#মেঘের_পালক_চাঁদের_নোলক
#পর্ব_১৫
#অধির_রায়
মেঘ, মাহদীর মাঝে চলছে তুমুল লড়াই। কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছে না৷ নিধি দৌড়ে এসে তাদের ঝগড়া থামায়৷ দু’জনকে দুই হাত দিয়ে দুই দিকে সরিয়ে দেয়৷ মাঝখানে অবস্থা করছে নিধি৷ মেঘ রাগ নিয়ে ভেজা গলায় বলল,
“ছোট আম্মু সরে দাঁড়াও। আমি মাহদীকে মে*রেই ফেলব। আমার পেন্সিল ভেঙে দিছো৷”
মাহদীর রাগ কোন অংশে কম নয়৷ দুই ভাইয়ের রাগ যেন আকাশ ছোঁয়া৷ কেউ কাউকে সহ্য করতে পারেনা৷ বড়দের চোখের আড়াল হলেই গেলে যায় যুদ্ধ৷ মাহদী উঁচু গলায় বলল,
ছোট আম্মু, মেঘ আমার গাড়ি ভেঙে দিয়েছে৷ আমি তাকে ছাড়ব না৷ আমার গাড়ি ভাঙছে৷ আমাকে চিনে না৷ আমি আজ মেঘকে পুঁতে ফেলব৷
মেঘ আর মাহদী হলো মুগ্ধ, মাধবীর ভালোবাসার প্রতীক। টম এন্ড জেরির মতো সারাদিন একে অপরের পিছনে লেগে থাকে৷ সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখে দু’জন। সবার চোখের মনি৷ যেমন চোখের মনি তেমনই দুষ্টু৷ আজিব আজিব কাজ করে মানুষকে বিপদে ফেলা তাদের মহান কাজ৷ তাদের জন্য ভয়ে দিবারাত্রি পার করে সবাই৷ মেঘ, মাহদীর ঝগড়া শুনে দৌড়ে আসছে মাধবী৷ মাধবীকে দেখেই মেঘ, মাহদী দু’জনই নিধির পিছনে লুকিয়ে পড়ে৷ মাধবী রাগ নিয়ে বলল,
“লুকিয়ে আছিস কেন? বাহিরে আয়৷ আমাকে একটা মুহুর্তও শান্তি দেয়না৷ আজ তোদের দুইটাকেই মে”রে ফেলব। সারাদিন দিন তুমুল লড়াই করে যাবে৷ লেগেই থাকে চব্বিশ ঘণ্টা।”
মেঘ নিধির হাত ধরে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
“ছোট আম্মু আমাদের বাঁচাও৷ আর আমরা ঝগড়া করব না৷ একদম ভালো ছেলে হয়ে থাকব।”
মাধবী নিধির সামনে এসে বলল,
“নিধি সরে দাঁড়াও৷ এরা ভালোবাসার মানুষ নয়৷ দুইটাই হয়েছে বাবার মতোন৷ আমার মতো একটাও হয়নি৷ উচ্ছৃঙ্খল দু’জনেই৷ শাস্তি না দিয়ে ঠিক হবে না৷ দুই মিনিট আবার লাগবে৷ ইচ্ছা করে এদের জন্য সবকিছু ছেড়ে চলে যেতে৷”
মাধবী দু’জনের হাত ধরে বলল,
“ভাবী তারা ছোট মানুষ৷ তাদের বকা দিও না৷ আর ঝামেলা করবে না৷ মেঘ মাহদীর দিকে তাকিয়ে বলল,
” তাইতো তোমরা কোন ঝগড়া করবে না৷ একদম লক্ষী ছেলে হয়ে থাকবে৷”
দু’জনে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাল৷ তারা ভালো ছেলে হয়ে থাকবে৷ নিধি তাদেরকে নিজের ঘরে নিয়ে আসে৷ ঘরে আসতে না আসতেই মাহদী মেঘের চুল টান দিয়ে বলল,
“তোর জন্যই আম্মু মা”র”তে আসছিল৷ তোকে তো… ”
মেঘও মাহদীর চুল টান দেয়৷ অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
“আমার জন্য না৷ তোর জন্য৷ তুই আমার পেন্সিল ভাঙলি কেন?”
“তুই আমার গাড়ি ভাঙলি কেন?”
নিধি আবার দু’জনকে থামায়৷ গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“তোমাদের আম্মুকে বলব তোমরা আবার ঝগড়া করছো।”
দু’জনে এক সাথে বলে উঠল,
“না ছোট আম্মু৷ আমরা ভালো ছেলে৷ ছোট আম্মু আমাদের গল্প শুনাও৷ পড়ালেখা ভালো লাগে না৷”
নিধি তাদের দু’জনকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে চাঁদের বুড়ীর গল্প শুনাচ্ছে৷
___________________
নিধি অ্যান্টানি শেষ করে বেসরকারি হসপিটালে কর্মরত আছে। তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এসে পড়েছে সেই দিন৷ ধুমধামে চারহাত আবার পুনরায় এক করে দিতে৷ ডাইনিং রুমে সবাই বসে আছে৷ শায়লা চৌধুরী সবার উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন,
“আমি নিধি আর শাওনের বিয়ের রিসিপশনের ব্যবস্থা করব৷ তাদের পুনরায় এক করে দিব। মানা করা সত্ত্বেও তারা দু’জন আলাদা থাকে নি৷ সেজন্য তাদের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা আছে৷”
শাওন নিধির দিকে পলক তুলে তাকালে নিধি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে৷ তাদের ভালোবাসা শেষ পর্যন্ত এক হবে৷ এত কাছেও থেকেও অনেক দূরে ছিল৷ সব সময় পাশে পেয়েও যেন অনেক দূরে ছিল৷
শায়লা চৌধুরীর মতামতের সাথে সকলের মতামত এক হলো৷ মেঘ, মাহদী খুশীতে নাচতে শুরু করল৷ সকলে লেগে পড়ল বিয়ের কাজে৷
শাওনের প্রতি নিধির কোন অভিযোগ নেই৷ নিধি হসপিটালে থেকে মাত্র ফিরেছে৷ আজ অনেক কাজ পড়ায় অনেকটা রাত হয়েছে৷ রুমে প্রবেশ করতেই দেখতে পেল শাওন নিধির জন্য খাবার নিয়ে বসে আছে৷ ঠোঁট জোড়া প্রসারিত হয়ে গেল৷ নিধি ফ্রেশ হয়ে আসে৷ শাওন নিধির হাতে প্লেট দিয়ে বলল,
“আমার অনেক ক্ষুধা লাগছে৷ তাড়াতাড়ি খাইয়ে দাও৷”
নিধি ব্রো কুঁচকিয়ে শাওনের দিকে তাকাল৷ নিধি কিছু বলতে নিবে তার আগেই শাওন বলল,
“আমার কি ইচ্ছা করে না বউয়ের হাতে খেতে৷ আজ তুমি আমায় খাইয়ে দিবে৷ আমি না হয় তোমাকে খাইয়ে দিব৷”
শাওন কথাটা যেন একটু ভাব দেখিয়ে বলল৷ নিধি কিছু না বলে খাইয়ে দিল৷ শাওন সাথে নিজেও খেয়ে নিল৷ কারো হাতে খেতে ইচ্ছা করে না৷ সেজন্য শাওনকে খাওয়ানোর পাশাপাশি নিজেও খেয়ে নিল৷ শাওন খাওয়ার পর মন খারাপ করে বলল,
“আমার বউটা আস্ত একটা আন রোমান্টিক। মেডিক্যালে পড়তে গিয়ে আন রোমান্টিক হয়ে গেছে৷”
নিধি কিছু বলল না৷ শাওন দিনে দিনে লাঘাম ছাড়া কথা বলে৷ যা নিধিকে খুব লজ্জায় ফেলে। নিধি ঘুরে বিছানা মুখী হতে নিলেই শাওন নিধিকে পাঁজা কোলায় নিল৷ নিধি ভয়ে শাওনের টি শার্ট খামচে ধরে৷ আত্মার পানি যেন শুকিয়ে যায়৷ আঁখি বন্ধ করে ফেলে। আঁখি মেলেই রাগী গলায় বলল,
“এসব কি? হুটহাট করে কোলে তুলে নিলে ভয় লাগে তো৷ মনে এতো প্রেম জাগ্রত হলো কবে থেকে৷ আমি ঘুমাব৷ আপনি প্রেম নিয়ে থাকেন৷”
শাওন নিজের মাথা কিছুটা নিচু করে বলল,
“কোন কথা নয়৷ আজ আমরা এক অজানা শহরে হারিয়ে যাব৷ যেখানে তুমি আর আমি থাকব৷ আর কেউ থাকবে না৷ একটা নির্জন পরিবেশে আমি তোমাকে চাই৷”
নিধি কিছু বলল না৷ শাওনের বুকে মাথা রেখে সম্মতি দিল৷ শাওন নিধিকে পাঁজা কোলা করে বাহিরে নিয়ে আসে৷ ঘটির কাটা রাত দু’টো ঘরে৷ নিরিবিলি রাস্তায় হাতের উপর হাত রেখে পাশাপাশি হাঁটছে৷ ল্যামপোস্টের লাইট সাক্ষী হয়ে আছে৷ শাওন আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,
“অনেক দিনেই ইচ্ছা ছিল তোমাকে একটা নির্জন পরিবেশ উপহার দিব৷ কিন্তু সময়ের অভাবে দেওয় হয়নি৷ তোমাকে নিয়ে নিরিবিলি রাস্তায় হাতের উপর হাত রেখে হাঁটব।”
নিধি অভিমানী স্বরে বলল,
“কোনদিন তো বলেনি৷ আমারও তো ইচ্ছা করে প্রিয় মানুষের সাথে একা কিছু সময় কাটাতে৷ আমাকে নিরামিষ বলার আগে নিজেই নিরামিষের পরিচয় দিয়েছেন৷ শাহবাগের চত্বরে গেলে আপনার শূন্যতা অনুভব করছি৷ পাশে আপনি থাকলে দশ টাকার বাতাম কিনে পাশাপাশি বসে ভালোবাসার কথা বলতাম৷ চন্দ্রীমা উদ্যানের প্রতিটি ইটের কণা সাক্ষী। বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়েও আপনাকে মিস করছি৷”
শাওন নিধির কথা শুনে রীতিমতো অবাক৷ পিচ্চির নিধির মনের ভালোবাসা আজ প্রকাশ পাচ্ছে৷ এতদিন অজানা এক দেয়ালের জন্য মনের কথা বলতে পারেনি৷ শাওন নিধির হাতে ঠোঁট জোড়া স্পর্শ করে বলল,
“তোমার এই অধম স্বামীকে ভালোবাসার একটা সুযোগ দেওয়া যায়না৷ আমি তোমার শূন্যতা পূর্ণতায় পূরণ করতে চাই৷ আমাকে একটা সুযোগ দিবে৷”
নিধি ইশারায় ল্যামপোস্টের নিচে বসার জন্য বলল৷ শাওনের কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে নিধি৷ শীতল হাওয়ায় নিধির অবাধ্য খোলা কেশগুলো উড়ছে৷ নিধি কোমল কন্ঠে বলল,
“ভালোবাসা টিকে থাকে বিশ্বাসের উপর৷ ভবিষ্যতে এমন কোনো কাজ করবেন না যাতে আমার মন থেকে বিশ্বাস উড়ে যায়৷ আপনাকে আমার একটা কথা বলার ছিল৷ জানিনা আপনি কথাটা কিভাবে নিবেন?”
শাওন নিধির হাত মুষ্টির মধ্যে আবদ্ধ করে নিল৷ বুকের মাঝে হালকা করে চেপে ধরে বলল,
“তোমার প্রতি আমার অটুট বিশ্বাস আছে৷ আর তুমি কোন অন্যায় করলেও তোমার প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই৷ ভালোবাসা দিয়ে তোমার অন্যায়কে মুছে দিব৷”
নিধি টলমল চোখে বলল,
“আপনি আমার ভাবনার থেকেও অনেক ভালো৷ তবে জানিনা আমার কথা কিভাবে নিবেন৷ আমি আপনাকে আপনার বাড়িতে আসার আগে থেকেই চিনি। আর সে পরিচয় হয় খারাপ এক জায়গায়।”
চলবে……
ব্যস্ততার জন্য লিখতে পারিনি৷ ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত।