#হৃদয়জুড়ে_তুমি
#পর্বঃ৩
#লেখিকাঃদিশা_মনি
নিজের বরকে টানতে টানতে বাসর ঘরে নিয়ে যাচ্ছে বউ! শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এমনটাই ঘটেছে খান ভিলায়। ইহান বাড়ি থেকে বের হয়ে তার বন্ধুর বাড়ি যাচ্ছিল। এমন সময় সিমা তার সামনে এসে দাড়ায়। ইহান ভ্রু কুচকে বলে,
‘কি হয়েছে? আমার পথ আটকাচ্ছেন কেন?’
‘কোথায় যাচ্ছেন আপনি?’
‘সেটা তোমাকে বলার প্রয়োজন মনে করছি না।’
ইহানের এমন অবজ্ঞা সূচক কথা শুনে প্রচণ্ড রেগে যায় সিমা। নিজের শাড়ির আচল কোমরে বেধে নেয়। ইহানের হাত শক্ত করে ধরে বলে,
‘আমি আপনার স্ত্রী। এই কারণেই আপনি বাধ্য আমাকে বলতে। এক্ষুনি চলুন আমার সাথে। আপনার আজ কোথাও যাওয়া হবে না। আজ আমাদের বাসর হবেই হবে।’
অতঃপর ইহানকে টানতে টানতে বাসর ঘরের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। ইহান অবাক হয়ে যাচ্ছিল কারণ সে সিমার শক্তির সাথে পেরে উঠছিল না৷ সিমা ইহানকে অবাক হতে দেখে বলে,
‘এত অবাক হওয়ার কিছু নেই৷ আমি কুংফু, ক্যারাটে সব জানি। নিয়মিত জিমেও যাই। তাই আপনার থেকে আমার শরীরে শক্তি অনেক বেশি। কালো জন্য অপমান করেছেন তো এখন এই কালো মেয়ের গুণও দেখে নিন।’
ইহানকে বাসর ঘরে নিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে দেয় সিমা। ইহানকে বিছানায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। ইহান তোতলাতে তোতলাতে বলে,
‘কি,,কি করছেন আপনি। আমার দিকে এগোবেন না। দেখুন এটা কিন্তু ভালো হবে না।’
সিমা ইহানকে ধমক দিয়ে বলে,
‘চুপ। একদম চুপ করে থাকুন। আপনাকে তো আমার কোন এঙ্গেল থেকেই পুরুষ মনে হচ্ছে না। কোথায় আমি লজ্জা পেয়ে বাসর ঘরে বসে থাকবো আর আপনি এসে আমার লজ্জা ভাঙ্গাবেন তা নয় আমাকেই আপনাকে টানতে টানতে নিয়ে আসতে হচ্ছে। এখন তো মনে হয় আমাকে নিজের স্ত্রীর অধিকারও আদায় করে নিতে হবে।’
ইহানের গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল। জীবনে এই প্রথম এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল সে। কি করবে সেটাই বোধগম্য ছিল না তার। এমন সময় সিমা তার পাশে শুয়ে পড়ে। ইহান উঠে যাওয়ার চেষ্টা করলে সিমা বলে,
‘খবরদার এখান থেকে এক পাও নড়বেন না। যদি আমার কথা না শোনেন তাহলে কিন্তু আমি নিজের স্ত্রীর অধিকার দেখাবো।’
ইহানের উপর এই কথার প্রভাব পড়ে। ইহান আর ওঠার দুঃসাহস দেখায় না। সিমা ডেভিল স্মাইল দিয়ে নিজের জয় সেলিব্রেশন করে। অতঃপর মনে মনে বলে,
‘এভাবেই ধীরে ধীরে আপনাকে বশ করে নেব। একসময় আপনার পুরো হৃদয়ে নিজের জন্য যায়গা করে নেব। আপনার হৃদয়জুড়ে থাকব আমি।’
৫.
মান্নাত বেগম নিশ্চিন্তে ছিলেন এটা ভেবে যে ইহান হয়তো তার বন্ধুর বাড়িতে গেছে। এই ভেবে সারারাত তিনি শান্তির ঘুম দিয়েছেন। সকালে উঠে তিনি নিচে চলে এসেছেন চা খাওয়ার উদ্দ্যেশ্যে। সোফায় বসে পা দুলিয়ে দুলিয়ে জরিনাকে বলেন,
‘এই জরিনা চা দিয়ে যা। মাথাটা কেন জানি ব্যাথা করছে।’
জরিনার বদলে সিমা চা নিয়ে আসে। মান্নাত বেগম ভ্রু কুচকে ফেলেন। সিমাকে প্রশ্ন করেন,
‘তুমি চা নিয়ে এসেছ কেন? জরিনা কোথায়? আমি তোমার হাতের চা খাব না।’
সিমা তখন বলে,
‘কেন শাশুড়ী আম্মা আমার হাতের চাতে কি কোন অসুবিধা আছে? আমি দেখতে কালো জন্য কি আমার হাতের চাও খাওয়া যাবে না।’
‘যাকে আমি ছেলের বউ হিসেবেই মানি না তার হাতে চা তো দূরে থাক পানি পর্যন্ত খাবো না।’
সিমা মশকরা করে বলে,
‘আপনি না মানলে কি হবে। আপনার ছেলে তো আমাকে মেনে নিয়েছে। কাল রাতে আমাদের বাসরও হয়েছে।’
মান্নাত বেগম যেন ভীমড়ি খান কথাটা শুনে। আতকে উঠে বলেন,
‘বাসর হয়েছে মানে? ইহানের তো কাল ওর বন্ধুর বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল।’
এমন সময় ইহান সিড়ি বেয়ে নিচে নামছিল। মান্নাত বেগম বুঝতে পারেন ইহান তার মানে কোন বন্ধুর বাড়িতে যায়নি। কাল রাতে এখানেই ছিল। মান্নাত বেগম ইহানকে দেখামাত্রই তার কাছে ছুটে গিয়ে বলেন,
‘এটা তুই কি করলি ইহান? এই মেয়েটাকে তোর থেকে দূরে রাখার জন্য আমি কত কি করলাম। আর তুই এভাবে আমার সব কসরত পানি করে দিলি। এই মেয়েটার সাথে বাসরও করে নিলি। এখন এই মেয়েকে আমি এখান থেকে তাড়াবো কিভাবে?’
‘তুমি চিন্তা করো না আম্মু। ঐ মেয়েটার সাথে আমার কিছু হয়নি। আমার রুচিবোধ এত নিচে নেমে যায়নি।’
সিমা এবার অনেক বেশি অপমানিত বোধ করে। রেগে গিয়ে ইহানের দিকে চা ছু*ড়ে মা*রে। ইহানের হাতে পড়ে সেই চা। ইহান আর্তনাদ করে ওঠে। সিমা ক্রোধান্বিত হয়ে বলে,
‘আমাকে নিয়ে ফারদার আর এরকম কথা বলার সাহস দেখাবেন না মিস্টার ইহান খান। আমি সব সহ্য করব কিন্তু নিজের অপমান সহ্য করব না। সাদা চামড়া নিয়ে খুব অহংকার না আপনার। এখন দেখুন আপনার হাত কিভাবে পু*ড়ে গেল। এভাবে আল্লাহ না করুক কোনদিন যদি আপনার পুরো শরীর পু*ড়ে যায় তখন এই সাদা চামড়ার কিন্তু আর কোন দাম থাকবে না। তাই সময় থাকতে বদলে যান। আল্লাহর সৃষ্টিকে অপমান করবেন না।’
ইহান ও মান্নাত বেগম দুজনেই সিমাকে অনেক গালাগালি করতে থাকে। সিমা সেসব অগ্রাহ্য করে নিজের মতো রান্নাঘরে চলে যায়। আজ যেহেতু তার বৌভাত তাই নিজের হাতে সবার জন্য রান্না করবে। এটাই তার উদ্দ্যেশ্য।
৬.
রায়হান খান বাড়িতে আসামাত্রই মান্নাত বেগম তার কানে সিমার নামে বিষ ঢা*লা শুরু করেছেন। সকালের ঘটনাকে টেনে এনে বললেন,
‘এ কেমন মেয়েকে বউ করে আনছ? রূপ তো নেই, তার উপর এরকম শয়তানী করে বেড়াচ্ছে। আমার ছেলেটার হাত পুরো পু*ড়িয়ে দিয়েছে। তুমি আজ এর একটা বিহিত করো।’
রায়হান খান মুচকি হেসে বলেন,
‘তোমাদের আগেই বলেছিলাম সিমার সাথে পাঙ্গা নিতে যাইও না। কিনে তোমরা আমার কথাই শুনলা না। এখন বোঝো কত ধানে কত চাল।’
মান্নাত বেগম কোন প্রতিকার না পেয়ে খেপে যান। রাগে বকবক করতে করতে নিজের রুমের দিকে যেতে থাকেন।
কিছু সময় পরেই সিমা এক কাপ কফি এনে রায়হান খানকে দিয়ে বলে,
‘এই নিন আপনার কফি।’
‘এসব আমি কি শুনছি?’
‘কি ব্যাপারে?’
‘তুমি নাকি ইহানের হাতে গরম চা ছু*ড়ে দিয়েছ। এটা কিন্তু তুমি একদম ঠিক কাজ করো নি।’
সিমা অসহায় মুখ করে বলে,
‘আমি কি করবো বলুন? যখন কেউ আমার গায়ের রং নিয়ে কিছু বলে তখন নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারি না।’
‘একটা কথা মনে রাখবে, রেগে গেলে তো হেরে গেলে। তাই নিজের রাগকে সবসময় নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করবে। ঠান্ডা মাথায় কাজ করবে। এভাবে রেগে গেলে ওরা তোমায় খারাপ ভাববে। তোমাকে আমি নমনীয় ভাবছি না। শুধু অতিরিক্ত রেগে যেও না। যতটা পারো পরিস্থিতি অনুযায়ী রিয়্যাক্ট করবে।’
‘বুঝতে পেরেছি।’
✨
মান্নাত ও ইনায়া একসাথে বসে অনেক কথা বলছে। ইনায়া বলছে,
‘আম্মু আমার তো মনে হচ্ছে না এই আপদ এত দ্রুত বিদায় হবে। ঐ সিমাকে তো কোনভাবেই জব্দ করাই যাচ্ছে না। ‘
‘আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে।’
‘কি বুদ্ধি?’
‘এবার লোহা দিয়েই লোহা কা*টব।’
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨