পাশে থেকো প্রিয় পর্ব ২

0
486

#পাশে_থেকো_প্রিয়
#পর্বঃ২
#Jhorna_Islam

আমিরা দেলোয়ারের যাওয়ার দিকে কিছু সময় নিয়ে তাকিয়ে রয়। তারপর হাতে গ্লাস টা নিয়ে রান্না ঘরে চলে যায়। তার মন মেজাজ কিছুই ভালো না। কিছু ভালো লাগছে না। হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে বসে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এখন তার চোখ দিয়ে পানি আসছে না।

দেলোয়ার তাকে কি বলে গেলো মাথায় ঢুকলো না। লোকটার খামখেয়ালি কথা মাঝে মাঝে আমিরা বুঝতে পারে না।

রাতের জন্য রান্না বসায়।আজ আর রুমে এখন যাবে না। চুপচাপ রান্না করতে থাকে। মাথার ভিতর অশান্তি থাকলে কোন কাজে মন বসে না।আমিরার ও রান্নায় মন বসছে না। খেতেও ইচ্ছে করবে না রাতে সে জানে।গলা দিয়ে খাবার তার নামবেই না।

তবুও তাকে রান্না করতে হবে। শ্বাশুড়ির ঔষধ আছে রাতে কোমড় ব্যাথার।তার উপর দেলোয়ার ও সারাদিন খাটা খাটনি করে এসেছে। তাই অনিচ্ছা থাকা শর্তেও রান্না করতে থাকে।

দেলোয়ার ফ্রেশ হয়ে রুমে কতো সময় নিয়ে গড়াগড়ি খেলো।আমিরার জন্য অপেক্ষা করলো।কিন্তু না মেয়ে টা আজ আসছে না। অন্য সময় অফিস থেকে আসলেই তার কাছাকাছি থাকতো।

রুমের বাইরে এসে ঘুরে যায়।দেখলো আমিরা রান্না করছে। আজ আমিরার মন ভালো নেই তাই রান্না করার সময় আর বিরক্ত করলো না।

চুপচাপ রুমে চলে গেলো।শুয়ে থাকতে থাকতে চোখ টা একটু লেগে এসেছিলো। এমন সময় আমিরা এসে তাকে মৃদু স্বরে ডাকতে থাকে শুনছেন উঠেন রাতের খাবার খাবেন না?

আমিরার মন খারাপ থাকলে আর দেলোয়ারের উপর অভিমান হলে সে তুমি থেকে আপনি তে চলে যায়।

দেলোয়ার জানে বিষয় টা খুব ভালো করে। তবে আজ তার প্রতি অভিমান করে আপনি তে যায় নি।মন খারাপে আপনি তে গেছে।

আমিরা দেলোয়ার কে ডাক দিয়ে চলে যেতে নেয়। দেলোয়ার আমিরা কে হাত ধরে আটকে দেয়।

কি করছেন? হাত ছাড়ুন খেতে আসেন।অনেক রাত হয়ে গেছে আম্মার আবার ঔষধ আছে। খাওয়ার জন্য আম্মাকে ডাকতে যেতে হবে।

“বসো এখানে পাঁচ মিনিট। ”

“কাজ আছে আমার। ”

“আমার থেকে ও যদি তোমার জরুরি কাজ থেকে থাকে তাহলে যাও।”

আমিরা আর কথা বাড়ায় না।দেলোয়ারের পাশে গিয়ে বসে।

দেলোয়ার আমিরার ডান হাত টা নিজের হাতের মুঠোয় নেয়।

মা কিছু বলেছে?

“ক-কই নাতো।”

তুমি না বললেও আমি ঠিক বুঝতে পেরেছি। নিশ্চই তোমাকে বলেছে আমার শ্বশুরের থেকে রোজার বাজার সদাই আনতে। মা কে এতো বলেও পুরোনো অভ্যাস আগের দিনের রীতিনীতি থেকে বের করতে পারলাম না। উনি সেই আগের যুগের ধারাই মনে পোষণ করে রেখেছে। তার উপর আশেপাশের কয়েকজন তো আছেই।

কিছু বলতে ও পারছি না সোজাসাপটা। বাবা মারা যাবার পর আমাকে আর দিশা কে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে। চোখের সামনে মানুষের কতো কথা শুনেছে। নিজের জীবন টা আবার গুছিয়ে ও নিতে বলেছে কেউ কেউ। মা কিছুই করেনি।আমাদের আ’কড়ে ধরে বেঁচে আছে। নিজের শখ আল্লাদ কিছু পূরণ করতে পারে নি জীবনে।

তুমি চিন্তা করো না আমিরা আমিতো আছি। মা কে হয়তো সরাসরি কিছু বলতে পারবো না। তবে কিছু একটা আমি করবো। তোমাকে তোমার বাবার বাড়িতে ছোট হতে দিবো না।

মায়ের মাথা টা গেছে বুঝলে আমিরা? তা নয়তো তার ছেলে এখন কতো ভালো বেতনে রোজগার করে তারপরেও কি করে এসব বলে?

আ-আপনি দয়া করে আম্মা কে কিছু বলবেন না। সবারই তো শখ থাকে ছেলের শ্বশুর বাড়ি থেকে এটা ওটা দিবে। আর আপনি আম্মার একটাই ছেলে আর তো কোনো ছেলে নাই।

তাহলে আর কি করা যায় বলোতো? এক কাজ করো শ্বশুর বাড়ি থেকেই না হয় এবার রোজার বাজার সদাই নিয়ে আসো।আমার টাকা গুলো ও বেঁচে যাবে।

আমিরা দেলোয়ারের দিকে তাকায়।

এই বিষয় টা এখানেই ক্লোজ করো।আমি দেখে নিচ্ছি নো টেনশন। আর হ্যা এটা নিয়ে যেনো মন খারাপ করে থাকতে না দেখি তোমায়। যাও টেবিলে খাবার দাও আমি মা কে ডেকে আনছি।

আমিরা মাথা নাড়িয়ে চলে যায়।

দেলোয়ার তার মায়ের রুমে প্রবেশ করে। তার মা বিছানার এক কোণে বসে তসবি হাতে নিয়ে বসে আছে।

দেলোয়ার গিয়ে মায়ের কোলে শুয়ে পরে।

মিসেস খেয়া দেলোয়ারের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। তা দিলু বাপ আজ কাল বুঝি তোর কাজের চাপ খুব বেশি?

হুম মা।রোজা আসতেছে তো তাই।

ওহ এজন্য বুঝি মায়ের কথা একদম মনে থাকে না। আগে তো অফিস থেকে সোজা মায়ের কাছে এসে পরতি।এখন আর আসা হয় না। আর আসবি কি করতে? মা কে তো এখন আর দরকার নেই তোর তো এখন কতো মানুষ আছে।

দেলোয়ারের বুঝতে অসুবিধা হয় না কথা গুলো আমিরা কে উদ্দেশ্য করেই তার মা বলছে।

তেমন কিছুই না মা।বাইরের পরিস্থিতি তো তুমি জানোই।ঘামে ভিজে চুপচুপা হয়ে আসি।তার উপর বাইরে কতো রোগ জীবাণু তাই ফ্রেশ না হয়ে আসি না।তুমি তো এমনিতেই অসুস্থ থাকো।এখন যদি আমি এই রোগ জীবাণু নিয়ে তোমার কাছে আসি তাহলে তো তুমি আরো অসুস্থ হয়ে যাবে।

তোদের আজ কাল কার ব্যাপার স্যাপার বুঝিনা বাপু।আমাদের সময় এতো কিছুর ধার কেউ ধারতো না।

অনেক রাত হয়ে গেছে মা খেতে চলো খুব খিদে পেয়েছে। মিসেস খেয়া আর দেরি করে না।মা ছেলে দুইজন এক সাথে বেরিয়ে আসে। খাওয়ার টেবিলে দুইজন পাশাপাশি বসে।

আমিরা সব কিছু বেড়ে দিচ্ছে। দুইজনের সামনে সব এগিয়ে দিচ্ছে।

“তুমি এবার আমাদের সাথে বসে পরো আমিরা।” একা একা খেতে ভালো লাগে না। আমরা নিয়েই খেতে পারবো সব তুমিতো এগিয়ে দিয়েছোই। আর মায়ের কিছু লাগলে আমিতো পাশেই আমি দিয়ে দিবো।

আমিরা কথা বাড়ায় না। চুপচাপ দেলোয়ারের অপর পাশের চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসে পরে।

মিসেস খেয়া চুপচাপ খাবার মেখে মুখে লোকমা দেয়।তারপর কিছু সময় চুপ থাকে। আমিরা ভাত নিচ্ছে মাখার জন্য। এর মধ্যে মিসেস খেয়ার গলা শুনতে পায়।

তা বউ মা আমি তখন ঐ কথা গুলো বলায় বুঝি ইচ্ছে করেই নিজের রান্না দিয়ে শোধ তুলছো?

আমিরা নিজের শ্বাশুড়ির দিকে ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে রয়।

দেলোয়ার মাত্র মুখে এক লোকমা পুরে বুঝতে পারলো মা কথাটা কেন বলছে।তরকারি তে ঝাল অনেক বেশি।

আমিরা মিসেস খেয়ার দিকে তাকিয়ে জানতে চায় কি বলছেন আম্মা? আমি কিছু বুঝতে পারছিনা।

“তরকারি তে এতো ঝাল কে দেয় বৌমা? তুমি ইচ্ছে করে এসব করেছো?

মুহূর্তের মাঝে আমিরা স্তব্ধ হয়ে যায়।

দেলোয়ার বলে উঠে কি বলছো এসব মা? কোথায় ঝাল বেশি হয়েছে? আমিতো দেখছি সব ঠিক ই আছে।কথাটা বলে দেলোয়ার আরেকটু মাছের ঝুল নিজের প্লেটের মাঝে নিয়ে খেতে থাকে।

তুমি এই তরকারি টা না খেতো পারলে অন্য আরেকটা তরকারি নিয়ে খাও মা। তরকারি তে ঝালের পরিমান ঠিক ই আছে।
” এজন্য তোমায় বলি মা এতো পান তুমি খেও না।আমার একটা কথা ও তুমি শুনো না।পান আর চুন খেয়ে জিহ্বা পুড়িয়ে ফেলছো হয়তো ছিলে ও ফেলেছো এজন্য তরকারি তোমার ঝাল লাগছে।

মিসেস খেয়া নিজের ছেলের দিকে তাকিয়ে দেখে কি অনায়াসে খাচ্ছে তার ছেলে।দেলোয়ার আবার বেশি ঝাল খেতে পারে না। তাই মিসেস খেয়া ভাবছে হয়তো উনার জিহ্বার কারণেই এই তরকারি ঝাল লাগছে।তাই উনি কথা না বাড়িয়ে ডাল নিয়ে খেতে থাকেন।

আমিরা এক লোকমা মুখে দিয়ে বুঝতে পারলো তার শ্বাশুড়ি ঠিকই বলেছে।প্রচুর পরিমাণে ঝাল হয়ে গেছে। হয়তো রান্না করার সময় অন্য মনস্ক ছিলো তাই।

দেলোয়ারের দিকে ছলছল নয়নে তাকায় আমিরা।লোকটা ঝাল খেতে পারে না। তবুও আমিরা কে বাঁচানোর জন্য কি সুন্দর অনায়াসে ঝাল খেয়ে নিচ্ছে।

দেলোয়ার আমিরার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। টেবিলের নিচ দিয়ে আমিরার বাম হাতটা ধরে ভরসা দেয়।

খুব সকালে কলিং বেল এর শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। আজকে দেলোয়ারের অফিস নেই তাই রান্না বান্না করার ও তাড়া নেই। আমিরা হাই তুলতে তুলতে এগিয়ে যায় দরজা খোলার জন্য কে জানে এতো সকাল সকাল কে এসেছে। দরজা খুলে আমিরা বেশ অবাক হয়।

#চলবে,,,,,?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here