কৃষ্ণবেণী পর্ব ২৮

0
1047

#কৃষ্ণবেণী
#পর্ব_২৮
#নন্দিনী_নীলা

আয়ান হসপিটালে থেকে বাড়ি এলো উষসীর মৃত্যুর
একদিন পর‌‌ই। বাসার সবার মনে অবস্থা খারাপ।
উষসীর মৃত্যু তে পরিবেশ থমথমে হয়ে গেছে। হঠাৎ মৃত্যু কেউ‌ই মেনে নিতে পারছে না। এখানে সবাই মন মরা থাকলেও আয়ান আছে শান্তিতে নিশ্চিতে। সবার সামনে নিজের নাটক শুরু করে দেয়। কিন্তু বদ্ধ করে আনন্দ উল্লাসে মেতে থাকে। কেউ আর ওর দিকে এতোটা মনোযোগ দিচ্ছে না। এই সুযোগে ও ভালোই মাস্তি করতে পারছে।
উর্মি কে আজ আনতে গেছে জায়ান। ১০ লাখ টাকা চেয়ে কল করেছিল মিহির‌। টাকার দেওয়ার ইচ্ছা নাই। মন মেজাজ খিটখিটে আছে। আজ মিহির কে ধরে কি যে করবে জায়ান জানে না।
দুটি দিন আগেই লোক লাগিয়ে খবর নিয়েছিল কোথায় রেখেছে উর্মি কে। উষসীর মৃত্যু তে দুইদিন কোন কাজে হাত লাগায় নি। উষসীর ফ্যামিলি নিজেদের মতো সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে ওদের হেনস্তা করতে। এদিকে জায়ান এর বিরুদ্ধে কোন একশন নিচ্ছে না। ও নিরুত্তর হয়ে দেখছে আর যা করার সব করছে জায়ানের বাবা। সব কিছুর মোকাবেলা করছে একা। ছেলেকে ও নিজেদের রক্ষা করছে। জায়ানের এমন গা ছাড়া ভাব দেখে উনি নিজেও হতবাক।

জায়ান গন্তব্যে পৌঁছে নিজের লোক দিয়ে জায়গাটা ঘেরাও করে ফেলল। তখনি আরেকটা গাড়ি এসে থামে। গাড়ি থেকে নামে আরিফ।
অতঃপর একজন গার্ড নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল সবাই । জায়ান নির্দিষ্ট রুমে প্রবেশ করে স্তব্ধ। মিহির উর্মির গলায় চাকু ধরে দাঁড়িয়ে আছে। উর্মি ছলছল চোখে ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে।

জায়ান ভ্রু কুঁচকে একবার পেছনে তাকিয়ে কিছু ইশারা করে মিহিরের দিকে তাকিয়ে বলল,” একা তুই আমার সাথে টক্কর দিবি?”

ভয়ে মিহিরের কপাল বেয়ে ঘাম পরছে। মিহির শুকনো ঠোঁট জিভ দিয়ে ভিজিয়ে বলল,” টাকা দিন। আমি উর্মি কে ছেড়ে দিব। আর কিছুই না। আপনি লাস্ট বার মুখের কথায় টাকা দিয়ে দিলে আমাকে আর এই কাজ করতে হতো না।”

” উর্মির পিছু ছাড়তে টাকা দিছিলাম। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি তুই টাকা নিয়ে ওর পিছু ছাড়লেও ও তোকে ভুলে নাই। তোর মতো শয়তানকে মনে পুষে রেখেছিল। এজন্য লাস্টে টাকা দেইনি। যাতে এমন ভুল করে তুই উর্মির চোখে নিজের স্বরুপ খুলতে পারিস। তুই আসলে কেমন তা তো আর আমার বোন জানতো না তোর মতো কাপুরুষ কে ভালোবেসে কষ্ট পাচ্ছিল। আমি আসলে নিজেই তোকে ব্যবহার করেছি। তুই কি ভেবেছিলি‌ আমার বোনকে আমার চোখের আড়ালে কিডন্যাপ করে সাহসী হয়ে গেছিস? নো নেভার। আমি চেয়েছি বলেই তুই এই কাজে সফল হয়েছিল।”

মিহির নিজেকে যথেষ্ট সাহসী দেখানোর চেষ্টা করে বলল,,” টাকা কোথায়?”

জায়ানের পেছনের লোকটা হঠাৎ একটা লাঠি ছুড়ে মারলো মিহিরের মাথায়। মিহিরের হাত থেকে চাকু পরে গেছে ও উল্টো পরে যায়। উর্মি ছাড় পেতেই দৌড়ে জায়ান কে জড়িয়ে ধরে।
আরিফ দৌড়ে গিয়ে পরে থাকা মিহির কে টেনে তুলে এলোপাথাড়ি ঘুসি মারতে লাগে।
মিহির মার খেয়ে আর্তনাদ করছে শুধু জায়ান উর্মির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
” ঠিক আছিস তুই?”

উর্মি মাথা নিচু করে সরে দাঁড়ালো।

” সরি ভাইয়া আমি মানুষ চিনতে ভুল করেছিলাম। আমি ওকে চিনতেই পারিনি। ও এমন ঘৃণ্য মন মানসিকতার ভাবতেও পারিনি।” বলেই ঠুকরে কেঁদে উঠল উর্মি।
জায়ান উর্মির চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বলল,” কাঁদিস না আমি আছি তো।”

উর্মি আরিফের দিকে তাকিয়ে দেখল রেগে আরিফ মিহিরকে মরছে। উর্মি কাঁদতে কাঁদতে লজ্জা বাইরে চলে এলো। গার্ড কে উর্মির পেছনে পাঠিয়ে দিলো জায়ান।
জায়ান আরিফকে অনেক কষ্টে মিহিরের থেকে ছাড়িয়ে নেয়। আর গার্ড দের কাছে মিহিরকে রেখে চলে আসে। মিহির মার খেয়ে চিৎকার করছে শুধু।
ওর চিৎকার এ রুমটা কেঁপে কেঁপে উঠছে।
__________________________

আরিফ আর উর্মির সামনে গেল না। নিজের গাড়ি করে বেরিয়ে গেছে। উর্মি গাড়িতে হেলান দিয়ে কাঁদছে। জায়ান উর্মি কে নিজের মতো কাঁদতে দিয়েছে। ওর এখন কাঁদা দরকার। মনটা হালকা হবে এতেই। ওই জানোয়ার টাকে মন থেকে মুছতে কান্না দরকার।
বাসায় এসে উর্মি আরেকটা শক খেলো। উষসীর এমন অবাঞ্চিত মৃত্যুর খবর শুনে ও আরো ভেঙে পরে। ওই শয়তান মিহিরের জন্য উষসী শেষ দেখাটাও পেল না। উর্মি পাগলের মতো কাঁদছে। এতো কষ্ট হচ্ছে বুকের ভেতর ও সহ্য করতে পারছে না। মৃত্যু, ঠকানো সব মিলিয়ে ও অসুস্থ হয়ে পরে।
তৃষ্ণা উর্মির এমন বেহাল দশা দেখে নিজেও উর্মির সাথে কাঁদছে। জেসমিন বেগম সহ পরিবারের সবাই এই দুঃসময়ে উর্মি কে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেয়ে একটু শান্তি অনুভব করছে।

আয়ান উর্মিকে জড়িয়ে ধরে ন্যাকা কান্না করছে। যা জায়ান ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারলো না। সবাই ভাবছে আয়ান উষসী কে হারিয়ে সত্যি ভেঙে পরেছে।

এদিকে তৃষ্ণা চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে আয়ানের দিকে। আয়ানের কান্না আহাজারি দেখে ও স্তব্ধ। উষসী ভাবিকে আয়ান এতো ভালোবাসতো
যে সারাদিন দরজা বন্ধ করে রুমে পরে থাকে। আবার এমন আর্তনাদ করে কাঁদে। ছেলে মানুষ কে ও কাঁদতে খুব কম দেখেছে। এই আয়ান প্রথম যে তার ব‌উয়ের জন্য দিন রাত এক করে কান্নাকাটি করছে। এতো ভালোবাসলে অন্য নারীর দিকে খারাপ দৃষ্টি দেয় কীভাবে?
সব ওর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।

জায়ান তৃষ্ণা কে টেনে রুমে নিয়ে এলো। তৃষ্ণা আয়ানের ভাবভঙ্গি দেখছিল হা করে তখনি জায়ান টেনে তৃষ্ণা কে রুমে নিয়ে আসে।
তৃষ্ণা জায়ানের থেকে হাত ছাড়িয়ে বলে,” কি হয়েছে? আমাকে এভাবে টেনে আনলেন কেন?”

জায়ান গম্ভীর গলায় বললেন,” তুমি আয়ানের দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলে কেন? ওমন করে তো কখনো আমার দিকে ও তাকাও নাই‌।”

তৃষ্ণা ফট করেই মজা করে বলে উঠল,” আপনাকে আর আপনার ভাইকে দেখা তো একি কথা।”

জায়ান তৃষ্ণার কথা শুনে রেগে তৃষ্ণার কোমর শক্ত করে চেপে ধরে বললেন,” কি বললে?”

তৃষ্ণা শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে পরেছে। জায়ানের হাতের চাপে ও ব্যথায় মৃদু আর্তনাদ করে উঠে। আর বলে,” আমি তো মজা করেছি। আমি তো অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। ভাবির প্রতি এতো ভালোবাসা তো ভাবি থাকতে দেখি নাই। হঠাৎ এতো ভালোবাসা কোথা থেকে উদয় হলো?”

” মজা করেও কখনো আমি ছাড়া অন্য পুরুষের দিকে তাকিয়ে থাকবে না ওমন করে। যত তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে। আমি কিন্তু আমার জিনিস এক ইঞ্চিও শেয়ার করতে পছন্দ করি না। আর সেটা যদি হয় আমার অতি প্রিয় মানুষ তাহলে তো নয়‌ই।”

তৃষ্ণা জায়ানের বুকে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল,” এই জনমে আমি শুধু আপনার‌ই। পরের জন্ম বলে কিছু নাই। যদি থাকত। তাহলেও আমি উপর‌ ওয়ালার কাছে চাইতাম আপনাকে‌ই যেন সে জন্মেও আমার স্বামী করে পাঠান।”

জায়ানের হাত বাঁধন আলগা হয়ে এলো। এবার আলতো হাতে ধরলো। যে স্পর্শে আছে অপরিসীম আদর,ভালোবাসা। নেই কোন হিংস্রতা। জায়ান মাথা নিচু করে আনলো। একহাতে তৃষ্ণার কাঁধে থেকে চুল সরিয়ে কাঁধ উন্মুক্ত করল। অধর ছুঁইয়ে গাঢ় স্পর্শ দিতে লাগল। তৃষ্ণা সারা শরীর ঝাকুনি দিয়ে উঠল। তৃষ্ণা চোখ খিচে বন্ধ করে থেকে থেকে কেঁপে উঠছে। দুহাতে জায়ানের শার্ট খামচে ধরে আছে। জায়ানের স্পর্শে নিজের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে। নিজেকে শক্তি শূন্য লাগছে। নিজের সমস্ত ভার জায়ানের বক্ষস্থলে ছেড়ে দেয়।
__________________________

একমাস পর।
আয়ান ও ওর পরিবারের নামে মামলা করেছে উষসীর পরিবারের লোক। অদ্ভুত ভাবে জায়ানের নামে করেনি। এখন আয়ান আর আয়ানের বাবা দুজনেই পলাতক হয়ে ঘুরছে। দুজনের রেষারেষি মধ্যে একজন ও এবার ইলেকশনে জয়ী হতে পারে নি। মাঝখানে দিয়ে নতুন একজন পাশ করে গেছে।
আয়ান ওর বাবাকে বলেছে,” বাবা জায়ান তলে তলে ওই দলের সাথে হাত মিলিয়েছে। দেখ না ওরা তোমার আর আমার নামে মামলা করল কিন্তু জায়ানের নাম দিলো না। এতে রহস্য আছে। জায়ান ইচ্ছে করে তোমাকে জিততে দেয়নি। ও চাইলেই তোমাকে জেতাতে পারতো। ”
বাপ বেটা এখন পলাতক হয়ে ঘুরছে।
আর এই সুযোগে আয়ান বাবার কাছে জায়ানের হয়ে নিন্দা করে যাচ্ছে। জায়ান কে একদম মন থেকে উঠিয়ে দিচ্ছে আয়ান। সবার চোখে জায়ান কে খারাপ প্রমাণ করাই ও মুখ্য উদ্দেশ্য।

#চলবে…..

আমার সমস্ত ভালোবাসা পাঠকদের জন্য তাই পাঠকদের জন্য গল্প লিখে ফেললাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here