ছন্দহীন পদ্য পর্ব ২৪

0
301

ছন্দহীন পদ্য
.
পর্ব_২৪
.
আফরা আর হাসপাতালে থাকতে পারেনি। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। পদ্যের থেকে বিদায় নিয়ে দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নামছে। অনিকের জন্য আর কিছুই কী করার রইল না তার? বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে পদ্য বিয়েতে রাজি হয়ে যাবে? অনিকের জন্য বুকভরা অনুরাগ চেপে রেখে অন্য কাউকে কবুল বলে গ্রহণ করে নিবে! মেয়েটির বুকে কী ভীষণ চাপা এক কষ্ট হবে তখন। এই বিশাল, ব্যস্ত পৃথিবীর তাতে কিছুই যাবে আসবে না৷ যার কষ্ট, একান্ত তারই। অন্যদের জন্য সেটা বড়োই তুচ্ছ। এই কষ্ট নিয়েই হাসিমুখে দৈনন্দিন সকল কাজ-কর্ম চালিয়ে যেতে হবে পদ্যের। রাতে সীমাহীন কাম নিয়ে একজন পুরুষ তাকে স্পর্শ করবে। ঠোঁট এনে যখন রাখতে চাইবে ওর ঠোঁটে। তখন অস্বস্তিতে ইচ্ছা করবে সরিয়ে নিতে। কিন্তু সরাতে পারবে না। সাড়া দিতে হবে। ভালো লাগার অভিনয় করতে হবে। এই অভিনয়ই হয়ে যাবে মেয়েটির জীবনের অংশ। না-কি মন থেকে মেনে নিবে একটা সময়? কেউই জানে না সেটা। মানব-মানবীর রহস্যময় এই মনের মতি-গতি বুঝার সাধ্য হয়তো কারও নেই। আফরা চোখ মুছতে মুছতে বাইরে এসে রিকশায় উঠলো। নীল আকাশ। কোলাহলপূর্ণ রাস্তা। রিকশার টুংটাং শব্দ। আফরা চারদিকে মনযোগ দিতে চাচ্ছে। অনিক-পদ্যের বিষাদময় প্রেমের আখ্যান থেকে নিজেকে বের করার ব্যর্থ চেষ্টা। এই কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে চায় সে। যেখানে তার কিছুই করার নেই। তা নিয়ে শুধু শুধু কষ্ট পেয়ে লাভ কী? সবকিছুতেই কেন তার এত বাড়াবাড়ি? ছোটোবেলা থেকেই এই এক যন্ত্রণা। সবকিছুর জন্য বড়ো কষ্ট লাগে। একবার বাড়িতে কো*রবা*নির জন্য কালো কুচকুচে একটা গরু আনা হলো। তখন যে সে খুব ছোটো তাও না। ঈদের দিন ভোরে গরুটার দিকে তাকিয়ে আফরার বড়ো মায়া হলো। এই গরুটাকে খানিক পর জ*বাই করা হবে? র*ক্তে ভেসে যাবে চারপাশ? খুবই কান্না পায় আফরার।
দৌড়ে রুমে গিয়ে দরজা আঁটকে বালিশে মুখ গুঁজে একা একা অনেকক্ষণ কেঁদেছিল। সেবার কেউ জোরাজোরি করে গোসত খাওয়াতে পারেনি তাকে৷ বেশ কিছুদিন গরুটাকে স্বপ্নে দেখেছে। গরু তার সঙ্গে কথা বলছে। মানুষের মতো কাঁদছে। এমনই হয় আফরার। সবকিছু নিয়ে এমন হয়। বাবাও বোঝাতেন। পৃথিবী হচ্ছে দুঃখ-কষ্টের জায়গা মা। জন্মের পর থেকে তা সহ্য করে উঠতে হয়। এটাই নিয়ম। তুমি ভাবো সবারই পিতা-মাতা একদিন মারা যায়। নিজ হাতে গিয়ে কবরে রেখে এসে তাদেরও বেঁচে থাকতে হয়। ভয়ানক কষ্টের ব্যাপার না? কিন্তু মানুষ এসব সহ্য করার ক্ষমতা ক্রমশই অর্জন করে ফেলে। তোমারও করতে হবে। সবার জন্য, সবকিছুর জন্য এতো কষ্ট পেলে দুনিয়ায় চলা মুশকিল মা। দুনিয়া হচ্ছে কঠিন লোকদের৷ যত কোমল হবে। চারপাশে দেখবে শুধু দুঃখ আর দুঃখ। নিজেকে শক্ত করে তুলতে হয়। আফরা আজও পারেনি নিজেকে শক্ত কঠিন হিসাবে তৈরি করতে। পদ্যের জন্য ভীষণ মায়া হচ্ছে৷ মেয়েটা কত অসহায়। এসব ভাবতে ভাবতে রিকশা বাসার সামনে চলে এসেছে। আফরা রিকশা থেকে নেমে গেইট খুলে দেখে অনিক ওর বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। বাঁ হাতের আঙুলের ফাঁকে একটা জলন্ত সিগারেট। ডান হাতের মুঠোয় চাল। বাইরে পাশের বাসার কয়েকটা কবুতর ওড়াউড়ি করছে।
অনিকের সঙ্গে তাদের অনেক ভাব। আফরার দিকে তাকাল। কিন্তু কিছু বললো না অনিক। আফরা দরজার সামনে খানিক সময় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে কলিংবেল চাপলো। অনিক এসে খুলে দিল দরজা।

– ‘কী হয়েছে ভাবি? কোথায় গিয়েছিলে?’

– ‘কোথাও না।’

– ‘তোমার চেহারার অবস্থা এমন কেন? তোমাকেও কেউ ছেড়ে চলে যাচ্ছে না-কি?’

আফরা কোনো জবাব না দিয়ে রুমে চলে গেল। হাত-মুখ ধুয়ে টেবিলে খাবার দিয়ে বেলকনিতে এসে বললো, ‘অনিক খাও এসে।’

– ‘খেতে ইচ্ছা করছে না ভাবি।’

– ‘তুমি কী শুরু করছো বলো তো অনিক? প্রত্যেকবেলা তোমাকে জোরাজোরি করে খাওয়ানোর জন্য আমাকে বেতন দিয়ে রাখোনি। আর অফিসে যাওনি কেন? এভাবে কতদিন চলবে?’

অনিক মুঠোর সকল চাল ছিটিয়ে দিয়ে হাত ঝেড়ে মুচকি হেঁসে বললো, ‘চলো, খেতে চলো।’

খাবার টেবিলে বসে অনিক বললো, ‘আচ্ছা এবার বলো সমস্যা কী? তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?’

আফরা মাথা তুলে তাকিয়ে বললো, ‘কেমন?’

– ‘যেমনই দেখাক, স্বাভাবিক না।’

– ‘খেয়ে নাও, তারপর বলছি। বাড়াবাড়ি তো করছিই৷ আর যতটুকু করার বাকি আছে করে ফেলি।’

অনিক আর কোনো কথা বললো না। নিঃশব্দে খাওয়া শেষ করে উঠে চলে গেল।
আফরা টেবিল গুছিয়ে চা বসালো। অনিকের যখন-তখন চা খাওয়ার অভ্যাস আছে৷ ঘুমানোর আগে, ভাত খাওয়ার পরে। বিয়ের পর এত চা পোকা দেখে মাঝে মাঝে বকাও দিয়েছে আফরা৷ এরপর থেকে অনিক নিজেই জ্বাল দেয়া শুরু করেছিল। সেটাও ছাড়িয়েছে সে। ঘণ্টা খানেক পর চা নিয়ে ওর রুমে গেল সে। অনিকের হাতে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের “দূরবীন” উপন্যাস। পড়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু কোনোভাবেই মনযোগ দিতে পারছে না। আফরা টেবিলে চায়ের কাপ দিয়ে বিছানায় গিয়ে বসে। অনিক বই বন্ধ করে চায়ে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘কী বলতে চাইছিলে বলো।’

– ‘কথাগুলো চা খেতে খেতে আয়েশ করে বলার মতো নয়। তবুও বলি।’

– ‘হ্যাঁ বলো, নির্দ্বিধায় বলো।’

আফরা চায়ে চুমুক দিয়ে বললো, ‘পদ্যের বাবা অসুস্থ। উনি হসপিটাল আছেন।’

– ‘বলো কী? কী অসুখ? কোন হসপিটালে?’

– ‘শান্ত হও। তোমাকে জানানো নিষেধ ছিল। তবুও জানিয়ে দিলাম। কারণ তুমি এমনিতেই জেনে যাবে। আজ রাতে মনিসা আর আন্টি আমাদের বাসায় থাকবেন।’

– ‘তাই না-কি? আর আমাকে জানানো নিষেধ কেন?’

– ‘আগেই বলেছি অস্থির না হতে। ওদেরকে নাঈমই ভর্তি করে দিয়েছে। আমিও গিয়ে দেখে আসলাম।’

– ‘ভালো করেছো, কী অবস্থা এখন?’

– ‘চিকিৎসা চলছে। তুমি শক্ত হও, কিছু কথা বলবো। তোমার অজানা থাকুক আমি চাই না। সব জেনে-বুঝে কষ্ট পাও, তাতেই ভালো।’

– ‘বলো তো, সবকিছু বলো। কি হয়েছে?’

– ‘পদ্যকে তুমি আর পাবে না হয়তো। আমার যতটুকু চেষ্টা করার করেছি। কিন্তু এখন আর কিছু করার নেই।’

অনিক চায়ে চুমুক দিয়ে দীর্ঘ সময় পর বললো, ‘তা তো জানা কথাই। নতুন কী এখানে? পদ্য নিজেই তো ফিরিয়ে দিয়েছে।’

– ‘তুমি এখানেই একটা বিষয় জানো না। আমি সেটা জানিয়ে দিতে চাই। শুনে তুমি হয়তো খুশি হবে৷ কিন্তু কষ্ট বেড়ে আরও কয়েকগুণ হবে হয়তো।’

– ‘এত কাহিনি না করে তুমি বলো তো ভাবি।’

পদ্যও তাকে ভালোবাসে সেটা বলে দিতে ইচ্ছা করছে আফরার। বলতে গিয়েও আঁটকে গেল সে। হঠাৎ মনে হলো জেনে যদি পাগলামি করে? পদ্য এমনিতেই ঝামেলায় আছে। সে চায়ে চুমুক দিয়ে বললো, ‘তেমন কিছু না, মানে তুমি আর পাবে না পদ্যকে। ওর বিয়ে হয়ে যাবে। এটাই বলতে চাইছিলাম।’

– ‘হায়রে বাবা, এটা তো আমি জানিই। আচ্ছা বাদ দাও। ওরা কোন হসপিটালে আছে?’

– ‘জেনে কী করবে?’

– ‘দেখে আসা দরকার না? পদ্যের সঙ্গে সম্পর্ক ছাড়াও ওরা আমাদের অনেক ঘনিষ্ঠ। নাঈম ভাই শুধু হসপিটালে ভর্তি করে দিলেই হয়ে গেল না-কি। শহরে থাকলে এরকম সবাই করে।
গ্রামের অনেকে আছে রোগীর সঙ্গেই চলে আসে। ছোটাছুটি করে৷ আর আমি এখানে থেকে দেখভাল করবো না? তোমরা বিষয়টা আমার থেকে লুকিয়ে ঠিক করোনি।’

– ‘আমার কিছু করার নেই। তোমাকে যে এখন বলেছি সেটাও অনেক।’

– ‘পদ্যের ব্যাপারটা ভাইয়া যেহেতু জানে, তাহলে আব্বাও নিশ্চয় জানে। আমি কথা বলে নিব। এখন যাই। দেখি ওদের কি অবস্থা। কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি-না। তাছাড়া পদ্য একা একা কী করবে? কোথায় থাকছে, কীভাবে খাচ্ছে কে জানে..।’

আফরা থামিয়ে দিয়ে বললো,

– ‘তোমার অস্থির হওয়া লাগবে না৷ আমরা দেখছি সব।’

– ‘আচ্ছা ঠিকানা বলো আমি গিয়ে দেখি।’

– ‘কিন্তু পদ্যের সাথে কথা বলতে যেও না। ওর বাবা মাইল্ড স্ট্রোক করেছিলেন। বুঝতে পারছো তো? কোনো ঝামেলা করা যাবে না।’

– ‘না না, সেরকম কিছুই হবে না ভাবি। চিন্তা করো না। আমাকে বলো কোন হসপিটাল। রুম নাম্বার কত।’

আফরা তাকে সবকিছু বলতেই। কাপড়-চোপড় পরে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বের হয়ে গেল সে।
.
খাওয়ার পর পদ্য সবকিছু ধুয়ে-মুছে রাখছে। মনিরা বেগম স্বামীর পাশে বসে আছেন। মনিসা পদ্যের মোবাইল হাতে নিয়ে গেইম খেলছিল। এমন সময় দরজায় নক পেয়ে সে উঠে গিয়ে খুলে দিল। পদ্য প্লেটগুলো মেঝেতে রেখে কে আসছে দেখার জন্য মাথা তুলে তাকিয়েই অপ্রস্তুত হয়ে গেল৷ অনিক এসেছে। বিধ্বস্ত চেহারা। উষ্কখুষ্ক চুল। চোখের নিচে কালি।
সালাম দিয়ে এসে পাশের বিছানায় বসার আগে বললো, ‘চাচি স্যারের অসুস্থতার কথা আমি ঘণ্টা দুয়েক আগে মাত্র জেনেছি। জানলে আরও আগেই আসতাম। কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো?’

মনিরা বেগম শুরুতে খানিক ইতস্তত করলেও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললেন, ‘না না, নাঈম বাবাজি সবকিছু দেখছে।’

হাতে দুইটা ব্যাগ। একটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো, ‘চাচি হঠাৎ মনে হলো রান্নাবান্নার তো এখানে অসুবিধা হবে। তাই একটা ইলেকট্রনিক কেতলি আনলাম৷ এখানে দুধ, ডিম, চা-পাতা, বাদাম এসবও আছে..।’
‘এতকিছু আনতে গেলে কেন বাবা’ বলে মনিরা বেগম ব্যাগ দু’টা নিলেন।
পদ্য পালঙ্কের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। মনিসার সঙ্গে টুকটাক কথা বললো অনিক। আর কী করবে বা বলবে বুঝতে পারছে না। কেমন অস্বস্তি লাগছে। খানিক পর বললো, ‘আন্টি যেকোনো দরকার হলে বলবেন। আর আমি এখানে আসার আগে কথা বলেছিলাম। ওরা বললো অনেকদিন থাকা লাগবে আপনাদের। তবে যাদের শহরে বাসা আছে৷ তারা বাসায় থেকেই ডাক্তারের ডেট মতো আসতে পারে। আমাদের গ্রাম থেকে এসে এগুলো সম্ভব না।’

– ‘হ্যাঁ বাবা, গ্রাম থেকে আসা-যাওয়া তো সমস্যা।’

অনিক ক্ষীণ সময় চুপচাপ থেকে বললো, ‘আচ্ছা এখন যাচ্ছি চাচি৷ পরে আসবো। আর যেকোনো দরকার হলে জানাবেন।’ বলে সে বাইরে গেল৷ মনিরা বেগম দরজা লাগিয়ে বললেন, ‘দেখো কেমন ভালো মানুষের মতো কথা বলে, আর ভেতরে শ*য়তান ভরা। ছেলের মতো দেখতাম এই ছেলেরে। আর আজ ওর কারণেই আমাদের এই অবস্থা…।’

পদ্য এগিয়ে এসে মায়ের হাত ধরে বললো, ‘আম্মা প্লিজ হসপিটালে আর এসব নিয়ে কথা বলো না। আব্বা এগুলো শুনে আরও চিন্তা করবে। আমি তো বললামই, আব্বা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলে। তোমরা যে ছেলেকে বলবে, তাকেই বিয়ে করবো। এগুলো এখন বাদ দাও৷’

মনিরা বেগম এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিয়ে আবার বিছানায় উঠে স্বামীর পাশে বসলেন।

আফরা দরজা খুলে দেখে অনিক। সে ভেতরে এসে সিটিং রুমের সোফায় বসে বললো, ‘ভাবি, হসপিটাল থেকে ফিরতে ফিরতে ভাবলাম আমি বাড়িতে চলে যাব।’

– ‘তাই না-কি? কেন?’

সে গ্লাসে পানি ঢেলে এক চুমুক খেয়ে বললো, ‘ওদের হসপিটালে থেকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে অনেক টাকা খরচ হবে। আমাদের বাসায় নিয়ে আসো৷ এখান থেকে যখন দরকার যাবে। হসপিটালে লিফট আছে, হুইলচেয়ার আছে৷ আনা-নেওয়ার সমস্যা হবে না। টাকা খরচ কম হবে। খাওয়া-দাওয়ার খরচও বাঁচবে। তোমরা মনে করবে বসায় মেহমান এসেছে।’

– ‘তা তো ভালো কথাই বলেছো। তোমার বাপ-ভাই মানবে বলে তো মনে হয় না।’

– ‘আমি আব্বাকে কল দিচ্ছি দাঁড়াও। আব্বা আসলে আমার ব্যাপারটা জানে, তাই না?’

– ‘হ্যাঁ উনি জানেন। তোমার কারণেই পদ্যকে এখানে আনতে চাইছেন না।’

‘পদ্যও ঘ্যাড়ত্যাড়া, আমি থাকলে আসবে না। বাপের কিছু টাকা জমানো আছে মনে হয়। সেগুলো হসপিটালেই দিয়ে যাবে। আর আজ তো দেখলাম। একেবারে চোখ-মুখ শুকিয়ে গেছে। আর কারও কী বাপের অসুখ হয় না? এত মিলিয়ে যাচ্ছে কেন!’

আফরা মুচকি হাসে৷ ছেলেটা জানে না এই শুকিয়ে যাওয়ার পেছনে শুধু বাবার অসুস্থতা নয়। অনিক ততক্ষণে মোবাইল বের করে কল দিয়েছে। ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই সে সালাম দিয়ে বললো,

– ‘আব্বা আমি বাড়িতে আসবো আজ।’

– ‘ও তাই না-কি, তাহলে আসো।’

– ‘আব্বা হসপিটাল গিয়েছিলাম। স্যারের তো অনেকদিন থাকা লাগবে এখানে।’

– ‘হ্যাঁ তা তো লাগবেই।’

– ‘আমাদের বাসা কাছে থাকতে ওরা হসপিটাল থেকে টাকা নষ্ট করবে কেন আব্বা। স্যার তো সারাজীবন তোমার পক্ষেই কাজ করেছেন। স্কুলের মাস্টার হয়ে দেখতাম তোমার পক্ষে ভোট চাইতেন। লোকে নানান কথা বলতো এসব নিয়ে।’

– ‘হ্যাঁ, তা তো ঠিক। এর কারণেই তো নাঈমকে বলেছি সবকিছু দেখতে।’

– ‘ওদেরকে বাসায়ই থাকতে দিন। আমি গ্রামে চলে আসছি৷’

– ‘আচ্ছা দেখছি, নাঈমের সঙ্গে কথা বলবো।’

– ‘আচ্ছা আব্বা, আমি বের হচ্ছি একটু পর।’

– ‘ওকে ঠিক আছে।’

আফরা মুচকি হেঁসে বললো, ‘তোমার শরম-লজ্জা নেই?’

– ‘কীসের শরম?’

– ‘তুমি যে বারবার বলছো আমি গ্রামে চলে আসছি। আবার বলছো ওদের বাসায় থাকতে দিতে তার মানে কী? এর মানে তুমি জানো ওরা তোমার জন্য বাসায় আসতে দেবে না।’

– ‘আচ্ছা এগুলো বাদ দাও, আমি আজই চলে যাই। তুমি একটু পর পদ্যকে কল দিয়ে বলবে আমি চলে গেছি। তাহলে মনিসা আর সে আজ রাতে এখানে এসে থাকলে সমস্যা নেই। যে কয়দিন হসপিটাল ওরা আছে। এভাবে আসা যাওয়া করতে পারবে। আর দু-একদিন পর বাসায় নিয়ে এসো। তোমার একটু কষ্ট হবে আরকি।’

– ‘জি আচ্ছা, তোমার পদ্যের জন্য এটুকু আমি করবো।’

অনিক লজ্জা পেয়ে বললো,

– ‘আমার পদ্যের জন্য না ভাবি। আমার ব্যাপারটা সামনে না আসলে আব্বা নিজেই এসব করতো। আমাদের দুই পরিবারের অনেক ভালো ঘনিষ্ঠতা ছিল।’

– ‘ঠিক আছে আর বুঝাতে হবে না।’

– ‘তুমি কল দিয়ে দাও। চাইলে তো ওরা দিনেও এখানে আসতে পারবে।’

– ‘আচ্ছা দিচ্ছি।’
.
___চলবে….
লেখা: জবরুল ইসলাম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here