#কৃষ্ণবেণী
#পর্ব_২৫
#নন্দিনী_নীলা
উর্মির সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছে মিহির। উর্মি এই জায়গায় মিহির কে দেখে বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে গেছে।
অবাক চোখে মিহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।
উর্মি মিহির কে দেখেই গলগলিয়ে চোখের জল ছেড়ে দিলো। চেয়েও কান্না থামাতে পারছে না। কত দিন পর মিহির কে দেখলো। প্রিয় মানুষকে চোখের সামনে দেখে নিজেকে দূর্বল করে ফেলল। মিহির সেই সুযোগ টাই কাজে লাগালো। উর্মির চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বারবার করে ক্ষমা চাইতে লাগলো। উর্মি কান্না থামিয়ে মিহির কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে আছে মিহিরের দিকে। মিহিরের বিহেভিয়ার ওকে চমকে দিচ্ছে। তাকে অপরিচিত লাগছে।
মিহির উর্মির তাকানোর ভঙ্গি দেখে থতমত খেয়ে গেল।
নিজেকে ধাতস্থ করে বলল,,” ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন?”
উর্মি বলল,” কে তুমি? মানুষটা পরিচিত লাগলেও বিহেভ অপরিচিত লাগছে!!”
” তোমরা মেয়েরা পারো ও বটে। পাত্তা না দিলেও অবাক হও দিলেও অবাক হও।”
” মানে!”
” মানে এখন আমি এখানে আছি তোমার চোখের জল মুছিয়ে দিচ্ছি। দেখে কি অবাক হওনি?”
” হয়েছি। হওয়াটা কি অস্বাভাবিক?”
” তা নয়। কিন্তু তোমার এখানে আমাকে দেখে খুশি হওয়া উচিত ছিল।”
” তোমাকে দেখে আমি খুশি কেন হবো? তুমি কি আমায় ভালোবাসো বলতে আসছো যে খুশি হবো।”
” তার জন্য ও ত আসতে পারি।”
” তোমার ওই চোখে আমার জন্য একফোঁটা ও ভালোবাসা নাই।” তাচ্ছিল্য করে হাসলো।
বলতে বলতে উর্মি আরিফের বলা কথাটা মনে করল, আরিফ বলেছিল আমার চোখে নাকি তার জন্য শুধুই বিরক্ত দেখতে পায়। আমিও তো মিহিরের চোখে বিরক্তের আভাস দেখতে পাচ্ছি।”
মিহির ওকে আরো চমকে দিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে প্রপোজ করে বসলো। উর্মি বুঝতে পারছে না কি করবে।মিহির এসব কি করছে। হঠাৎ এসে এমন অদ্ভুত বিহেভ করছে কেন?
” মিহির কি হচ্ছে এসব। তুই এখানে কি করছো আর এসব কেন বলছো?”
মিহির শুধু বলছে,” I want to marry you. will you marry me?”
উর্মি হতবিহ্বল চোখে মিহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। মিহির বারবার জিজ্ঞেস করছে।
উর্মির খুশি লাগছে সাথে সন্দেহ হচ্ছে।
” হঠাৎ এতো ভালোবেসে ফেললে? যে প্রপোজ করতে বান্দরবান চলে আসছো?”
মিহির মলিন মুখ করে উঠে দাড়ালো। আর বলল,” আমি তোমাকে সেই প্রথম থেকেই ভালোবাসতাম উর্মি।”
উর্মি অবাক চোখে বলল,” তাই তাহলে আমি যখন তোমার পেছনে পাগলের মতো ঘুরতাম তখন কেন আমাকে গ্রহণ করলে না। বারবার তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে ফিরিয়ে দিতে। আজ যখন আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে মেনে নিয়েছি তখন কেন ভালোবাসার প্রস্তাব নিয়ে এখানে ছুটে এলে? তোমাকে আমার সন্দেহ হচ্ছে কেন বলোতো মিহির।”
মিহির খুকখুক করে কেঁশে আমতা আমতা করতে লাগে।
” কি হলো উত্তর দাও। আর তোমার মনের আসল মতলব আমাকে বলো। আমি তোমাকে ভালোবাসি তোমার উপর দূর্বল বলে এই্ না যে বানানো কাহিনী এসে বলবে আর আমি বিলিভ করে নিব।”
মিহির কপালের ঘাম মুছে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে বলল,” আমি কিছু বলতে পারব না উর্মি কিন্তু এটা সত্য আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
” এই মিথ্যা কথাটা আর বলো না। তুমি আমাকে না আগে ভালোবাসতে আর না এখন ভালোবাসো। তাই দয়া করে মিথ্যা কথা বলে আর নিজের পাপ বাড়িও না সত্যি টাই বলো।”
মিহির মাথা নিচু করে বলল,” তোমার হবু বরের প্রতি তোমার ভালোবাসা জন্ম নিয়েছে এজন্য এখন আর আমার ভালোবাসা তোমার কাছে সত্য লাগছে না।”
” দয়া করে বলো কেন এমন করছো। নাহলে আমি কিন্তু জায়ান ভাইয়া কে সব বলে দিব।”
মিহির ভয় পেয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল,” তোমার ভাইয়ের জন্য আমি তোমার ভালোবাসা গ্রহণ করিনি। সব সময় ইগনোর করে গেছি।”
” হোয়াট কি সব বলছো?”
মিহির নরম সুরে সব খোলে বলল। উর্মি সব শান্ত গলায় শুনলো তারপর কথা শেষ হতেই মিহির বলল,” তোমার ওই গুন্ডা ভাই আমাকে থ্রেট দিয়ে সব সময় তোমার থেকে দূরে রেখেছিল এমন কি টাকার লোভ ও দেখিয়েছিল আমি নেই নি। আমি কি টাকার জন্য আমার ভালোবাসা বিক্রি করব বলো।”
” ও আচ্ছা তাই। তাহলে আমাকে এসব আগে না বলে আজ বলছো কেন? এতদিন তো ভাইয়ের কথাই শুনেছো আজ কেন তার অবাধ্য হয়ে কেন ভালোবাসি বলতে আসলে।”
মিহির বলল,” তখন আমি তোমার কথা ভেবে তোমায় ইগনোর করতাম। ভেবেছিলাম তুমি আমার কাছে সুখি হবে না। আমি তোমার থেকে দূরে থাকলেই তোমার মঙ্গল। কিন্তু এখন আর পারছি না। অন্য কারো সাথে তোমার মেলামেশা দেখে আমি মানতে পারছি না। এজন্য সব বাধা উপেক্ষা করে আমি তোমার কাছে ছুটে এসেছি আর তোমার ভাইয়ার আসল রুপ তোমাকে দেখাতে এসেছি।
যে সে কতোটা স্বার্থপর। নিজের বোনের সুখের কথা সে ভাবেনা। ওমন ভাইয়ের জন্য তুমি কখনোই সুখের মুখ দেখবে না।”
উর্মি রাগে ফুঁসতে মিহিরের কথা শেষ হতেই উর্মি ঠাস করে মিহিরের গালে চর মেরে বসলো। মিহির হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে পরেছে। আচমকা আঘাতে ও স্তব্ধ। উর্মি ওর গায়ে হাত তুলবে ও কল্পনাতেও ভাবেনি।
উর্মি এগিয়ে এসে আরেকটা থাপ্পড় মেরে বলল,” আমার ভাই কে নিয়ে আর একটা বাজে কথা বললে থাপ্পড়িয়ে কথা বলার মুখ বন্ধ করে দিব। আমার ভাই আমার সুখের পথে কখনো বাধা হবে না আমি জানি। আর তুমি আমার মনে ছিলে ভালোবাসা ছিলে এতো দিন কিন্তু আমার ভাই কে নিয়ে এই কথা গুলো বলে নিজের সেই জায়গাটা নিজেই হারালে। চলে যাও আমার চোখের সামনে থেকে কখনো আসবে না আর।”
বলেই উর্মি গটগট করে চলে গেল। মিহির স্তব্ধ হয়ে চলে গেল। দুইটা থাপ্পড় খেয়ে ওর চোখে মুখে রাগে লাল হয়ে উঠেছে। তখনি জোভান দৌড়ে এসে বলল,” উর্মি তোমায় মারলো কেন কি করছো ওকে।”
” ও নিজের ভাইকে নিয়ে আমার সাথে ঝগড়া করলো। ”
” ভাইয়ের আসল রুপ তো ও জানে না এজন্য এমন করেছে তুমি ভুল বুঝো না। উর্মি জায়ান ভাইকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। তাকে নিয়ে খারাপ কথা বলেছো বলেই এমন করেছে। কিন্তু যখন ভাইয়ার রুপ ওর চোখের সামনে চলে আসবে তখন ও নিজেই তোমার কাছে ফিরে আসবে। হাল ছেড়ো না।”
মিহির রাগ গজগজ করতে করতে চলে গেল।
_________________________
উর্মি নিজের রুমে বসে কাঁদছিল তখন আরিফ দরজা পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো। ভেতরে উর্মির কান্নার আওয়াজ পেয়ে কৌতুহল নিয়ে ভেতরে যাওয়ার জন্য দরজায় নক করে।
উর্মি চমকে চোখ মুছে ভেতরে যেতে বলে।
” আপনি কাঁদছিলেন?”
আরিফ কে দেখেই উর্মির মেজাজ আরো গরম হয়ে উঠে,” আপনি আবার লুকিয়ে আমার কাজ দেখছিলেন।”
” জি না। আমি বাইরে যাচ্ছিলাম তখন আপনার গুনগুনিয়ে কান্নার শব্দ পেলাম। কাঁদছিলেন কেন? বিয়ে তো ভেঙে দেব বলেছি।”
” আমার ইচ্ছে হয়েছে কেঁদেছি। আপনি একজন কে কাঁদতে দেখলেন আর জিজ্ঞেস করতে চলে এলেন কেন জানেন না আমি আপনাকে অপছন্দ করি।”
আরিফের মুখটা চুপসে গেল। সরি বলে বেরিয়ে এলো রুম থেকে। উর্মি আরিফের চুপসে যাওয়া মুখটা দেখে অজান্তেই কষ্ট পেল।
এভাবে বলাটা উচিত হয়নি। উনি তো আমার কথা ভেবেই এসেছিল। উর্মি পেছন ডাকতে চেয়েও ডাকল না। দরজা আটকে রুমে চলে গেল।
_________________________
আয়ান কাঁধ আর কোমর ব্যথায় বিছানা থেকে উঠতে পারছে না। উষসী কে অনেক বার বলল একটু মলম লাগিয়ে দিতে কিন্তু উষসী ফোন টিপছে। ওর দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না।
ডিনার ওরা রুমেই করেছে। উষসী খুড়িয়ে আর বাইরে গিয়ে খাবে না। আর আয়ান উষসীকে নিয়ে সারা পথ পাড়ি দেওয়ার ফলে ওর শরীর ব্যথায় টান টান করছে।
” উষসী তোমার জন্য আমি এতো কষ্ট করলাম আর তুমি আমার দিকে ফিরে তাকাচ্ছো না।”
” এই সত্যি করে বলোতো তুমি কি কু মতলব এঁকেছো যার জন্য এমন ভালো আচরণ করছো।”
” আমি ভালো হই সেটা তোমরা কেন বিশ্বাস করতে চাও না। আমি ভালো হই সেটা কি চাও না?”
” তুমি ভালো হলে আমার থেকে খুশি কর কেউ হতো না।”
” আমি সত্যি পরিবর্তন হয়েছি। আমি অনুতপ্ত বিলিভ কর আমার কথা।”
উষসী বিরক্তিকর চোখে তাকিয়ে ফোন রেখে আয়ানের কাঁধে মলম লাগিয়ে দিলো।
” হয়েছে এবার মিথ্যা কথা বন্ধ করো।”
আয়ান উষসীর হাত ধরে টেনে নিজের খুব নিকটে টেনে আনলো। আর বলল,” বিলিভ কর।”
” উফ ছাড়ো এমন জাপ্টে ধরলে কেন? দেখ আমার কাছে আসার চেষ্টা করবে না একদম। তোমার মতো নোংরা মানুষের স্পর্শ আমি সহ্য করতে পারি না।”
আয়ান জোর করেই স্পর্শ করতে চাইলো আর ফিসফিস করে বলল,,” আমি ভালো হয়ে গেছি। এভাবে দূরে সরিয়ে দিও না। আজকের পর হয়তো আর কখনোই এতো কাছে পাবেই না আমাকে। আসো একটু আদর করি তোমায় অনেক দিন হলো তোমাকে কাছে পাই না।”
উষসীর গা গুলিয়ে আসছে আয়ানের স্পর্শে। চোখ ফেটে জল গড়িয়ে পরছে। মনে একটু জায়গা তৈরি হচ্ছিল কিন্তু আজকের এই বিহেভ এর পর আয়ান জন্মের মতো উষসীর মন বিষিয়ে দিলো।
উষসী চোখ ভর্তি জল নিয়ে বলল,” এই জন্যে এতো ভালো আচরণ করছিলে তাই না। ছিহ আমিও ভাবতে বসে ছিলাম তুমি বোধহয় ভালো হয়ে যাচ্ছ। কিন্তু আমি ভুলে গেছিলাম তোমার মতো পুরুষ কোনদিন ভালো হতে পারে না। তুমি শরীরের চাহিদা ছাড়া আর কিছুই বুঝো না। আজ তুমি যা করলে এর পর আর কোনদিন তুমি আমার চোখে ভালো হতে পারবে না আয়ান মনে রেখো। আমি যতোদিন বেঁচে আছি তোমাকে ক্ষমা করব না।”
” উষসী বেবি আজকের পর তুমি আমাকে ঘৃণা করার জন্য ও এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে না। জায়ানের সাথে হাত মিলিয়ে আমাকে শাস্তি দিয়েছিলে তাই না। তার শাস্তি তুমি নিজের জীবন উৎসর্গ করে পাবে।”
উষসী আয়ানের কথা শুনে যা বুঝার বুঝে গেল। ও আয়ানের থেকে ছাড়া পেতে ছটফট করতে লাগল। কিন্তু আয়ানের থেকে ছাড়া পেতে পারলো না।
আয়ান উষসীর গালে হাত দিয়ে বলল,” তোমাকে মারতে আমার খুব কষ্ট হবে উষসী। আমি তোমায় পছন্দ করতাম। তোমার সঙ্গ আমার খুব ভালো লাগে। তুমি হীন আমি একা খুব কষ্টে থাকবো?”
উষসী ডুকরে কেঁদে উঠলো,” আমায় মেরো না। ছেড়ে দাও আমায়। আমি অনেক দূরে চলে যাব। কোনদিন তোমার কোন ব্যাপারে নাক গলাবো না।”
” জায়ান কে ডাকো তোমার পুরোনো আশিক ওই তোমায় বাঁচাবে আমি না।”
#চলবে……
( আসসালামু আলাইকুম। সবাই যথার্থ মন্তব্য করবেন। ধন্যবাদ)