#কৃষ্ণবেণী
#পর্ব_১৫(১)
#নন্দিনী_নীলা
বকুল তৃষ্ণার রুমে উঁকি মেরে দেখেছে বুবু আর দুলাভাই কথা বলছে ও আর ভেতরে ঢুকেনি। সবাই যেহেতু ঘুম আর কাজে লোকরা কাজে ব্যস্ত ও সারা বাসা চক্কর দিয়ে চঞ্চল পায়ে বাইরে চলে আসে। সবাই সবার কাছে ব্যস্ত ছিল এজন্য কেউ আর ওকে এতটা লক্ষ্য করে নাই। ও নানান পদের গাছ দেখে তার সাথে ফুল গাছ ও আছে। বকুল নিজের লম্বা চুলের বেনি নাচাতে নাচাতে এগিয়ে পুকুর দেখতে পায়। সেটা ওর দৃষ্টিতে ছোট একটা পুকুর মনে হলেও সবার কাছে সুইমিং পুল। এতো পরিষ্কার সচ্ছ পানি দেখে ও তো অবাক। কারণ পুকুরের পানিতে এত পরিষ্কার হয় না এটা এতটাই পরিষ্কার যে ও নিজের প্রতিবিম্ব আয়নার মতো পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে। আগ্রহী চোখে তাকিয়ে নিজের সম্পূর্ণ শরীর দেখার জন্য ও আরো এগিয়ে যায় সুইমিং পুলের দিকে ওর খেয়ালই থাকে না ও কখন সুইমিং পুলে ঠাস করে পরে যায়। ভোরের ঠান্ডা পানিতে পরে ওর গা শরীর কাঁপতে থাকে ও চিৎকার করে ওঠে। কয়েকজন গার্ড চিৎকার শুনে দৌড়ে এসে বকুলের এই অবস্থা দেখে হতভম্ব হয়ে যায়।
এদিকে তৃষ্ণা একটা কাজের মেয়েকে নিয়ে বাইরে আসে। ও এই বাসায় আসার পর এখন অব্দি বাইরে আসেনি। এই বাসার ঐ একটা রুমের চার দেয়ালে থেকে কখনো বাইরে আসার আগ্রহ অবধি করেনি। আর ওর বোন কিনা এক দিনে বাইরে চলে এসেছে। বাইরে একজন গার্ডকে জিজ্ঞেস করলে বলে দেয় ঐদিকে গেছে। তৃষ্ণা সেদিকে যেতে থাকে কিছু দূর যেতেই কয়েকজন গার্ডকে দেখতে পায় তারা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সামনে তার বোন দাড়িয়ে আছে ভেজা শরীরে পেছনে একটা ডোবা।
বুঝতে আর বাকি থাকে না বোন তার এই ডোবায় গোসল করেছে হয় সেচ্ছায় না হলে অনিচ্ছায়।
বকুল ওর বুবু কে রাগী চোখে নিজে দিকে এগিয়ে আসতে দেখে ভয় পেয়ে যায়। এভাবে যে ধরা পরে যাবে কে জানতো। চুপি চুপি এসে ঘুরে চলে যাবে ভেবেছিল। কিন্তু এভাবে গিয়ে ধরা খাবে কে জানতো।
“তুই এখানে কি করছিস?”
বকুল শুকনো ঢোক গিলে বলে,”বুবু আসলে আমি না একটু বাসাটা ভালো করে দেখতে আসছিলাম। এখানে এসে না আমি ভুল করে পানিতে পরে গেছি পা পিছলে।”
ভেজা শরীরে বকুল কাঁপছে এজন্য আর তৃষ্ণা এখানে দাঁড়িয়ে কিছু বলে না। বোনের হাত ধরে টেনে বাসার ভেতরে নিয়ে আসে। তখন দেখা হয় নিজের শাশুড়ির সাথে তিনি দাঁড়িয়ে আছে ডয়িং রুমে। তিনি বাঁকা চোখে তাকিয়ে আছে তৃষ্ণা আর বকুলের দিকে।
বকুল মাথা নিচু করে তৃষ্ণা কে নিজের জন্য বরাদ্দ করা রুমে গেল।
জেসমিন বেগম ওদের দিকে তাকিয়ে বললেন,” বাসা টাকে নর্দমা বানিয়ে ফেলল।”
” বুবু!”
” আমি এখনো এই বাসার বাইরে গেলাম না। তুই একদিনে বাইরে চলে গেলি? এমন করলে আজকেই তোকে বাড়ি পাঠাই দিমু।”
বকুল কান্না করে দিয়ে বলে,” বুবু তোমারে না বইলা আর কোনখানে যামু না কথা দিলাম। এবারের মতো ক্ষমা কইরা দাও। আমারে বাড়ি পাঠাই ও না। আমি যামু না।”
তৃষ্ণা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
” যা জামা পাল্টে আয়।”
বকুল ওয়াশরুমে চলে গেল। জামা পাল্টে এলো আজ দুই বোন রুমেই খেল। বকুল তৃষ্ণা গল্প করছে তখন উষসী আসে।
” দুই বোন কি করো?”
তৃষ্ণা উষসী কে নিজের রুমে দেখে চমকে দাঁড়িয়ে পরে। উষসী কে পা থেকে মাথা পর্যন্ত অবাক চোখে দেখছে বকুল।
কি সুন্দর সিনেমার নায়িকা দের মতো দেখতে। বকুল উষসীর দিকে তাকিয়ে বলল,” তুমি কি নায়িকা?”
উষসী হেসে বলল,” না তো আমি তোমার বোনের ছোট জা।”
” ওহ আপনে অনেক সুন্দর দেখতে। চুল কি সুন্দর লাল লাল।”
” বাহ তোমাদের দুইবোনের তো লম্বা হেয়ার। একেবারে কুচকুচে কালো।”
” হ কিন্তু আপনের চুল এতো সিল্কি কেমনে আমাগো চুল তো এতো সিল্কি না।”
বকুল চুলে হাত দিয়ে বলল।
উষসী কিছুটা বিরক্ত হলেও প্রকাশ করল না। হালকা হেসে বলল,” প্রতি মাসে স্পা করতে হয় এর জন্য। আরো অনেক কিছু করা লাগে তার জন্য তোমাদের পার্লারে যেতে হবে।”
” আমার বুবু রে নিয়া যাইয়েন।”
” আচ্ছা।”
তৃষ্ণা বকুল কে থামাতে চেয়েও পারল না। উষসী বেরিয়ে যেতেই তৃষ্ণা বকুল কে ধমক দিল।
সময়টা বিকেলের সারাদিন পর জায়ান বিকেলে বাসায় আসে। তৃষ্ণার সেদিকে খেয়াল নেয়। ও বকুলের সাথে আগের রুমে ঘুমিয়ে ছিল। জায়ান শাওয়ার নিয়ে তৃষ্ণার খোঁজ করতে এসে বউকে পায় বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ও চুপিসারে তৃষ্ণাকে নিয়ে চলে যায় নিজের রুমে। তৃষ্ণা ঘুমে মগ্ন। জায়ান তৃষ্ণাকে বিছানায় শুইয়ে কপালে একটা ভালোবাসার পরশ দেয়। তারপর ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরে।
এদিকে হঠাৎ বকুলের ঘুম ভেঙ্গে যায় আর এই দৃশ্য দেখে ফেলে। লজ্জায় চোখ বন্ধ করে থাকে। চলে যেতেই লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে যায়। ওরনা গলায় ঝুলিয়ে নাচতে নাচতে বেরিয়ে আসে রুম থেকে। বকুল হাঁটতে হাঁটতে সেই পাগলের রুমের সামনে চলে আসে। এসেই রুম থেকে গুঙরানির আওয়াজ শুনে থমকে দাঁড়িয়ে পরে। কে আর্তনাদ করছে ও অনুসরণ করে দরজার কাছে চলে আসে। দরজার সামনে বড়ো একটা তালা ঝুলছে।
ও তালা ধরে দরজায় কান পেতে ভেতর থেকে কান্নার আওয়াজ পায় আবার ভাঙার আওয়াজ পায়। মহিলা কন্ঠ। কে এমন করছে? ভয়ে ও শুকনো ঢোক গিলে। ভেতরে মানুষ আছে তাহলে বাইরে এতো বড়ো তালা ঝুলছে কেন?
দরজায় বারি মেরে ডাকতে যাবে তখনি কেউ পেছনে থেকে ওর মুখ সেপে ধরে সরিয়ে আনে দরজা থেকে।
” তুমি এখানে কি করছো?” একজন ফিসফিস করে বলল। বকুল ভয়ে জ্ঞান হারাবে এমন অবস্থা। ঢোক গিলে তাকিয়ে দেখে বুবুর দেওর ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আর চোরের মতো ফিসফিস করে কথা বলছে।
ও চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে বলে,” ঐঘরে কেডা আছে। তারে তালা দিয়া রাখছেন ক্যান? আমি দরজা খোলার চেষ্টা করছিলাম।”
” তাড়াতাড়ি চলো। ভাই এখানে তোমাকে দেখলে সর্বনাশ হবে।”
” আরে কি কন আমি তো উপকার করতে আইছি ছাড়েন আহেন আমার লগে। দুজন মিলা দরজা খুলি। রুমের মহিলা টা না কাঁদতে ছিল।”
জোভান ঢোক গিলে। এই বাঁচাল কে তো চুপ করানো যাচ্ছে না। জোভান পকেটে থেকে রুমাল বের করে বকুলের মুখ বেঁধে দেয়। বকুলের চোখ দুটো রসগোল্লার মতো হয়ে গেছে। ও না কিছু বলতে পারছে না সহ্য করতে পারছে। উমউম করছে। হাত ধরে টেনে জোভান ওকে সরিয়ে নিয়ে আসে।
পাশের দেয়ালের পেছনে দুজনে লুকিয়ে পরে। জোভান আড়াল থেকে তাকিয়ে থাকে আয়ান একটা ইনজেকশনের সিরিজ নিয়ে সেই রুমের সামনে যায়। প্যান্টের পকেট থেকে চাবি বের করে তালা খুলে ভেতরে ঢুকে আবার দরজা আটকে দেয়।
বকুল চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে আয়ানের দিকে। আয়ান কে ও জায়ান ভেবে তাকিয়ে আছে।
জোভান দরজা বন্ধ হতেই বকুল কে নিয়ে ফিরে আসে।
বকুল মুখ খোলার জন্য কতো শত চেষ্টা করেছে অবশেষে জোভান খুলে দেয়। বকুল বড়ো শ্বাস নিয়ে বলে,” আপনে আমার মুখ বাঁধলেন ক্যান?”
” তোমার মতো বাঁচাল মেয়ের মুখ না বেঁধে কি আর চুপ করানোর উপায় আছে? ভাবি এতো শান্ত শিষ্ট তুমি এতো বাঁচাল হলে কি করে?”
বকুল বোকা চোখে তাকিয়ে আছে জোভানের দিকে। মুখ বাঁধার জন্য রাগে ফুঁসছে ও কিছু বলতে যাবে তখন মাথায় আসে বুবু মনে হয় জেগে গেছে। তাই তো দুলাভাই ওইখানে গেছে। আমি বুবুর কাছে যাই না হলে আবার বকা খাব আর আমাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিবে।
বকুল জোভানের দিকে তাকিয়ে বলল,” আপনেরে কিছু কইলাম না। বুবুর লিগা।”
বলেই বকুল দৌড়ে চলে গেল জায়ানের রুমের দিকে।
তৃষ্ণা চোখ মেলে নিজেকে জায়ানের নিকটে ও তার রুমে দেখে বিস্মিত হয়। ঘুমালাম বোনের সাথে উঠলাম স্বামীর বাহুবন্ধনে থেকে। ও জায়ান কে ধাক্কিয়ে উঠে যায়। এ রুমে কখন এলো ও ভাবছে। জায়ান তৃষ্ণার ধাক্কা খেয়ে উল্টো ঘুরে ঘুমিয়ে গেছে তৃষ্ণা দরজা খুলে বাইরে এসে দেখে বকুল দাঁড়িয়ে আছে।
দরজা খুলে বকুল কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। বকুল দৌড়ে এসে তৃষ্ণাকে বলে,” বুবু আমারে একা রেখে চলে এলে কখন আমি কখন উঠে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।”
ঢোক গিলে মিথ্যা কথা বলে বকুল। বুবু কে সব জানাতে ইচ্ছে করছে কিন্তু বকা খাওয়ার ভয়ে বলতে পারছে না।
” আমি নিজেও জানি না কখন এই রুমে আসলাম।”
বকুল অন্যমনষ্ক হয়ে কিছু ভাবছে। তৃষ্ণা সন্দেহ চোখে আছে বকুলের দিকে। না পেরে ধাক্কা দিয়ে বলে,
” কি রে কি ভাবিস?”
“কিছু না বুবু।”বলেই বকুল রুমের ভেতরে যেতে চায়। তৃষ্ণা দরজা আটকে ওকে নিয়ে বাইরে চলে আসে।
বকুল চোরের মতো মুখ করে ওর সাথে যাচ্ছে।
#চলবে…..
#কৃষ্ণবেণী
#পর্ব_১৫(২)
#নন্দিনী_নীলা
আজ শুক্রবার
সকাল থেকে হাঁসফাঁস করছে উর্মি কোথাও দাঁড়াতে পারছে না। জায়ান আজকে মিহির আর ওর মাকে বাসায় আসতে বলেছে। কোনভাবেই উর্মি সেই দাওয়াত ওর কাছে পৌঁছাতে পারে নি। মিহির ফোন রিসিভই করেনি। উর্মি মিহিরের বাসা খুঁজে চলে গিয়েছিল মিহিরের বাসায়। ওর মাকে অনেক বলে রাজি করিয়ে এসেছে। আর ও নিজেকে মিহিরের ফ্রেন্ড বলে পরিচয় দিয়েছে। মিহিরের মাকে বলে এসেছে যেভাবেই হোক মিহির কে নিয়ে যেন শুক্রবার আসে।
এখন উর্মি একটাই টেনশন হচ্ছে উনি কি মিহির কে রাজি করিয়ে নিয়ে আসতে পারবে। যদি আজ না আসে ভাই তো ক্ষেপে যাবে। কি করব আমি?
ভয়ে পাচ্ছে উর্মি না আসলে ভাইয়াকে কি জবাব দেবে ও।
মিহির ওর মায়ের সাথে উর্মি’দের বাসায় সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মিহিরের চোখ দুটো কপালে উঠে গেছে।ও বিস্মিত চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,” মা এটা কোথায় নিয়ে আসলে আমাকে?”
মালেকা বানু হাতের ঠিকানা ছেলের হাতে দিয়ে বলল,,” এই ঠিকানায় তো লেখা আছে। চল ভেতরে যাই।”
মিহির মায়ের হাত ধরে আটকে বলে,” এসব কি? এই ঠিকানা কে লিখে তোমায় দাওয়াত করেছে? সত্যি করে বলো।”
” এখানে দাঁড়িয়ে এসব জিজ্ঞেস করবি নাকি বাসার ভেতরে যাবি।”
” আমাকে ক্ষমা করবে এই বাসায় আমি যাবো না। আর না তোমাকে যেতে দেবো।”
মালেকা বানু কে কিছু বলার সুযোগ দিল না মিহির একটা অটো রিকশা দাঁড় করিয়ে টেনে মাকে নিয়ে বাসায় ফিরে আসলো।
মালেকা বানু ছেলেকে বকছে অনবরত। মিহির বাসায় মাকে উর্মির সব ঘটনা খুলে বলেন। সব শুনে তিনি চিন্তিত মুখে নিজেও উর্মির আসার কথা বলে। মিহির দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের রুমে চলে যায়।
জায়ান উর্মি কে ডেকে পাঠিয়েছে। উর্মি ভয়ে ভীত হয়ে জায়ানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে। মাথা তুলে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না।
জায়ান ধমক দিয়ে বলল,” কোথায় তোমার বন্ধু?”
উর্মি ঢোক গিলে বলে,” ভাই আসলে…
” তুমি আমার থেকে কিছু লুকিয়েছো? আমি আগেই বুঝেছি এবার কারণ টা বলো।”
উর্মি সব খুলে বলে। সব শুনে আয়ান চিৎকার করে ওঠে,” ওই ছোট লোকের বাচ্চা আমার বোনকে ইগনোর করে। ওকে তো আমি…
জায়ান আয়ানকে ধমক দিয়ে থামিয়ে উঠে নিজের রুমে চলে যায়। যাওয়ার আগে বোনের দিকে তাকিয়ে নরম কন্ঠে বলে,” সব আমাকে আগে জানাতে পারতে। মিহির দের জন্য আমি নিজের কাজ ফেলে বাসায় বসে ছিলাম আর তুমি আমায় অপমান করলে।”
উর্মি কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারল না।
জায়ান রুমে আসে। রুমে বকুল আর তৃষ্ণা একসাথে বসে গল্প করছিল। জায়ান তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে বকুল কে বলে,” তুমি উর্মির কাছে যাও।”
বকুল চমকে দাঁড়িয়ে বেরিয়ে আসে। জায়ান তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে বলে,” আমার মাথা টিপে দাও তো।”.
বলেই তৃষ্ণার কোলের উপর মাথা রেখে শুয়ে পরে। তৃষ্ণা হতচকিয়ে উঠে।
“আমার লজ্জা লাগছে আপনি উঠুন।”
“পরপুরুষ তোমার কোলে মাথা রাখে নাই। স্বামীর প্রতি এতো কিসের লজ্জা? চুপচাপ মাথা টিপে দাও।”
তৃষ্ণা জায়ানের চুলে হাত দিয়ে আছে। অনেক সিল্কি চুল ও টেনে না দিয়ে চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
জায়ান তৃষ্ণার কোল থেকে উঠে বসে বলে,” গায়ে শক্তি নাই? এটা কি করছো?”
তৃষ্ণা থতমত খেয়ে বলে,”আপনি এখানে হেলান দিয়ে বসেন। আমি আপনার চুল টেনে দেই।”
তৃষ্ণা খাটে হেলান দিয়ে বসতে বলল জায়ান কে। জায়ান বিরক্তিকর চোখে তাকিয়ে বসলো আর বলল,,” তুমি কি এতোটাই লজ্জা পাও নাকি আমাকে দূরে রাখছো?”
” এটা কেমন কথা আপনাকে দূরে কোথায় রাখছি? আপনি তো আমার কাছেই বসে আছেন?”
“তুমি কি এতটাই অবুঝ? আমি কি বুঝিয়েছি বুঝতে পারছো না।”
তৃষ্ণা ঢোক গিলে বলল,”সত্যি বুঝিনি!”
জায়ান চোখ বন্ধ করে মাথা টিপে দেওয়া ইশারা করলো।
তৃষ্ণা ঢোক গিলে বলল,” আজকে না উর্মি আপুর বিয়ের কথা বলবেন বললেন। আপনি রুমে এসে শুয়ে আছেন কেন তাহলে?”
“যা করতে বলছি তাই করো পাল্টা প্রশ্ন করবে না।”
তৃষ্ণা ঢোক গিলে এগিয়ে আসলো। জায়ানের মুখের সামনে হাঁটু উঁচু করে বসে কপালে আঙুল চালাতে লাগল। দশমিনিট পর জায়ান চোখ মেললো। তৃষ্ণা ওর খুব নিকটে। তৃষ্ণা নিঃশ্বাস ওর মুখে পরছে। জায়ান তাকিয়ে আছে অপলক দৃষ্টিতে ওর দিকে। তৃষ্ণা চমকে হাত থামিয়ে ফেলল। এমন হা করে তাকিয়ে থাকলে কি তার সামনে বসে থাকা যায়। কোলে মাথা রেখে দিয়েছিল অস্বস্তি এখন তাকিয়ে আমায় চোখের দৃষ্টি দিয়েই খু*ন করছে।
“আপনি চোখ বন্ধ করে থাকেন না দয়া করে।”
” কেন প্রবলেম কী?” ভ্রুকটি করে বলল জায়ান।
” আমার লজ্জা লাগছে। আপনি চোখ বন্ধ করুন। নয়তো আমি এভাবে মাথা টিপে দিতে পারব না।
” লজ্জা লাগছে?”
” হুম।”
তৃষ্ণা মাথা নিচু করে বলল।
জায়ান তৃষ্ণার কোমরে হাত রেখে আচমকা টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। তৃষ্ণা থমকে গেছে। চোখ বড়ো সড়ো করে তাকাল জায়ানের দিকে। জায়ানের ঠোঁটের কোনে দুষ্টু হাসি।
জায়ান তৃষ্ণার নাকে নাক ঘষে বলে,” এখনো লজ্জা লাগছে?”
তৃষ্ণা ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে। ওর হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে গেছে। কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে কিছু বলতে চায় বলতে পারে না। ও চোখ খিচে বন্ধ করে বলে,” ছাড়ুন দয়া করে।”
” নো ছেড়ে দিলে তোমার লজ্জা ভাঙাবো কিভাবে? স্বামীর কাছে এসে লজ্জা পাও এটাও একটা বড়ো লজ্জার কথা?”
” কি করবেন আপনি?”
” যা করলে আমার এই লজ্জাবতী বউয়ের লজ্জা ভাঙবে তাই করব।”
তৃষ্ণা কিছু বুঝতে না পেরে ভয়ে ছাড়ার জন্য অনুনয় করতে লাগে। জায়ান তৃষ্ণার ভয়ার্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। যেন মজা পাচ্ছে।
তৃষ্ণা চমকে উঠা গলায় বলল,” আপনি কে?”
জায়ান তৃষ্ণার কোমরে আরো জোরে চাপ দিয়ে নিজের বুকের উপর ফেলে দেয় তৃষ্ণা কে। তৃষ্ণা জায়ানের শার্ট হাতে ধরে আছে।
” আবার আমি কে বলছো? তুমি তো বহুত চালাক মেয়ে। স্বামী রোমান্স করতে আসলে তাকে না চেনা ভান করে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করো।”
আরেকটু ঘনিষ্ঠ হতে যাবে জায়ান তখন বকুলের কন্ঠ শুনে চমকে উঠে দুজনেই। দরজা বন্ধ তাই বকুল ভেতরে যেতে পারে নি। কিন্তু দরজা ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে।
জায়ান বিরক্তিকর চোখে দরজার দিকে তাকিয়ে ছেড়ে দিল। তৃষ্ণা দ্রুত দরজা খুলে দিল।
” কি হয়েছে?”
” বুবু আমার ভয় করছে একা আমার সাথে আয় না।”
” কোথায় যাব? উর্মি আপু কই?”
” সে দরজা বন্ধ করে রাখছে আমি একা কি করব আমার না ভয় করছে আয় না আমার লগে।”
জায়ান কে রেখে তৃষ্ণা বকুল কে নিয়ে বাইরে এলো।
” বুবু দুলাভাই কই?”
” কেন? দুলাভাইয়ের লগে গল্প করবি নাকি?”
বকুল ভয়ার্ত মুখে জোর করে হাসি এনে বলে,” কও না বুবু। আমার না তোমার শাড়ি পরে ভালো লাগছে না আমি এটা পাল্টে ফেলি।”
বলেই বকুল বাথরুমে ঢুকে গেল। তৃষ্ণা অবাক চোখে বোনের দিকে তাকিয়ে ছিল। এই তো দুপুরের বকুল জোর করে কত বলে ওর একটা শাড়ি নিয়ে পরলো। ওর নাকি পরার অনেক ইচ্ছা হয়েছে। এখন তাহলে কি হলো মেয়েটার শাড়ি পাল্টানোর জন্য এতো তাড়াহুড়ো করল কেন? আর এতো ভয় পেয়ে আছে কেন?
আয়ান চোরের মতো মুখ করে হাঁটছিল তখন ধাক্কা খায় জায়ানের সাথে।
জায়ান ভ্রু কুঁচকে আয়ান কে জিজ্ঞেস করে,” হোয়াট হ্যাপেন্ড?”
আয়ান কপালের ঘাম মুছে বলে,” নাথিং।”
বলেই এক প্রকার পালিয়ে যায়। আয়ানের যাওয়ার দিকে জায়ান সন্দিহীন চোখে তাকিয়ে আছে।
জায়ান তৃষ্ণার ব্যবহারে রাগে বাসা ছেড়ে বেরিয়ে আসছিল। তখন একটা কল আসে জায়ানের ফোনে। ও রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে একজন বলে উঠে,” স্যার বড় স্যারের গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়েছে স্যারকে সিটি হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে আপনি দ্রুত চলে আসেন।”
জায়ান স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাবার এক্সিডেন্ট হয়েছে? ও চিৎকার করে মা বলে ডেকে উঠে।
জেসমিন বেগম দৌড়ে বাইরে আসে। জায়ান প্রায় তিন বছর পর উনাকে মা বলে ডেকেছে। উনি খুশি মনে এগিয়ে আসে। উনার চোখ ছলছল করছে আনন্দে।
জায়ান বাবার এক্সিডেন্ট এর কথা জানায়। কিন্তু তার মধ্যে কোন হেলদোল নেই তিনি ছেলে তাকে মা বলেছে এতদিন পর সেই খুশি আছেন।
” আমি কি বলছি শুনতে পাননি?”
জেসমিন বেগম বলেন,” তোমার ড্যাড এক্সিডেন্ট করলে তুমি আমায় আবার মা ডাকবে জানলে কবেই নিজেই তার গাড়ির ব্রেক ফেল করিয়ে এক্সিডেন্ট করিয়ে ফেলতাম।”
” আপনার মাথা গেছে। সরুন আপনি আনন্দ উল্লাস করেন আমি আমার বাবার কাছে যাচ্ছি।”
” আমি আয়ান কে নিয়ে আসছি।”
জায়ান রাগী দৃষ্টি ফেলে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল।
#চলবে…..