ছন্দহীন পদ্য
.
পর্ব_১৭
.
অনিক বাসের জানালার কাছে বসা। বুকে হাত বেঁধে বাইরে তাকিয়ে আছে সে। সবুজ মাঠ, রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি গাছ, বন্ধ দোকান, বাজার আর কোলাহলপূর্ণ একের পর এক স্টেশন পেছনে ফেলে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাস। অনিকের উদাস চাহনি, সেসবের কিছুই দেখছে না সে। বারংবার মনে হচ্ছে এবার বুঝি সত্যিই সবকিছু শেষ হতে চলেছে! পদ্য নামের পদ্মফুলটি কি শেষপর্যন্ত অন্য কারও হয়েই যাবে? সেবার বুকভরা অভিমান নিয়ে গ্রাম থেকে চলে এসেছিল। মাঝে মাঝে মনে হতো পদ্য নিজে থেকেই হয়তো তাকে একদিন আনব্লক করে মেসেজ দেবে। আচমকা একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখবে পদ্যের মেসেজ, ‘অনিক, কি খবর তোমার? বাড়িতেই আসা ছেড়ে দিয়েছো দেখছি। এত রাগ করা কবে থেকে শিখেছো বলো তো অনিক! এবার মেলার আগে আসবে তো? মেলায় এত মানুষ হয়। এত কোলাহল। বয়স হওয়ায় আব্বা যেতে ভয় পান। আমি এখন কাকে নিয়ে যাই বলো তো? গেলবারও যেতে পারিনি। তুমিও মেয়েদের মতো অভিমান করে শহরে গিয়ে বসে আছো। এবার মেলার আগে এসো প্লিজ। দু’জন মিলে যাব। জানি আমরা আগের সেই ছোট্ট বাচ্চাটি নই। মেলায় গিয়ে পে-পে বাঁশি কিনে বাজাবো না আর। তবুও তো যেতে ইচ্ছা করে। অতীতে, শৈশবে ফেরার পথ বলতে তো এগুলোই। তাই না বলো?’
এসব তার কেবলই ভাবনায় থেকে গেল।
পদ্যের থেকে এমন কোনো মেসেজ কোনোদিন আসেনি। মাঝে মাঝে মনে হয় একজন নারী এত নির্দয় কিভাবে হয়! সে একটা ছেলেকে চূড়ান্ত অপমান করলো। ছেলেটা তার কারণেই অভিমান করে বাড়ি যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। সেই ছেলেটির জন্য একটা দিনও পদ্যের মন খারাপ হবে না? কখনও কি সে গান শুনে না? বিষণ্ণ কোনো এক দুপুরে কি তাদের বাড়ির আশেপাশে কাক ‘কা-কা’ করে উড়ে যায় না? এই বৈচিত্র্যময় পৃথিবীতে কি অন্যের জন্য একটুখানি মন খারাপ হওয়ার মতো কোনো উপাদান নেই? গ্রামগঞ্জে কি আজকাল কেউই বাঁশি বাজায় না? এগুলো তো মন খারাপ হওয়ার কোনো কারণ ছাড়াও মন খারাপ করে দেয় বলে সে জানতো। তার সকল জানা কেন এই নিষ্ঠুর নারীটির বেলায় ভুল প্রমাণিত হয়?
তবুও অনিক সবকিছু ভুলে একবার ঈদে গ্রামে গিয়েছিল। সেবারও নিষ্ঠুরতার চূড়ান্ত করেছিল পদ্য। হৃদয়হীন এই মেয়েটি একবারও তাদের দেখতে আসেনি। তার নতুন ভাবিকেও না৷ কি আশ্চর্য! গ্রামের এসব অঘোষিত নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা করেনি পদ্য। অথচ বয়সে ছোট ছেলের সঙ্গে প্রেম না করার সামাজিক নিয়ম সে হাড়েহাড়ে পালন করেছে। কেন! এই মেয়েটির কিছুই সে বুঝতে পারে না কেন? যা সে ভাবে তার ধারেকাছেও নেই কেন মেয়েটি? মানুষের মনস্তত্ত্ব বুঝতে পারা নিয়ে ভেতরে ভেতরে তার অনেক অহম আছে বটে, কিন্ত পদ্যের কথা ভাবলেই সেই অহম নিয়ে লজ্জিত হতে হয়।
সেবারও অনিক ভেবেছিল এতদিন পরে বাড়িতে যাচ্ছে। পদ্য এসে দেখা করবে৷ সে একটু ভারী-ভারী থাকার চেষ্টা করবে। অথচ মেয়েটি ঘর থেকেই বের হয়নি। একটিবার দেখার জন্য ভীষণ ইচ্ছা করছিল তার। তাও দেখতে পায়নি। না দেখেই ফিরে আসতে হয়েছিল। তবে সেবার একটা বিষয় মায়ের কাছে জানতে পারে। পদ্য না-কি বিয়ে করতে চায় না। বিয়ে করবে না। ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য লেগেছিল তার কাছে। একটা মেয়ে বিয়ে না করে থাকতে পারবে? ছেলেদের জন্যই তো কঠিন। তবে শেষপর্যন্ত মনে হয়েছিল এই মেয়ে দ্বারা সবই সম্ভব। তাছাড়া ওর কোনো ভাই নেই। পরিবারে একমাত্র সেইই উপার্জন করে। সব মিলিয়ে পরিবারের প্রয়োজনে হলেও পদ্য বিয়ে না করে আরও বহু বছর থাকতে পারবে। পদ্য বিয়ে করতে চায় না শোনার পর কেমন যেন ভালো লেগেছিল তার। কেন বিয়ে করবে না? পরিবারের জন্য হয়তো।
মাঝে মাঝে মনে হতো তার জন্যই বোধহয় বিয়ে করবে না। ভাবতে ভীষণ ভালোই লাগতো। অনিক এই সুযোগটা নিতে চেয়েছিল। রাগ, অভিমান, অপমান ছাড়াও তার মনে হয়েছিল আরও দীর্ঘ কয়েক বছর গ্রামে যাবে না৷ পদ্যের সঙ্গে যোগাযোগ করবে না। তাতে পদ্যের ভেতরের অস্বস্তি কেটে যাবে। যখন দেখবে সেই ছোটবেলার অনিক শরীরে-মননে অন্যকেউ হয়ে উঠেছে। অনাবিষ্কৃত এক অচেনা পুরুষ। চিরচেনা সেই ‘আপু-আপু’ করে ডাকা বালক এ নয়। তখন পদ্যের মনে ভিন্ন অনুভূতি তৈরি হতে পারে৷ কিন্তু সারাক্ষণ লেগে থাকলে ওর দৃষ্টিতে সেই ছোট্ট অনিক থেকে যাবে সে। আশেপাশের মানুষও কিছুটা ভুলে যেতে পারে তার ‘আপু’ ডাক। অনিক জানে না তার এসব চিন্তা-ভাবনা কতটুকু যুক্তি-সঙ্গত ছিল কিংবা কতটা কার্যকরী। তবুও পদ্যের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে৷ বারবার প্রত্যাখ্যান হয়ে, অপমান অপদস্ত হয়ে। শেষপর্যন্ত বাড়ি না যাওয়ারই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সে।
অনার্স শেষ করে তার ইচ্ছা ছিল লেখালেখি করে কিছু একটা করবে। জব নেয়নি পুরোপুরি লেখায় সময় দেয়ার জন্য। নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করে আবার পদ্যের সামনে গিয়ে দাঁড়াবে। বিয়ে করতে চাইবে। সেই সিদ্ধান্ত থেকেও সরে এসেছিল লেখালেখির বাস্তবতা বুঝতে পেরে। তাই জব নিয়ে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে ভেবেছিল আগামী বছরই বাড়িতে আসবে। পদ্যের সঙ্গে নতুনভাবে কথা বলবে। তাকে রাজি করে বাড়িতে বলবে৷ তাতেও যে একটা ঝড়ের ভেতর দিয়ে যেতে হবে অনিক জানে৷
কিন্তু এগুলোর বাইরে তার কাছে কোনো পথই ছিল না। পদ্য রাজি হলে হয়তো তাকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়া যায়৷ পরিচিত জগত ছেড়ে শহরে গিয়ে থাকা যায়। কিন্তু সে তো রাজিই হচ্ছে না। হলেও পরিবার ছেড়ে পালাবে কি-না তার জানা নেই।
তাই অন্ধকারেই পথ হাতড়ে এগিয়ে যাচ্ছিল। আজ হঠাৎ এটা সে কি শুনছে? পদ্য বিয়ে করে নিচ্ছে? সে কি জানে না আজও অনিক তার জন্য অপেক্ষায় আছে? বাস গন্তব্যে যখন এসেছে তখন জোহরের আজান হয়ে গেছে। অনিক সিএনজিতে উঠে রসুল পুর বাজারে এলো। সেখান থেকে নেমে হেঁটে হেঁটে খেয়াঘাটে আসতেই দু’টা বেজে গেছে। অনিক খেয়া পেরিয়ে এলো। বাড়িতে যাবে না সে। ফোনে কথা বলার সময় আশেপাশে বাচ্চাদের কথা-বার্তা শুনেই বুঝেছিল পদ্য স্কুলে আছে। সে খেয়াঘাটের বেঞ্চে বসে রইল। চেনা-জানা অনেক মানুষের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। কারও দিকেই তাকাচ্ছে না। দু’একটা ভালো-মন্দ জিজ্ঞাসার উত্তর দিচ্ছে কেবল। দীর্ঘ সময় বসে থাকার পর দেখে বাচ্চারা স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছে। মোবাইল বের করে দেখে স্কুল ছুটিরও সময় হয়ে গেছে। অনিক উঠে এগিয়ে গেল রাস্তায়। একটা ছেলেকে জিজ্ঞেস করলো, ‘তোমাদের পদ্য ম্যাডাম কোথায়?’
ছেলেটি আঙুল দিয়ে পেছনে দেখিয়ে বললো, ‘এদিকেই আসবেন।’
অনিক পকেটে হাত পুরে তাল গাছের নিচে দাঁড়িয়ে রইল। প্রচণ্ড পানির পিপাসা পেয়েছে। গলা এমন শুকিয়ে গেল কেন কে জানে! আশেপাশে দোকানও নেই। এক এক করে সকল ছাত্র-ছাত্রী চলে গেছে। পদ্য কোথায়? খানিক পর দেখতে পায় ছাতা হাতে বোরখা-নেকাব পরা একটি মেয়ে আসছে৷ তার দিকেই তাকিয়ে আছে। মেয়েটা কে? চোখ দেখে মনে হচ্ছে পদ্য। মেয়েটি কাছাকাছি এসে নিচের দিকে তাকিয়ে চলে যাচ্ছে৷ অনিক দ্বিধায় পড়ে গেল। পদ্য না-কি অন্যকেউ? পদ্যই তো মনে হচ্ছে৷ তাহলে তাকে দেখে এভাবে চলে যাচ্ছে কেন? অনিক খানিকটা দ্বিধা নিয়ে পিছু পিছু গিয়ে বললো, ‘তুমি কি পদ্য?’
মেয়েটি মনে হলো জবাব দেবে কি-না দ্বিধা-দ্বন্দে ভুগছে। ক্ষীণ সময় পর রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে নির্লিপ্ত গলায় বললো, ‘হ্যাঁ।’
অনিকের বুকটা দুমড়ে-মুচড়ে উঠে। কি আশ্চর্য! তাকে দেখেও তার পদ্য কথা না বলে চলে যাচ্ছিল? তারই পদ্য? প্রচণ্ড কষ্টে তার বুকটা ফেটে যাচ্ছিল। ছলছল ঝাপসা চোখে এগিয়ে গিয়ে বললো, ‘পদ্য তুমি আমাকে কি চিনতেই পারছো না? অচেনা মানুষের মতো ‘হ্যাঁ’ বলছো। আমি গ্রামে থাকি না। অথচ আজ হঠাৎ রাস্তায় দেখে কথা না বলে চলে যাচ্ছিলে। আমি কি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কোনো গাছ? দেখেও না দেখার মতো কোনো জড়বস্তু?’
– ‘কি জন্য দাঁড় করিয়েছো বলো। আর পদ্য পদ্য করছো কেন বুঝলাম না। আমি তোমার বড়ো। আগে আপু ডাকতে তুমি আমাকে।’
অনিক আহত নয়নে তাকিয়ে থেকে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, ‘পদ্য আমি অতীতের সেগুলো ভুলে গেছি। এখন আমি তো আর ছোট্ট নই। উলটো অপরিচিত যেকেউ দেখলে বলবে আমি তোমার বড়ো। পদ্য তোমার না-কি বিয়ে ঠিক হয়েছে৷ প্লিজ বিয়েটা করো না, ভেঙে দাও। বিয়ে করে ফেললে আর কিছুই করার..।’
পদ্য থামিয়ে দিল তাকে। তারপর নিষ্ঠুরভাবেই বললো, ‘বিয়ে ভেঙে দেবো মানে কি? তোমার সাথে কি আমার প্রেম চলছে? রাস্তায় দাঁড় করিয়ে এসব কথা বলার মানে কি?’
– ‘কলেই বলতে চেয়েছিলাম৷ তুমি কল কেটে দিয়েছো বলে আমি এতদূর এসেছি।’
– ‘তুমি কি বুঝতে পারছো তুমি কত বড়ো থার্ডক্লাস একটা ছেলে? একটা মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে সেটা শুনেই ডিস্টার্ব করতে শুরু করেছো। রাস্তায় দাঁড় করিয়ে বিয়ে ভেঙে দিতে বলছো।’
– ‘পদ্য এভাবে নিচ্ছ কেন ব্যাপারটা। আমি তো ভালোবাসি বলেই এগুলো বলছি।’
– ‘সেটা তুমি বাসো, আমি না৷ তুমি একটা নির্লজ্জ। যাকে আপু ডেকেছো সারাজীবন, তার সাথেই প্রেম করতে চাও।’
– ‘এখানে লজ্জার কি আছে পদ্য। তুমি শুধু আমাকে ভালোবাসো কি-না বলো। আমরা দু’জন রাজি থাকলে এই বিয়েতে কোনো অসুবিধা নেই।’
– ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি না, হয়েছে এবার? আশাকরি এখন আমার পিছে লেগে বিয়ে ভেঙে দেবে না৷ গ্রামে তো এসেছোই মনে হয় বিয়ে ভেঙে দেওয়ার ধান্ধায়। তোমাদের মতো ছেলেদের তো স্বভাবই এটা।’
অনিক বিস্মিত হয়ে গেল। পা থেকে যেন একটা গরম স্রোত উঠলো এসে মাথায়। সে এতই খারাপ ছেলে? আরেকজনের বিয়ে ভেঙে দিতে এসেছে? অনিক বিমর্ষ গলায় বললো, ‘এগুলো কি বলছো পদ্য? আমি তোমার বিয়ে ভেঙে দিতে গ্রামে এসেছি মানে! আমি তো আবার বুঝাতে এসেছি। আমি এখনও বিয়ে করিনি তোমার জন্য৷ ভালোবাসি তোমাকে।এগুলো বলতেই এসেছি। আমি তোমার বিয়ে ভাঙবো কিভাবে?’
– ‘বিয়ে ভাঙবে আমার ব*দনাম ছড়িয়ে দিয়ে৷ এইযে গ্রামে আসছো রাস্তায় বি*রক্ত করছো। লোকজন দেখছে। এভাবে ব*দনাম ছড়াবে আমার। এভাবে না পারলে আমাকে নিয়ে বর পক্ষকে বা*জে কথা বলবে৷ তোমাদের চেনা আছে। না হলে বিয়ের কথা শুনেই এখন তুমি গ্রামে আসবে কেন? তোমার সাথে তো আমার প্রেম নেই। আগেও স্পষ্ট বলেছি, এখনও বললাম।’
অনিক বিমূঢ়, নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তার মুখ থেকে আর কোনো কথাই যেন বের হচ্ছে না। পদ্য ধীরে ধীরে হাঁটতে শুরু করে। হাঁটতে পারছে না। পা যেন অবশ হয়ে যাচ্ছে। শরীর মৃদু কাঁপছে। কান্নায় ভেতর ফেটে যাচ্ছে। গলগল করে চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করেছে৷ শব্দ হলেই অনিক বুঝে যেতে পারে। কোনোভাবেই কান্না আঁটকে রাখতে না পেরে নেকাবের নিচ দিয়ে নিজের হাতটা কামড়ে ধরে দ্রুত হাঁটতে থাকে সে।
অনিক একটা সিগারেট ধরিয়ে ঘন ঘন টানতে লাগলো। চারদিকে মানুষ। খেয়াঘাট থেকে মাঝি ডেকে জিজ্ঞেস করলো যাবে কি-না সে। গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। হাত উঁচু করে জানান দিল যাবে৷ এখনই গ্রাম ছেড়ে চলে যাবে। কারও বিয়ে ভেঙে দেবার মতো ছেলে সে নয়। যে মেয়ে ভালোবাসে না রাস্তাঘাটে তাকে বিরক্ত করার মানসিকতা তার কোনোকালেই ছিল না। একের পর এক সিগারেট টানতে টানতে খেয়া পার হয়ে চলে এলো সে। টালমাটাল হয়ে নদীর চর দিয়ে একা একা হাঁটছে৷ উঠলো এসে একটা রাস্তায়। সবুজ ধানক্ষেতের মাঝখান দিয়ে মেঠো পথ। এই সবকিছুজুড়েই তো তাদের কত-শত স্মৃতি লেপটে আছে। রোজ স্কুলে যাওয়া-আসা হতো এদিক দিয়েই। কতকিছু ছবির মতো চোখে ভেসে উঠছে অনিকের। চোখটা ছলছল করছে। বুকে ভীষণ চাপা একটা কষ্ট। সিগারেটে টান দিতে গিয়ে ঠোঁট কাঁপে। আল ধরে অনেক দূর এসে পিছু ফিরে তাকায়। আহ ওইযে গ্রাম ফেলে এসেছে। নিজের গ্রাম। গাছগাছালি, ঝকঝকে নিল আকাশ, এই যে চোখের সামনে একটা বাছুর গাভীর দুধ খাচ্ছে। এই যে ‘হাম্বা’ বলে ডাকলো গরুটা। এই যে দূর-দূরান্ত থেকে পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে। থেকে থেকে আসছে চাষিদের মেশিনের ডাক৷ এগুলোর সঙ্গে পদ্যের যোগাযোগটা আসলে কি? সবকিছু তাকে এমন করে শুধু পদ্যের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে কেন? রাস্তার পাশের ওই তাল গাছটা দেখা যাচ্ছে। এই রাস্তা দিয়ে পদ্য এখন অবলীলায় হেঁটে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।
অনিক তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে ধান ক্ষেতের মাঝখানে একটা ছোট্ট আলে বসে গেল। তাকে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড থেকে যেন আড়াল করে নিল সবুজ ধানক্ষেত। দুইহাতে মুখ ঢেকে কান্নায় কেঁপে কেঁপে উঠলো অনিক।
__চলবে….
লেখা: জবরুল ইসলাম