#পাশে_থেকো_প্রিয়
#পর্বঃ৫(অন্তিম পর্ব)
#Jhorna_Islam
এমন ভাবে কাঁদতেছো কেন আমিরা?
“তুমি এতো ভালো কেন গো?”
ওমা আমি ভালো? তুমি না বললেতো আমি জানতেই পারতামনা।দেখেছো কারবার আমি যে ভালো আজ পর্যন্ত এই কথা টা আমাকে কেউ বললনা। তুমি ই আমার একমাত্র ক’দর করলে বুঝলে আমিরা?
আমিরা চোখে পানি নিয়ে ও হেসে ফেলে দেলোয়ারের কথা শুনে।
খুব মজা নেওয়া হচ্ছে আমার সাথে তাই না?
ওমা তুমি এটাও বুঝে ফেললে?
আমিরা দেলোয়ারের বুকে হালকা করে ধাক্কা দিয়ে বলে,, তোমার মজা শেষ হলে যাও।আমি এসব গুছাবো।
আমিও থাকি একটু সাহায্য করি বউকে।
খবরদার না।আজ তোমার ছুটি বিশ্রাম নেওয়ার দিন। গিয়ে বিশ্রাম করো। এই সামান্য কাজটুকু আমি নিজেই করতে পারবো।
————————
দিশা মিসেস খেয়া কে একা ও অনেক বুঝায়।মা ভাবিকে একটু ভালোবাসা দিও।নিজের মেয়ের মতো দেখো।আমিতো তোমার পাশে এখন সব সময় থাকিনা।আমার জায়গা থেকে ভাবিকে নাহয় একটু সামান্য জায়গা দিও।ভাবি অনেক ভালো মা।
ভাবি কে কিছু বলার আগে নিজের মাথায় এটা রেখো মা যে তোমার ও একটা মেয়ে আছে। তার ও একটা শ্বাশুড়ি আছে। অন্যর জিনিস দেখে কখনো নিজের ঘরে অশান্তি করো না। তুমি শ্বাশুড়ি হওয়ার আগে কিন্তু আরেক জনের ছেলের বউ ছিলে।
মিসেস খেয়া নিজের মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রয়।
আমার ছেলে মেয়ে গুলো খুব বড় হয়ে গেছে।
দিশা মায়ের কোলে মাথা রাখে।তারপর মুখের দিকে তাকায়। সন্তানরা কখনো মায়ের কাছে বড় হয়? আমি আর ভাইয়া সেই ছোট্ট ই আছি তোমার কাছে।
মিসেস খেয়া মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। সবই তো বুঝলাম মা। কিন্তু তুই এতো শুকিয়ে গিয়েছিস কেন? খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করিস না তাই না।
মায়ের কথায় দিশা একটু লজ্জা পায়। এইদিকে ওইদিকে চোখ ঘুরিয়ে আমতা আমতা করে বলে,,,ইয়ে মানে মা তোমাকে একটা কথা বলা হয়নি।
কি কথা?
আসলে,,,
বল, এতো সংকোচ করছিস কেন মায়ের কাছে বলতে?
দিশা এবার চোখ বন্ধ করে বলে উঠে,, তুমি নানু হবে মা।
কিইইই?
মিসেস খেয়া চিৎকার করে উঠে। উনার চিৎকারে দিশা উঠে বসে। দেলোয়ার আর আমিরা রুমে ছুটে আসে।
দেলোয়ার মায়ের কাছে এসে জানতে চায় কি হয়েছে মা? চিৎকার করলে কেন?
আমিরা ও প্রশ্নাত্নক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
মিসেস খেয়া দেলোয়ারের দিকে তাকিয়ে বলে,, আমাকে জিজ্ঞেস না করে তোর বোন কে জিজ্ঞেস কর।
কি হয়েছে দিশা?
দিশা মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,,মা তুমি বলো আমার লজ্জা লাগছে।
কিসের লজ্জা? আর কি হয়েছে বলবাতো নাকি টেনশন হচ্ছে তো।
তুই মামা হতে চলেছিস দিলু।
মামা মানে?
মামা মানে আবার কি? মামা মানে মামা!
আমিরা কথাটা শুনে দৌড়ে গিয়ে দিশাকে জড়িয়ে ধরে।
আস্তে বউ মা। সাবধানে।
স’রি আম্মা আসলে বেশি এক্সাইটেড হয়ে গিয়েছিলাম।
দেলোয়ার ও এগিয়ে এসে বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
এই খুশিতে তোমাদের সবাই কে আজ বাইরে নিয়ে গিয়ে ঘুরাবো আর খাওয়াবো। সবাই রাজি তো?
দেলোয়ারের কথা শুনে দিশা আর আমিরা মাথা নাড়ায়। মিসেস খেয়া যেতে নারাজ।বলেছে তোরা গিয়ে ঘুরে আয় আমি যাবো না। কিন্তু কেউ শুনলে তো জোর করে তাদের সাথে নিয়ে গেছে।
সারা বিকেল চারজন মিলে ঘুরাঘুরি করেছে।খাওয়া দাওয়া করে তারপর বাসায় এসেছে।
———————————–
রোজার দুই দিন আগে আমিরার বাপের বাড়ির লোকজন ও দিশার শ্বশুর বাড়ির লোকজনের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে।
দেলোয়ার সে অনুযায়ী সব বাজার সদাই করেছে।আরো বেশি পরিমাণে করেছে বাজার।
আজ দুপুরের দাওয়াত সকলের।সকাল থেকেই আমিরার ব্যস্ত সময় যাচ্ছে। কত কাজ।আমিরার সাথে মিসেস খেয়া আর দিশা ও সাহায্য করছে।যদিও বউ শ্বাশুড়ি দিশাকে তেমন কোনো কাজ করতে দিচ্ছে না।
সকালে দেলোয়ার বলে দিয়েছে মেহমান আসবে আরো তিনজন সে অনুযায়ী যেনো রান্না হয়।মিসেস খেয়া আর আমিরা অবশ্য কয়েকবার জানতে চেয়েছে কারা আসবে।
দেলোয়ার বলতে নারাজ শুধু বলে সারপ্রাইজ।
দুপুরের আগেই সকল রান্না শেষ হয়। রান্না শেষে ঘর গুছিয়ে সকলেই পরিপাটি হয়। এর মধ্যে কলিং বেল বেজে উঠে। আমিরা গিয়ে দরজা খুলে দেয়।দিশার শ্বশুর শ্বাশুড়ি ও তার বর এসেছে। তাদের সাথে কুশল বিনিময় শেষ করে ঠান্ডা শরবত এনে দেয়। এর মধ্যে আমিরার বাবা মা আর বোন ও এসে পরে।
তারপর দেলোয়ার আসল খবর জানায়।কারা আসবে এটা ও জানায়। তার একজন কলিগ প্লাস বন্ধু ও বলা চলে।সে আর তার বাবা মা আসবে।
অনেক দিন ধরে নাকি তারা মেয়ে খুঁজছে। কিন্তু মন মতো পাচ্ছে না। গরিব হলেও ওদের সমস্যা নেই। ওরা একটা শান্ত লক্ষী মেয়ে চায়।সব শুনে দেলোয়ার আমিরার বোন মিরার কথা জানায়। নিজের শ্বশুর বাড়ি শা’লির কথা সবই জানায়।
সব শুনে ওরা মিরা কে দেখতে চায়।ওদের পছন্দ হলে আজই ওরা আংটি পরিয়ে যাবে।
কিছু সময়ের মাঝে ওরা ও চলে আসে। আমিরা আর দিশা খাবার বেড়ে খাওয়ায়। আমিরা,দিশা আর মিরা পরে খাবে বলে সকল কে বসিয়ে দেয় খাওয়ার জন্য।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে মিরা কে দেখেন উনারা।সবারই পছন্দ হয়।৷
উনারা আজই পাকা কথা সারতে চান।কয়েকজন গিয়ে শুধু নিয়ে আসবে।উনাদের কিছু দাবি নেই।শুধু মেয়েটাকে চায় উনারা।
আমিরার বাবা সব দেলোয়ারের উপর ছেড়ে দেয়। দেলোয়ার যা সিদ্ধান্ত নিবে তাতেই উনারা রাজি।দেলোয়ার কে উনারা নিজের বড় ছেলে মনে করেন।
দেলোয়ার ই সব কথা বলে।সব ঠিক করে।
আমিরার কাছে সব কল্পনা মনে হচ্ছে। তার বাবা মিরা কে নিয়ে খুব টেনশনে ছিলো। আজ দেলোয়ার সেই টেনশন দূর করে দিলো।
আমিরা এক দৃষ্টিতে দেলোয়ারের দিকে তাকিয়ে আছে। লোকটা সেই বিয়ের পর থেকে প্রকাশ্যে গো’পনে সব সময় পাশে থাকছে। এমন স্বামী কয়জন পায়? সে খুব ভাগ্যবতী।নিজের স্বামী ভালো হলে,পাশে থাকলে কঠিন মুহূর্ত টা ও সহজ মনে হয়।
আমিরা এক দৃষ্টিতে দেলোয়ারের দিকে তাকিয়ে থাকায় দেলোয়ার হয়তো বুঝতে পারে বউ তার দিকে তাকিয়ে আছে। তাই আমিরার দিকে তাকায়। আমিরার এমন দৃষ্টি দেখে দেলোয়ার নিজের ব্রু উঁচিয়ে জানতে চায় কি?
আমিরা মাথা নাড়িয়ে জানায় কিছু না।
আর মনে মনে বলে এরকম করে সব সময় আমার #পাশে_থেকো_প্রিয়। তাহলে সব পরিস্থিতি আমি মানিয়ে নিবো।
দেলোয়ার আমিরার মনের কথা টা বুঝলো কিনা কে জানে।সে নিজের ঠোঁট নাড়িয়ে বলে সব সময় তোমার পাশে থাকবো।
#সমাপ্ত।
যেরকম ভাবে গল্প টা সাজিয়ে ছিলাম সেভাবেই শেষ করেছি। কেমন লাগলো জানাবেন।❤️