে অপরাধী ধরা পড়েছে।
– একটা নতুন খবর আছে সাজু।
– কি খবর ভাই?
– আজকে রাফসান মাহমুদের আবারও কোর্টে শুনানি ছিল। ওর এক আঙ্কেল হাইকোর্টে আপিল করার পড়ে তো এতদিন পুনরায় তদন্ত চলছিল।
– ওহ্ আচ্ছা, তারপর আজ কি হয়েছে?
– আদালত ফাঁসির আদেশ বহাল রেখেছে। এবার সম্ভবত খুব তাড়াতাড়ি ফাঁসি হয়ে যাবে। আমিও মামলার সাক্ষী হিসেবে আদালতে ছিলাম। আমাকে বললো, ” সাজু ভাইকে বলবেন, মৃত্যুর আগে তার সঙ্গে একটু দেখা করতে চাই। বলবেন, সাজু ভাই যদি আমার সঙ্গে দেখা করে তাহলে আমি মেলা মেলা খুশি হবো। ”

সাজু চুপ করে রইল। হাসান আলী বললো,
– কিরে, আসবি নাকি?
– দাদু তো হাসপাতালে ভাই। হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে যাবার পরে যাবো। ততদিনের মধ্যে যদি ফাঁসি নাহয় তাহলে তো দেখা হবে। আর যদি হয়ে যায় তাহলে তো আর দেখা হবে না।
– ঠিক আছে, সাবধানে থেকো।

সাজু বাইক নিয়ে ছুটতে লাগলো। তাড়াতাড়ি যেতে হবে দাদুর কাছে। তিনি অপেক্ষা করে আছেন। নোয়াপাড়া মোড় পার হবার সময় ডানদিকে ঢাকার রাস্তার দিকে তাকিয়ে সাজু ভাবলো।
ঢাকায় চলে যাবো, নাকি সামনে খুলনা যাবো?
দুই মিনিট পরে সে খুলনার দিকে গেল। একজন আসামির জন্য তার মনের মধ্যে মায়া থাকতে নেই।

আসামি..! এই সমাজের সবাই কি আসামি থাকে। নাকি কিছু কিছু মানুষ সমাজের কারণে আসামি হয়ে যায়।

[ এখানেই সমাপ্ত! রিক্তার মৃত্যুর কারণ আদালত অবশ্যই বের করবে। যেহেতু আসামি গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু যাদের কাছে মনে হচ্ছে যে রিক্তার মৃত্যুর কারণ টেনে আনা উচিৎ ছিল। তাদের জন্য নিচে পরিশিষ্ট উল্লেখ করলাম। ]

পরশিষ্টঃ-
রিক্তা চট্টগ্রামে অফিসের কাজে গিয়ে হোটেলে উঠেছিল। আলফাজ নিজেও সেখানে গিয়েছিল। একটা সময় সে তার নিজের নিজের মনের মধ্যে লুকানো খারাপ উদ্দেশ্য ব্যক্ত করে। রিক্তা রাজি না হলে আলফাজ নিজের ধৈর্য হারিয়ে রিক্তাকে জোরজবরদস্তি ভাবে ক্ষতি করার চেষ্টা করে।
রিক্তা সেগুলো আলফাজের বোনের কাছে ও মায়ের কাছে বলে দেবার হুমকি দেয়। নিজের মা বোনের কাছে সবসময় ভালো মুখোশ পরে থাকা আলফাজ সেটা মানতে পারেনি। রিক্তা রাগ করে চলে আসার সময় আলফাজ ক্ষিপ্ত হয়ে এমনভাবে এক্সিডেন্টে তাকে মেরেছে যেন কেউ বুঝতে না পারে।
পরিশিষ্টাংশ উল্লেখ না করলেও ক্ষতি ছিল না।
কারণ এতে গল্পের তেমন পরিবর্তন হবে না।
তবুও যদি প্রশ্ন রাখেন তাই হালকা উল্লেখ করলাম।

—– সমাপ্ত —–

লেখা:-
মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here