#হৃদয়জুড়ে_তুমি
#পর্বঃ৮
#লেখিকাঃদিশা_মনি
সিমা বলার মতো কোন ভাষা খুজে পায়না। আজ সবাই তাকে ভুল বুঝছে। কিন্তু আসলে সে তো কিছুই করেনি। মান্নাত বেগম সিমার হাত শক্ত করে ধরে বলেন,
‘আমি কিছু জানতে চাইনা। তোমাকে ২৪ ঘন্টা সময় দিলাম। এরমধ্যে যে করেই হোক আমার ছেলেকে আমার সামনে নিয়ে এসো।’
সিমা আত্মবিশ্বাসের সাথে বলে,
‘আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি আপনার ছেলেকে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই আপনার সামনে হাজির করব। যদি সেটা না পারি তাহলে সারাজীবনের মতো বিদায় নেবো আপনার ছেলের জীবন থেকে।’
মান্নাত বেগম কিছুটা দমে যান সিমার কথা শুনে। রায়হান খান সিমাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলেন,
‘ঠিক আছে তোমাকে আমি ২৪ ঘন্টা সময় দিলাম। যদি পারো এর মধ্যে আমার ছেলেকে আমার সামনে নিয়ে এসো।’
সিমা আর বিলম্ব না করে থানা থেকে বেরিয়ে যায়। এখন তার লক্ষ্য একটাই যে করেই হোক ইহানকে খুজে আনা।
✨
আরাম কেদারায় বসে নিশ্চিন্তে পা দোলাচ্ছে ইহান। আজ তার অনেক শান্তি অনুভব করছে। এতদিনে সিমাকে জব্দ করতে সক্ষম হলো সে। তাই তার মধ্যে একরকম পৈশাচিক আনন্দ কাজ করছে। ইহান নিজেই নিজের প্রশংসা করে বলে,
‘বাহ কত সুন্দর পরিকল্পনা করলাম আমি। এবার এমন ভাবে সবকিছু সাজিয়েছি যাতে সাপও ম’রে আবার লাঠিও না ভাঙে। ঐ সিমা নামের বিপদ আমার জীবন থেকে দূর হবে আমি আব্বুও আমাকে কিছু বলতে পারবে না।’
অতঃপর অট্টহাসিতে মেতে ওঠে ইহান। মনে করে সে কিভাবে স্মৃতি হারানোর মিথ্যা নাটক করে সিমাকে বোকা বানিয়েছে এবং সুযোগ বুঝে সেই সময় সিমাকে আইসক্রিম আনতে পাঠিয়ে নিজে গোপনে পালিয়ে চলে এসেছে।
ইহান এসবই ভাবছিল এমন সময় তার ফোনে তার মায়ের কল আসে। ইহান ফোনটা রিসিভ করামাত্রই মান্নাত বেগম বলেন,
‘হ্যালো, ইহান এটা কি তোর নতুন ফোন নাম্বার?’
ইহান উত্তর দেয়,
‘হুম। আমি আজই নতুন সিম কার্ড কিনলাম। যাইহোক বলো আমি কেমন চাল দিলাম?’
মান্নাত বেগম খুশিতে গদগদ হয়ে বলেন,
‘তোর বুদ্ধি দেখে আমি নিজেও অবাক। কি সুন্দর স্মৃতি হারানোর অভিনয় করলি। আমি তোর মা হয়েও বাকি সবার মতো সত্য ভেবে নিয়েছিলাম। ভাগ্যিস কাল তুই আমাকে সব সত্য বললি। এবার ঐ সিমার শিক্ষা হয়েছে। জানিস তোর বাবাও নিজের ভুল স্বীকার করে ঐ মেয়েটাকে অপমান করেছে।’
ইহান আত্মতৃপ্তি অনুভব করে বলে,
‘এমনটা তো হওয়ারই ছিল। সিমা ভেবেছিল ও খুব চালাক। কিন্তু আমার বুদ্ধি যে কতোটা ভয়ানক সেটা ও এবার বুঝবে।’
‘ঐ মেয়েটা বলেছে ২৪ ঘন্টার মধ্যে হয় তোকে খুজে বের করবে আর নাহয় চির জীবনের মতো তোর জীবন থেকে বিদায় নেবে।’
মান্নাত বেগমের মুখে এই কথাটা শুনে ইহান বাকা হেসে বলে,
‘তাহলে তো ভালোই হয়। আমি ২৪ ঘন্টা আত্মগোপনেই থাকি।’
১৫.
সিমা উদ্দেশ্যহীন ভাবে খুজে চলেছে ইহানকে। কিন্তু কোথাও তাকে খুজে পাচ্ছে না। সিমার এখন দিশেহারা লাগছে। কি করবে সেটাই বুঝতে পারছিল না সে। এমন সময় তার ফোনে একটি কল আসে। ফোনটা রিসিভ করামাত্রই বিপরীত দিক থেকে কেউ বলে ওঠে,
‘আপনি কি ইহান খানের স্ত্রী বলছেন?’
সিমা উত্তর দেয়,
‘হ্যা আমি ইহানের স্ত্রী। আপনি কে? আর আমাকে কেন ফোন করেছেন?’
‘আমি সিটি হসপিটাল থেকে বলছি। আপনার হাজবেন্ডের যে কিছু টেস্ট করতে দিয়েছিলেন তার রেজাল্ট এসেছে।’
সিমা আগ্রহের সাথে জানতে চায়,
‘রিপোর্টে কি এসেছে? ইহানের স্মৃতিশক্তি কি সত্যিই হারিয়ে গেছে?’
‘জ্বি, না। রিপোর্ট অনুযায়ী ইহান খানের মাথায় এমন গুরুতর কোন আঘাত আসে নি যার কারণে তার মেমোরি লস হওয়ার কোন চান্স থাকবে। আমাদের মনে হচ্ছে ওনার অবস্থা ঠিকই আছে।’
সিমা চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে। সে ডাক্তারকে কৃতজ্ঞতার সাথে জানায়,
‘আমি এমন কিছুই সন্দেহ করেছিলাম। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ডক্টর।’
অতঃপর সিমা কল কে’টে দিয়ে বলে,
‘আমি জানি আমাকে এখন কি করতে হবে। আপনি অনেক সুন্দর চাল চেলেছেন মিস্টার ইহান খান। কিন্তু আমাকে হয়তো আপনি এখনো পুরোপুরি চিনে উঠতে পারেন নি। আমি যে কি করতে পারি সেটা এবার আপনার কাছে প্রমাণ করে দেবো।’
সিমা নিজের ফোন থেকে ইনায়াকে ফোন করে। ইনায়া ফোন রিসিভ করামাত্রই বলে,
‘কে বলছেন?’
‘আমি সিমা।’
‘কেন কল করেছ তুমি? তোমার জন্য আমার ভাই হারিয়ে গেছে। তোমাকে তো আমি,,’
‘তোমাকে আর এত নাটক করতে হবে না। আমি সব জানি।’
‘কি,,কি জানো তুমি?’
‘তোমার ভাই যে স্মৃতি হারানোর নাটক করেছে সেটা আমি জেনে গেছি। আর তুমি এবং তোমার মাও যে এসবে জড়িত সেটাও আমি নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি।’
‘ও আমি বুঝতে পারছি এখন তুমি নিজের দোষ ঢাকতে আমাদের উপর দোষ দিচ্ছ!’
সিমার সব ধৈর্যের সীমা অতিক্রম করে। সে এক প্রকার হুংকার দিয়ে বলে,
‘চুপ, আর কোন মিথ্যা কথা নয়। আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলেছি। ইহানের রিপোর্ট বলছে ও একদম সুস্থ। ভালোয় ভালোয় তোমার ভাইয়ের সাথে আমার যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দেও। নাহলে কিন্তু তোমার বাবা মিস্টার রায়হান খানের কানে সব কথা তুলব।’
ইনায়া খুব ভয় পেয়ে যায়। কারণ তার বাবার কানে সব কথা উঠলে অনেক বড় সর্বনাশ হয়ে যাবে। তাই ইনায়া বাধ্য হয়ে সিমাকে বলে দেয় ইহান এখন কোথায় লুকিয়ে আছে।
১৬.
বিছানায় আরামসে ঘুমিয়ে ছিল ইহান। আচমকা চোখে পানির ছিটকা অনুভব করতেই তার ঘুম ভেঙে যায়। চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে বসে ইহান। ভালো ভাবে সামনে তাকাতেই দেখতে পায় সিমাকে। প্রথমে মনের ভুল মনে করে। তবে বারকয়েক চোখ ডলেও সিমাকেই নিজের সামনে কা’টে। অতঃপর স্বপ্ন মনে করে নিজের হাতে চিমটিও কা’টে। কিন্তু ফলাফল একই।
ইহানের এমন কাণ্ডে সিমা হেসেই দেয়। বলে,
‘আমি আপনার মনের ভুল বা স্বপ্ন নই, আমি বাস্তব।’
ইহান হতবাক হয়ে যায়। সিমাকে প্রশ্ন করে,
‘তুমি এখানে এলে কিভাবে? আমার ঠিকানা তো তোমার জানার কথা নয়।’
‘বলছি বলছি সব বলছি। আগে একটু ওয়েট করুন। আপনি কি ভেবেছিলেন আপনি আমার সাথে স্মৃতি হারানোর অভিনয় করবেন, আমি কিছু বুঝবোও না আর সেই সুযোগে আপনি হারিয়ে যাওয়ার নাটক করে আমাকে আপনার জীবন থেকে বের করে দেবেন? সবটা কি এতোই সহজ? আমি সিমা। আমাকে হারানো এত সহজ নয়। ভালোয় ভালোয় আমার সাথে ফিরে চলুন। নাহলে আপনার বাবার কাছে সব সত্য প্রকাশিত করে দেবো।’
ইহান বিরক্ত হয়ে বলে,
‘যা করার করো তুমি। কিন্তু আমি তোমার সাথে সংসার করতে মোটেই ইচ্ছুক নই। তোমাকে দেখলেই আমার ঘৃণা লাগে। আমি সবসময় নিজের জন্য সুন্দরী বউ চেয়েছি। সবসময় স্বপ্ন দেখেছি আমার বউ হবে পরির মতো সুন্দরী। সেখানে তোমার মতো একটা কালো ভূতকে বিয়ে করতে হয়েছে ছি!’
কথার আঘাত এই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আঘাত। যা মুহুর্তেই ভেঙে চূড়ে শেষ করে দেয় মানুষকে। ইহানের অবজ্ঞামূলক কথা শুনে সিমাও অনেক বেশি আঘাত পায়। বলে,
‘ঠিক আছে আমাকে আপনার মানতেও হবে না। চলুন কালই আমরা ডিভোর্সের আবেদন করব। তারপর আদালত হয়তো আমাদের কিছু দিন সময় দেবে। সেই ক’টা মাস একসাথে থেকে নাহয় আমরা চিরকালের আলাদা হয়ে যাবো। তখন আপনি একটা ডানা কা’টা পরিকে বিয়ে করে আনবেন।’
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨