ছন্দহীন পদ্য পর্ব ১০

0
281

ছন্দহীন পদ্য
.
পর্ব_১০
.
অনিকের কোনো সাড়া-শব্দ না পেয়ে বিরক্ত হয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল আফরা। তবুও শেষ রক্ষা পেল না। দুইটার দিকে তার বাবা-মা এসে হাজির। কলিংবেলের শব্দ শুনে ইভা প্রথমে ভেবেছিল অনিক ভাই এসেছেন। সে আগ্রহ নিয়ে দরজা খুলে দিতেই সুফিয়া বেগম ইভার দিকে ক্ষীণ সময় তাকিয়ে রইলেন। তারপর এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘মাইয়াটা কি মিষ্টি দেখো, তোমার মা-বাপ ভালা তো মা?’

ইভা অস্বস্তিতে পরে গেল। সে সালাম দেয়নি৷ এখন দিলে কি কোনো সমস্যা হবে? না-কি দেরি হয়ে গেছে? তবুও সালাম দিয়ে বললো, ‘জি ভালো আছেন, ভেতরে আসুন।’

মিরাজুল সাহেব এবং সুফিয়া বেগম ভেতরে এলেন। ছুটির দিন হওয়াতে সবাইই বাসায় ছিল। শুধু অনিক বাইরে। আফরা এসে সালাম দিল। সুফিয়া বেগম তাকালেন না ওর দিকে। ছেলেটার মাথা খাওয়া মেয়ে। নাঈমকে একেবারে আঁচলে বেঁধে রেখেছে। বউ ছাড়া এখন কিচ্ছু বুঝে না সে৷ আরে ব্যাটা তুই পুরুষ মানুষ। তোর এত পুতুপুতু স্বভাব কেন থাকবে! বিয়ের আগে তো এমন ছিল না এই ছেলে। আসল হচ্ছে বউয়ের ছলাকলা। বিয়েটাও বসেছে সেভাবে৷ বিয়ের পর বাড়িতে একবার গেল। টেবিলে খাবার দেয়ার পর নাঈম সবার সঙ্গে বসবে না। তার বউয়ের মাথা ধরেছে। খেতে চাচ্ছে না। তাই রুমে নিয়ে দিলে খেতে পারে। সে নিজে দুজনের প্লেট সহ সবকিছু রুমে নিয়ে গেল। তিনি বিস্মিত হলেন। এবং খানিক পর পর্দার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে দেখলেন নাঈমের মতো ছেলে বউকে মুখে ভাত তুলে খাইয়ে দিচ্ছে। দু’জনের চোখ-মুখ থেকে আহ্লাদ চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে। দেখে রাগে শরীরটা জ্বলে যাচ্ছিল সুফিয়া বেগমের। বেশি আহ্লাদ পেলে মেয়ে মানুষের মাথা ধরা পা*ছা ধরা যে বেড়ে যায়, এই জ্ঞানটুকুও কি ছেলেটার নেই? বিয়ের পর তারা নাঈমকে বললেন, ‘মেয়েকে গ্রামে রেইখা যা, বউকে নিয়া শহরে চাকরি করা লাগবে এইটা আবার কেমন কথা? আর কেউ কি এসব ব্যাঙের চাকরি করে নাই?’

না সে তার বউকে নিয়েই শহরে আসবে। এসে কি হয়েছে? এখনও একটা বাচ্চাও পয়দা হয়নি। আর হবেই বা কি করে? ব্যাটাদের মতো চাকরিও না-কি করে। তোর কেন চাকরি করা লাগবে? তুই মেয়ে মানুষ, ঘরে থাকবি, শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা-যত্ন করবি, জামাইকে সম্মান করবি। তার ধারেকাছেও নাই। এইযে শ্বশুরের সামনে চলে এসেছে, ওড়নাও ঠিকঠাক মতো মাথায় নাই। সালাম করছে মুখ দিয়ে। পায়ে হাত দিলে কি হয় তোর? কোমরে ব্যথা? ইভা নামের এই মেয়েটা কিরকম হবে কে জানে! নাঈমের বাপের এক কথা৷ এই মেয়েকে যদি অনিক পছন্দ করে ফেলে তাহলে তাড়াতাড়ি বিয়ে করিয়ে দিতে হবে। বিয়ে করলেই ব্যাটা মানুষ একেবারে সোজা হয়ে যায়। কেচ্ছা-কাহিনি লেখার রঙঢঙ ছেড়ে তখন ঠিকই চাকরি-বাকরি করবে৷ তিনিও ভাবছেন তাই হোক৷ আফরার ফুফাতো বোন যেহেতু। তাহলে ছলাকলার বংশধর। একমাত্র এই মেয়েই পারবে অনিককে বিয়ের জন্য পাগল করতে। এসব মেয়েরা ছেলেদের মাথা নষ্ট করতে ওস্তাদ। আফরা ট্রে-তে ড্রিংক নিয়ে এসে গ্লাস বাড়িয়ে দিয়ে বললো, ‘আম্মা নিন।’ সুফিয়া বেগম ভাবনা থেকে বের হয়ে গ্লাস নিলেন। কিন্তু কোনো কথা বললেন না। মিরাজুল সাহেবকেও গ্লাস দিয়ে আফরা সুফিয়া বেগমের পাশে বসে বললো, ‘আপনার শরীরটা ভালো আছে তো আম্মা?’

– ‘তা দিয়া আর তোমাদের কি? তোমরা তিনটা মানুষ যে এখানে থাকো। বুড়া-বুড়ি গ্রামে কিরকম থাকে, কিভাবে চলে, তা নিয়া তোমাদের চিন্তা আছে বইলা তো মনে হয় না।’

– ‘কিযে বলেন মা, নাঈম তো সারাক্ষণ আপনাদের নিয়ে কথা বলে।’

– ‘অনিক কই?’

– ‘বাইরে।’

তারপর আশেপাশে তাকিয়ে দেখলেন ইভা এখানে নেই। ফিসফিস করে বললেন, ‘তোমার শ্বশুর বললেন নাঈম নাকি বলছে এই মেয়ের লগে অনিকের অনেক ভাব?’

– ‘হ্যাঁ মা তাই তো দেখি।’

– ‘তোমার শ্বশুর অনিককে নিয়া অনেক টেনশন করে। কেন করে বলে না। ওর বিয়াটা দিতে পারলেই যেন বাঁচে।’

– ‘ও আচ্ছা।’

– ‘শুধু ও আচ্ছা বললেই হইব না৷ তুমি তার ভাবি৷ তোমারও একটা দায়িত্ব আছে৷ ওরে বিয়েতে রাজি করাও। ইভা মেয়েটাও তো দেখতে মাশাল্লাহ।’

– ‘হ্যাঁ আম্মা আমি চেষ্টা করবো।’

মিরাজুল সাহেব গ্লাস রেখে বললেন, ‘অনিককে রাজি করাও, তাহলে মেয়ের বাপ-মায়ের লগেও কথা বলবো।’

– ‘জি আচ্ছা, আমি চেষ্টা করবো।’

রাতে অনিক টিউশনি থেকে ইভাকে নিয়ে বাসায় ফেরে। মা-বাবার সঙ্গে দেখা করে রুমে চলে এসেছে সে৷ তখনই আফরা চা নিয়ে আসে, অনিকের দিকে একটা কাপ বাড়িয়ে দিয়ে বিছানায় বসে সে। অনিক চুমুক দিয়ে বললো, ‘কিছু বলবে?’

– ‘ভোরে যা বলতে চাইছিলাম সেটাই।’

– ‘বলো।’

– ‘তুমি কি ইভাকে পছন্দ করো?’

– ‘হ্যাঁ, তা না করার কি আছে?’

– ‘তাহলে ওর বাবা-মায়ের সাথে কথা বলি?’

অনিক মুচকি হেঁসে বললো, ‘কি বলবে?’

– ‘বিয়ের কথা। আমরা বিয়ের কথা বলি। তুমিও জব-টব কিছু করার চেষ্টা করো।’

– ‘যাও তো, আমার রুম থেকে বিদায় হও। আসছে বিয়ের আলাপ করতে।’

– ‘পাগলামি করো না। বিয়ে-শাদি করো, দেখবে লেখালেখি আরও ভালো হবে। জীবনের, চিন্তার গভীরতা আসবে। আরও অনেক অভিজ্ঞতা হবে।’

– ‘তার দরকার নাই।’

– ‘আব্বা কিন্তু খুবই চিন্তা করেন তোমার বিয়ে নিয়ে। সংসার নিয়ে।’

– ‘তা কেন? মানুষ মেয়ের বিয়ে নিয়ে করে। আমি মেয়ে না-কি!’

– ‘এত চিন্তার কি তা আমিও জানি না৷ তবুও সন্তান চাকরি-বাকরি করবে। বিয়ে-শাদি করে সংসারী হবে। মা-বাবা এটাই চায়।’

– ‘যাও তো ভাবি, বই পড়বো এখন। আমি বিয়ে করতে হলে এমনিই করতাম। এত বুঝানোর কিছু নেই।’

– ‘বুঝি না, তোমার কি মেয়েদের প্রতি খুব অনিহা? আগ্রহ নেই? কাউকে ভালো লাগে না?’

– ‘কি যে বলো, মেয়েদের প্রতি আমার অনেক আগ্রহ আছে৷ আর ভালো লাগবে না কেন, তোমাকে লাগে, ইভাকে লাগে। এবং রাস্তাঘাটে কত মেয়েকে দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি।’

– ‘তাহলে নিজের মানুষ থাকলে ভালো না? মুগ্ধ হয়ে নিজের মানুষকে দেখবে।’

– ‘সেটা কেন হতে হবে? একজন নারী মাত্রই যেকোনো সুদর্শন পুরুষকে দেখে মুগ্ধ হবে। স্বামী থাকলেও হতে পারে। পুরুষও তেমন। এই দেখাদেখি, ভালো লাগার সঙ্গে বিয়ের সম্পর্ক কি?’

– ‘কি আজব! নিজের স্ত্রী বা স্বামী রেখে বাইরের মানুষ দেখে তাকিয়ে থাকবে কেন? চরিত্র খারাপ যাদের তারাই এমন করে।’

অনিক চায়ের কাপ রেখে বললো,

– ‘তাহলে মানুষ মাত্রই চরিত্রহীন। কারণ তুমি কি নাঈম ভাইকে ভালোবাসো বলে রাস্তা-ঘাটে কোনো ছেলে দেখে ভালো লাগেনি? বা সিনেমার কোনো নায়ককে দেখে ভালো লাগে না? আর পুরুষ মানুষদের কি লাগে না? লাগে, কিন্তু সবাই মিথ্যে বলে।’

– ‘কিসব উদ্ভট কথা তোমার।’

– ‘উদ্ভট কথা না৷ এটাই সত্য এবং স্বাভাবিক৷ হয়তো মানুষ বিরত থাকে। এসব ভালো লাগা এড়িয়ে চলে। তাই বলে লাগে না তা কিন্তু না।’

– ‘আচ্ছা সে যাই হোক। তুমি মূল কথা ছেড়ে অন্যদিকে চলে যাচ্ছ। আমার কথা হলো রাস্তাঘাটে না দেখে ঘরে বউ তুলো।’

– ‘না, তাহলে রাস্তাঘাটেও দেখবো না।’

– ‘হ্যাঁ বাইরে গেলে, চোখে কালো চশমা পরে নিয়ো।’

– ‘ঘরে পরবো না? তুমি যে শাড়ি পরে আছো। দেখে যে ভালো লাগছে। তার কি হবে?’

আফরা উঠে যেতে যেতে বললো,

– ‘ফা*জিল, বিয়ে করে বউকে এনে এগুলো বললে, কত খুশি হত।’

আফরা এখানে ব্যর্থ হয়ে গেল ইভার কাছে। ইভা বিছানায় শুয়ে মোবাইলে তাকিয়ে আছে। সে বিছানায় বসে বললো, ‘কি করিস ইভা?’

– ‘হোয়াটসঅ্যাপে অনিক ভাইয়ের লেখা পড়ছি। পড়ে জানাতে হবে কেমন হয়েছে।’

– ‘কেমন লাগে পড়তে?’

– ‘ভীষণ ভালো, ভাবছি উনার এটা শেষ হয়ে গেল বই পড়বো। মনে হচ্ছে এতদিন বোকার জগতে ছিলাম।’

আফরা ওর পাশে শুয়ে বললো,

– ‘আচ্ছা অনিককে তোর কেমন লাগে?’

ইভা মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে বললো,

– ‘এই প্রশ্ন কেন করছো?’

– ‘বল না।’

– ‘সিগারেটখোর, উদ্ভট, উম্মাদ লাগে।’

– ‘সত্যি করে বল।’

– ‘তা দিয়ে কি হবে? তোমার কি ধারণা তোমার দেবরের প্রেমে আমি হাবুডুবু খাচ্ছি?’

– ‘খেলে খুব খুশি হতাম।’

ইভা চোখ পাকিয়ে বললো,

– ‘ছি, কি বলো এসব?’

– ‘তুই জানিস তোকে কত পছন্দ করি আমি? তুই আমার জা হলে কত ভালো হতো।’

– ‘কি বলো এগুলো৷ মাথা কি গেছে?’

– ‘আরে না সত্যি। তোর দুলাভাইও বলে। আর আজ আমার শ্বশুর-শাশুড়িও তোকে দেখে পছন্দ হয়েছে। কিন্তু তাদের ছেলেটাই যে বিয়ে-শাদি করতেই চায় না।’

– ‘যাও তো আপু এখান থেকে৷ কি আজেবাজে কথা বলছো।’

আফরা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

– ‘অনিক ছেলেটা কিন্তু খারাপ না। দেখতে ভালো, লেখালেখি করছে। এখন একটা জব করলে। ওর মতো বর পাওয়া কি ভাগ্যের ব্যাপার না বল?’

ইভা পুনরায় পড়তে শুরু করে বললো,

– ‘তা শুনে আমি কি করবো!’

আফরা ওর পেটে চিমটি দিয়ে বললো,

– ‘ওকে পটাতে পারিস না?’

– ‘ছি আপু, তুমি আমাকে কি ভাবো? আর তোমার দেবর কি সালমান খান যে তাকে পটাতে লেগে পড়বো?’

– ‘এরকম ভাবিস কেন? অনিক বিয়ে-শাদি করতে চায় না৷ তোর যদি ভালো লাগে তাহলে একটু অন্যভাবে চলাফেরা করে দেখ, যদি সেও পছন্দ করে বিয়ে দিয়ে দিলাম।’

– ‘তুমি এরকম বলতে পারলে? আমি কি এরকম মেয়ে? তোমার দেবরের কাছে বিয়ে বসতে আমাকে এখন অন্যভাবে চলাফেরা করতে হবে।’

‘তুই দেখি আরেকটা ঘাড়ত্যাড়া’ বলে আফরা উঠে চলে গেল৷ নাঈম খেলা দেখছে। সে পাশে গিয়ে বসে বললো, ‘অনিকের সঙ্গে তো কথায় পারিই না৷ একটা বললে সে আরেকটা বলে। আগামাথা বুঝি না৷ আর ইভাও আরেক ঘাড়ত্যাড়া। আমার দ্বারা সম্ভব না।’

নাঈম ওর পিঠের দিকে হাত নিয়ে বাহুতে ধরে বললো, ‘এটুকু তো করতেই হবে তোমার। মেয়েদের পটাতে যত কঠিন, ছেলেদের তেমন না। ইভা একটু অন্যভাবে চলাফেরা করুক। দেখবে অনিক প্রেমে পড়ে, তোমাকেই নিজে এসে বলবে বিয়ে করতে।’

– ‘কি জানি এসব বুঝি না।’

– ‘অধৈর্য্য হচ্ছ কেন? সিম্পল বিষয়।’

আফরা কোনো জবাব দিল না। কিছু একটা ভাবছে৷ অনিক তাকে শাড়ি পরনে দেখে ভীষণ প্রশংসা করেছিল। তাহলে ইভাকে শাড়ি পরালে কেমন হয়? সে আবার মোবাইল হাতে নিয়ে ইভার রুমে গেল। ইভা আগের মতোই শুয়ে আছে। সে পাশে বসে বললো, ‘এই তুই রাতারগুল জলাবনে গিয়েছিলি?’

– ‘না তো।’

– ‘আমিও যাইনি। অথচ কাছেই। দেখ ছবিগুলো, কি সুন্দর।’

ইভা একটা একটা করে দেখো বললো,

– ‘ওয়াও সত্যিই সুন্দর তো। নৌকা দিয়ে ঘুরাঘুরি করা যাবে।’

– ‘ভাবছি কাল যাব। যাবি তুই?’

– ‘কখন?’

– ‘বিকেলে বের হলেই হবে, কাছেই।’

– ‘আচ্ছা।’

– ‘অনেকদিন হলো ছবিও তুলিনি। জব-টব করে ক্লান্ত। দু’বোন শাড়ি পরে যাব।’

– ‘শাড়ি আমি পরতেই পারি না।’

– ‘আমি পরিয়ে দেবো। দেখবি কি সুন্দর লাগে।’

– ‘দুলাভাই যাবে?’

– ‘হ্যাঁ, তুই আমি আর তোর দুলাভাই।’

– ‘আচ্ছা ঠিক আছে।’

আফরা উঠে চলে গেল। ইভা বুক ভরে শ্বাস নিয়ে ছাড়লো। সে একটু আগে অনিক ভাইয়ের হোয়াটসঅ্যাপ প্রফাইল দেখছিল। তখনই হঠাৎ আফরা আপু চলে এসেছে। ভাগ্যিস দেখতে পায়নি। দেখলে সর্বনাশ হয়ে যেত। আসলে দুলাভাই আপু এবং অনিক ভাইয়ের মা-বাবা তাকে পছন্দ করেছে শোনার পর থেকে কেমন যেন লাগছে৷ অনিক ভাই তার বর হবে? এটা ভাবতেই বারবার গা কাটা দিয়ে উঠছিল। ছবি বের করে অনেকটা আনমনেই। আসলে মানুষটাকে তার হয়তো ভালোই লাগে, বেশ ভালো লাগে। রিকশা দিয়ে রোজ সন্ধ্যায় ফেরার পথে মাঝে মাঝে কেমন যেন অনুভূতি হয়ে। একদিন আসার পথে বললেন,
– ‘ইভা চলো নদীর পাড়ে যাই। অনেক সুন্দর জায়গা। নদীর কাছ ঘেঁষে সরু পিচঢালা রাস্তা গেছে। মধু ভাইয়ের ভ্রাম্যমাণ চায়ের দোকান আছে। নদীর পাড়ে বসে তোমার হাত ধরে চা খেতে খেতে গল্প করব।’

সে ফিক করে হেঁসে বললো, ‘আমি কি আপনার প্রেমিকা যে হাত ধরে বসবেন?’

উনি মুচকি হেঁসে বললেন, ‘হাত ধরার কথা বলেছি না-কি?’

– ‘হ্যাঁ এইতো বললেন।’

– ‘ও আচ্ছা, তা হাত ধরতে হলে প্রেমিকা বা স্ত্রী হতে হয় না।’

– ‘তাই না-কি?’

– ‘বিপরীত লিঙ্গের যেকোনো সুন্দর মানুষের প্রতিই মানুষের এরকম অনুভূতি থাকে। স্বামী-স্ত্রী ছাড়াও। এটাই স্বাভাবিক।’

– ‘উদ্ভট কথাবার্তা।’

– ‘খুবই সহজ কথা। যাইহোক একজন তরুণীর সঙ্গে এসব কঠিন আলাপ করতে ইচ্ছা করছে না৷’

– ‘আপনি কবে থেকে তরুণীদের বুঝে কথা বলেন?’

অনিক ভাই মুচকি হাসলেন। তারপর আবার চোখ ফিরিয়ে নিল। সেদিন তারা নদীর পাড়ে গিয়ে চা নিয়ে বসেছিল। শহরের উঁচু উঁচু ভবনের রঙিন বাতিগুলো জলের ভেতর ঢেউয়ের সঙ্গে মৃদু কাঁপছে। অনিক ভাই তাকে বললেন, ‘একটা কবিতা পড়বো না-কি ইভা?’

সে মাথা নেড়ে বললো, ‘আচ্ছা।’

– ‘জয় গোস্বামীর ‘হৃদি ভেসে গেল অলকানন্দা জলে’ পড়ি?’

ইভা আবারও মাথা নড়ালো। অনিক তখন পড়তে শুরু করলো,

“অতল, তোমার সাক্ষাৎ পেয়ে চিনতে পারিনি বলে
হৃদি ভেসে গেল অলকানন্দা জলে
করো আনন্দ আয়োজন করে পড়ো
লিপি চিত্রিত লিপি আঁকাবাঁকা পাহাড়ের সানুতলে
যে একা ঘুরছে, তাকে খুঁজে বার করো
করেছো, অতল; করেছিলে; পড়ে হাত থেকে লিপিখানি
ভেসে যাচ্ছিল–ভেসে তো যেতই, মনে না করিয়ে দিলে;
–’পড়ে রইল যে!’ পড়েই থাকত–সে-লেখা তুলবে বলে
কবি ডুবে মরে, কবি ভেসে যায় অলকানন্দা জলে।।”

সেদিন কবিতাটা যে খুব বুঝতে পেরেছিল ইভা, তা কিন্তু না। তবুও বুকটা কেমন করে যেন উঠলো, সত্যিই সত্যিই ইচ্ছা করেছিল অনিক ভাই হাতটা ধরে বসুক। সে আলগোছে মাথাটা পাশে বসা অগোছালো মানুষটার কাঁধে রাখবে।

__চলবে…
লেখা: জবরুল ইসলাম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here