#হৃদয়জুড়ে_তুমি
#পর্বঃ১৫
#লেখিকাঃদিশা_মনি
ইহান সিমার বাড়িতে চলে আসে। আজ যখন সে নিজের মনের কথা বুঝতে পেরেছে তখন আর সিমার থেকে দূরে থাকতে চায়না। আজ সিমাকে নিয়েই বাড়িতে ফিরবে বলে শপথ করে নিয়েছে ইহান। সেই অনুযায়ী ইহান বাড়িতে এসে সাজ্জাদ চৌধুরীর মুখোমুখি হন। সাজ্জাদ চৌধুরী ইহানকে দেখে মোটেও খুশি হন না। তিনি ইহানকে উদ্দ্যেশ্য করে বলেন,
‘কেন এসেছ তুমি এখানে? কি চাই তোমার?’
ইহান ব্যাকুল হয়ে বলে,
‘সিমা কোথায়? আমি ওর সাথে দেখা করতে চাই।’
‘আমার মেয়ের সাথে কেন দেখা করতে চাও? ওকে কি যথেষ্ট কষ্ট দেওয়া হয়নি তোমার? আরো কষ্ট দেওয়ার ধান্দা আছে। ভালোয় ভালোয় বলছি এখান থেকে চলে যাও নাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।’
ইহান অনুরোধ করে বলতে থাকে,
‘প্লিজ এভাবে বলবেন না। আমার সিমার সাথে দেখা করা অনেক বেশি প্রয়োজন।’
সাজ্জাদ চৌধুরী ইহানকে কিছুতেই মত দেন না৷ এমন সময় সামিহার আগমন ঘটে সেখানে। সামিহা সাজ্জাদ চৌধুরীকে জিজ্ঞেস করে,
‘কে এসেছে ড্যাড?’
ইহান সামিহার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়৷ কারণ তার চেহারা একদম সিমার মতো। কিন্তু গায়ের রংটা ফর্সা। ইহান সামিহার দিকে তাকিয়ে ছিল। সামিহা বেশ লজ্জিত বোধ করে বলে,
‘আমার দিকে এভাবে কি দেখছেন?’
ইহান বলে,
‘কে আপনি? আপনার সাথে সিমার চেহারার এত মিল কেন?’
‘আমি সামিহা সিমার যমজ বোন।’
ইহান এতক্ষণে ব্যাপারটা বুঝতে পারে।এরমধ্যে সিমারও আগমন ঘটে। সিমা এসে ইহানকে দেখে মোটেও খুশি হয় না৷ সিমা বলে,
‘আপনি কেন এসেছেন এখানে? আপনার তো আজ বিয়ে হওয়ার কথা৷ যান আপনার বউয়ের কাছে যান।’
ইহান সামনে এগিয়ে এসে বলে,
‘আমার বউয়ের কাছেই তো এসেছি৷ তুমিই তো আমার একমাত্র বউ।’
সিমা হচকচিয়ে যায়। তার কি বলা উচিৎ সেটা সে ঠাওর করতে পারছিল না। তবে সিমা নিজেকে শক্ত করে নেয়। এতদিন ধরে হওয়া অপমানগুলো সে এত সহজে ভুলবে না। তাই সিমা ইহানকে বলে দেয়,
‘আমি জানি না আপনার উদ্দ্যেশ্য কি। আপনি কি চান স্পষ্ট করে বলুন।’
ইহান বলে,
‘তুমি আমার সাথে ফিরে চলো। আমরা সবকিছু ভুলে আবার নতুনভাবে শুরু করব।’
সিমা বাকা হেসে বলে,
‘আমাকে কি আপনি পুতুল ভেবেছেন নাকি? যে যখন ইচ্ছে যেভাবে ইচ্ছে আমাকে নিয়ে খেলবেন। আমার কাছে সবার আগে আমার আত্মসম্মান। আপনি আমাকে যে অপমান করেছেন সেটা আমি এত সহজে ভুলব না। আর আপনার কাছে ফেরার তো কোন প্রশ্নও ওঠে না।’
২৯.
ইহানের শত অনুরোধ করার পরেও সিমা নিজের সিদ্ধান্ত থেকে চুল পরিমাণ বিচ্যুত হয় না। সিমা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে সে ইহানের কাছে ফিরতে চায়না। ইহান একপর্যায়ে সিমাকে বলে,
‘আমি নিজের ভুল বোঝার পরেও তুমি আমায় ক্ষমা করলে না। কিন্তু আমি তোমাকে কিভাবে বুঝাবো যে আমার পুরো হৃদয়জুড়ে তুমি আছ, শুধু তুমি। আমি তোমাকে নিজের করেই নিবো। তোমাকে আমার কাছে ফিরতেই হবে। আমি জানি তোমাকে অনেক বেশি অপমান করেছি। যেগুলো আর চাইলেও ফেরত নিতে পারবো না৷ কিন্তু আমি কথা দিচ্ছি এরপর থেকে তোমাকে আর কোন কষ্ট পেতে দেবো না। প্লিজ আমার জীবনে ফিরে এসো।’
সিমা তখন বলে,
‘আপনিই তো বলেছিলেন আমার কালো চেহারা দেখে নাকি আপনার ঘৃণা লাগে, আমি নাকি কালো ভূত, বাদরের গলায় মুক্তার মালা আরো কত কি। এসব কিছু এত সহজে তো আমি ভুলব না। আমি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি যদি আমি সেদিন আপনাকে না বাচাতাম তাহলে আপনি আমার প্রতি সদয় হতেন না। সেসব কথা বাদ দিলাম। আমাকে এত অপমান করার পর এত কষ্ট দেওয়ার পর সামান্য একটা সরি বলে ক্ষমা আপনি পাবেন না।’
কথাগুলো বলে সিমা নিজের রুমে চলে যায়। সামিহাও তার পেছন পেছন যায়। ইহান অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকে। সাজ্জাদ চৌধুরী ইহানের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘তুমি আমার মেয়ের থেকেই দূরে থাকো সেটাই তোমার জন্য ভালো হবে। আমার মেয়ে যখন আর নিজেকে তোমার সাথে জড়াতে চায় না তখন আমিও তার মতামতকে গুরুত্ব দিবো। তুমি যথেষ্ট বুঝদার ছেলে। আশা করি এই বিষয়ে তোমাকে আর কিছু বলার বা বোঝানোর আমার দরকার নেই।’
ইহান সাজ্জাদ চৌধুরীর উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘আমি ভালোবাসি সিমাকে৷ তাই যেকোম মূল্যে ওকে আমি নিজের কাছে ফিরিয়ে আনবোই।’
‘আমার মেয়ে না চাইলে ওকে তুমি নিজের কাছে নিয়ে যেতে পারো না।’
‘আপনার ধারণা ভুল। আমি আইনত এখনো সিমার স্বামী। তাই সিমার উপর সম্পূর্ণ রাইট আমার আছে। কিন্তু আমি ওর উপর কোন জোরাজোরি করব না। আমি জানি একদিন ও নিজে থেকেই আমার কাছে আসবে। এটা আমি হলফ করে বলতে পারি। সেদিন আপনিও নিশ্চয়ই রাজি হবেন।’
ইহান সিমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। এখন সে ভাবতে থাকে কিভাবে সিমাকে ফিরিয়ে আনবে।
৩০.
রাতে চৌধুরী বাড়িতে সবাই একসাথে বসে ডিনার করছিল। সামিহা সবাইকে কিছু একটা বলতে চাইছিল কিন্তু সাহস পাচ্ছিল না। সিমা সামিহার মনোভাব বুঝতে পেরে বলে,
‘তুই কি আমাদের কিছু বলতে চাস? তোকে কিরকম যেন লাগছে।’
সামিহা আমতাআমতা করে বলে,
‘আজ আসলে এখানে একজনের আসার কথা।’
সাজ্জাদ চৌধুরী ভ্রু কুচকে বলেন,
‘কে আসবে?’
সামিহা কিছু বলার আগেই একটি পুরুষালী কন্ঠস্বর শোনা যায়। সে বলে,
‘আমি।’
সবাই কন্ঠস্বরের অধিকারী ব্যক্তির দিকে তাকায়। ব্রাউন কালার চুল, সাদা ধবধবে চেহারার এক যুবককে দেখে সাজ্জাদ চৌধুরী, সিমা দুজনেই চমকে যায়। সামিহা প্রফুল্ল চিত্তে তাকালেও তার চোখেমুখে ভয়ের ছাপও স্পষ্ট ছিল। সাজ্জাদ চৌধুরী ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করেন,
‘কে তুমি?’
ছেলেটি নিজের পরিচয় দিয়ে বলে,
‘হ্যালো এভরিওয়ান মাই নেইম ইজ বুরাক হাসান।’
সিমা সামিহাকে জিজ্ঞেস করে,
‘এই ছেলেটা কে? তুই চিনিস এনাকে?’
সামিহা ঢোক গিলে বলে,
‘ও আমার বয়ফ্রেন্ড।’
‘ছেলেটাকে তো বিদেশি মনে হচ্ছে কিন্তু বাংলা বুঝছে কিভাবে?’
‘ওর মা একজন ব্রিটিশ কিন্তু বাবা বাংলাদেশী।’
এসব কথার মাঝে সাজ্জাদ চৌধুরী বলেন,
‘সামিহা এই ছেলেটা এখানে কেন এসেছে?’
সামিহা উত্তরে বলে,
‘আমাদের অনেক বছরের রিলেশন। বিদেশে আমাদের সম্পর্কের কথা সবাই জানে। আমাদের এনগেজমেন্টও হয়ে গেছে। বাট তখন তো আর আমি আমার আসল ফ্যামিলি সম্পর্কে জানতাম না। এখন যখন জেনে গেছি তখন তোমরা যদি রাজি থাকো তাহলে আমরা বিয়ে করব।’
সাজ্জাদ চৌধুরী থমথমে মুখ করে কিছুক্ষণ তাকায়। অতঃপর ঠান্ডা গলায় বলেন,
‘তুমি যখন রাজি তখন আমার আর কিসের মতামত। এমনিও আমি বাবা হিসেবে কোন দায়িত্বই পালন করতে পারি নি। তাই এখন আর তোমার জীবনের এত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে নিজের মতামত কিভাবে দেই।’
সামিহা ছলছল নয়নে বলে,
‘তুমি না বললে এই বিয়ে করবো না ড্যাডি।’
বুরাক এগিয়ে এসে বলে,
‘হোয়াট? তোমার জন্যে আমি এতদূর এলাম এন্ড ইউ সে ইউ কান্ট মেরি মি। ইটস নট ফেয়ার।’
সামিহা উঠে এসে বুরাকের মাথায় গাট্টি দিয়ে বলে,
‘তুমি কম কথা বলো। আমার ড্যাডি যা বলবে তাই হবে।’
বুরাক সাজ্জাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে কাতর আবেদন করে বলে,
‘প্লিজ মাই ডিয়ার ফিউচার ফাদার ইন ল, আপনি এই বিয়েতে নিজের মত দিন।’
‘আমি চাই এই বিয়েটা হোক।’
সাজ্জাদ চৌধুরীর কথায় সবাই খুশিতে মেতে ওঠে।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨