#মিঠা_রোদ
#পর্ব:২৭
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“জেনেশুনে অবুঝের মতোন ব্যবহার করা মেয়েকে আমার কোনোকিছু বোঝানো বাকী নেই।চলো বাসায় ছেড়ে দিয়ে আসবো।এরপর যেখানে খুশি সেখানে যাও।”
তোশার সামনে থেকে উঠে দাঁড়ালো কবীর।রাগে গা কাঁপছে তার।মেয়েটিকে যতো বুঝানো হচ্ছে ততো যেন মাথায় চড়ে বসেছে।
“আমার সঙ্গে এতো রুড বিহেভ কেন করছেন?এটাই কী আমার প্রাপ্য?”
“হ্যাঁ।”
মৃদু হাসলো তোশা।গা সোফায় এলিয়ে দিয়ে বলল,
“আমার কতো কিছু প্রাপ্য তাইনা?শুধু দোষটা কোথায়?নিজের বাবা-মায়ের বন্ধুকে ভালোবেসেছি।আমাকে দেখে মনে হয় সবথেকে আদর, ভালোবাসা পাওয়া মেয়েটা।কিন্তু সত্যি কী তাই কবীর শাহ?আপনি না আব্বুর বন্ধু।বলেন তো বাবা আমাকে ঠিকঠাক ভালোবাসে কীনা?”
“ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলে কাজ হবেনা তোশামণি।তুমি যথেষ্ট আদরে বড় হয়েছো।”
“না ভুল।একসময় আদরে ছিলাম।কিন্ত আব্বু ও আম্মুর ডিভোর্সের পর থেকে নেই।নানীর বাড়ীতে সব তো উপরে উপরে।যদি জীবন নিয়ে বেশী বুঝদার হয়ে পড়তাম তাহলে মানুষ আরো দায়িত্ব চাপিয়ে দিতো আমার উপর।আমার কেউ নেই শুধু মা ছাড়া।তার জন্যই তো সেদিন রাতের পর আপনার সাথে সেরকম ব্যবহার করেছি।নেশার ঘোরে আপনি বললেন মা কষ্ট পাবে।আমি মেনে নিলাম।এক সময় ধরে নিলাম আপনার প্রতি কিশোরী বয়সের আবেগ।দুজনের দেখা বন্ধ হওয়ার পর থেকে কান্না করতাম,খাওয়া কমিয়ে দিয়েছিলাম।এরমধ্যে আপনার প্রাক্তন স্ত্রী দিশা ম্যামের অ ত্যা চা র গুলো।”
শেষের কথাটি শুনে চমকে উঠলো কবীর।দিশার নাম তো সে কখনো নিয়েছিল না।তবে তোশা কীভাবে চিনে?
“তুমি কবে থেকে জানলে যে দিশা আমার এক্স ওয়াইফ।”
“আপনার সঙ্গে কথা বন্ধ হওয়ার এক মাস পরে জেনেছিলাম।ম্যাম নিজে বলেছিল।একদিন টিফিন পিরিয়ডে আমাকে ডেকে আহনাফের থেকে দূরে থাকতে বলে।আমি আসলে বুঝতে পারিনি কেন।কারণ ওই বাচ্চাটার সঙ্গে আমি জুড়ে গিয়েছিলাম।আইসক্রিম ডাকটা খুব ভালো লাগতো।ম্যাম দূরে থাকার কারণ জিজ্ঞেস করার পর সে তখন বলেন আপনি তার স্বামী ছিলেন।খুব খুব মন্দ লেগেছিল।ম্যামের ক্লাস করতে পারতাম না।আপনার কথা মনে হতো।টিনেজার ছিলাম।আবেগ বেশী ছিল।আপনার থেকে দূরে থাকাটা সম্ভব হচ্ছিলো না বিধায় ম্যামকে গিয়ে সরাসরি সব বলে দেই।যেন সে আপনাকে বোঝায়।কতোটা বোকামি ছিল।ম্যাম ধীরে ধীরে সব শুনলো।এরপর শুরু হলো আসল কষ্ট দেওয়া।পড়াশোনা নিয়ে য ন্ত্র ণা বাদ দিলাম।আসল আঘাত করতো আপনাকে নিয়ে।সুন্দর সুন্দর শাড়ী পরে আসতো।যেগুলো আপনি উপহার দিয়েছিলেন।সেসব আমাকে দেখাতো।বিশ্বাস করুন শাড়ী গুলোতেও ম্যামকে কেন যেন খুব সুন্দর লাগতো।মনে মনে কতোবার যে ওই সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার দোয়া করেছি।আপনাদের ভালো ভালো মোমেন্টস সব শেয়ার করতো।আমি মূর্তির মতোন শুধু দাঁড়িয়ে থাকতাম।দিন যেতে লাগলো পড়াশোনা খারাপ হতে লাগলো।স্বাস্থ্য ভা ঙ তে লাগলো।ম্যাম আমাকে পুরোপুরি ভেঙেছিল কবে জানেন?যেদিন…।”
তোশা থামলো।কবীর ভ্রু কুঁচকে তাঁকিয়ে আছে।যেন বাকীটা শোনার তীব্র বাসনা জন্মেছে মনে।
“যেদিন কী তোশা?”
“একটা জিনিস বলেন তো।দিশা ম্যামের গলার একটু নিচে বহু পুরোনো কা ম ড়ে র দাগ আছে তাইনা?যেটা আপনি দিয়েছিলেন।বহুদিন বাজে ক্ষ ত টা থেকে গিয়েছিল।”
কবীরের শরীর বেয়ে উষ্ণ স্রোত বয়ে গেলো।তোশার বলা কথাটি সত্য।হোক না তারা প্রাক্তন তবুও এটা তাদের গোপন বিষয়।যেটা তোশার জানার কথা নয়।কবীর গম্ভীর সুরে বলল,
“তুমি কীভাবে জানলে?”
“ম্যাম নিজে দেখিয়েছিল।আপনি ভালোবাসার সময় কতোটা উ ন্মা দ হতেন।কতো নামে ডাকতেন।কীভাবে আগলে নিতেন।সব ব্যাখা করে ম্যাম শেষে বলেছিল আপনি এখনও তাকেই ভালোবাসেন।এবং বিচ্ছেদ শুধু লোক দেখানো।এবং এমন করে কাউকে ভালোবাসবেন না।এমনকি দুই একটা ছবিও দেখেছি।সেদিন বাসায় ফিরে অনেকসময় ব্লে ড নিয়ে বসেছিলাম।নিজেকে শেষ করে দিতে মন চাইতো।কতো যোগাযোগ করতে চেয়েছি।মায়ের জন্য করিনি।আপনারা বলেন আবেগ।তখন আমি বুঝেছিলাম এসব চাওয়া পাওয়া কখনো মিটবার নয়।ম্যাম এতোগুলো ট র্চা র করেছিল কেন জানেন?শুধু একবার জবাবে বলেছিলাম আপনিও আমাকে ভালোবাসেন।কী হলো কিছু বলছেন না কেন?”
কথাগুলো বিপরীতে ঠিক কী প্রতিক্রিয়া দেওয়া উচিত কবীর ভুলে গেলো।লজ্জায় তামাটে মুখটি আরক্ত হয়ে উঠলো।
“তোশামণি…।”
“আমার সব কথা আগে শুনুন কবীর শাহ।জানেন নিজের কষ্ট লাঘব করতাম কীভাবে?আহনাফকে বলে দিতাম তোমার বাবাকে জড়িয়ে ধরে এরপর কোথাও স্পর্শ না করে আমার কাছে আসবে।বাচ্চাটা তাই করতো।আমিও আবেগে ওকে জড়িয়ে ধরে রাখতাম।আপনার উষ্ণতা অনুভব হতো।সঙ্গে বাচ্চাটির পবিত্রতায় মন শান্ত হতো।এমন না ম্যামের সঙ্গে আপনার যা ছিল তা পাপ।কিন্তু আমাকে সেসব বলে ছোট মনটাকে কেন বি ষি য়ে তুলতো?নিজের মানসিক অবস্থা রিকোভার করতে অনেক সময় লেগেছে আমার।তবুও তো আপনাকে ভুলিনি।বলেন আম্মু মানবেনা।কিন্তু একমাত্র যে মানুষটা আমাকে ভালোবাসে সে কী চাইবে আজীবন আমি কষ্ট পাই?চাইবে কীনা বলেন?কিংবা আপনি কবীর শাহ।যে আমাকে মায়া তো করেন কিন্তু স্বীকার করেন না।নি র্দ য় ব্যক্তি।”
“আমি নি র্দ য় নই তোশামণি। শুধু বাস্তবতা দেখছি।ভালোবাসা সব নয়।তুমি কষ্ট পাবে দেখে একমাসের সেই গেমটা আমি চালিয়ে যাইনি।দূরে থাকি।তাও যদি এসব ফেইস করো আমি কী করবো বলো?বড্ড হেল্পলেস লাগছে।”
তোশা এতো এতো কথা বলতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছে।তার কান্নার বেগ বেড়ে যাচ্ছে।সোফায় হাঁটু ভাজ করে বসে কান্না করতে লাগলো।কবীর মটেও স্বান্ত্বনা দিলো না।এক অদৃশ্য আত্নগ্লানি তার অন্ত:করণকে পু ড়ি য়ে দিচ্ছে।ক্ষণবাদে খেয়াল করলো তোশা তার দিকে এগিয়ে আসছে।সিক্ত নাকটা টাই দিয়ে মুছে শক্ত দৃঢ় বুকে মাথা ঠেকালো।
“বেলাডোনা,তোমার নিজের ওড়না ছিল তো।কিংবা আমার কাছে রুমাল আছে লাগবে?”
কান্নারত কণ্ঠে তোশা জবাব দেয়,
“টাই দিয়ে মুছে নিয়েছি তো কী হয়েছে?এমন করেন কেন?দুঃখে স্বান্ত্বনা দিয়ে তো আলিঙ্গনও করতে পারতেন।অবশ্য পা ষা ণ মানুষের কাছে এর থেকে বেশী আশা করা যায় নাকী বলেন?”
“আসলেও যায়না।কী বলো তো?আমার মুখে জন্মের পর মা লোহা দিয়েছিল।সেই সুবাধে এতো পা ষা ণ।”
“বুঝি তো।আমার মন বদলানোর জন্য বলছেন।তাও একবার মুখ থেকে বের হবেনা পছন্দ করার কথা।শ য় তা ন।”
“হুম বুঝেছি।খুদা লেগেছে না?কী খাবে বলো তো।পিজ্জা অর্ডার করি?নাকী ভারী মিল নিবো?”
“পিজ্জা।তবে আমাকে কিছু সময় কাঁদতে দেন।বিরক্ত করবেন না।”
“আবার কাঁদতে হবে কেন?দিশা যা যা বলতো সেসব ভুলে যাও।স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে রঙের অভাব থাকেনা।কেঁদো না লিটল চেরী।আমার কষ্ট হচ্ছে।”
তোশা কিন্তু নিষেধটি শুনলো না।বরং কান্না করতে থাকলো।এই অবস্থাতে ফোন বের করে ফুড পান্ডায় খাবার অর্ডার করলো কবীর।অশ্রুর বৃষ্টির বন্ধ হলো খাবার ডেলিভারিতে আসার পর।তোশা ততোক্ষণে স্বাভাবিক।
“যাও হাত মুখ ধুয়ে এসো তোশামণি।গাড়ীতে কতো ধূলা লেগেছে।বোতলটা নিয়ে যাও।এমনিতে ট্যাপে পানি আসতে একটু সময় লাগবে।”
“টিস্যু দিয়ে মুছে নিলেই হবে।”
“না যাও হাত মুখ ধুয়ে এসো।”
মুখ ভেংচি কেঁটে তোশা নরম কণ্ঠে বলল,
“সব সময় আমাকে বাচ্চার মতো ট্রিট করেন।”
“কারণ তুমি বাচ্চা।”
যতো কথা বলুক না কেন কবীর দিশার এসব কান্ড ভুলতে পারছেনা।বারংবার লজ্জায়, খারাপ লাগায় শেষ হয়ে যাচ্ছে।সঙ্গে তোশার কষ্টও অনুভব হচ্ছে।মেয়েটা কতোটা কষ্ট পেয়েছো ছোট বয়সে।কোনেভাবে নিজেকে শান্ত রেখেছে কবীর।দূরে গিয়েও তোশার নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ সে হোক সেটা মানসিক।সারামুখে বিন্দু বিন্দু পানি নিয়ে ফিরে এলো তোশা।মেয়েটিকে স্নিগ্ধ লাগছে।কবীরের হঠাৎ কী হলো।এগিয়ে গিয়ে তোশাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
“আমার জন্য যতোটা কষ্ট পেয়েছো সবকিছুর জন্য সরি বেলাডোনা।না হোক সম্পর্ক।কিন্তু আর কখনো তোমার অনুভূতিকে অসম্মান করবো না।”
নাক টেনে যুবতী কন্যাটি বলল,
“হেইট ইউ কবীর শাহ।আপনিও একবার বলেন হেইট ইউ।বলেন না..।”
কবীর হাসলো।কিন্তু বড্ড নিস্তেজ কণ্ঠে জবাব দিলো,
“হেইট ইউ টু সুন্দর মেয়ে।”
চলবে।
এডিট ছাড়া পর্ব।এতো কষ্ট করে লিখেছি আজকের পর্ব।রেসপন্স করবেন সকলে।এতে আমার ভালো লাগে।