#শুচিস্মিতা -৮
Tahrim Muntahana
~ তোর বউ কাল যে অঘটন ঘটাইছে, জিজ্ঞাস কর এত বড় সাহস হইলো কেমনে?
খাবার টেবিলে বসার সাথে সাথে মায়ের এমন কথায় ভ্রু কুঁচকে এলো নাহিদের। কাল রাত অনেকটা দেরী করে এসেছে বিদেয় কারো সাথে তেমন দেখা হয়নি। পারভিন জেগে ছিল, খাবার খেয়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। বউয়ের দিকে একপলক তাকিয়ে দেখলো পারভিন আপনমনে কাজ করেই যাচ্ছে, যেন শাশুড়ির কোনো কথায় তার কানে বাজে নি। নাহিদ শান্ত কন্ঠে বললো,
~ কি করেছে আম্মা?
~ নিবিড় রে চড় দিয়া গালডা কি কইরা ফালাইছে দেখ। সংসারের কাজ করতে এত গুমোর বাপের বাড়ি গিয়া থাকলেই হয়। আমার সংসারে এসব হইবে না।
নাহিদ নিবিড়ের দিকে তাকালো। গালে চার আঙুলের দাগ খানিক বোঝা যাচ্ছে। পাশে থাকায় হাত বুলিয়ে দিলো যত্ন নিয়ে, ভাইগুলো বড্ড প্রিয় তার। কিন্তু তার বউ তো এমন না। দেবর দের খুব সমিহ করে। তাহলে? পারভিনের দিকে তাকিয়ে বললো,
~ মেরেছো কেন?
~ বিচার যেহেতু তোমার আম্মা দিয়েছে তাকেই জিজ্ঞেস করো। আমাকে করছো কেন?
~ আমার মা? তোমার মা নয়?
তাচ্ছিল্য হাসলো পারভিন। নিজের মা কখনোই এমন হয় না!
~ কাল পর্যন্ত ছিল, এরপর মায়ের খাতাটাও অফ করে দিয়েছি। একজন মা কখনোই এরকম হয় না!
নাহিদ বুঝলো বড় কোনো ঝামেলায় হয়েছে। নিবিড় কে উদ্দেশ্য করে বললো,
~ কি হয়েছে? কেন মেরেছে?
~ ভাইয়া আমারই ভুল ছিল। রাগের বশে ভাবীর বানানো শরবত ফেলে দিয়ে একটু রাগ দেখিয়েছিলাম। আমি সত্যিই খুব সরি ভাবী, কালকে কি হয়েছিল নিজেও বুঝতে পারি নি। তুমি তো জানো আমি ওরকম নয়!
পারভিন মুচকি হাসলো। চড় মেরেই নিবিড়ের উপর রাগ মিটিয়ে নিয়েছিল, তার রাগ তো শাশুড়ির উপর। আজ যেহেতু কথা উঠেছে একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বে। নিবিড়ের দোষ স্বীকার করায় মিসেস নাজমা তেতে উঠেন,
~ তাই বলে বাড়ির বউ বাড়ির পোলার উপর হাত তুলবে? আমি ওনে ছিলাম না? তোর বউয়ের মুখে লাগাম টান, নাহলে কিন্তু ভালো হইবে না।
~ আমি এই বাড়ির বান্দী নয় নাহিদ। তোমাকে সেটা আজ মনে করিয়ে দিলাম। সংসার আমার একার না, তাই সব কাজ ও আমার একার না। আজকের থেকে তোমার ছোট ভাই বউ কে বলো কাজ ভাগ করে নিতে। অনেক দেখেছি এদের বিচার। আমাকে চাকরানী পেয়েছে? উড়ে এসে জুড়ে বসেনি আমি। কাজ করতে না পারলে আলাদা হয়ে যাবো। তোমার যদি কোনো টাই পছন্দ না হয় সাফসাফ বলে দাও, মেয়ে নিয়ে চলে যাবো। বাবার বাড়ি কম নেই আমার, খানদানির গৌরব আমাকে দেখিয়ে লাভ নাই। অনেক সহ্য করেছি। আর না, আমাকে মানুষ মনে হয় না? নরম দেখে যে যেভাবে ইচ্ছে ব্যবহার করে যাচ্ছে। এর একটা বিহিত আজ হবে নাহলে আজই আমি বাড়ি ছাড়বো!
নাহিদ শান্ত চোখে বউ কে দেখে। ভেতর টা যে পুড়ে যাচ্ছে আজ। কতবছর পর আজ তার বউ মনের জমানো ব্যাথা গুলো কয়েকটা কথায় প্রকাশ করলো। পারভিনের আচরণে আজ বাড়ির সবাই স্তব্দ। শুধু মাত্র ফারাহ’র শশুড় চুপচাপ বসে আছে। মনে মনে সে দারুণ খুশি। যেন এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। নাহিদ মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
~ কোনটা করবে আম্মা? আজ অনেক বছর পর আমার বউ অভিযোগ করেছে। তুমি নিজেও জানো আমার বউ ভুল না, এতদিন আমি দেখেও চুপ থাকতাম। দেখতাম আমার মায়ের বিচার, তবে আজ যেহেতু আমার বউ বিহিত চেয়েছে আজ তো হবেই! কতদিন বাবার বাড়ি যায় না? কতদিন বোনদের সাথে দেখা করতে পারে না? হিসেব রাখো আম্মা? রাখো না। যে তোমার সংসার টা এত সুন্দর করে গুছিয়ে রাখলো, তোমার সব কথা শুনলো, কোনো অভিযোগ করলো না; তার সাথে অবিচার করতে তোমার খারাপ লাগলো না আম্মা? আমি আমার ভাইদের নিয়ে একসাথে থাকতে চেয়েছি, চেয়েছি বৃদ্ধ বয়সে আমার বাবা-মা’র যেন এ বাড়ি ও বাড়ি না করতে হয়; আমার চাওয়ার এই প্রতিদান দিলে আম্মা? মেয়েটাকে যখন আমার বউ করে আনলে, বলেছিলাম তোমার কথার উপর যেন কথা না বলে, সেই কথার রেষ ধরেই এতগুলো বছর কাটিয়ে দিলো, তবুও তোমার চোখ খুললো না আম্মা। আজ যে আঘাত তুমি আমাকে দিলে, এর থেকে মরণ ভালো ছিলো আম্মা। আমার যে মা-বাবা-বউ-ভাই সবাই কেই চাই!
না খেয়েই বেরিয়ে গেল নাহিদ। পারভিন ঘরের ভেতর ঘাপটি মেরে পড়ে রইলো। অবাধ তপ্ত জল গুলো অবলিলায় গড়িয়ে পড়ছে। আজ মানুষ টা কষ্ট পেয়েছে, ভেবেই পারভিনের মরে যেতে ইচ্ছে করছে। কি হতো আরেকটু সহ্য করলে! অন্যদিকে মিসেস নাজমা দরজা আটকে বসে আছেন। মনের ভেতর অনুশোচনা দাউ দাউ করে জ্বলছে যেন। সে সত্যিই ভুল করেছে! প্রায়শ্চিত্ত কি করবে সে?
…
~ ভাই বাড়ি আয় তাড়াতাড়ি। এদিকে অঘটন ঘটে গেছে। ফারাহ’র দেবর নিবিড় এসেছিল আনতারা কে বিয়ে করবে। যৌতুক চেয়েছে। আনতারা তো না করে দিয়েছে তবে ও বাড়ির অবস্থা ভালো না।
সকাল সকাল ফোনে ভাইয়ের এসব কথা শুনে মনটা বিষিয়ে গেল রাশিদের। অপরূপা কে হারানোর ভয়ে যেন কুঁকড়ে গেল। ভালো করে পর পর ঘটনা গুলো শুনে কিছুক্ষণ শান্ত হয়ে বসলো। ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বললো,
~ ভাইয়া তোমার বিয়ের জন্য আর পাত্রী দেখতে হবে না, মা কে বলো ঝিনুক কে বিয়ে করবা। মেয়েটা তোমাকে পছন্দ করে সেই কবে থেকে, ভয়ে বলতে পারে না। তোমার বিয়ের কথা শুনে কেঁদে কেটে অবস্থা খারাপ করে ফেলেছে। তোমার বিয়ের পর আমার বিয়েটাও সেরে ফেলবো। ফুলকে এভাবে লোকালয়ে রাখা যাচ্ছে না, ভ্রমরের অভাব নেই দেখছি।
রনি ভড়কার। ফুফাতো বোন ঝিনুক? মা মানবে? রাশিদ কে কিছু বুঝতে না দিয়ে ফোন রেখে দেয় রনি। মায়ের সাথে কথা বলতে হবে। ফোন কেটেই রাশিদ হেসে উঠে। ঝিনুকের কথা লাগিয়ে দিয়ে নিজের পথটাও সহজ করে নিয়েছে। বিড়বিড় করে বলে উঠে,
~ সরি ভাইয়া, কি করবো বলো? তোমার কেউ না থাকলেও, আমার যে একটাই শুচিস্মিতা। তারে বিনা প্রাণ যায়!
আবার হাসলো সে। হুট করেই নিবিড়ের কথা মনে হতেই রাশিদ চটে গেল ফারাহ’র উপর। মেয়েটা এমন করতে পারলো কি করে? এখন মনে হচ্ছে নিয়নের কাছে বিয়ে দেওয়া ভুল হয়েছে, দেবর নাই এমন পরিবারে বিয়ে দেওয়া ভালো ছিল। কিছুটা রাগ নিয়ে ফোন করে ফারাহ কে। ফারাহ তখন গাড়িতে ছিল। সকালের ঘটনার পরেই সে বেরিয়ে পড়েছে। শাশুড়িকে একটা উচিত শিক্ষা না দিলেই নয়, তাকে না জানিয়ে কি করে যৌতুকের কথা বললো; এর কৈফিয়ত তো দিতেই হবে। এর মধ্যে নিজের ফোনের উপর রাশিদ ভাই নামটা জ্বলজ্বল করতে দেখে চোখ বড়বড় হয়ে যায় তার। এতটা অবাক হয়, ফোন ধরার কথা বেমালুম ভুলে যায়। কেটে যায় ফোন, আবার আসে। ঝটপট রিসিভ করে কানে ধরতেই ভেসে আসে তীক্ষ্ম কন্ঠস্বর,
~ তুমি কি করে পারলে ফারাহ? শুচিস্মিতার জীবনে এভাবে প্রভাব ফেললে? এমনিই মেয়েটির জীবনে সমস্যার শেষ নেই। তুমি আসলেই শুচিস্মিতা কে আপন ভাবো তো?
ঝরঝর করে কেঁদে দেয় ফারাহ। রাশিদ ভাই ও তাকে ভুল বুঝলো? সে না বুঝে ভুল করে ফেলেছে তাই বলে এতবড় শাস্তি তার প্রাপ্য? ফারাহ’র কান্নায় একটু নরম হয় রাশিদ, চুপ করে থাকে। ফারাহ কান্না ভেজা কন্ঠে বললো,
~ বিশ্বাস করেন রাশিদ ভাই, তারা আমার কাছে কি আমি নিজেও বলে বুঝাতে পারবো না। আমি তারা কে নিজের সাথে রাখতে চেয়েছিলাম। ওই বাড়িতে ও আরো চুপচাপ থাকতো, ছোট চাচি তো সবসময় ওর পাশে থাকতে পারবে না। নিয়ন বলেছে আমাকে পড়াবে, তাই ভেবেছি নিবিড় ও তারা কে পড়াবে, যৌথ পরিবার কোনো সমস্যা হবে না, ওর স্বপ্ন ও পূরণ হবে। আর নিবিড় এমনিতেও তারা কে পছন্দ করে, আজ না বললেও কয়েকদিন পর বলতোই, তাই আমি সময়টা শুধু এগিয়ে এনেছি। কিন্তু আমি বুঝতে পারি নাই আমার শাশুড়ি তারা কে
এভাবে অপমান করবে। আর মেয়ে বিয়ে দিতে টাকা খরচ করতেই হয়, মেয়ের শশুড় বাড়িতে জিনিস পত্র দিতেই হয়, আমার বেলায় নিয়ন নেয়নি কিন্তু নিবিড় ওর মায়ের কথায় সায় জানিয়েছে। আমি এটা আগে জানতাম না। নাহলে কিছুতেই এতে সায় জানাতাম না। আমি না বুঝেই ভুল করে ফেলেছি। আমার বোন টাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। আপনি অন্তত বুঝবেন আমাকে।
রাশিদ চাপা শ্বাস ফেলে। বুঝতে পেরেছে ব্যাপারটা। রাশিদের কথা শুনতে না পেরে ফারাহ চোখের পানি মুছে, রাশিদ তাহলে তাকে ভুল বুঝে নি। রাশিদ বললো,
~ এখন তোমার কাজ হলো নিবিড় যেন শুচিস্মিতার আশেপাশে না আসতে পারে সেটা দেখা। ওই ছেলেকে আমাদের এলাকায় দেখলেই পিটাবো আমি, মনে রেখো!
বিস্ময় ঘিরে ধরে ফারাহ কে। আনতারাকে নিয়ে এতটা ডেস্পারেট কেন এই লোক? আগে থেকেই দেখে আসছে! তাহলে কি সে যা ভেবেছে তাই? অবাক হয়েই প্রশ্ন করে,
~ রাশিদ ভাই! ভালোবাসেন তারা কে?
চোখ বুজে শ্বাস নেয় রাশিদ। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে হ্যাঁ ভালোবাসি, ওই মেয়েটিকে আমি প্রচন্ড ভালোবাসি। তবে ফারাহ কে বলবে কিনা দোটনায় পড়ে যায়। মেয়েটা কোনো একসময় তো তাকে ভালোবেসেছিল! যদি হিংসা করে! আবার ভাবে হিংসা করে কিছু করতে গেলেই তার লাভ, একদম তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলবে! ভাবালেশ বললো,
~ কি লাভ হলো বলো? তোমার বোন তো সেই যন্ত্রণাই দিয়ে গেল!
কয়েক ফোঁটা তপ্ত নোনা জল আবার গড়িয়ে পড়ে। এই কথাটা আগে জানলে খুব ক্ষতি হতো? সে আর ভালোবাসার সাহস পেতো না, মন দিতো না! নাহলে আজকের সংসার সাজাতে যে তার সহজ হতো! স্বামীকে মেনে নিতে সহজ হতো! আজ থেকে চেষ্টা করবে সে, যাকে ভালোবাসে কষ্ট পেয়ে আসছে সেই মানুষটিই তো অন্যকে ভালোবেসে কষ্ট পেয়ে আসছে। দোষ কার দিবে সে? বললো,
~ যন্ত্রণা তাহলে নিজ ইচ্ছেই নিচ্ছেন কেন? মন থেকে ছুঁড়ে ফেলুন!
~ ও আমার সেই যন্ত্রণা, যাতে সুখ মিশে থাকে। আর এই সুখ পেতে সৌভাগ্যের প্রয়োজন হয়। এ দিক থেকে আমি মস্ত বড় সৌভাগ্যবান! কি করে ছুঁড়ে ফেলি? অন্যায় হয়ে যাবে!
ফারাহ’র মনে আলাদা এক শান্তি বয়ে যায়, তার বোনের জীবনে এমন ভালোবাসা প্রাপ্য ছিলো। ফোন কেটে দেয় ফারাহ, কিছুক্ষণ ফোনের দিকে অপলক তাকিয়ে বলে উঠে,
~ রূপ ই যে সব নয়, তোকে দেখে বুঝতে পারলাম তারা। নাহলে যাকে আমি বাঁধতে পারিনি, সে ভবঘুরে ছেলেটা তোকে ঘিরে বেঁচে আছে!
…
~ ছোটচাচি কোচিংয়ে ভর্তি হওয়া দরকার। কিন্তু শহরে একা থাকবো কি করে?
মিসেস কামরুন্নাহার রান্না করছিলেন, মিসেস সেলিনা ঘর থেকে আর বের হননি। আনতারা’র কথায় তিনি হাসলেন। তিনিও ভেবেছিলেন কথাটা বলবেন। মিষ্টি হেসে বললেন,
~ একা কেন থাকবি? তোর সাথে আমরাও যাবো?
~ কি বলছো ছোটচাচি? তোমরা যাবে? ছোটচাচার দোকান কে দেখবে?
~ তোর চাচা, কেয়া থাকবে। আমি তুই কিরণ যাবো। চাকরির আবেদন ও করবো ভাবছি।
আনতারা পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ছোটচাচিকে। এই মহিলা এত ভালো কেন? আদুরে গলায় বলে,
~ তোমার যেতে হবে না ছোটচাচি। চাকরিও করতে হবে না। ছোটচাচা আছে তো, আর আমিও কয়েকটা টিউশনি নিতে পারবো। আমার সাথে কেয়া কে নিয়ে যাবো, গ্রামের থেকে শহরে কলেজের মান ভালো। কেয়া পড়ালেখায় বেশ খারাপ, ইংলিশ পারে না একদম, ওর ফরয হয়ে গেছে শহরে ভর্তি হওয়া।
মিসেস কামরুন্নাহার ভাবেন, আনতারা ঠিকই বলেছে। কিছুক্ষণ ভেবে বলেন,
~ আপনার টিউশনি করতে হবে না আম্মা, আমি জেলার মধ্যেই চাকরি টা নিয়ে নিবো। তোর ছোটচাচা কে বলবো ভর্তির ব্যবস্থা করতে। তোর চাচার ভাগে যে জমি আছে ফসল বিক্রি করলেই তোমার পড়ালেখার খরচ সব হয়ে যাবে , তবে আমি যে বলেছি আমার মেয়েকে আমি চাকরি করেই পড়াবো। মায়ের চ্যালেঞ্জ মা রাখবে।
…
~ আম্মা ঝিনুক কে তোমার কেমন লাগে? ফুফুর সাথে কথা বলো, বিয়েটা নিজেদের মধ্যেই হোক। রাশিদ বললো ঝিনুক নাকি রাজি।
বড় ছেলের কথায় মিসেস মমতা চোখ ছোট ছোট করে তাকালেন। বড় ছেলের যে পছন্দ আছে আগে বলেনি তো। হঠাৎ করে ঝিনুকের কথা বলায় অবাক ও হয়েছেন। তিনি তো ঝিনুক কে ছোট ছেলের বউ করতে চেয়েছিলেন। তবে বড় ছেলের পছন্দ হলে অন্যকথা।
~ তোমার পছন্দ হইলে কথা বলমু। তোমার ভাইয়ের জন্যও পাত্রী দেখতাছি, একসাথে বিয়েডা হইলে ভালোই হয়।
রনি চমকে উঠে। রাশিদের বিয়ে? ঝামেলা এবার দ্বিগুন হবে মনে হচ্ছে। ইনিয়েবিনিয়ে বললো,
~ তোমার ছেলের মতিগতি তো ভালো দেখছি না, ভবঘুরে ছেলেকে কে বিয়ে করবে? আগে একটা চাকরির ব্যবস্থা করুক, তারপর আগাও, ভালো মেয়ে পাবে।
মিসেস মমতা ভাবলেন। বড় ছেলে ঠিকই বলছে। বললেন,
~ আইচ্ছা তোমার কথাই মানলাম, তবে ছোটডারে কিন্তু আমার পছন্দেই বিয়া করামু। সুন্দর দেইখা একটা মাইয়া আনমু। কালি টালির জায়গা নাই!
…
~ মেয়েডার জন্যে ভালা একটা বিয়া আইছে ভাই, রোজগার তো তেমন নাই। কি করমু বুঝতে পারতাছি না, বিয়াডা কি দিয়া দিমু?
অপরাহ্ন! আহনাফ তালুকদার কাজ থেকে খেতে এসেছেন। খেয়ে কিছুক্ষণ বাগানে বসেন তিনি। বরাবরের মতো আজও বসেছিলেন। এমন সময় দেলোয়ার চাষীর কথা শুনে তিনি নিজের মতো কিছু কথা বলেন। পরিবার কেমন, ছেলে কেমন শুনেন। গ্রামের অনেকেই তাদের কাছে পরামর্শ নিতে আসেন, তারাও চেষ্টা করেন ভালো পরামর্শ দিতে। তার কাছে মনে হচ্ছে বিয়ে দেওয়াটাই ভালো। পড়ালেখা করাতে হিমশিম খাচ্ছে কি আর করার, আরো দুটো সন্তান রয়েছে। নিজের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সব কথায় শুনছিলো আনতারা। আহনাফ তালুকদার এখন কি বলতে পারে সে তাও বুঝতে পেরেছে। তাই কিছুটা গলা উঁচিয়ে বললো,
~ বিয়ের চিন্তা বাদ দিন চাচা। আপনার মেয়ে তো পড়ালেখায় প্রথম পর্যায়ে। এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চাচ্ছেন কেন?
দেলোয়ার চাষী উপরে তাকান। আনতারা কে দেখে মিষ্টি হাসি দেন। মেয়েটাকে ভালোয় লাগে তার। কথার পিঠে বলেন,
~ কি করমু মা, একেকডা বইয়ের যে দাম। রোজগার তো কম।
~ দশম শ্রেণীতে উঠলো না আঁখি? আঁখি কে পাঠিয়ে দিবেন বিকেলে। কেয়ার গাইড গুলো নিয়ে যাবে। আজকে ছোট মেয়ে বিয়ে দিবেন, সংসারে মানিয়ে নিতে পারবে না চাচা। দেখা যাবে সংসারে চাপে মেয়েই হারালেন। পড়ালেখায় ভালো, কষ্ট করে হলেও পড়ালেখা করান, বৃদ্ধ বয়সে এই মেয়েই আপনার ভরসা হবে। আমাদের গ্রামের নাম উজ্জ্বল করবে। আপনারা বুঝালে, সাপোর্ট দিলে ভুল পথে যাবে না। মেয়েদের আগলে রাখলে মেয়েরা ঠিক বাবা-মা’র কথা ভাবে চাচা। তাই অন্যের মেয়ে কি করলো, কোন পথে গেল এসবে না চোখ দিয়ে নিজের মেয়ে কে কিভাবে ভালো রাখা যায় সেটা দেখবেন। ভুল করলে বুঝাবেন। আমি যে কয়দিন বাড়িতে আছি আমার কাছে পাঠাবেন পড়তে। ঠিকাছে?
চিকচিক করে উঠলো দেলোয়ার চাষীর চোখ। চারদিকের অবস্থা দেখেই যে মেয়ের বিয়ের কথা ভাবছেন মেয়েটা বুঝতে পারছে। আহনাফ তালুকদার চোখ মুখ শক্ত করে বসে রইলেন। ‘মেয়েদের আগলে রাখলে মেয়েরা ঠিক বাবা-মা’র কথা ভাবে চাচা’, কথাটা যেন আনতারা তাকে শুনিয়েই বললো। দেলোয়ার চাষী খুশি হয়ে আহনাফ তালুকদার কে উদ্দেশ্য করে বললেন,
~ আপনের মাইয়া ঠিক আপনের মতোই হইছে ভাই। এমন মাইয়া যেন সবার ঘরেই থাকে।
চলবে…?
(রিয়েক্ট করার অনুরোধ রইলো। অনেক অনেক শুকরিয়া)